কোলকাতার পুরনো বাড়িগুলো|| ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox ও ৫% @abb-school এর জন্যে
আজ আকাশের মন ভার ছিল। ঢলঢলে মেঘ। বৃষ্টি হবো হবো। বিকেল বেলায় ঘর থেকে বেরোনোর পর আকাশের অবস্থা দেখে পুনরায় ঘরে ফেরা সংগত ছিল। কিন্তু আমার কোনো মতেই আর ফিরতে ইচ্ছে হলনা। গোটা দিন ঘরে থেকে কি সব আজগুবি চিন্তা মাথায় জটলা পাকিয়ে বসে। দিনের বেলা আমার ঘুম হয়না। চেষ্টা করলেও হয়না। দুপুরবেলা সবাই দিব্যি ঘুমায়, আজ অব্দি আমার ঘুম এলো না। বাবা-মার বকুনিতে আগে চেষ্টা করতাম ঘুমের, কিন্তু ইচ্ছে আমার কখনোই ছিল না।
আজ একরকম উদ্দেশ্যহীন ভাবে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কোথায় যাব তার কোন প্ল্যান আগে থেকে নেই। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলোপাথাড়ি হাঁটতে শুরু করি। আমি আগেও উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটেছি। ভুলভাল রাস্তায় চলে যাওয়াটাই বোধ হয় এভাবে বেরোনোর একটা উদ্দেশ্য। মন ভালো না থাকলে হারানোর রাস্তায় যেন আমি খুঁজি এবং একরকম ভালোই লাগে হারিয়ে যেতে।
আকাশে মেঘ। নিচে ঝোড়ো বাতাস। এসবের তোয়াক্কা না করে আনমনে হেটে যাচ্ছিলাম। একসময় হঠাৎ খেয়াল হলো পুরনো একটা বাড়ি দেখে যে আমি একেবারেই অচেনা একটা রাস্তায় চলে এসেছি।
কলকাতা পুরনো বাড়ি আমার খুব ভালো লাগে। উঁচু উঁচু অট্টালিকা ও আধুনিক বাড়ি গুলোর মাঝে এরকম বহু বর্ষের পুরনো বাড়িগুলো দেখে রহস্যময় মনে হয়। খানিক মায়া লাগে বলা যেতে পারে। মনে হয় এসকল বাড়ির সমবয়সী বন্ধু-বাড়ি গুলো আর নেই। কোন কালে হারিয়ে গেছে। মনে হয় এরা যেন তাদের বন্ধুদের বহুকাল আগে হারিয়ে একেবারে বৃদ্ধ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়ে আছে অচেনা তরুণ এক শহরের মাঝে, যারা তাদের চেনা কেউ নয়। বাড়ি গুলো দেখে তাজ্জব হয় মাঝে মাঝে। কত কারুকার্যে ভরা বাড়ির দালানগুলো। একমনে চেয়ে থাকলে মুহূর্তে ১০০ বছর পিছিয়ে যায়, তখন কি এমন শহর আর ছিল! এমন রাস্তা বা এমন গাড়ির চলাচল কি আর ছিল! একটা সময় এই বাড়ির মালিক ছিল। এই বাড়িতে কত পুরুষ কত নারী কত ছেলে বুড়োর সময় কেটেছে। তারা এই বাড়িকে ভালবেসে কত সুন্দর নাম দিয়েছে। কিন্তু আজ ভগ্নহৃদয় বাড়ি খানা দাঁড়িয়ে থাকলেও সে বাড়ির মালিক ও বাড়ির ঘরে বারান্দায় চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো আর নেই। তারা কবে এই পৃথিবীর বুক ছেড়ে চলে গেছে।
যখন সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা ভাবি, তারা যদি জানতে পারে তাদের ভগ্নহৃদয় বাড়িগুলো কত অযত্নে পড়ে আছে কত অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে তবে তাদেরও হৃদয় বোধহয় এ কেঁদে উঠত। একসময়ের ঝাড়পোঁছ ও যত্ন করে রাখা বাড়ির ছাদ গুলোই যেন এখন বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। বড়-বড় গাছ, অগণিত লতা কার্নিশ পাকিয়ে, ছাদে বিছিয়ে নিজস্ব মালিকানা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি গোটা কতক ছবি তুলে এবং একরকম নিরাশ হয়ে সে বাড়িটাকে বিদায় জানিয়ে ফিরে এলাম।
এই পুরনো বাড়ি দেখতে গিয়ে কত কিছুর যে হিসেব খুলে যায় তার ইয়াত্তা নেই। এই পৃথিবীতে কেউ বহুকালের জন্য নয় সবাই কয়েকদিনের জন্য আসে। আবার কালের সাথে হারিয়ে যায়। কত প্রজন্ম এল কত গেল তার হিসেব করা মুশকিল। অথচ মানুষ যেভাবে জীবন যাপন করে তাতে মনে হয় এ পৃথিবীতে বহুকাল থাকতে এসেছে । আমাদের প্রথমে এমন জ্ঞান করা উচিত, আমাদের এভাবে চোখ খুলে গেলে অহেতুক লোক গুলো কমে যাবে। কমে যাবে মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার । পৃথিবীতে মুহূর্তে-মুহূর্তে কত কত অন্যায় অবিচার হচ্ছে তার সীমা নেই।
আমি তখনো চেনা রাস্তায় ফিরিনি। ফেরার আগেই দেখি হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো। আমি ফাঁকা রাস্তায় হাঁটছিলাম। শেষমেষ ভিজে যেতেই হলো অর্ধেকটা। অবশ্য জলের হাত থেকে বাঁচতে পাশের দোকানগুলিতে আশ্রয় নিতে পারতাম কিন্তু যখন ভিজেই গেছি তখন আর দাঁড়ালাম না। এবং বহুদিন বৃষ্টিতে না ভেজার কারণও হতে পারে, এই না দাঁড়ানো। সে যাক, ভিজতে ভিজতে ফিরলাম। সাথে ধুয়ে গেল অনেক ব্যথা বেদনা এই হটাৎ বৃষ্টির জলে। আমি যখন ঘরে প্রবেশ করলাম তখন দেখি আমার মন অনেকটাই হালকা হয়েছে।
আজ এই অব্দি। আগামী কাল আবার একটি নতুন লেখা ও নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বন্ধুদের সামনে হাজির হব। ততক্ষন ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
লোকেশন : J9GJ+P4J
https://goo.gl/maps/hXeURUNTNuYjw5Z1A
ক্যামেরা ডিভাইস : স্যামসং গ্যালাক্সি এ ফিফটি টু
আহারে বৃষ্টিতি ভিজে আবার ঠান্ডা জ্বর বাঁধিয়ে নেননি তো। আমি বাংলাদেশে থাকি। তাই কলকাতার ঐ সব পুরানো বাড়ি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে এগুলো সম্ভবত ব্রিটিশ পিরিয়ডের সময় তৈরি কী আশ্চর্য এখনো সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেক সুন্দর ছিল আপনার ঘোরাঘুরি টা। মেঘলা আকাশে এমন অচেনা বাড়ি বাহ।
মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভেজা ভালো। মাঝে মাঝে জ্বর হওয়াটাও মন্দ নয়। তবে এখনও অব্দি কিছু হয়নি দাদা। সুস্থ আছি। আপনার এই সমব্যথী হৃদয়খানি বেঁচে থাক। ভালোবাসা।
এইরকম পুরনো বাড়িতে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে আমি ভীষণ পছন্দ করি। কিছুদিন আগেও আমরা সবাই মিলে একটি পুরনো বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। খুবই ভালো সময় কাটে। খুব সুন্দর ভাবে আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন আপনার ঘুরাঘুরির এত সুন্দর মুহূর্ত। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
হ্যাঁ দিদি, ঠিকই বলেছেন যেকোনো ওল্ড হেরিটেজে ঘুরতে যেতে ভালো লাগে। অল্পসময়ের জন্যে হলেও মনে হয়, চেনা জগৎ ছেড়ে দূরের কোথাও এসেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্যে।
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া বৃষ্টির জলে অনেক কিছু ,ব্যথা বেদনা মুছে যায়। বেশ ভালো লেগেছে কলকাতার পুরনো বাড়ি ঘর গুলো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পুরনো বাড়ি গুলো ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। পুরনো বাড়ি গুলো দেখতে অনেকটা ভুতুড়ে বাড়ির মতো মনে হয়।
হ্যাঁ পুরনো বাড়ি দেখলে ভুতুড়ে লাগে বেশ। এবং সহজেই নস্টালজিক হওয়া যায়। ধন্যবাদ অনেক মন্তব্য করার জন্যে।
এই ধরনের পোস্টে লোকেশন এবং ক্যামেরা ডিটেইলস দেয়া উচিত । আপনি চমৎকার লিখেছেন । তবে এই ব্যাপারগুলি ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবেন আশা করি । ধন্যবাদ আপনাকে ।
দাদা, লোকেশন সংযোজন করা হলো।আমাকে গাইড করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।ভালো থাকুন।