টেরাকোটা
স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের প্রথম এবং একমাত্র বাংলা কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর বাংলাভাষী সদস্য আশা করি ভালো আছেন। আজকের পোস্টে আলোচনার বিষয় টেরাকোটা।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন স্থাপত্যের গায়ে কারুকার্য খচিত সুনিপুণ টেরাকোটার নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। ল্যাটিন শব্দ “টেরাকোটা”-র অর্থ হচ্ছে “আগুনে পোড়ানো মাটি”। তবে ভাষাগত দিক থেকে টেরাকোটা বলতে পোড়ামাটির দ্রব্যাদি বুঝালেও মূলত টেরাকোটা হলো পোড়ামাটির ফলক যেটির গায়ে খোদাই করে বিভিন্ন ধরনের নকশা বা অবয়ব উপস্থাপন করা হয়। ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতবর্ষের প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতায় টেরাকোটা শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন দেখা যায়। ৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় বিকশিত প্রাচীন সভ্যতায়ও টেরাকোটার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
টেরাকোটা তৈরীর জন্য আঠালো ধরনের মাটির সঙ্গে তুষ এবং খরকুটো জাতীয় উপাদান মিশিয়ে ফলকে রেখে বিভিন্ন ধরনের নকশার অবয়ব দেয়ার তা রোদে শুকানো হয়। এরপর রোদে শুকানো কাদামাটি আগুনে পুড়িয়ে একটি টেরাকোটা প্রস্তুত করা হয়। পিতল, লোহা কিংবা কাঁসা নির্মিত ভাস্কর্যের সাথে টেরাকোটার পার্থক্য হচ্ছে অনেক কম খরচে এবং অল্প সময়ে এটি তৈরি করা যায়। টেরাকোটা শিল্পী তাঁর আঙ্গুলের দক্ষতায় কাদামাটি থেকে প্রতিটি টেরাকোটা তৈরি করে থাকেন।
প্রাচীন ইউরোপীয় সভ্যতায় টেরাকোটা শুধুমাত্র সিরামিক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। তখনকার সময়ে এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার পাত্র এবং দালান-কোঠার ইট বানানো হতো। আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে পাকিস্তানের সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে ওঠা মহেঞ্জোদারো সভ্যতার আবিষ্কৃত প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে নারীদেহের অবয়বে তৈরিকৃত টেরাকোটা ভাস্কর্যের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের স্থাপত্যগুলোতে টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন বলতে দিনাজপুর জেলার কান্তজির মন্দিরের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই স্থাপনার বিশেষত্ব হচ্ছে সম্পূর্ণ মন্দিরটি প্রায় পনের হাজার টেরাকোটা ফলক দিয়ে রামায়ণ এবং মহাভারতের পৌরাণিক ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১৭০৪ সালে তৎকালীন জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ রায় প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার এ মন্দিরের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন।
বাংলাদেশের পাহাড়পুর, শালবন বিহার, মহাস্থানগড় এবং বাগেরহাট জেলার ষাট-গম্বুজ মসজিদ স্থাপনায় টেরাকোটার নিদর্শন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় অবস্থিত বিষ্ণুপুর মন্দির প্রাচীন টেরাকোটা শিল্পের কারণে খ্যাতি লাভ করেছে।
টেরাকোটা প্রকৃত অর্থেই প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম একটি নিদর্শন। তথ্যবহুল পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ