স্বরচিত-পুঁচির ডায়েরি|| ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox ও ৫% @abb-school এর জন্যে
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। গতকাল আপনাদের সাথে পরিচিতিমূলক পোস্টে আমার কিছুটা আলাপ হয়েছিল। আজ থেকে আমার পথ চলা শুরু আপনাদের সাথে। আমি যে লেখালিখি করি, কাল সেটা জানিয়েছিলাম, এই প্রথম নিজের লেখা শেয়ার করছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
কুটিদা,
কুটিদা কোথায় আছিস? তুই ফিরে আয়! এবার আমিই তোর আড়ি ভাঙ্গাবো! মায়ের কাছে আর তোর নামে নালিশ করবো না। আর হ্যাঁ, খুশির কথা, তোর জন্যে লাল-ক্ষীরের বাটি কেনার বন্দোবস্ত করছি! তিথি পিসির দোকানে ফের আজ পাঁচ টাকা দিয়ে এলাম। কুড়ি টাকা পুরতে আর দেরি নেই বুঝলি, মাত্র চার টাকা লাগবে আর, ওটা বাবার থেকে চুরি করে নেবো ভাবছি! পিসি বলেছে লাল-ক্ষীরের বাটি তো দেবেই, সাথে একটা রসকদম্ব ফাও! আমাকে ভালোবাসে কিনা তাই!
পুলক-মামার ছেলে তাতান হাঁটতে শিখেছে জানিস, ওই এখন সাথে যায় আমার। খুব ভালো ছেলে, খালি মাঝেমধ্যে গোঁসা করে কোলে চড়বে বলে, পথের মধ্যে হটাৎ করে দাঁড়িয়ে যায় মুখ ভার করে, তখন ওকে নড়াতে পারবিনা, কোলে নিতেই হবে! আজ ওকে একটা ডাটিওলা চকোলেট কিনে দিয়েছি, ওটা পেয়ে ও খুব খুশি!
Image source : Pixabay
এ কদিনে কত গল্প জমেছে জানিস, কেউ আমার গল্প শোনেনা! আমাদের পোষা কাঠবেড়ালি দুটো মারা গেছে! ভোর-ভোর উঠে গিয়ে দেখি গাছতলায় পড়ে! তোকে ওরা ভালো বুঝত, তুই থাকলে হয়তো অমন দশা হতো না। আমার খুব মন খারাপ হয়েছে, খুব কেঁদেছি! ছোট ডালিমগাছটাও কোন বে-আক্কেলে কেটে ফেলেছে, ধরতে পারিনি! এতে তাতানেরও বড্ড মন খারাপ, ওকে বলেছিলাম, ডালিম বড়ো হলে তোকে একটা দেবো, খাস! তাই সেও একটা আশা নিয়ে বসে ছিল কিনা!
তুই ফিরে আয় কুটিদা। আবার কাপড়ের-পুতুল বানিয়ে খেলা করব আমরা। মিষ্টির খালি ভাঁড়ে চাল ভাজব। তোর মনে পড়ে, একবার ভাঁড়ে করে চাল ভেজেছিলাম, ছোটো ছোটো ঠোঙায় দিয়েছিলাম সব্বাইকে, বড়োজেম্মা তোর কিনা তারিফ করেছিল! না, ছেলেটা কাজের ছেলে হবে। ছোটো দাদুও চালভাজা পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল সেদিন! কুটি'র হাতে ভাজা! শুধু মা বকেছিল, " আগুন জ্বালিয়ে খেলা করছ, যদি কিছু হয়ে যায় একটা! এরপর এমন করলে দুজনকে ধরে আচ্ছা করে পেটাবো, এই বলে দিলুম....!"
তুই জানিস না কুটিদা, একদিন বাড়িতে তুমুল ঝগড়া হয়েছিল, তারপরের দিনই বড়োজেম্মা, ছোটদাদু আর জেঠু চলে যায়। কোথায় গেছে জানিনা। বড়ো একটা গাড়ি এল, আলমারি শোকেস , বাক্স খাট তোষক-সোফা সব তুলে নিয়ে গেল! বড়জেম্মা শুধু তাঁর চীনামাটির প্রিয় গণেশটা আমায় দিয়ে গেছে, আর দিয়েছে আধকোটা কিসমিস! বলে গেছে আমায় মনে পড়লে গণেশটার দিকে দেখিস পুঁচি! আমায় কোলে করে সেদিন খুব কেঁদেছিল বড়ো জেম্মা!
তারপর অনেকদিন হল, ওদের দেখিনি, কুটিদা। ছোটদাদুকে বর বলে ডাকতে পাইনা। বাবা-মা আমায় মারলে বড়োজেম্মা ছুটে আসতো, এখন কেউ বাঁচাতে আসেনা, যেন মেরে ফেললেই সব খুশি!
আমাকে নতুন স্কুলে দিয়েছে। কিন্তু আমি স্কুল যায়না! ওরা রোজ মারে তবুও যায়না। নতুন স্কুল আমার ভাল্লাগে না, কুটিদা!
কাকু কাকিমা বিষ্টুদা, ফুলন'দি আর বাবা আমায় সারাক্ষণ চোখ রাঙিয়ে দ্যাখে! আমি নাকি শয়তান হয়েছি! বিষ্টুদা বলে, "পল্টু ঘোষালদের বাড়ির ছেলে-পিলের মত হয়েছে এ। একে ধরে পেটো। বেয়াদব একটা!"
ফুলন'দি কে বলেছিলাম তোর কথা, "আচ্ছা দি কুটিদা আসেনা কেন গো, বলতে পারো কোথায় গেছে?"
সেইদিন মাত্র ফুলন'দি আমায় আদর করেছিল, বুকে জড়িয়ে বলেছিল, "কুটি অনেকদূর গেছে রে পুঁচি! আর কোনোদিন ফিরবেনা!"
ফিরবে না কেন ? তিতলির কাকুও অনেকদূর গেছিল, সেতো দিব্যি ফিরেছে! ফুলন'দির কথায় আমার বিশ্বাস নেই! সেতো আমায় ভালবাসেনা, রোজ খাটায়! যা জল নিয়ে আয়, আলমারির বইটা সোজা কর! ইংরেজি বইটা নিয়ে আয়, একটু ভুল হলে চেঁচিয়ে বলে, উফ, আমি টেক্সট-বুক বলেছি, গ্রামারটা নিয়ে এলি কেন গাধা! যা রেখে আয়, এরপর যদি ভুল হয় সেই মার খাবি! সবাই শুধু আমায় মারতে চায়!
তুই না একবার বলেছিলি, কেষ্টদের সাথে ছিপ নিয়ে ঢোলঘাটের বিল গেছিলি মাছ ধরতে, বাড়িতে না বলে আমিও একদিন চুপিচুপি গেছিলাম তোকে খুঁজতে ঢোলঘাটের বিল, যদি পায় খুঁজে, কিন্তু পাইনি, পরে ফুলন'দি মাকে বলে দেয় সে কথা। কি বদমাশ ফুলন'দি টা বল দেখি! শুধু শুধু মায়ের হাতে মার খাওয়ায়। ওরা তো আর জানেনা আমি কেন গেছিলাম।
Image source : Pixabay
ছাড় বাদ দে, তুই এলেই আমি খুশি! জানি তুই আসবি! আমার কথা ফেলতে পারবি না!
কাকিমা কাল বড়ো হল্লা করেছে! ওর ফিতে কেনার পনেরো টাকাটা আমি চুরি করেছি। সবাই আমায় সন্দেহ করছে! কাকিমা বাড়ি বাজিয়ে বলেছে, "এ টাকা পুঁচি ছাড়া কেউ নেয়নি, ওকে আমি কাল ঘরে ঘুরফুর করতে দেখেছি, মতলব ভাল ঠেকছিল না। ও কুটির মা, মেয়েটাকে কিছু বলো গো, বাড় দিওনা, এভাবেই ছেলেপিলে চোর বনে যায়! একটু ধমক দাও মুখ খুললে খুলতে পারে!"
এরপর মা খুব মেরেছে আমায়, তবুও মুখ খুলিনি কুটিদা। আমার যে পয়সার দরকার। ঝাবু বুড়োকে দিতে হবে। কেষ্ট বলেছে ঝাবু-বুড়ো হাজার রকম মন্তর জানে। কালিন্দ্রি শসানের পেছনে সে থাকে। লাল লাল চোখ। কেউ যদি হারিয়ে যায় তাহলে সে বলে দিতে পারে মানুষটা কোথায় আছে! আমি জানি তোর কথাও ঝাবুবুড়ো ঠিক বলে দেবে। দ্যাখ আমি তোকে ঠিক ফিরিয়ে আনবো।
ইতি --
তোর বোন পুঁচি
এরকম এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মে নিজের লেখা শেয়ার করতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। এরকম আরও লেখা আপনাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা আছে। সকলের জন্য শুভ কামনা।
@tarique52
নিউ মেম্বার হয়ে এত সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাই, যা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। হয়তো আমার অনুভূতি গুলো মনে মনে ফিল করতে পারবেন। আপনার এত সুন্দর পোস্ট করার সাথে সাথে আমি আপনাকে একটি ভোট দিয়ে দিলাম। আশাকরি পুনরায় এমন সুন্দর সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন আপনি।
আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম। এবং আপনার সহযোগিতামূলক মননটাও প্রশংসনীয়। নিশ্চয় আরো ভালো লেখা আসবে। ধন্যবাদ।
এটা কি আপনার নিজের লেখা?
জাস্ট অসাধারণ ছিল ভাই।পুরো লেখা টি পড়ছিলাম আরণে হচ্ছিল প্রফেশনাল কোনো লেখকের উপন্যাস পড়ছি।সেই ছিল,চালিয়ে যান এভাবে শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
বড় আগ্রহ নিয়ে আমার লেখাটা পড়েছেন, তার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে, এটাই আমার প্রাপ্তি আর হ্যাঁ এটি আমার নিজস্ব রচনা।
বাহ খুব সুন্দর একটি কাহিনী লিখেছেন। পড়তে বেশ মজা পেয়েছি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ দিদি। আপনারও শুভ হোক।
তুই তো জানিস , আওয়াজ করে পড়তে আমার ভালো লাগে।মনে মনে পড়তে পারিনা। তোর লেখা টাও আওয়াজ করে রিডিং দিচ্ছিলাম। যত লেখাটা এগোতে থাকলো গলা দিয়ে আর আওয়াজ বেরোয়না। চুপ হয়ে গেলাম। মনে মনে পড়তে লাগলাম। পুঁচির জায়গায় নিজেকে ভাবতে লাগলাম। আমারও তো কত কী হারিয়ে গেছে রে!
লেখাটার শেষের দিকে এসে তোর এই ছিঁচকাঁদুনে বন্ধু মান টা রাখলো।
পুরো অনুভূতি টা বললাম। কেমন লেগেছে আমার, সেটা হয়তো আর ব্যাখ্যা দিতে হবেনা। ভালো থাক।এগিয়ে যা।
একটা শিশুর ক্ষুদ্র হৃদয়ের নানান ছোট-ছোট ভাবনাগুলো, ব্যাথা-বেদনা আনন্দ ও অনুভূতিগুলো সাধারনত কিভাবে ধাপে ধাপে বড়দের রাগ-জেদের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে তাই দেখাবার চেষ্টা করেছি। তোর অনুভূতিটা আমি বুঝতে পারছি, তোর কথা শুনে বোঝা গেল, তোর নরম হৃদয়টা সেই ক্ষুদ্র হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছেছে!