স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের প্রথম এবং একমাত্র বাংলা কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর বাংলাভাষী সদস্য আশা করি ভালো আছেন। আজকের পোস্টে আলোচনার বিষয় তেলরং


ছবির উৎস

যারা ছবি আঁকতে করতে পছন্দ করেন কিংবা চিত্রশিল্প সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই তেলরং এর সাথে পরিচিত। এই শিল্প মাধ্যমের বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন ধরনের রঞ্জক পদার্থ এবং শোষক তেল একত্রে মিশিয়ে ছবি আঁকার জন্য রং তৈরি করা হয়। শোষক তেল হিসেবে সাধারণত তিসির তেল, সূর্যমুখী, আখরোট, তারপিন, পোস্তবীজ ইত্যাদি থেকে নিঃসৃত তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

ছবি আঁকার জন্য সঠিক প্রকার তেল নির্বাচন করা তৈলচিত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমনঃ- শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্মে কোন রং কতটা প্রাধান্য পাবে, রংয়ের উজ্জ্বলতা কিংবা তুলির প্রলেপ দেওয়ার পর সেটি কত দ্রুত শুকাবে সেটি তেলের উপরই নির্ভরশীল। একজন চিত্রশিল্পী তাঁর অঙ্কিত একই ছবিতে বিভিন্ন প্রকার তেল ব্যবহার করে থাকতে পারেন।

ধারণা করা হয়, প্রস্তর যুগের মানুষ তেল জাতীয় পদার্থের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রঞ্জক পদার্থ মিশিয়ে প্রাচীন গুহাচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। সপ্তম শতাব্দীর দিকে এশিয়া মহাদেশে তৈলচিত্রের কথা জানা যায়। আফগানিস্তানের বামিয়ান অঞ্চলে কিছু প্রাচীন তৈলচিত্র পাওয়া গিয়েছে। ৬৫০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে আঁকা এসব তৈলচিত্রগুলোতে পোস্তবীজ এবং আখরোটের তেল ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত তৈলচিত্রগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে খুঁজে পাওয়া এই ছবিগুলোই সবচেয়ে পুরনো।

ছবির উৎস

গ্রীক, রোমান এবং মিশরীয় সভ্যতায় অঙ্কিত চিত্রকর্মে তেল রং এর ব্যবহার দেখা যায়। প্রথমদিকে কাঠের প্যানেলে তৈলচিত্র আঁকা হতো। তেলরং ব্যবহার করে কাঠের প্যানেলে অঙ্কিত লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’র “মোনালিসা” পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সুপরিচিত তৈলচিত্রের অন্যতম একটি উদাহরণ। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে ক্যানভাস কাপড়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে ক্যানভাসে তেলরং দিয়ে ছবি আঁকা শুরু হয়। তৎকালীন নেদারল্যান্ডসের চিত্রশিল্পী ইয়ান ভন আইক এর অসামান্য দক্ষতায় আঁকা নিখুঁত তৈলচিত্র বিপুল জনপ্রিয়তা পেলে অন্যান্য চিত্রশিল্পীরা তেলরং ব্যবহার করে ছবি আঁকায় উৎসাহী হন।

শুরুর দিকে বিভিন্ন প্রকার রঞ্জক পদার্থের গুঁড়ো তেলের সঙ্গে মিশিয়ে তৈলচিত্রের প্রয়োজনীয় রং প্রস্তুত করা হতো। ১৮৪১ সালে আমেরিকান চিত্রশিল্পী জন গোফ র‍্যান্ড তেলরঙের টিউব উদ্ভাবন করলে ছবি আঁকা-আঁকির জগৎটাই পাল্টে যায়। এভাবে বিভিন্ন সময়ে তেলরং তৈরি এবং এতে ব্যবহৃত উপাদান সমূহের পরিবর্তন ঘটেছে। তেলরংয়ের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ঘনত্ব বেশি থাকায় এই রং এর স্থায়িত্ব বেশি হয়। বর্তমানে কাঠের আসবাবপত্র এবং লৌহ/ইস্পাত নির্মিত বড় বড় স্থাপনার বাইরের অংশে যে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয় সেটিও এক ধরনের তেলরং।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58560.83
ETH 2491.85
USDT 1.00
SBD 2.40