|| প্রথম পাহাড় দেখা ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালই আছেন। আজ আমার প্রথম পাহাড় দেখার অনুভূতি আপনাদের সামনে শেয়ার করলাম। প্রথম পাহাড় দেখে আমার খুবই আনন্দ হয়েছিল। ভীষণ খুশি হয়ে গেছিলাম। তারই স্মৃতিটুকু আজ আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরলাম।

mountain-4826579__480.png

Location

প্রথম পাহাড় দেখার সুযোগটা হয়েছিল আমার বোর্ডিং স্কুলের সুবাদেই। স্কুলের নোটিশ থেকে জানতে পারলাম ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে। ট্যুর কাম পিকনিক। প্রথমত শুনলাম রাতে থাকার একটা ব্যাপার থাকবে। সেটা অবশ্য গোড়াতেই শুনেছিলাম দুদিন থাকার একটা সংকল্প তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই দুদিন একদিনে পরিবর্তন হলো। তারও অনেক কারণ আছে। আমরা তো চাইছিলাম দুইদিনই হোক। কিন্তু ধীরে ধীরে নানান ঝামেলা এসে হাজির হলো। স্কুলের মেয়েরা দুদিন থাকার ক্ষেত্রে তেমন সম্মতি জানালো না। তাদের সমস্যার কারণে দিন কমাতে হলো। কোনো কিছুর আরম্ভ করলে তা কোন না কোন ভাবে পরিবর্তন হয়। কখনো একেবারে উঠেই যায় বিষয়টি। যাই হোক আমাদের বন্ধ কিন্তু হয়নি, দুদিনের ট্যুর না হলেও একদিনের কিন্তু হল। ঠিক হলো মাইথন যাওয়া হবে। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। আমি পূর্বে কোনদিনই সেভাবে দূরে কোথাও যায়নি। মাইথোনে কি আছে তাও আমার জানা ছিল না। পরে জানতে পারলাম শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছ থেকে। ধীরে ধীরে আমাদের প্রতীক্ষার দিন এগিয়ে এল। ফাইনালি ১৫ ডিসেম্বর এল। আমি তো বাড়ি থেকে বাবাকে বলে বেশ কটা জামাকাপড় আনিয়ে নিয়েছিলাম। আর আবদার পেড়েছিলাম একটা ফোনের সেখানে গিয়ে ছবি তুলবার জন্য। কিন্তু সে আবদারে জল ঢালা হলো। বোর্ডিং স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী মোবাইল দেওয়া গার্জেন দের পক্ষে বারণ ছিল। যদিও অন্যান্য স্টুডেন্টসরা দিব্যি নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমার বাবা এসব ক্ষেত্রে খুব পাংচুয়াল। অতএব মোবাইল ফোনের বদলে আমার মিলল একটা হাতঘড়ি। আমি তাতেই খুশি।
বাস এসে দাঁড়ালো রাত্রি দশটার সময়। আমাদের বাসগুলো রওনা দেবে বারোটার সময়। এই রাত্রের ভ্রমণ এক আলাদা অনুভূতি। বাস ছাড়ল ঠিক বারোটায়। সাতখানা বাস দৈত্যের মতো পরাপরই ছুটলো।
আমাদের আনন্দের সীমা রইল না। যখন মাইথনে গিয়ে পৌঁছলাম তখন ভোর হয়ে গেছে। ভোরের আলোয় চারিদিক তখন আলোকিত। বাস থেকে নেমেই কোন কিছু দেখতে পেলাম না। আমি তো দু চোখে পাহাড় খুঁজছিলাম, কিন্তু পাহাড় কই?এই যে কিছুই নেই! চারিদিকে বড় বড় গাছ কেবল। আমি তো তা দেখার জন্য আসিনি। খুব হতাশ হয়েই একজনকে জিজ্ঞেস করলাম যে এটাই কি আমাদের ডেস্টিনেশন? তারপর সে ব্যাক্তি বলল, না এটা নয়। এখানে দাঁড়ালো একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য। আরো দূরে আমাদের আসল ডেস্টিনেশন। দেখলাম, হ্যাঁ কথা ভুল নয়! একটু ফ্রেশ হয়ে আবার বাস ছাড়লো। এবার বাস থেকে নেমে দেখতে পেলাম পাহাড়। বিশাল উঁচু পাহাড়। বড় বড় পাথর পাহাড়ের কোলে আটকে আছে। দেখে মনে হয় এই যেন খুলে পড়ে যাবে। পাহাড়ের কোলে কত বড় বড় গাছ দাঁড়িয়ে আছে। আমার দেখে তাজ্জব লেগে গেল। পাহাড় যে এত সুন্দর হতে পারে তা আমি কল্পনা করিনি। আমি দেখেছিলাম ছবিতে, কিন্তু চোখের দেখা যে কতটা আলাদা তার সামনে গিয়ে বুঝতে পারলাম।
রান্নার জন্য আঙ্কেল বন্দোবস্ত শুরু করলেন। আমরা ছোট ছোট পাহাড়গুলোই উঠতে থাকলাম। পাহাড়ি পথ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সরু রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার ওপারে তাকাতেই ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো। ও মা রাস্তার ওপারে ভীষণ গভীর খাত। গাছের আড়ালে তা দেখতে পায়নি বলে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছিলাম। যেমনি চোখ পড়লো, আর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারিনি। সে পথ থেকে আমরা কোনরকম পার করে চলে গেলাম বাঁধ দেখতে। বহু উঁচু বাঁধ। প্রথমে হেঁটে যাচ্ছিলাম কিন্তু একজন স্থানীয় লোক পরামর্শ দিল যে, তোমরা অটো করে চলে যাও। আমরা একটি অটোতে সবাই মিলে উঠে চলে গেলাম বাঁধ দেখতে। বাঁধের কাছে এসে সেই আনন্দ হল। এত উঁচু বাঁধ কোন দিন দেখিনি। পাহাড়ের মত উঁচু। বহু নিচে দেখতে পেলাম ঘন জঙ্গলের মাঝে দু তিনটি হরিণও। দেখতে পেলাম এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। এটা দেখে আমাদের আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল। তারপর সেখানে আর কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমরা স্পটে ফিরলাম। তাড়াহুড়ো শুরু করেছে আমাদের খেতে দেবার জন্য আঙ্কেল রা। আমরা পাহাড়ি নদীর জলে স্নান করতে চলে গেলাম। পাহাড়ি নদীর স্নান করে খুবই মজা পেলাম ।ঠান্ডা জল। প্রাণটা স্নিগ্ধ হয়ে উঠলো। তারপর চলে এলাম স্পটে যেখানে রান্নার আয়োজন হচ্ছিল। দেখি বিশাল বড় করে ত্রিপল পেতে দেওয়া হয়েছে, সবাই খেতে বসেছে। আমরাও বসে গেলাম। দেয়া হলো খাসির মাংস, মুরগির মাংস ছিল আর বিরিয়ানি!
আমরা পেট ভরে খেয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম। স্পটের কাছাকাছি দিয়ে একটা ছোট্ট মেলা হচ্ছিল সেখানে চলে গেলাম সেখানে ছোট ছোট বাঁশের ময়ূর। বিভিন্ন জিনিস আরো ছোট খাটো, তবে সকল দরকারই। চাবির রিং সেটাও বাঁশের তৈরি। এসব কিনে ফিরলাম। একটা কলমদানি আর ময়ূর টা তো কিনলাম। সাথে আরো কিছু। তারপর দেখলাম সন্ধ্যে এসেছে, আমরা সবাই বাসে উঠে পরলাম। স্যাররা আঙ্কেল mরা দেখি খুব তাড়া দিতে শুরু করেছে! সারাদিন ক্লান্ত ছিলাম তাই বাসে উঠে দশ মিনিটের মধ্যে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ঘুম ভাঙেনি। যখন স্কুলের মধ্যে বাস ঢুকেছে তখন দেখি আমরা সেই স্বপ্নের জায়গায় আর নেই! চলে এসেছি আমাদের স্কুলে। আমরা সবাই মিলে নেমে পড়লাম। এবং ঘুম ঘুম চোখে হোস্টেলের রুমে চলে গেলাম।

Place : dhanbad district, Jharkhand and Paschim Bardhaman district of West Bengal

Location

আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন একটি লেখা নতুন কিছু কথা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Sort:  
 2 years ago 

যাক ভাই অবশেষে আপনিও পাহাড় দেখে ফেললেন। আমার কখনও পাহাড় দেখার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি। আপনাকে ধন্যবাদ যে এত সুন্দর ভাবে আমাদের কাছে আপনার ভ্রমন কাহিনী তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

মন্তব্য রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

আপনার পুরো পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন যেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে খুব ভালো লাগে। পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

ধন্যবাদ মন্তব্য রাখার জন্যে দাদা। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।

 2 years ago 

আমার কখনো পাহাড় দেখা হয়নি। মোটামুটি কয়েকবার স্কুল কোচিং থেকে ট‍্যুরে গিয়েছি কিন্তু ঐ অবস্থার মতো কখনো রাত থাকিনি। পহাড়ি নদীর জলে কখনো গোসলও করা হয়নি। আপনার অনূভুতির কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনি চলে যায় পাহাড়ি নদীতে গোসল করতে। ভালো ছিল আপনার পাহাড় ভ্রমণের কাহিনী টা।।

 2 years ago 

চলে আসেন আমাদের এখানে, আপনাকে পাহাড় দেখানোর দায়িত্ব আমি নেবো। যাইহোক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আসলে এরকমই হয় সবসময়।কোনো কিছুর আয়োজন করলে ঠিকঠাক মত কখনোই হয়ে উঠে না।তবে শেষমেষ যেতে পেরেছেন এটাই অনেক।তবে আমারও পাহাড় দেখার ইচ্ছে আছে,তবে সেই সুযোগ হয়ে উঠে নি এখনো

 2 years ago 

হ্যাঁ দাদা শেষমেষ সংগঠিত হয়েছিল। যেতে পেরেছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য রাখার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68492.14
ETH 2699.27
USDT 1.00
SBD 2.72