|| বই হোক ছোটদের উপহার ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

ছোটদের বই পড়া ধীরে ধীরে বিরল হয়ে উঠছে। আমরা ছেলেবেলায় কত হাসির কবিতা, ছড়া, ভুতের গল্প পড়তাম। কিন্তু আজ শিশুদের অবস্থান খুবই কঠিন জায়গায়। ভিডিও গেমের জমানায় শিশুরা চার দেওয়ালের মাঝে আটকে আছে। এই ক্ষুদে বন্দীদের কারা উদ্ধার করবে? অবশ্যই আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলকে।

old-books-436498__340.jpg

Source

আজ হটাৎ করেই ছেলেবেলার একটা প্রিয় কবিতা ' কাতুকুতু বুড়ো ' মনে পড়ে গেল। এই ধরনের কবিতাগুলো আমাদের ছেলেবেলা ভরিয়ে রেখেছিল। আজকাল সেরকম ভাবে বাংলা কবিতা শিশুদের পড়ানো হয় না। একটা শিশুর পূর্ণ মানসিক বিকাশে এ ধরনের কবিতা পড়া কতটা জরুরী তা আমরা জানি। কিন্তু এই সময় শিশুদের হাতে ভিডিও গেম তুলে দেওয়া হচ্ছে, আমি জানিনা এর মাধ্যমে একটা শিশুর সার্বিক মনোবিকাশ হয় কিনা? আমার মনে হয় তা সম্ভব নয় কেননা ইনডোর ও আউটডোর এর মধ্যে একটা পার্থক্য তো আছে।
আমরা সিনেমার পর্দায় পাহাড় দেখি তার ফলে আনন্দ হয়, কিন্তু সেই পাহাড় দেখা তো চোখের সামনে দেখার মত নয়, সরজমিনে দেখার মত তো আর হতে পারে না।
একটি শিশুর সমস্ত দিক দিয়ে বিকাশ করার জন্য চার দেওয়াল আর ভিডিও গেম নয়, বাইরের প্রকৃতি দেখা উচিত। বাইরের পৃথিবী দেখা উচিত। পড়া উচিৎ নানান বই। পড়া উচিত গল্প, কবিতা।
আমি কবিতার কথা বলছি কিন্তু এখনকার ছেলেরা সেই সমস্ত উপাদান নিয়ে কতটা বিকাশ সাধন করতে পারে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে! কারণ তাদের এসবে আগ্রহ নেই!
তারা আগ্রহ হারাচ্ছে বা তাদের এই আগ্রহীনতার কারণ হতে পারে তাদের সেরকম চর্চার অভাব। আমাদের বাল্যকাল স্মরণ করলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই লাইনগুলো মনে পড়ে, যেমন তিনি লিখেছিলেন, "আজ মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিন।"
ঠিক এগুলোই আমরা সহজে রিলেট হতে পারতাম, কারণ আমাদের শৈশব ছিল এ ধরনের লেখার সাথে প্র্যাকটিকালি পরিচিত। আমরা জঙ্গল চিনেছি আশেপাশে বন বাদাড়ে হেটে ঘুরে, কিন্তু এখনকার শিশুরা কখনোই জঙ্গলে বা একটু বনের মাঝে হাঁটার সুযোগ পায় না, কারণ সময় বদলেছে, এখনকার ছোটরা সেভাবে ছাড় পাচ্ছে না, যেটা আমরা পেয়েছি। আমরা মাঠে গিয়ে আগুন জেলে সবাই মিলে কত কি রান্না করতাম। কখনো কখনো পায়েশও করে ফেলতাম। তাই সে সমস্ত কবিতা, লেখাগুলো আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল। কিন্তু এখন একই বয়সের শিশুদের কাছে সেই কবিতা গল্পে আগ্রহ প্রকাশ করছে না।
এখনকার বড় বড় মলে শিশুদের খেলার জন্য কত কিছু রয়েছে। বড় একটা গ্যালারি রয়েছে। তার মধ্যে নানান খেলনা সামগ্রী। ভিডিও গেম কতকিছু। কিন্তু আজ থেকে ১৫ বছর আগেও আমাদের উপহার হিসেবে হাসির ছড়া, ভুতের গল্প ইত্যাদি বই দেওয়া হত। কোন অনুষ্ঠানে প্রথম হলে একজন ছাত্রকে বই টাই দেওয়া হতো।
এখন কোন অনুষ্ঠানে বই দিতে দেখি না। না কোন কবিতার বই না কোন গল্পের বই।
ছেলেদের হাতে মেডেল তুলে না দিয়ে একটি করে বই দিলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরী বলে আমার মনে হয়। শিশুদের সঠিক মনের বিকাশ করতে হলে আমার মনে হয় তার জন্মদিনে ভালো ভালো বই তুলে দেওয়া উচিত।
সুকুমার রায়ের কবিতার বই তুলে দিন। অথবা কবি সুকান্তের বই দিন। অথবা শরৎচন্দ্র। আরও অনেকেই আছে সঠিক চারিত্রিক গঠনে বই দরকার। আজ সে পদ্ধতি একেবারেই বিরল হয়ে উঠেছে।
ছোটদের হাতে ভিডিও গেমের বদলে বই তুলে দেওয়ার পক্ষপাতিত্বে আজকের লেখা।
আমাদের সকলেরই ছেলেবেলার প্রিয় একটি কবিতা ' কাতুকুতু বুড়ো ' নিচে পোস্ট করলাম। সকলেই একবার নিজের ছেলেবেলাকে একটু ঝালিয়ে নিতে পারেন।

কাতুকুতু বুড়ো

সুকুমার রায়

আর যেখানে যাও না রে ভাই সপ্তসাগর পার,
কাতুকুতু বুড়োর কাছে যেও না খবরদার!
সর্বনেশে বৃদ্ধ সে ভাই যেও না তার বাড়ি-
কাতুকুতুর কুলপি খেয়ে ছিঁড়বে পেটের নাড়ি।
কোথায় বাড়ি কেউ জানে না, কোন্‌ সড়কের মোড়ে,
একলা পেলে জোর ক’রে ভাই গল্প শোনায় প’ড়ে।
বিদ্‌ঘুটে তার গল্পগুলো না জানি কোন দেশী,
শুনলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশি।
না আছে তার মুণ্ডু মাথা না আছে তার মানে,
তবুও তোমায় হাসতে হবে তাকিয়ে বুড়োর পানে।
কেবল যদি গল্প বলে তাও থাকা যায় সয়ে,
গায়ের উপর সুড়সুড়ি দেয় লম্বা পালক লয়ে।
কেবল বলে, “হোঃ হোঃ হোঃ, কেষ্টদাসের পিসি-
বেচ্‌ত খালি কুমড়ো কচু হাঁসের ডিম আর তিসি।
ডিমগুলো সব লম্বা মতন, কুমড়োগুলো বাঁকা,
কচুর গায়ে রঙ‐বেরঙের আল্‌পনা সব আঁকা।
অষ্ট প্রহর গাইত পিসি আওয়াজ করে মিহি,
ম্যাও ম্যাও ম্যাও বাকুম বাকুম ভৌ ভৌ ভৌ চীঁহি।”
এই না বলে কুটুত্‍‌ ক’রে চিম্‌টি কাটে ঘাড়ে,
খ্যাংরা মতন আঙুল দিয়ে খোঁচায় পাঁজর হাড়ে।
তোমায় দিয়ে সুড়সুড়ি সে আপনি লুটোপুটি,
যতক্ষণ না হাসবে তোমার কিচ্ছুতে নাই ছুটি।

আজ এই অব্দি। আগামীকাল আবার একটি নতুন লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Sort:  
 2 years ago 

অনেক ভাল একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন।আমিও আপনার সাথে একমত।আমিও বেশ কিছুদিন থেকে উপহার হিসেবে বই দেওয়া শুরু করেছি।এতে তাদের সব দিক থেকেই লাভই হবে।

 2 years ago 

হ্যাঁ আমরা সকলে এ বিষয়ে তৎপর হলে অনেকটাই সমাধান হয়। কারণ একটা শিশু আমাদের দেখেই শেখে, এটা যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে। অতএব বিষয়টা সহজ হবে।

 2 years ago 
ভাইয়া ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আজকাল কেউ এভাবে ভাবে না। বই গিফট করার প্রচলন প্রায় উঠে যাচ্ছে বললেই চলে।

ছোটদের হাতে ভিডিও গেমের বদলে বই তুলে দেওয়ার পক্ষপাতিত্বে আজকের লেখা।

এখনকার বাচ্চাদের একটি বড় নেশায় পরিনত হয়েছে এই মোবাইলে গেম খেলাটা। এগুলো রুখতে হবে।

 2 years ago 

আমরা যে ভাবে একটা শিশুকে বড় করবো, সেভাবেই হবে হবে, বই হাতে দিকে শিশু নিশ্চয় বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ধন্যবাদ আপনাকে দাদা মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন ভাইয়া বই মানুষের পরম বন্ধু । বন্ধু বন্ধুকে ক্ষতি করতে পারে কিন্তু বই কখনো মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। তাই আমাদের বইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করাই উচিত কারণ বই কখনো মানুষকে ঠকায় না। ছোটদের বই উপহার দেওয়া উচিত কারণ ছোটরা ছোট থেকে বই প্রেমিক হলে বড় হলেও তারা বই পড়তে আগ্রহী হবে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

একটা সময় ছিল যখন ছোটরা গল্পের বইয়ের নাম শুনলে পাগল হয়ে যেত। ছোটবেলা গল্পের বইয়ের জন্য কতকিছু করেছি। কিন্তু এখন পুরো তার উল্টো চরিএ। সত্যি অনেক দূরঅবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা।

কাতুকুতু বুড়ো কবিতা টা বেশ মজার। আমারও বেশ ভালো লাগত।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 69220.19
ETH 2745.41
USDT 1.00
SBD 2.74