রাতের মামলা||শেষ পর্ব|| ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox ও ৫% @abb-school এর জন্যে
Image source : Pixabay
বন্ধুরা গতকাল 'রাতের মামলা' গল্পটির প্রথম পর্ব পোস্ট করেছিলাম। আজ তার দ্বিতীয় পর্ব পোস্ট হলো ও এটাই সমাপ্তি পর্ব। এটা আমার একটি ভৌতিক রচনা। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
এইতো ভেবেছিলাম দূর্গেশ এসে গেট খুলবে, আমাকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠবে, ও বাবা দেকি দেকি সুয্যিটা আজ কোন দিকে উঠেছে ! অথবা তাঁর এতদিন ফোন না করার কারণ দর্শিয়ে বলবে, ওহ এসেছিস তুই তাহলে, তা খুব ভালো করেছিস ভাই! মাফ করিস বন্ধু, ফোনটা গ্যাছে বুঝলি, সাথে গায়েব সব নাম্বার গুলোও, তোর নতুন নাম্বারটা তো মুখস্ত ছিলনা, তাই আর ফোন করা হইনি রে! আর যাবো-যাবো করে তোর বাড়িও যাওয়া হল না! ছাড় বাদ দে, মুখ-হাত ধুয়ে নে আগে! ও মা....!
নাকি অন্য কিছু বলতো ? আমি হিসেব কষেছিলাম নানা রকম, কিন্তু এই হিসেব তো কষিনি!
কাকিমা আঁচলে চোখের জল মুছে কত কি বলতে লাগলেন। কাকু যাবার পর থেকেই তাঁর শরীরেও ঘুন ধরেছে। অমন দোহারা হাড়ের মানুষটা দেখলে এখন চেনা মুশকিল। ওষুধ-পত্রের ওপরেই জীবনটা ঝুঁকে ছিল, এবার পুত্র হারিয়ে তিনি একেবারে অসাড় হয়েছেন। শুধু যেন বেঁচে আছেন মৃত্যুর অপেক্ষায়! এক ধেয়ানে শুনছিলাম একের পর এক সব কথা। আবসোষ হচ্ছিল নিজের ওপর। ক্ষোভ হচ্ছিল! একবার যদি...
--" তোর আশাতেই ছিলাম অনিমেষ, তোকেই এর একটা বিহিত করতে হবে! আমি যে শান্তি পাচ্ছিনা! এ যে কারসাজি! সড়যন্ত্র! "
চমকে উঠে দেখলাম কাকিমার চোখে প্রতিশোধের আগুন কালবৈশখী ঝড়ের মত উথাল-পাথাল করছে!
-"তুমিই বলো বাপু, ছেলেটি তো সেদিন কাগজখানা হাতে করে ভালোমানুষটির মতই বেরোলো, তা এটাই যে শেষ যাওয়া হবে তা কি আর মানা যাচ্ছে! আজ আমি এও টের পাচ্ছি তোর কাকুর মৃত্যুতেও কোনো খটকা ছিল! এটা আমি আন্দাজ করেছিলাম অবশ্য তবে দ্বিধা ছিল, আজ দূর্গেশের পর আমার এবিষয়ে আর সন্দেহ নেই! "
রহস্যের নির্যাস শুষে শুষে রাতের গভীরতা ক্রমশ নিরেট হয়ে উঠছিল। মোবাইলের ঘড়িতে দেখলাম রাত্রি এগারোটা চল্লিশ। আমি উঠলাম। রাতটা থেকে গেলে হত কিন্তু মা হয়তো এখনও অপেক্ষা করে বসে আছে, বলে এসেছি রাতেই ফিরব! আর ফোন করেও কিছু বলবার জো নেই কারণ এখানে পা দেবার পর থেকে মোবাইলে একটাও নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছেনা। এ সমস্যা অবশ্য পিরনগরে নতুন নয় কিন্তু এতটাও বা খেয়াল করে কে আর থাকতে পারে! কাকিমাকে আশ্বস্ত করে বললাম, " জীবন চলে গেছে! দূরগেশ আর ফিরবেনা, তবে এ অপরাধ মঞ্জুর হচ্ছে না, দরকারে সালিশি-ব্যবস্থা নেবো, মোকদ্দমা করবো!"
বেরোনোর সময় প্রধান দরজার চৌকাঠে একটা পা ফেলে একবার ডান দিকে ঘুরে তাকাতে বারান্দার দেওয়ালে মৃদু আলোয় কাকুর মালাপরা ছবিটি চোখে পড়ল, ঠিক তারই পাশে আরেকটি মালাপরা ছবি! উজ্জ্বল চোখ, দীপ্ত হাসি ভরা মুখে দুর্গেশ যেন আমার দিকেই চেয়ে আছে। যেন বলতে চায়, কিরে এত রাতে যাবার দরকারটা কি ছিল শুনি, পথঘাট তো ভালো নয়! আর হ্যাঁ, মোকদ্দমা লড়ছিস তো, তোকে আর আমার ভরসা!
আমি যেন স্মিত হাস্যে বলতে পারলাম, লড়ছি ভাই !
বাইরের অবস্থা ভালো নয়, ঝোড়ো বাতাস উঠেছে। আর দেরি না করে সামনের দিকে পা বাড়াতে গেলাম কিন্তু পুনরায় পা আটকে গেল, দেওয়ালের কোন ঘেঁষে আরেকটি মালা পরা ছবি ; এটি কাকিমার! মুহূর্তেই গলাটা শুকিয়ে এল! আশ্চর্য হয়ে পেছনে ঘুরতে দেখলাম কাকিমার কোনো চিহ্ন নেই! কিন্তু তিনিতো আমার পেছন পেছন এসেছিলেন দরজা অব্দি এগিয়ে দিতে। চেঁচিয়ে ডাকলাম, কাকিমা! কাকিমা!
না...কোনো সাড়া শব্দ নেই! একটা রক্তমাংসের মানুষ কি এভাবে বেমালুম উবে যেতে পারে! কার সাথে তাহলে কথা বলছিলাম!
অন্দর মহলে বিস্তর শূন্যতা আর অন্ধকার ছাড়া এই মুহূর্তে কিছু দেখা গেল না। আমার আচমকা আওয়াজে রাতের নিরবতা নড়ে উঠেছে! কোত্থেকে আসা হটাৎ একটা ভ্যাপসা গন্ধ, নিস্তব্ধতার মোটা আবরণ ছিঁড়ে যেন ঘোষণা দিয়ে গেল, খামোকা চেঁচামেচি কেন করো, এখানে কোনো মানুষের বাস নেই, যাদের খুঁজছো তুমি, কবে তারা....!
আমার ভেতরে তখন একটা গোলমেলে তাণ্ডব চলছে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা! আমার শরীরে যেন আর শক্তি নেই। না দেরি করলে চলবেনা। এক্ষুনি বেরোতে হবে।
প্রধান দরজার শক্তিহীন কাঠের পাল্লা দুটি অবরিত পরস্পরের মধ্যে মাথা ঠুকে জানান দিচ্ছিল ; বাইরে হাওয়ার জোর বেড়েছে! আমি ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম। বাতাসের চোটে সাইকেলটা পড়ে গেছে কখন। সেটাকে তুলে নিয়ে, উঠে বসলাম। নৈঃশব্দ্য, বিষাদ আর আংশিক অভিশাপ মাখা অন্ধকার বুনো-রাস্তার বুক চিরে সাইকেলের চাকা ছুটতে থাকল। এক অস্বাভাবিক বিষণ্ণতা এবং অসম্ভব ঔদাসীন্যে আমার চেনা পৃথিবী আবছা হয়ে আসছিল ক্রমশ। বেথুয়ার ফরেস্ট, মারাসির মাঠ, কালিন্দ্রী শ্মশান, নাক্কাটি ব্রিজ...আমার বাড়ি যেন বহুদূরের কোনো একটা পথ মনে হতে লাগল! যা পাড়ি দিতে হয়তো কয়েকটা যুগ লেগে যাবে...!
গল্পটি পড়ে আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম। সকলের সুস্থতা কামনা করছি। ভালোবাসা।
@tarique52
প্রথমে বলবো খুব সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। তবে অনেকেই আছেন যে এমন সুন্দর সুন্দর গল্প গুলো সহজে পড়তে চান না। আমরা অবশ্য বাংলায় অনার্স মাস্টার্স করেছি তো অনেক গল্প পড়ার অভ্যাস রয়েছে। তাই আপনার এত সুন্দর একটি গল্প পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। আশা করি এভাবেই অনেক গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন আপনি। সেই আশা তে রইলাম। ঈদ মোবারক
প্রথমে আপনাকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক। প্রিয়জনদের সাথে খুব সুন্দর ঈদ আনন্দ উপভোগ করুন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। এত অসাধারন গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
সাংঘাতিক জাস্ট!
"দেওয়ালের কোন ঘেঁষে আরেকটি মালা পরা ছবি ; এটি কাকিমার!"
লাইন টা পড়তেই আমার দুই হাতের লোম খাঁড়া হয়ে গেলো।ঈশান আর মা কে জোরে জোরে শোনাচ্ছিলাম । মাও থ। আমি তো ভাবতে পারিনি এমন হবে। জাস্ট অসাধারণ রে! খুব ভালো লাগলো। সেরা। আমার গায়ের লোম শিউরে উঠছে, তার মানেই তোর গল্প সার্থক 👻
গায়ের লোম সামান্য একটু খাড়া হলেও আমি খুশি হবো, কারণ প্রথমবার ভূতের গল্প লিখতে বসেছি। আগে ভূতের কটা অনুগল্প লিখেছি, তবে সেগুলো নেহাতই ছোট। দুই বা তিন লাইনের। সে যাক, তোর ভালো লাগলো, এই ঢের!!🌼