"আমার জীবনের অজানা কিছু গল্প " পর্ব - ২

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আবার আপনাদের সাথে আমার জীবনের অজানা কিছু গল্প শেয়ার করবো। অনেকদিন আগে প্রথম পর্বে কিছু কিছু শেয়ার করেছিলাম। একটা মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটনা থাকে সব কিছু তুলে ধরা সম্বব নয়। সেখান থেকে কিছু কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক। আপনারা জানেন আমি আমার পড়াশুনা থাকতে ভালবাসতাম। এমনকি এখন ও আমি আমার কাজ আমার পরিবার নিয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করি। তাই হয়তো আমার বন্ধু সার্কেলের সংখ্যা কম ছিলো। আমার প্রিয়মানুষ টির সাথে পরিচয় হওয়ার গল্প বলার আগে একটি কথা না বললেই নয়। আর তা হলো আমি কেউ আমার কাছে এসে মিষ্টি কথা ও ভালো কথা বললে আমি খুব ভয় পাই। সত্যি কথা বলতে আমি এখন মানুষকে বিশ্বাস করতে খুব ভয় পাই। এর একটা কারণ আছে। আমি খুব কম মানুষের সাথে মেলামেশা করতাম। আমার স্কুল জীবনে বেশ কয়েকজন বান্ধবী ছিলো। তার ভিতরে একজনের সাথে বেশি মেলামেশা করতাম। আমরা একজন আর একজনকে ছাড়া কিছু বুঝতাম না। সে আমার থেকে ২ বছরের বড় ছিলো। কিন্তু আমি তার সাথে অনেক দুষ্টুমি করতাম। কিন্তু আমি যখন ক্লাশ ফাইভে তখন শুনি তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলে আসতো না। তখন বুঝতাম না বিয়ে মানে কি? শুধু এটুকু বুঝতাম বিয়ে হয়ে গেলে সে অন্য জায়গায় চলে যায়। আমার ওই বান্ধবীর নাম স্মৃতি।তাই এ কথাটি শুনার পর বাড়ি এসে মা কে বললাম স্মৃতির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। মা বিয়ে মানে কি? স্মৃতিকে বিয়ে করে আমাদের বাড়ি এনে রাখা যায় তো। তাহলে আমি তার সাথে থাকতে পারবো খেলতে পারবো। আমার মা শুনে রেগে গিয়ে বললো পাগলের মতো কথা বলবি না। ওর অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক।ওকে আমাদের বাড়ি আনা সম্ভব না।

IMG_20220219_164800.jpg
মায়ের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। সেই দিন থেকে আমি আমি দুই মাস স্কুলে গিয়েছিলাম না। কার ও সাথে খেলতাম না। সারাদিন বাড়ীতে থাকতাম। সেই থেকে আমি আমার পড়াশুনা ও নিজের পরিবার নিয়ে থাকি। সেই দিন গুলোর কথা আমি আজ ও ভুলতে পারি না। আজ ওর সাথে আমার এখন ফোনে কথা হয় কিন্তু কম। কারণ ও বিদেশে চলে গেছে এখন তার স্বামীর সাথে। কিন্তু ওর ছেলে মেয়ে নেই।এরপর থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। কিন্তু তা অল্প কয়েকদিনের জন্য। সেই থেকে আমি লক্ষ্য করেছি যাকে বন্ধু হিসেবে আকড়ে ধরতে চেয়েছি তারাই এক সময় আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কেউ আমার পাশে বন্ধু হয়ে নেই। কিন্তু আমি যাকে ভালোবাসি পছন্দ করি তারাই এক সময় আমাকে বহু দূরে চলে যায়। তাই এখন আমি বিশ্বাস করতে ভয় পাই। আমি সবাইকে ভালোবেসে নিজের কাছে রাখতে চাই। কিন্তু কেউই আমাকে ভালোবেসে কাছে থাকে না।

তাই আমি এখন কারও সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই না। আর আমি ভালোবাসা বিয়ে এই দুটি জিনিস খুব ভয় পাই। সেই থেকে আমি বিয়ে করতে চাইতাম না। আমি চাইতাম লেখাপড়া করে একা একা নিজের মতো থাকতে।আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া করেছি। আমার যখন পড়াশুনা শেষের দিকে তখন আমার মা একদিন আমাকে বিয়ের কথা বলে। আমি শুনা মাত্রই মায়ের উপর রেগে গিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম এ জীবনে আমি বিয়ে করবো না। কারণ বিয়ে করলে তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে।আর আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না। তাই আমি বিয়ে করবো না।

আর আমার শ্বশুর আমাকে অনেক আগে থেকে চিনতো এবং আমাকে খুব ভালোবাসতো ও পছন্দ করতো। এটা আমি জানতাম। এমনকি আমি ও তাকে খুব সম্মান করতাম। আমার শ্বশুর ছিলো একজন শিক্ষক। এবং খুব ভালো মনের মানুষ। একই গ্রামের হলে ও আমি আমার শ্বশুরকে ছাড়া কাউকে চিনতাম না। আর আমি গ্রামে থাকতাম না। তাই আর কাউকে তেমন চিনতাম না।

এটা ২০১৭ সালের ঘটনা আমি পড়াশুনার জন্য শহরে থাকি। একদিন বিকালে আমার বাবা আমাকে ফোন করে বাড়ীতে ডাকলো। বললো খুব জরুরী কথা আছে। আর আমি বাবার কথা ফেলতে পারি না। তাই বাড়ি চলে আসলাম। এসে মায়ের কাছে শুনলাম আমাকে দেখতে আসবে। আমি মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর তাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে আর না করতে পড়লাম না। তারপর তো এক পর্যায় আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। তখন ও আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে দেখি নি। কিন্তু সে আমাকে ছবিতে দেখেছিলো। আমি তার ছবি ও দেখিনি আগে। তারপর একদিন রাত আটটায় আমার অচেনা একটা নাম্বারে ফোন এলো। আমি এখনও পর্যন্ত কোনো অচেনা নাম্বার রিসিভ করি না। কিন্তু সে দিন কি ভাবতেই ফোন রিসিভ করে দেখি সে ফোন দিয়েছে। আমি কে বলতেই ওর নাম বললেই আমি চিনে ফেলি। সেদিন মাত্র ২ মিনিট কথা বলেছিলাম। তারপর আর বেশ কয়েকদিন আর ও ফোন দেয়নি। তারপর বেশ কিছুদিন পর আমাকে একটি মেসেজ করলো। কিন্তু আমি তার মেসেজের কোন উত্তর দিলাম না। মেসেজ কি লিখা ছিলো তা আর বলছি না। এটা আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।এরপর ফোন দিয়ে আমাকে বললো তুমি আমার মেসেজের উত্তর দিলে না কেন। আমি শুধু বলেছিলাম এখনও সময় হয়নি, যে দিন সময় হবে সেদিন দিবো। এটা বলতেই সে ফোন কেটে দিলো। আমি ও আর তাকে ফোন দেয় নি।

আজ আমার গল্প এই পর্যন্ত। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। পরবর্তীতে নতুন পর্ব নিয়ে আবার আসবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।

Sort:  
 2 years ago 

বৌদি আসলে সবাই বিশ্বাসের দাম দিতে পারেনা আমরা অনেক সময় আমাদের ছোটবেলার বন্ধুদের কে হারিয়ে ফেলি। এতকিছুর মধ্যেও আপনার জীবনে প্রাপ্তির কমতি ছিল না। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

সবাই বিশ্বাস এর দাম দিতে পারেনা বলেই হয়তো আমরা এত ভয় পাই বন্ধুত্ব করতে । আর তোমার আর দাদার গল্পটা শুনে খুব ভালো লাগলো।পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।মেসেজটা কিন্তু বুঝে গেছি 🤭🤭।

 2 years ago 

আজকের এই গল্পটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো দিদি ।আসলে আপনার আর দাদার জীবনের এই গল্পটা পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল ।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে এটি বলার জন্য। পরবর্তী পর্ব গুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম দিদি, ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

বৌদি আপনার ছোটবেলার কাছের মানুষের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জেনে একটু খারাপই লাগলো৷ তবে এটা যে প্রকৃতির নিয়ম। সব মেয়েদেরই জীবনে এই ঘটনা খুবই স্বাভাবিক যেমনটা আপনিও দেখছেন। তবে এটা ঠিক বলেছেন, সবাই বিশ্বাসের দাম দিতে জানে না।
আর আপনি তাই দাদার ভালোবাসাকে ভয় পেয়ে তখন কথা বলেননি সেটা কিন্ত আমরা বুঝে গেছি 😁😁😁😁

 2 years ago 

কিছু কিছু সম্পর্কের বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া অনেক কঠিন। আপনার ক্ষেএে যেমনটা হয়েছে। এবং এই বিচ্ছেদের ভয়ে আপনি কারো সাথে সেইরকম বন্ধুত্ব করার আগে অনেক ভাবেন। অতীত একটা ইতিহাস যা বার বার ফিরে আসে।

 2 years ago 

এত মধুর ভালোবাসার গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে। বৌদি আপনি কিন্তু আরও অনেক গল্প এভাবে দিবেন। কারণ আপনাদের দুজনের পবিত্র ভালোবাসা দেখতেও কেন জানি না খুব ভালো লাগে।

 2 years ago 

মেসেজে কি লেখা ছিল বৌদি তা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারলাম। শেষমেষ মনেহয় তাকে উওর সরাসরি দিয়েছেন, এমনটাই তো মনেহচ্ছে । তবে স্মৃতির ব্যাপার শুনে খারাপ লাগলো । তবে এতো বছর পরে এসেও স্মৃতির কথা মনে রেখেছেন, এইটাই তো বন্ধু হিসাবে অনেক বেশি । আজকাল তো এমন বন্ধুত্ব খুঁজেই পাওয়া যায় না । ছোটবেলার বন্ধুত্বের বন্ধন গুলো চির অটুট থাকুক, এই কামনাই করি ।ভালো লাগলো আপনার অতীত জেনে ।

 2 years ago 

বৌদি আপনার জীবনের গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। কিন্তু আপনার ছোটোবেলার বন্ধু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই খারাপ লাগলো। তবে আপনি খুবই অভিমানি সেটা বুঝতে পারছি।

 2 years ago 

আপনার জীবনে অজানা গল্প পড়ে খুবই ভালোলাগলো । আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। বৌদি আপনি মানুষটা অসাধারণ।

 2 years ago 

ভালো লাগলো আপনার গল্পটি বৌদি। আপনার বান্ধবীকে নিয়ে গল্পটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। খুব খারাপ লেগেছিল যখন বলেছে ক্লাস ফাইভে থাকতে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এবং আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। আসলে বন্ধুত্ব কি জিনিস তা কেবল আরেকজন প্রকৃত বন্ধু ই বুঝতে
পারে। যেমন আপনি বুঝতে পেরেছেন। এবং আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়াতে আপনি খুব কষ্ট পেয়েছেন 😔😔। যাইহোক আপনার এবং আপনার বন্ধুর জন্য শুভকামনা রইল। আশা করি আপনাদের দেখা হবে এবং আপনারা আগের মত খুব সুন্দর একটা সময় কাটাবেন। দাদার সাথে আপনার গল্পটাও বেশ ভালো লাগছিল। পরবর্তী গল্পের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74