|| ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি 'দার্জিলিং জমজমাট' সিরিজটির রিভিউ ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আজ ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি 'দার্জিলিং জমজমাট' সিরিজটির রিভিউ সম্পূর্ণ হল। গতকাল তিনটি এপিসোডের রিভিউ আমি দিয়েছিলাম। আজ বাকি তিনটি রিভিউ দিলাম এবং কাহিনীর বর্ণনা সহ সিরিজটির ওপর আমার ব্যাক্তিগত অভিমত প্রকাশ করলাম। এই আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া পড়তে পারেন আপনিও।

IMG_20220809_232032.jpg

স্ক্রীনশট: ইউটিউব

প্রাইভেট ডিটেকটিভ ফেলুদার উপস্থিতি ওই তল্লাটে সবাই তখন জানেন। খুনির তালিকায় যাদেরকে ধরা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের সাথে ফেলুদার একবার না একবার কথা হয়েছে। এখন শুধু খুনিকে সনাক্তকরণ করবার পালা। কিন্তু বিষয়টি এতটাই জটিল যে কোনভাবে সনাক্তকরণ কার্য সহজ হয়ে উঠছে না। প্রত্যেককেই সমান দোষী ও অপরাধী মনে হচ্ছে। যুক্তির বিচারে কিন্তু খুন তো সবাই আর করেনি!

ফেলুদা চিন্তার মধ্যে পড়লেও তিনি ছাড়বার পাত্র নন।ফেলুদা সম্বন্ধে সকলেরই একটা আন্দাজ আছে যে ফেলুদা খুব ভালো একজন গোয়েন্দা, তাই খুনিও খুন করে শান্তি পাচ্ছিলেন না।
একবার দেখা গেল পাহাড়ের রাস্তা ধরে ফেলুদা তোপসে এবং লালমোহন বাবু হাঁটছেন, এমন সময় চোখে কালো চশমা পরিহিত কপাল-মাথা ঢাকা এক ব্যক্তি পেছন থেকে ফেলুদাকে ধাক্কা মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। ফেলুদা পড়ে গিয়েও কোনরকমে গাছের শিকড় ধরে ও দুজনের সহযোগিতায় সে যাত্রায় বেঁচে যান।
উপরে উঠে বেশ অবাক হয়ে ভাবেন যে তাকে এইভাবে ধাক্কা দেওয়া কেন হল? চতুর ফেলুদার কাছে বিষয়টি অন্য দিকে মোড় নেয়। তিনি এটুকু বুঝতে পারেন যে খুনিকে ধরতে খুব বেশি দেরি হবে না।
তারপর ক্রমশ গল্প এগিয়ে যায় প্রত্যেক সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাথে আলাদাভাবে কথা বলেন ও তল্লাশি চালিয়ে যান। কিন্তু একটা জায়গায় এসে ফেলুদা দাঁড়িয়ে পড়েন! দাঁড়িয়ে পড়েন যাকে সবথেকে কম সন্দেহ করা হয়েছিল সেই ব্যক্তির কাছে অর্থাৎ দার্জিলিঙে মিস্টার মজুমদারের বাংলোই শুটিং করতে আসা টিমের যিনি হিরো তার কাছে।

ফেলুদাকে যে ব্যক্তি ধাক্কা মারেন তাকে তো দেখা যায়নি, ধরা যায়নি কিন্তু তার পারফিউমের গন্ধ ফেলুদা পেয়েছিলেন এবং এই গন্ধের সাথে হিরোর পারফিউমের গন্ধ মিশে যাচ্ছে এখানে ফেলুদার সন্দেহটা আরো বেশি গভীর হয়।
তারপর সেইদিকে তিনি গভীর অনুসন্ধান ও তল্লাশিতে মনোনিবেশ করেন এবং তারপরেই বেশ বড় একটা ক্লু পেয়ে যান। হিরোটিকে জেরা করার সময় যে জবানি তিনি পেশ করেন পরে দেখা যায় সেই জবানের সাথে কিছু কিছু মিল একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। হিরোটি বলেন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোয়েঙ্কা কলেজে বি.কম. করেছেন কিন্তু সেই বছরের গোয়েঙ্কা কলেজের তালিকা খুঁজতে গেলে দেখা যায়, এই নামের কোন ছাত্র সেখানে নেই।
তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায় হিরোটির আসল নাম বিষ্ণুদাস বালপোরিয়া। এবং মিস্টার মজুমদার মৃত্যুর প্রাক মুহূর্তে একটি খাতায় এলোমেলো ভাবে কলম দিয়ে ' বিষ ' শব্দটি লিখেছিলেন। এরফলে সকলের সহজেই ভেবে ফেলেন যে বিষ দিয়ে মিস্টার মজুমদারকে হত্যা করা হয়েছে। এই কারণটির জন্যই আরো বিষয়টি জটিল হয়ে যায়। কিন্তু মিস্টার মজুমদার এর বুকে ছুরির আঘাতও দেখা যায় এবং ছুরি বসানো ছিল। তাহলে বিষ শব্দটি কেন লেখা হয়েছে যেখানে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে? এ বিষয়টি কোনভাবেই ধরা যাচ্ছিল না।
কিন্তু ফেলুদার চোখ থেকে কোনো কিছুই বাদ যায়না। মূলত পারফিউম, নামের মিল ও মিথ্যে জবানের উপর ভিত্তি করে তিনি আরো গভীর তল্লাশি চালান ও দেখা যায় জটলার গিট সেদিকেই খুলছে! সেই হিরো এক সময় মিস্টার মজুমদারের আন্ডারে কাজ করতেন। মিস্টার মজুমদার তার বস ছিলেন। সেই সময় বহু অঙ্কের টাকা লোপাট করে বিষ্ণুদাস বালপোরিয়া পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে সিনেমায় নিজের ক্যারিয়ার তৈরি হয়ে গেলে তিনি সেদিকেই সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। সিনেমা শুটিং এর সূত্রেই তিনি দার্জিলিং আসেন। শুটিং এর জন্যে পরিচালকের একটি বড় বাংলো দরকার পড়ে, পরিচালক সাহেব মিস্টার মজুমদারের বাংলো টাকেই বেছে নেন, এবং সেই সূত্রে মিস্টার মজুমদারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে যান মিস্টার মজুমদার ও বিষ্ণুদাস বালপোরিয়া। প্রথম দেখাতে দুজন দুজনকেই চিনতে পারেন। কিন্তু তখনই কিছু বলেন না মিস্টার মজুমদার। আড়ালে গিয়ে তাকে যখন জিজ্ঞেস করেন যে, " আপনি তো সেই ব্যক্তি যে আমার টাকা লুট করে পালিয়েছিলেন।" তখন হিরো সেটা অস্বীকার করেন এবং ওই মুহূর্তে মিস্টার মজুমদার তাকে , "ইউ আর এ লায়ার!" বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। বিষ্ণুদাস বালপোরিয়া ওরফে হিরো ভয় পেয়ে যান, যদি তার এই সমস্ত তথ্য বাইরে প্রকাশ হয় তাহলে তিনি ফেঁসে যাবেন এবং তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে, যেভাবে তিনি ধরা পড়ে গেছেন, মিস্টার মজুমদারের হাত থেকে তিনি আর রেহাই পাবেন না। তখন তিনি হঠাৎ করে একটি চাকু নিয়ে মিস্টার মজুমদারের বুকে খুব জোরে বসিয়ে দেন এবং মিস্টার মজুমদারের সেই মুহূর্তে মৃত্যু হয়।
এভাবেই ছোট ছোট সূত্র ধরে ফেলুদা এই জটিল রহস্যটি উদঘাটন করেন।
অভিনয়, কাহিনী সমস্ত দিক দিয়ে বিচার করলে এটা একটা সফল রহস্য সিরিজ।

সিরিজটি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

সিরিজ : ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি 'দার্জিলিং জমজমাট'

পরিচালক : সৃজিত মুখোপাধ্যায়

প্লাটফর্ম : হইচই

সিজন : ১

এপিসোড : ৬

কাস্ট : টোটা রয় চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কল্পন মিত্র
বরুণ চন্দ সহ আরো অনেক শিল্পী।

বন্ধুরা আজ এই অব্দি রইল। আবার নতুন একটা লেখা নিয়ে আগামীকাল হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Sort:  

ভাই, আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি 'দার্জিলিং সিরিজটির রিভিউ পোস্ট করেছেন। পড়ে অনেক গোয়েন্দাগিরি জানতে পারলাম। ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গোয়েন্দাগির রিভিউ পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ দাদা। সিরিজ রিভিউটি সময় নিয়ে পড়বার জন্য।

 2 years ago 

এই সিরিজ টার কথা অনেক শুনেছি কিন্তু হইচই এর সাবস্ক্রিপশন না থাকার কারণে দেখা হয়ে উঠে নি।তবে যাইহোক রিভিউ টি ভালো লিখেছেন।যদি কখনো সুযোগ হয় অবশ্যই দেখব।

 2 years ago 

হ্যাঁ দেখতে পারেন। আশা করি নিরাশ হবেন না , ভালো লাগবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 69076.52
ETH 2742.00
USDT 1.00
SBD 2.72