|| স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও বীর শহীদদের নিয়ে কিছু কথা ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজকের এই প্রতিবেদনটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে মূলত লেখার চেষ্টা করেছি। লিখেছি বীর বিপ্লবী ও শহীদদের কথা। বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার আত্মবলিদান এর কথা।
আমরা আজ কয়েকজন মিলে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বীর বিপ্লবী ও শহীদদের শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানিয়েছি, তারও সংক্ষিপ্ত বর্ণন এই প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

IMG_20220815_112343.jpg

জ ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস। কত বীর সংগ্রামী যে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাদের যদি কথা বলা শুরু করি তবে তা শেষ হওয়ার নয়। তাদের জীবন, তাদের সংগ্রাম দেখলে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। তাদের শক্তি ও সাহস দেখে অবাক হতে হয়। প্রায় ১৯০ বছর ভারতের ওপর ইংরেজ সরকার অত্যাচার চালিয়ে গেছে। ভারত মায়ের এই অবস্থা দেখে তাদের হৃদয় কেঁদে উঠেছিল, তারা বাড়িতে বসে থাকতে পারেনি। সংগ্রামের পথে নেমেছিল। লড়াইয়ের জন্য নেমেছিল।
বহু সংগ্রামী যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের অনেকেরই নাম আমরা জানি, আবার অনেকেরই নাম জানি না। কতশত নাম জানা না জানা বিপ্লবী দেশের জন্যে প্রাণ দিয়ে চলে গেছেন। আজ সকল বীর বিপ্লবীদের হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা জানাই। প্রণাম করি। তারা না থাকলে আমরা আজও হয়তো পরাধীন থাকতাম। তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ ভারত স্বাধীন।

ইতিহাস ঘাঁটলে বহু বীর বিপ্লবীদের কথায় মনে পড়ে।
মাত্র উনিশ বছর বয়সে তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু দেশের জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। ফাঁসির মঞ্চে তিনি হাসছেন। তার সাহস দেখে সেদিনই ব্রিটিশ সরকারের বুক কেঁপে উঠেছিল।
মনে পড়ে সেই তিন মেডিক্যাল ছাত্রের কথা, বিনয় বাদল দীনেশ। তিন মেডিকেল পড়ুয়ার অসম্ভব সাহসিকতা দেখেছিলেন ব্রিটিশ সরকার। তাদের সাহস ও বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজ সরকারের ভীত নড়ে উঠেছিল সেদিন।

অনেক মহিলা বীরঙ্গানাও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এই মহান বিপ্লবীদের আজ শত কোটি প্রণাম জানাই। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে মেয়েরা কোন অংশেই কম ছিল না। বহু নাম জানা-অজানা বীর বিপ্লবী নারী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, আজ তাদের সকলকেই আমার প্রণাম।

বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। মাত্র আঠেরো বছর বয়সে তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হয়ে যান। এই গৃহবধূ বিধবা হয়ে যাওয়ার পর স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দেন। তিনি সংগ্রামীদের সাথে থাকতেন এবং ইংরেজদের কুটির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন।
১৯৩২ সালে ২৬ শে জানুয়ারি কংগ্রেস কর্মীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর একটি শোভাযাত্রা বের করেন।মাতঙ্গিনী হাজরা এই শোভাযাত্রায় প্রকাশ্যভাবে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে যোগদান করেন। এ বছরই আলিনান লবণ কেন্দ্রে লবণ প্রস্তুত করে তিনি আইন অমান্য করেন এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।
এরপর মুক্তি পেয়েছেন আবারও গ্রেপ্তার হয়েছেন কিন্তু তিনি কখনোই স্বাধীনতার জন্য লড়াই থামিয়ে রাখেননি।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন তখন তমলুকে এক গন-আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। ১৯৪২ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুকে বহু সংখ্যক মানুষের জমায়েত হয় এবং এক বিরাট শোভাযাত্রা বের হয় যার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। শোভাযাত্রা এগোতে থাকে। তমলুক থানা ও আদালত দখল করার উদ্দেশ্যে জোরদার স্লোগান চলতে থাকে। এই বিরাট মিছিল দেখে ব্রিটিশ সরকার ভয় পেয়ে যায়। সশস্ত্র ব্রিটিশ পুলিশবাহিনী এই শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ও তারা গুলি চালাতে শুরু করে। এর ফলে স্বেচ্ছাসেবক দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু মাতঙ্গিনী হাজরা বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে মাথা উঁচু করে এগোতে থাকেন। তার হাতে ভারতীয় পতাকা। পেছনে বহু স্বেচ্ছাসেবক তাঁকে অনুসরণ করে হেঁটে চলেছেন। তখন মাতঙ্গিনী হাজরার বয়স তখন তিয়াত্তর বছর। এরকম বয়স্ক এক মহিলার সাহস দেখে ব্রিটিশ বাহিনী চমকে যায়। তারা প্রথমে তাঁর হাতে গুলি করেন, যে হাতে পতাকা ছিল কিন্তু তাতে তাকে দমানো যায় না। তিনি অপর হাতে আবার পতাকা তুলে ধরেন এবার সেই হাতেও গুলি করা হয়। এবার তিনি বুকের মধ্যে দুহাতে পতাকা জড়িয়ে ধরে রাখেন। এরপর পুলিশ তাঁর বুক লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং মাতঙ্গিনী হাজরা পতাকা হাতে নিয়েই মাটিতে লুকিয়ে পড়েন।
তাঁর এই আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম গোটা ভারতবর্ষের মানুষের হৃদয়ে সেদিন স্বাধীনতার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমরা কোনমতেই যেন মহান বিপ্লবীকে না ভুলি।
এমন বীর সংগ্রামীদের জীবন ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। তাই তাদেরকে স্মরণ করতে গোটা ভারতবাসী আজ পতাকা উত্তোলন করেছে। তাদের উদ্দেশ্যে গোটা ভারতবাসী আজ স্লোগান দিয়েছে। জাতীয় সংগীত গেয়েছে। তাদের স্মরণ করেছে হৃদয় থেকে।

IMG_20220815_193109.jpg

আমরাও আজ কয়েকজন মিলেই পতাকা উত্তোলনের আয়োজন করি। দু-একটি ছোট শিশু ও একটি ছেলেকে নিয়ে আজকের পতাকা উত্তোলন সম্পন্ন করি। সকাল থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। দড়িতে ছোট ছোট পতাকাগুলো টাঙিয়ে সেটা কে বাঁশের মাথায় বেঁধে দিতে বেশ সময় লাগে।

IMG_20220815_194204.jpg

যেহেতু বেশি কেউ ছিলাম না তাই আমাদের সময়টা একটু বেশি লেগে যায়। তবে সব মিলিয়ে বেশ ভালোভাবেই আজ আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি।

বন্ধুরা আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস ছিল, তাই এই বিষয়েই লিখলাম। আগামীকাল নতুন দিনে নতুন কিছু লেখা নিয়ে আবার হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Sort:  
 2 years ago 

কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা.. বন্দী শালার ওই শিকল ভাঙ্গা...

অন্তহীন আকাশের নীল ব্যকগ্রাউন্ড এ, বুক ফুলিয়ে উড়তে থাকা দেশের পতাকার দিকে তাকালে প্রথমেই বীর বিপ্লবী আর শহিদদের কথাই মনে পড়ে আমার। তাদের জন্যই এই দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হচ্ছে আমাদের ।

ভীষণ ভালো সময় কাটিয়েছিস, আর ছবি সুন্দর হয়েছে।

 2 years ago 

এই গান টা শুনলেই এক শিহরণ জাগে। ঠিকই বলেছিস।

 2 years ago 

হ্যা ভাই এরকম কত শহীদ আছেন যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় আসেও নাই কিন্তু তারাও সকাতরে দেশের জন্য প্রাণ বিলিয়ে গেছেন।তবে তাদের কেউ মন থেকে শ্রদ্ধা করা উচিত।যাইহোক ভালো সময় পার করেছে।

 2 years ago 

হ্যাঁ এমন কত শত জন আছেন, যাদের নাম ইতিহাসে নেই, তাদেরকেও আমরা স্মরণ করবো।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59605.49
ETH 2607.69
USDT 1.00
SBD 2.42