|| পৃথিবীর প্রথম মোটর-গাড়ি চালক সাহসী নারী - বার্থা বেঞ্জ ||
আজকের গল্প একটু আলাদা। আজ পৃথিবীর প্রথম গাড়িচালককে নিয়ে কথা হল, যিনি ছিলেন একজন মহিলা। একই সাথে মোটরগাড়ি নির্মাণের কাহিনীও এই প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে।
বার্থা বেঞ্জ
ছবি : স্ক্রীনশট - ইউটিউব
বার্থা বেঞ্জ ছিলেন জার্মানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। ছাত্রী হিসেবে খুবই মেধাবী ছিলেন বার্থা। ১৮৭২ সালে তেইশ বছর বয়সে জার্মানির এক প্রকৌশলীর সাথে তার বিবাহ হয়। তার নাম কার্ল বেঞ্জ। কার্ল বেঞ্জ মেকানিকাল কাজ-কারবার করতেন। বিভিন্ন মোটর মেরামত করা ও বানানো কাজে তিনি ডুবে থাকতেন দিন রাত। আর মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন মোটর চালিত গাড়ি নির্মাণের। কিন্তু অর্থে কখনো কুলিয়ে উঠতে পারতেন না। বার্থা বেঞ্জ ধনী পরিবারের মেয়ে ছিলেন। নিজের স্বামীর স্বপ্নপূরণের জন্যে পিতার নিকট থেকে তিনি এনে দিলেন টাকা।
কার্ল বেঞ্জের বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হল। মোটরচালিত গাড়ি নির্মাণের গবেষণায় তিনি সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করলেন।
দীর্ঘ গবেষণার পর ১৮৮৫ সালে তিনি আবিষ্কার করেন তিন চাকা বিশিষ্ট একটি মোটর গাড়ি। এর আগে কয়েকজন চেষ্টা করেছিলেন তবে সেটা মোটর গাড়ি ছিলনা। বাস্পচালিত ইঞ্জিন যা খুবই কম গতিবেগ সম্পন্ন ছিল ও অত্যন্ত ভারী।
কার্ল খুবই দূরদর্শী ও প্রতিভাবান একজন মানুষ ছিলেন কিন্তু অর্থের অভাবে তিনি মেকানিকাল যন্ত্রপাতি নির্মাণ ব্যতীত আর কোন কাজে এগোতে পারছিলেন না। স্ত্রীর দেওয়া অর্থ বিনিয়োগ করে তিনি সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেন। গাড়ি নির্মাণের পর দুই বছর তিনি অর্থের অভাবে গাড়িকে বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারেননি। এক্ষেত্রে কার্ল মোটরগাড়ির ওপর আরো পর্যবেক্ষণ চালান মোটরগাড়িকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কয়েকটা ছোট প্রদর্শনীর আয়াজন করেন তাতে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
আবারও স্বামীকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন বার্থা। তাদের তৈরি মেকানিকাল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টি আরো শক্তিশালী হয়। সেদিনের এই প্রতিষ্ঠানটি হলো আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ও শ্রেষ্ঠ গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা মার্সিডিজ বেঞ্জ। যে কোম্পানির একেকটি গাড়ির মূল্য কোটি কোটি টাকা।
একদিন বার্থা স্বামীকে না বলেই গাড়িটি নিয়ে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন তার নিজের বাবার বাড়ি। টানা ১০০ কিমির ওপর পথ পাড়ি দেন তিনি গাড়ি চালিয়ে। খোলা রাস্তায় এটাই প্রথম পৃথিবীর ইতিহাসে গাড়ি নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া। যাত্রাপথ মোটেই সহজ ছিলনা বার্থার জন্যে। গাড়িতে নানান ত্রুটি তখনও ছিল। মাঝপথে গাড়ি বহুবার থেমেছে। ইঞ্জিন গরম হয়ে গেছে। ইঞ্জিন গরম হয়ে গেলে পথেই জল দিয়ে সেটাকে ঠান্ডা করেছেন দিয়ে আবার শুরু করেছেন যাত্রা। গাড়ির ট্যাংকি টা খুবই ছোট ছিল, মাত্র ১.৬ লিটারের। ফলে রাস্তাতেই তেল জোগাড়ের কাজ ও তাকে করতে হয়। এবং তিনি পৃথিবীর প্রথম নির্মিত তিন চাকার এই মোটরগাড়ি চালিয়ে তার নিজের বাবার বাড়ি চলে যান।
সে সময় রাস্তার চারপাশের মানুষ দেখতে থাকে এই আজব একটি গাড়ি, যা গরু বা ঘোড়ায় টানা নয়- মোটরচালিত একটি গাড়ি। মানুষের কাছে তাজ্জবের একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এই আশ্চর্য ঘটনা।
আজকের সাধের মার্সিডিজ গাড়ির ইতিহাস ঘাটলে এমনই এক আশ্চর্য ঘটনার কথা জানতে পারা যায়। বার্থার এই গাড়ি চালানোর মাধ্যমে প্রথম প্রদর্শনীটাও হয়ে যায় মানুষের কাছে এই গাড়ির যা এই প্রতিষ্ঠানকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এরপর থেকে বহু মানুষ কৌতূহল নিয়ে সেই দম্পতির কাছে আসতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তৈরি হয়ে যায় পৃথিবীর বিখ্যাত মোটর গাড়ি কোম্পানি মার্সিডিজ বেঞ্জ।
জার্মানির পথে-ঘাটে আজও বার্থার এই সাহসিকতার অস্তিত্ব রয়েছে। যে পথে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, গাড়ি চালিয়েছিলেন সে পথে গেলে তার অস্তিত্বের পরিচয় দেখা যায়। সেই পথকে এখনো তার নামে সংরক্ষণ করা রয়েছে।
কার্ল বেঞ্জ গাড়ি নির্মাণ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর এই অবদান না হলে তা কখনোই হয়তো সম্ভব হতো না। তাছাড়াও এই নির্মাণ কার্যে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন তিনি নানান পরামর্শ দিয়ে। তিনি প্রথম বলেছিলেন গাড়ি লো গিয়ারে সব থেকে ভালো চলে।
১৯৪৪ সালে এই সাহসী নারী ইহলোক ত্যাগ করেন।
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন একটি লেখা নতুন একটি কথা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষন ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
চমৎকার একটি তত্ত্ববহুল পোস্ট করেছেন আপনি। আপনার মাধ্যমে অনেকেই বিখ্যাত ব্রান্ডের গাড়ি কোম্পানির পূর্বের ইতিহাসটি জানতে পারবে। আমারও জানা ছিল না আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আরো এমন তত্ত্ববহুল পোস্ট ক্রমাগত নিয়ে আসতে থাকবো। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।