জন্মদিনে লঙ্কাকাণ্ড (প্রথম পর্ব)|| ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox ও ৫% @abb-school এর জন্যে
এখন বিকেলে মাঠে দাড়ালে মেঘের গা ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস শরীরে লাগে। এই বৃষ্টি - ভেজা দিনগুলোয় সকলে ভালো আছেন আশা করি। ' জন্মদিনে লঙ্কাকাণ্ড ' শিরোনামের এই লেখাটিতে একটি মজার ঘটনা বর্ণনা করেছি আমি। এ এমন জন্মদিন যা পূর্বে আমি দেখিনি। জন্মদিনে কি এমন ঘটনা ঘটলো, তা বিস্তর জানতে চোখ রাখুন আমার আজকের লেখায়।
অমন দুর্ভাগ্যজনক বার্থডে সেলিব্রেশন আমি এখনো অব্দি দেখিনি।
এ গল্প আমাদের হোস্টেলের। আমরা তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি। তখন হোস্টেলের মেজাজ ছিল আলাদা। স্টুডেন্টস ভর্তি হোস্টেল পড়ায়, খেলায়, হাসিতে, চিৎকারে গমগম করত।
আমরা তখন একটা রুমে বারো জন করে থাকতাম। রবিবার তো ছুটি, আর শনিবারের দিন আমাদের পড়াশোনা একটু কম চাপ থাকতো। সেদিন হাফ ডে। তিনটে মাত্র ক্লাস। খুশি আর আনন্দটা মূলত শনিবারের দিনই ছিল।
রোববারের দিন তেমন আনন্দ হয়না। ঐতো সোমবার আসবে, আবার ক্লাস! এই ভয়টা ছিল!
এদিন ভোর বেলা রুমের সবথেকে রোগা টিংটিঙে বন্ধু অনিস আমাদের চমকে দিল সবাইকে। একরকম তাজ্জব করে দিয়ে বেডের তলা থেকে বের করল একটি আশ্চর্য কেক। এমন কেক জীবনে কখনো দেখিনি। কেকটা মেরি বিস্কুট দিয়ে তৈরি। টিফিনের বিস্কুট জমিয়ে এই আস্ত কেক সে বানিয়েছে। বিস্কুট কে গুঁড়ো করে তা জলে ভিজিয়ে বাটিতে চাপ দিয়ে যে এই কেক তৈরি, তা বুঝতে বাকি রইল না। কিন্তু কেন? এর উত্তরে অনিস চোখ টিপে জানালো, " আজ আমার জন্মদিন!"
" জন্মদিন! কই বলিস নি তো! ", আমরা হইহই করে বললাম।
" তোদের সারপ্রাইজ দেবো তাই বলিনি!"
তাহলে সেলিব্রেশন হচ্ছে। আমরা বেশ খুশি হয়ে গেলাম। শনিবারের দিন স্যারদের বকাবকি একটু কমই হবে কিন্তু সন্ধ্যেবেলা পড়ার সময় এটা করা যাবে না।
হোস্টেলে যেকোনো কিছুর আয়োজনের সুবিধে হল এই যে মুহূর্তে হাজারটা বুদ্ধি আর হাজার খানেক আইডিয়া ফ্রিতে পাওয়া যায় এবং তা একেবারেই ফেলনা নয়।
অতএব অনিসের জন্মদিন কিভাবে সেলিব্রেট করলে উত্তম হয়, তার নানান বুদ্ধি এবং সাথে যুক্তি বেরিয়ে এলো।
ইকবাল বলল, "জন্মদিন বলে কথা, একটু লাইটিং না থাকলে মানায় না, উপরের সাদা বালব গুলো রঙিন প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে বোর্ডের সুইচগুলো নিয়ে টিপটপ করলে সেরা লাইটিং হবে।"
আমরা তো শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। একেবারেই সহি বাত। জমজমাট হবে সেলিব্রেসনটা।
যেমন কথা তেমনি কাজ প্র্যাকটিক্যাল খাতার কভার মোড়ার জন্য আনা রঙিন প্লাস্টিক দিয়ে উপরের সাদা বালবগুলো মুড়ে দেওয়া হল।
"কেক হল, লাইটিং হল, তবে একটু নাচের ব্যবস্থা হোক! " -গম্ভীরতা বজায় রেখে কথা গুলো বলল ক্লাসের সবথেকে বয়সে বেশি বন্ধু সাবির দা। হ্যাঁ আমরা তাকে দা- ই বলতাম।
নাচের কথা শোনা মাত্রই আমরা আনন্দের আতিশয্যে দেলোয়ারের প্রায় গলাটা টিপে ধরলাম। তার কোনো রকম সম্মতি ছাড়াই ঘোষণা হয়ে গেল, আজ অনিসের জন্মদিনে দেলোয়ার ডান্স করবে এবং বহুকষ্টে পুঙ্গী ডান্সের যে স্টেপগুলো রপ্ত করেছে সে, তাতেই হবে আজকের সেলেব্রেশন। দেলোয়ার মুখে সামান্য হা-হুতাশ দেখানো ছাড়া বিশেষ কিছু প্রতিবাদ করে উঠতে পারল না।
দুঃখের বিষয় হল হোস্টেলের কড়া নিয়মকানুনের জন্য গান শোনার কোনো যন্ত্র রাখা যেত না, মোবাইল তো নয়! কেননা এসব রেখে ধরা পড়লে পরিনাম খুব বাজে হত।
অতএব আমাদের মুখে গান গেয়ে ডান্স করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এক্ষেত্রে গলাটিপে না ধরলেও প্রায় সমবেতভাবে ঝাপিয়ে পড়লাম মন্টুর ওপর।মন্টু ভালো গান গায়।
এদিকে হরি দায়িত্ব নিল এক্ষুনি বাকি রুমগুলোয় অর্থাৎ ব্যাচের আরো ষাট জন স্টুডেন্টকে সন্ধ্যের আগে ইনভাইট করবে।
( ক্রমশ...)
আগামীকাল এর দ্বিতীয় পর্বটি নিয়ে হাজির হব দ্বিতীয় পর্বটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনাদের আশা করি ভালো লাগবে ততক্ষণ ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
সত্যিই আচমকা বার্থডে সেলিব্রেশন খুবই সংক্ষিপ্ত করে তোলে। অসাধারণ ছিল আপনার গল্পটি, আপনি ক্লাস সেভেনে হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করেছেন যেনে আরও একটু বেশী চমকে উঠলাম। ঠিকই বলেছেন বন্ধুদের বৃদ্ধি এবং পরিকল্পনা পাওয়া যায় একদম ফ্রি যেখানে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না। আপনার জন্মদিনের লঙ্কাকাণ্ড গল্পটি শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
আসলেই এরকম জন্মদিনের সেলিব্রেশন স্কুলে থাকতে আমার মনে হয় অনেকেই করে। আমার কাছে একটু বেশি মজা লাগলো রঙিন কাগজ দিয়ে বাল্ব মুড়িয়ে লাইটিং তৈরি করার বিষয়টি। ছোটবেলায় এরকম মজার গল্প শুনতে বেশ ভালো লাগলো। আমাদের মাঝে এত সুন্দর জন্মদিনের গল্প করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
রঙিন কাগজ দিয়ে বালব মোরানোর বুদ্ধি তো সেরা ছিল রে, আর গান গাইতে আমাকে ডাকলেই পারতিস। হিহি। পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম রে।
আসলে ছাত্রজীবনে হোস্টেলের ওই সব দিনগুলো অনেক আনন্দের হয়। বন্ধুর মিলে পরিপূর্ণ আনন্দ ও মজা হই হুল্লোর সব মিলিয়ে স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত। যাইহোক মেরি বিস্কুট দিয়ে কেক বানানোর আইডিয়া টা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আর কিছু না হোক সেখানে অফুরন্ত ভালোবাসা মিশ্রিত আছে। আনন্দের মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।