বাংলা রূপকথা " সিরিয়াল পাগল বউ" অন্তিম পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

tv_serial
image source: copyright freepixabay || image credit: FrankundFrei


Hello
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমার বাংলা রূপকথা "সিরিয়াল পাগল বউ" এর শেষ পর্ব ( অন্তিম পর্ব )।
কবিতা : এখন কি করে যাই বলো তো, আজ বরণ সিরিয়াল এ তিথি ও রাজ এর বিয়ে। তারপর আবার পিউ কি করে তার পরিবারকে বাঁচায়।
স্বামী : কবিতা তুমি কি পাগল হয়ে গেছ নাকি। সারাদিন শুধু টিভি নিয়ে থাক। আবার মাঝে মাঝে একা একা কান্না করো আবার কি দেখে যে হাসতে থাকো বুজতে পারি না।
কবিতা : তোমার সাথে এখন আমার কথা বলার সময় নেই।আমি গেলাম। বলেই কবিতা আবার টিভির সামনে গিয়ে বসলো। এই ভাবে বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল। দিন দিন কবিতার পাগলামি বেড়েই চলেছে। হটাৎ একদিন কবিতার শাশুড়ি কবিতাকে বললো।
শাশুড়ি : বৌমা অনেক দিন হলো তুমি তোমার বাবার বাড়ি যাওনি। যাও বৌমা একদিন গিয়ে ঘুরে এসো।
কবিতা : না মা, আমি এখন বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না। আর গ্রামে টিভি নেই ।আর ওখানে গেলে আমি সিরিয়াল দেখতে পারবো না।
শাশুড়ি : বৌমা তুমি যা কিছু করছো এটা ঠিক না। তুমি এ বাড়ির বউ অথচ ঘরের কোনো কাজ করো না। শুধু তিন বার খাওয়ার সময় টেবিলে ভাত দেও। এই তো তোমার সারাদিনের কাজ।
কবিতা : মা আমাদের বাড়িতে তো অনেক কাজের লোক আছে তাহলে আমাকে কেনো কাজ করতে হবে। শুনুন মা আপনি ও এ বাড়ির বউ তাহলে আপনি কাজ করুন।
শাশুড়ি : বৌমা এ সব তুমি কি বলছো। শাশুড়ি আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
কবিতা আবার টিভির সামনে বসে পড়লো। কবিতা দিনের পর দিন আরও উৎশৃংখল হয়ে উঠলো। সে কার ও কথা শুনে না। এভাবে প্রায় চার বছর কেটে গেল। এর মাঝে কবিতার এক মাসের একটি মেয়ে হয়ে গেল।কিন্তু এতেও কবিতার সিরিয়াল দেখা কমে যায়নি। বরং আরও বেরে গেছে। কবিতা কখনও তার বাচ্চা মেয়েটির দিকে লক্ষ্য রাখে না। একদিন সন্ধ্যার দিকে তার বাচ্চা কে কাদঁছে ।আর কবিতা টিভি দেখছে কিন্তু তার বাচ্চা কাঁদছে সে দিকে লক্ষ্য নেই।
শাশুড়ি বাচ্চার কান্না শুনে রেগে গেল।
শাশুড়ি : বৌমা বাচ্চাটা কাঁদছে তুমি শুনতে পারছো না।
কবিতা : আপনি দেখুন মা, কেনো কাঁদছে। আমি টিভি দেখছি।
শাশুড়ি কোনো কথা না বলে সে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সামলালো। কবিতার স্বামী অফিস থেকে রাতে ফিরে দেখে বাচ্চা তার মা এর কাছে। আর কবিতা এখনও টিভি দেখছে।
স্বামী : কবিতা এখন তো টিভি বন্ধ করে বাচ্চাকে খেতে দেও।
কবিতা : এই তো আসছি এই সিরিয়াল টা শেষ হলে আসছি। আমাদের ঘরে টেবিলের উপর বাচ্চার খাবার রাখা আছে নিয়ে খেতে দেও।
স্বামী : কবিতা এখন তুমি মা হয়েছো, বাচ্চার দিকে লক্ষ্য দেও।
কবিতা : আমি এখন যেতে পারবো না।
একথা শুনে কবিতার স্বামী রেগে গিয়ে টিভি বন্ধ করে দিল। কবিতা ও রেগে গিয়ে বললো বাচ্চার জন্য একটা আয়া রেখে দেও। আমি আমার সিরিয়ালপাঁচ রেখে বাচ্চা রাখতে পারবো না।তখন শাশুড়ি এসে বললো তোমরা রাগারাগি করো না আমি বাচ্চা রাখবো। সেইদিন থেকে বাচ্চা কবিতার শাশুড়ির কাছে থাকে। আর কবিতা শুধু খাওয়ানোর সময় খাইয়ে দিয়ে আবার টিভি দেখতে বসে। তার স্বামী ও শাশুড়ি অনেক রাগারাগি করে ও কিছু করতে পারলো না। এভাবেই তাদের দিন যেতে লাগলো। এভাবে প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেল। কবিতার মেয়ের বয়স ছয় মাস। সে দিন ছিল বৃহস্পতিবার । কবিতার স্বামী অফিসে চলে গেল আর শাশুড়ি কবিতাকে ডেকে বললো।
শাশুড়ি : বৌমা আজ বৃহস্পতিবার আমি ঠাকুর ঘরে যাচ্ছি তুমি মেয়েকে একটু দেখ। ও ঘরের খাটের উপর শুয়ে আছে।
কবিতা : ঠিক আছে মা আপনি যান আমি দেখবো।
কবিতার শাশুড়ি চলে গেল। হটাৎ কবিতার মনে পড়ে গেল প্রায় ৫.৩০ টা বেজে গেছে বরণ শুরু হয়ে গেছে। কবিতার মেয়ের কথা ভুলে গিয়ে টিভি দেখতে চলে গেল। এভাবে প্রায় ঘন্টখানেক হয়ে গেল সে টিভি দেখছে।তার মেয়ের কথা সে একেবারে ভুলে গেছে। হটাৎ ঘরের ভিতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে শাশুড়ি চলে আসলো। এসে দেখে বাচ্চা খাটের উপর থেকে নিচে পড়ে গেছে। বাচ্চার পড়ে গিয়ে মাথা কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে। কিন্তু কবিতা সিরিয়ালে এত মত্ত হয়ে গেছে যে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়নি। শাশুড়ি রেগে গিয়ে তাড়াতাড়ি তার ছেলেকে ফোন করে বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেল। কবিতা ও কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে চলে গেল। ডাক্তার বললো অনেক ছোটো বাচ্চা তার উপর মাথা কেটে গেছে। আমরা সেলাই করে ব্যান্ডেস করে দিয়েছি বাকিটা ঈশ্বরের হাতে।
শাশুড়ি : বৌমা আমি আগেই বলেছিলাম একটু লক্ষ্য দেও । কিন্তু তুমি আমার কথা তখন শোননি। সেদিন যদি তুমি আমার কথা শুনতে তাহলে আজ এটা হতো না।
কবিতা : মা আমি আজ বুঝতে পেরেছি। আর কখনও এমন ভুল করবো না। আজ থেকে আমি আর টিভি দেখবো না। আমি শুধু আমার মেয়েকে চাই।
কবিতা এই কথা বলে কাঁদতে লাগলো। আর ঈশ্বরকে ডাকতে লাগলো। কবিতা তার নিজের ভুল বুঝতে পারলো। এরপর কিছুদিন পর কবিতার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠলো। কবিতা সেই দিন থেকে আর টিভি দেখে না। কবিতা এখন তার সংসারের প্রতি মন দিয়েছে।

এই ছিল আমার ছোটো গল্প। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। এই গল্পটি আমি বর্তমান সময়ের কিছু প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লেখা সার্থক।

Sort:  
 3 years ago 

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আপনি দারুন একটি ছোটগল্প আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন বৌদি। আপনার এই ছোটো গল্পের মাঝে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা টিভি সিরিয়ালের প্রতি খুবই আসক্ত। তাই তদের বাস্তবের সংসার ধর্মের প্রতি কোন খেয়াল নেই। আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে অনেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ধন্যবাদ আপনাকে বৌদি দারুন একটি শিক্ষণীয় বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

 3 years ago 

বৌদি খুব ভালো লেগেছে গল্প টা। আসলে বাস্তব জীবনে ও এমন মানুষ অনেক রয়েছে।
খুব ভালো লেগেছে গল্পটা।

অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বৌদি এতো সুন্দর গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
গল্প পড়তে খুব ভালো লাগে বৌদি।
আবার অপেক্ষা করবো নতুন কোনো গল্পের জন্য 🥰🥰

 3 years ago (edited)

বৌদি আমি মনে করি আপনি সমাজের জন্য একটি শিক্ষামুলক পোস্ট শেয়ার করেছেন। এই সমাজে এমন অনেক নারীর রয়েছে যারা তাদের টিভি সিরিয়াল নিয়ে এতটাই মত্ত যে তার সংসারে কি ঘটে যাচ্ছে এই বিষয় নিয়ে তাদের কোনো খেয়ালই নেই। বর্তমান অবস্থাটা এমন যে তারা তার স্বামীকে ছেড়ে দিতে পারবে তবে সিরিয়াল ছাড়তে পারবে না। বিনোদনের জন্য মানুষ টিভি সিরিয়াল দেখে তবে কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। বৌদি আপনি খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছ, আসলে এটা গল্প নয় এটি আমাদের বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য বৌদি।

 3 years ago 

বৌদি সত্য বলতে কি, আপনি একদম সমসাময়িক বিষয় তুলে ধরেছেন৷ এমনটাই হচ্ছে আশে পাশে । ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটা বাস্তবিক ঘটনা শেয়ার করার জন্য। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।

 3 years ago 

আপনাকে এই জন্যই এত বেশি ভালো লাগে বৌদি। কারণ আপনি যখন কোনো কিছু লিখেন তখন তার মাঝে একটি খুবই ভালো মেসেজ লুকিয়ে থাকে। যেই মেসেজটা আপনার পুরো লেখাটি পড়লে তবেই জানা যাবে। তা না হলে জানা সম্ভব না। আসলে কোনো কিছুর প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হওয়া খুবই খারাপ। এটা শুধুমাত্র বিপদ ডেকে আনে। শুধু কোনো কিছুর প্রতি কেনো, আসক্তি শব্দটাই অনেক বেশি খারাপ আমাদের জীবনের জন্য। আপনি বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি অনেক বেশি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন বৌদি।

খুবই সুন্দর গল্প লিখেছেন আপু। আসলে আমরা অনেকেই আছি যারা জীবনে একটা বড় ধাক্কা না খাওয়া পর্যন্ত নিজেকে শুধরাতে চাই না। কিন্তু অনেক সময় এমনও হয়ে দাঁড়ায় যে একটা সময় আমাদের ভুল শুধরানোর আর উপায় থাকেনা। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি কনসেপ্ট নিয়ে গল্পটা লেখার জন্য। শুভকামনা রইল আগামীর জন্য।

 3 years ago 

খুব সুন্দর ও সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখেছেন বৌদি।এটি খুবই শিক্ষনীয় গল্প ও খুবই সুন্দর ছিল গল্পটি।আসলে এটিও একটি নেশার মতো ছিল, যা সর্বনাশ ডেকে এনেছিল কবিতার সংসারে।আমি গল্পটি কার্টুন ভিডিওতে দেখেছি।খুবই ভালো গল্পটি।ধন্যবাদ বৌদি।

 3 years ago 

খুব মজার ছিল দিদি,প্রথম পর্ব পড়ার পর এই পর্ব পড়ে খুব ভালো লেগেছে। তবে আমাদের অবশ্য বেশি সময় অপেক্ষা করা লাগেনি,আপনি তারাতারিই গল্প দিয়ে দিলেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দিদি। আরও গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 3 years ago 
কবিতা : মা আমাদের বাড়িতে তো অনেক কাজের লোক আছে তাহলে আমাকে কেনো কাজ করতে হবে। শুনুন মা আপনি ও এ বাড়ির বউ তাহলে আপনি কাজ করুন।

এভাবেই কিন্তু বউ শাশুড়ির যুদ্ধ লেগে যায়। এখানে যে শাশুড়ি কিছু না বলে চলে গেছে এটাই কপাল।

শেষমেষ এত বড় কাহিনীর পর কবিতা যে তার ভুল বুঝতে পেরেছে তাতেই কপাল। এই গল্প থেকে শিক্ষা পাওয়া যায়, কোন কিছুতে বেশি পাগল হতে নেই। নয়তো এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

 3 years ago 

যাক অবশেষে সিরিয়াল পাগল বউ এর শিক্ষা হয়েছে। তার পাগলামী গুলি আজ তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। তাই আমাদেরকে সব সময়ই নিজের পরিবার এবং নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে তারপর বাকি সব কিছু করা উচিত। টিভি সিরিয়াল গুলো আমাদের বিনোদনের জন্য দেখা উচিৎ তবে হয়তো সেটা ক্ষণিকের জন্য বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আপনার পোস্টটি অনেক শিক্ষামূলক। ধন্যবাদ আপনাকে বৌদি দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57050.09
ETH 3060.34
USDT 1.00
SBD 2.32