মাস্ক
স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের প্রথম এবং একমাত্র বাংলা কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর বাংলাভাষী সদস্য আশা করি ভালো আছেন। আজকের পোস্টে আলোচনার বিষয় মাস্ক।
মাস্ক বলতে সাধারণত মুখমন্ডল আবৃত করে জন্য এক প্রকার আবরণকে বুঝানো। মানব সভ্যতায় মাস্কের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন রকমের মাস্ক এর ব্যবহার দেখা যায়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ফেসিয়াল মাস্ক উদ্ভাবনের পর চিকিৎসক, নার্স এবং কিছু শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষ সেগুলো ব্যবহার করতেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারীতে সেই মাস্ক এখন হয়ে উঠেছে সবার জন্য ব্যবহার্য অপরিহার্য এক বস্তু।
হাঁচি-কাশি এবং বায়ুবাহিত বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমনঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা, টিউবারকিউলোসিস (টিবি), কোভিড-১৯ (করোনা) ইত্যাদি জীবাণু থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকা যায় মাস্ক ব্যবহার করলে। এছাড়া ডাস্ট এলার্জি, পোলেন এলার্জি, বায়ু দূষণ এবং পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। সার্জিক্যাল মাস্ক প্রথম উদ্ভাবন করেছিলেন ফরাসি শল্যচিকিৎসক ডাঃ পল বার্জার। ১৮৯৭ সালে প্যারিসের “ফ্যাকাল্টে দে মেডিসিন” (মেডিসিন ফ্যাকাল্টি) এ কাজ করার সময় ব্যান্ডেজ বা গজ কাপড় দিয়ে ৬ স্তরবিশিষ্ট আয়তাকার মাস্ক উদ্ভাবন করেন। সেই মাস্কের চারপাশে জীবাণুমুক্ত লিনেন কাপড় ব্যবহার করা হয়েছিল।
এর দুই বছর পর ১৮৯৯ সালে যক্ষ্মা ভাইরাস প্রতিরোধে মুখমন্ডলে মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হয়। ১৯০৫ সালে আমেরিকান চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং গবেষক অ্যালিস হ্যামিলটন জানান, নিউমোনিয়া রোগের পেছনে দায়ী স্ট্রেপ্টোকক্কাস জীবাণু হাঁচি-কাশি পর মুখ থেকে নিঃসৃত থুতু (ড্রপলেট) এর মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায়। তিনি আরো জানান, ড্রপলেটের মাধ্যমে স্কারলেট ফিভারও ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানী জি. এইচ. ওয়েভার সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ডিপথেরিয়া রোগের জীবাণু প্রতিরোধেও মাস্ক ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। ২০১৩ সালে বিজ্ঞানীরা জানান, ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এবং তার আশেপাশের মানুষেরা সবাই মাস্ক পরিধান করলে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ৬০-৮০% কমে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর নির্দেশনা অনুযায়ী, কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে তিন-স্তরের মাস্ক পরিধান করতে বলা হয়েছে। এ ধরনের মাস্ক এর বাইরের স্তর পলিয়েস্টার উপাদানে তৈরি হয়, মাঝখানের স্তর তৈরি হয় বুননহীন পলিপ্রোপিলিন উপাদান দিয়ে এবং ভেতরের স্তরে থাকে সুতি কাপড়। এ ধরনের মাস্ক পরিধান করলে করোনাভাইরাস থেকে ৯০% সুরক্ষিত থাকা যায়।