জন্মদিনে লঙ্কাকাণ্ড (সমাপ্তি পর্ব)|| ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox ও ৫% @abb-school এর জন্যে
'জন্মদিনের লঙ্কাকাণ্ড' শিরোনামের এই গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব আজ দিলাম এবং এটাই সমাপ্তি পর্ব। আমি বলবো দুটি পর্বই আপনারা পড়ুন। এবং আপনাদের সাথে কোথাও হয়েছে কিনা মিলিয়ে নিন। আমার তো মনে হয়, এ ঘটনা বিরল, এতটাও দুর্ভাগ্য বোধহয় করো নেই। সে যাক। আমরা গল্পের দিকেই এগোই..
যথারীতি সন্ধের আগেই বার্থডে সেলেব্রেশন শুরু হল। সেলফ-স্টাডির আগেই শেষ করতে হবে কারণ হোস্টেল সুপার একবার দেখে ফেললে খুবই বিপদ। পড়ালেখার ক্ষেত্রে তিনি মোটেই কনসিডার করেন না। অত্যন্ত কড়া ধাঁচের মানুষ। তিনি সামান্য কারণেও বেধড়ক মারে। লাঠিসোটা উইকেট না পেলে তার শক্ত হাতের চড়েই শক্তিমান ছেলেরাও মাথা ঘুরে পড়ে যায় আমরা সুপারকে ভীষণ ভয় পেতাম।
সেলিব্রেশন শুরু হল। ছোট বইয়ের টেবিল থেকে বই সরিয়ে তাতে লাল একখানা কাপড় পাতা হল। তার ওপর রাখা হল মেরি বিস্কুট তৈরি জবরদস্ত কেকটা।বার্থডে বয় নতুন জামা কাপড় পড়ে মুখে মার্জিত হাসি নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রইল।
ইকবাল ইতিমধ্যে লাইট বোর্ডের কাছে গিয়ে সুইচগুলো টিপতে শুরু করলে, মুহূর্তেই গোটা ঘর রঙিন আলোয় ঝলমল করে উঠল। বইপত্র ঝলমল করছে। বিছানায় ঝলমল করছে। আমরা সবাই ঝলমাল করছি। পড়ালেখার গন্ধভরা আমাদের ঘরখানা আজ রঙিন আলোয় সেলেব্রেশন মুডে। সমস্ত কিছু কেমন নতুন লাগছে। আমরা আনন্দে হই হই করে উঠলাম।
বার্থডে বয় বিস্কুটের কেক কেটে সবার মুখে অল্প অল্প করে দিতে লাগল। এই আজগুবি কেক খেয়ে সবার মুখে দারুণ হাসি। কেউ কেউ তারিফও করলো, না কেক বটে একটা!
এরপর ডান্স। প্রধান গায়ক এর সাথে সাথে আমরাও গান ধরেছি। ওদিকে দুজন ডান্সার দেলোয়ারকে চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। গান শুরু হতেই চাদর ক্রমশ উপরে উঠে এল। যেমন স্টেজে যবনিকা সরে যায়। যবনিকা সরতেই ডান্সার কয়েকটা স্টেপ দিতে শুরু করেছে এমন সময় ঘটলো এক কাণ্ড!
মুহূর্তেই সমস্ত কিছু 'থ'! হঠাৎ গেটে ঠকঠক শব্দ!একঘর ছেলে ভয়ে আঁতকে উঠলাম। কেউই গেট খুলতে গেল না। সকলের ইশারায় অভিভাবকতুল্য সাবিরদা এগিয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে গেট খুলতে দেখে সামনে মোটা একখানা লাঠি নিয়ে সুপার দাঁড়িয়ে!
আনন্দের উত্তেজনায় আমরা ভুলে গেছি পড়ার সময় এর কথা কখন সন্ধ্যা পেরিয়ে সেলফ স্টাডির সময় চলে এসেছে তা কেউই আঁচ করতে পারিনি।
আজ আস্ত থাকবে না মনে করে সবাই নিজের মনে জব করতে শুরু করেছি। সুপার চুপচাপ ভেতরে ঢুকে বড় বড় চোখ করে চারিদিকে কিছুক্ষন দেখল। গোটা ঘর স্তব্ধ হয়ে গেছে। একটি শব্দ পর্যন্ত নেই একঘর ছেলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে!
কেবল দেখা গেল ডান্সার ভাই ধীরে ধীরে এই বিশেষ আয়োজনে পরিহিত তার বুট জোড়া খোলার চেষ্টা করছে। সুপারের চোখ একবার তার দিকে গেল!
কাকে দিয়ে যে শুরু হবে বোঝা যাচ্ছে না! আরেকবার চারিদিকটা দেখে নিয়ে সুপার আস্তে করে বললেন "কি হচ্ছে এসব!"
সাবিরদা জন্মদিন বা এরকম কিছু একটা বলতে গেছিল কিন্তু বেচারার কপালটা মন্দ! কথা শেষ না হতে প্রথমে তাকেই বড় একটা থাবড়া দিয়ে সুপার বসিয়ে দিলেন! আমরা সবাই দেখলাম সাবির দা বিছানায় পড়ে কঁকিয়ে উঠলো!
এই আনন্দে শামিল হওয়া কিছু চালাক ছেলে যারা গেটের গোড়াতেই দাঁড়িয়েছিল, কোন অঘটন ঘটলেই সবার আগে পালাবে বলে, তারা পালাতে উদ্যত হল!কিন্তু তাদের সবাইকে টেক্কা দিয়ে এক লাফে সবার আগে টপকে পালালো লাইট ম্যান ইকবাল!
ইকবালের পেছনে দু একজনও হাওয়ার গতিতে গেল।সুপার হুংকার দিয়ে ঘোষণা করলেন, "একজন পালাবেনা বলে দিচ্ছি!"
এই পালানোর ক্ষেত্রে যেটা বড় মুশকিল হয়ে যায়, তা হল একজন শুরু করলেই বাকিদের থামানো যায়না। কিন্তু সেদিন কাজের কাজ কিছু হয়নি। সুপারের কথায় খুব দ্রুত গেট লক্ হয়ে গেল। মরিয়া হয়ে পলায়নের চেষ্টাকারী বেশ কিছু জন থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
সুপার ভীষণ রেগে গেলে আস্তে কথা বলেন। তিনি আস্তে করে বললেন, " কে পালালো?"
-"ইকবাল!" খুব ধীর গতিতে ঘরের বাতাসে এই নামটা একটা সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়ে থেমে গেল।
" ওর নামটা লিখে নাও!"
ইকবালের অদূর ভবিষ্যতে করুন অবস্থাটা আমরা সকলেই কল্পনা করতে পারলাম।
-"আচ্ছা কার জন্মদিন?"
বার্থডে বয় করুন দৃষ্টির মাধ্যমে উত্তর করল। উত্তর শোনা মাত্রই সুপার বাঘের ছুটে গিয়ে বার্থডে বয়ের চুলের মুঠি ধরে সেই মার। নতুন জামাকাপড়ে সেজে ওঠা বার্থডে বয় একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেল। আমরা রীতিমত ঘাবড়ে গেলাম। অন্তত অনীশকে বার্থডে বলে ছাড় দেবে, এ ভাবনায় আমাদের জল পড়ল। সাথে আমাদের ওপরেও পড়ল কম বেশি। কিন্তু বার্থডে বয়-কে যে এভাবে মেরে এলোমেলো করে দেবে সে কথা কেউ ভাবিনি।
সাথে অবশ্যই বলা উচিত যে সেদিন ডান্সারকেও এমনি ঘুরিয়ে বেকিয়ে মেরেছিলেন যে, আমরা ভাবছিলাম, দেলওয়ার ডান্সের স্টেপ - ই হয়তো দিচ্ছে।
এই হল ভাই জন্মদিনের কেচ্ছা!
আশাকরি খুব ভালো লেগেছে এই বিশেষ গল্প পড়ে। এমনকি হাস্যরসবোধের গল্প মাঝে মাঝেই নিয়ে আসবো আপনাদের জন্যে। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।