|| ভুত যখন হোস্টেল সুপার ||
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালোই আছেন। আজকে একটি বেশ অন্যরকম ঘটনা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বেশ মজাদার একটি ঘটনা। আমাদের হোস্টেলে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একটি কান্ড ঘটেছিল তারই বিস্তর বর্ণনা আজকের পোস্টে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। চাইলে পড়তে পারেন।
কালীপুজোর রাতে একবার আশ্চর্য এক ঘটনা ঘটেছিল। আমরা হোস্টেলে ছিলাম, তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। কালীপুজোর রাতে নানান ভৌতিক গল্প তুলে একটি বড় দাদা আমাদের ভয় দেখিয়ে চলে গেছিল।
আমরা রীতিমতো ভয় পেয়ে যে যার মত শুয়ে পড়েছিলাম রাতের খাবার খেয়ে। সকলের মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিল যে এ রাতে নানান ঘটনা ঘটে। বিশেষত সকলেরই মনের মধ্যে একটা ভয়ের আভাস ছিল।
হোস্টেলে খাবার খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে যেতাম না। কখনো কখনো গোটা রাত জেগে থাকতাম। কিন্তু সেদিন সবাই চট-জলদি ঘুমিয়ে পড়লাম! ঘুম তো আর নয় লাইট অফ করে শুয়ে শুয়ে নানান কথাবার্তা চলছে। তখন আমরা একটা রুমে বারো জন করে থাকতাম। বারোটা বেড,বারোটা টেবিল। দু তিনটে ওয়ার্ডরোব। প্রচুর বই। সবমিলিয়ে হোস্টেলের একটা গন্ধ ছিল।
আমরা ভয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লেও কারোরই কিন্তু ঘুম আসছিল না। ওই বড় দাদা, কেন যে ভয় দেখিয়ে চলে গেল এ নিয়ে সব বেশ রাগারাগিও করলাম। এভাবে ভয় দেখানোর কি আছে!
আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে এটা বুঝতে পেরেও আমরা সাহস জোগাতে পারিনি সেদিন। খামোকা বলে চলে গেল কালীপুজোর রাতে বড় শরীরের কেউ নাকি আসে, এটা শোনার পর কারই বা ভয় লাগবে না? ভয় তো পাবারই কথা।
মনে মনে সকলেই প্রার্থনা করছি ঈশ্বরের কাছে যে আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুমটা চলে এলে ভালো হয়। কিন্তু এই দিনগুলোতে ঘুম আর আসে না। তবে তখন একটা তন্দ্রার মধ্যে চলে গেছিলাম। একটু পরে হয়তো ঘুমটাও চলে আসতো। কিন্তু এমন সময় দরজায় ঠক ঠক তিনটে জোরালো কড়া নাড়ার শব্দ। আমরা যারা তন্দ্রার মধ্যে ছিলাম বা কেউ ঘুমিয়ে পড়েছিল হয়তো কিন্তু এই আওয়াজ শুনে সকলেই একই সাথে ধরফর করে উঠে পড়লাম। সকলেরই একই সাথে ঘুম তন্দ্রা ছুটে গেছে। রাত তখন বারোটা বেজে গেছে। এত রাতে কিসের শব্দ?
স্যাররা তো এত রাতে কখনোই আসেনা! ছাত্রদের ঘরে এসে কড়া নাড়ে না এবং অন্য কেউ আসে যদি সে দাদারই কথা বলি যে ভয় দেখাতে এসছে তাও কিন্তু সম্ভব নয়। কেননা আমরা গ্রিলের ভেতরে থাকি আর সেটা তালা দেওয়া। তাহলে সে কে? আমরা সকলে এক মহা দৈত্য শরীরকে দরজার ওপারে কল্পনা করে ভয়ে চুপ করে থাকলাম। কারো মুখে কোন শব্দটি আর নেই।
আবারো ঠকঠক। একইভাবে আবারও তিনটে কড়া পড়লো দরজার ওপর। এই তিনটে কড়া কিন্তু আরও জোরালো।
আমরা সকলেই একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম যে সবাই মিলে একসাথে থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না। অর্থাৎ দশের লাঠি একের বোঝা, এই মতবাদের উপর ভরসা করে আমরা একরকম রেডি হয়ে রইলাম। যদি আসে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়বো।
এবার দরজা খোলার পালা। কে খুলবে? রুমের সব থেকে বড় ছাত্রটি সাহস করে গেলো। এবং বলল, আমি দরজা খুলবো তবে খুলেই ছুটে পালিয়ে আসব। সবাই সেই মন্তব্যে সায় দিল।
অন্ধকারের মাঝে বুঝতে পড়লাম বড় সাহসী সেই ছাত্র দরজার খিল খুলেই ছুটে পালিয়ে এলো। তারপর দেখলাম একটা শরীর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকছে। চুপচাপ। একা। ওই দাদা আমাদের যা বলে গেছে সব মিলে গেছে। তার কথা মত ঠিক কালীপুজোর রাতে চলে এসেছে। আমাদের যা কথা হয়েছিল, বিলম্ব না করে সেটাই অনুসরণ করলাম ।সকলে মিলে একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই শরীরটির উপর। তারপর দুমদাম কিল ঘুষি পড়তে লাগলো। কেউ কেউ সেই বৃহৎ দেহটির চুল ধরে এমনি ঝগড়াঝাঁকরি শুরু করলো যে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম আর কি!
হাতের কাছে ভূতকে পাওয়া তাও আবার সবাই মিলে একসাথে এ কি আর চাট্টিখানি কথা, তাই কেউই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। যার যতটুকু ক্ষমতা ছিল ততটুকু শক্তি দিয়ে সেই ভূতকে বেদম পেটালো। তারপর একেবারে আধমরা হয়ে গেছে এমন সময় সেই ভুতের মুখ থেকে একটা আওয়াজ বেরিয়ে এলো।
যে আওয়াজটা শুনলাম, তা শুনে উপস্থিত সকল ঘুষি চালক বিদ্যুৎ গতিতে নিজের নিজের বেডে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। ভূতের মুখ থেকে যে শব্দ শোনা গেল সেই ভয়েসটা আমাদেরই হোস্টেল সুপারের। আমরা যে এতক্ষন হোস্টেল সুপারকে বেধড়ক পেটালাম তা বুঝতে আর কারোর বাকি নেই। অতএব সকলেই খুবই জোরে সেখান থেকে কেটে পড়লাম।
সুপার স্যার একেবারে কাতরাতে কাতরাতে উঠে দাঁড়ালো, তারপর বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইটটা জ্বালালো ততক্ষণে আমরা সকলেই লুকিয়ে পড়লাম। সামান্য কারণেও সুপার এমন মার মারে আমাদের যে কোন আস্ত রাখে না আর আজ আমরাই তাকে যেভাবে পেটালাম, তিনি আজ আমাদের কি দশা করবেন সেই ভবিষ্যতটুকু ভেবে আমরা চিন্তায় ভয়ে প্রায় কেঁদে উঠলাম।
কিন্তু দেখা গেল সুপার স্যার কাউকে কিছু বললেন না। তিনি যে চালাকি করতে গিয়ে নিজে ফেঁসে গেছেন সে বোকামিটুকু ভেবে আর কাউকে কিছু বলতে পারলেন না। তিনি খুব মজা করে প্রথমে ঢুকেছিলেন। চুপচাপ। তারপর তার ওপর এমন যে বর্ষণ শুরু হবে মোটেই একথা ভাবতে পারেননি। দুবার বললেন শুধু, তোমরা এটা ঠিক করলে না। আর কোন কথা না বলেই চলে গেলেন।
সকালে উঠে আমরা সকলে মিলে একত্রে স্যারের কাছে ক্ষমা চাইলাম।
সত্যি সেই দিনটির কথা মনে পড়লে আজও বেশ হাসি পায়। মাঝে মাঝে ভালো লাগে। তিনি যেভাবে আমাদের কারণে-অকারণে ঠেঙ্গাতেন, সেদিন কিন্তু আমরা তার ডবল উসুল করে নিয়েছিলাম।
আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন একটি লেখা নতুন কিছু কথা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
হাহাহা।। ভাই আমারে ধরেন। আমি শুধু হাসতেছি এখনো। বেচারা স্যার। কি মাইর টাই না খেলো আপনাদের কাছে। আহ বেচারা ভুতও যদি হতো ঠিক আপনাদের মার খেয়ে পালাতো।
দু-বছর মানে বুঝলাম না ভাইয়া।তাছাড়া আমার মনে হয় আপনাদের দরজা খোলার আগে অবশ্যই লাইট জ্বালিয়ে নেওয়া উচিত ছিল, আপনাদের অসাবধানতাবশত একজনের প্রাণ ও চলে যেতে পারতো।সবমিলিয়ে ভালো ছিল,ধন্যবাদ আপনাকে।
হা হা হা....না না প্রাণ যেতনা অবশ্য! আমরা মজা পেয়েছিলাম ব্যাপার টা নিয়ে। আর ওটা ভুল ছিল, এখন ঠিক আছে।
বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভ, অজান্তেই ঠিক জায়গায় লেগেছে। ভালো ছিল। হাসিও পেল।