বাস্তব ধর্মী গল্প " ফেসবুক" (পর্ব - ১)
![facebook](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.pixabay.com/photo/2016/06/09/20/38/woman-1446557_960_720.jpg)
image source: copyright freepixabay || image credit: geralt
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি বাস্তব ধর্মী গল্প শেয়ার করবো। এটি গল্প ঠিক না অনেক টা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ইতিহাস। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
প্রায় এগারো বছর আগের ঘটনা।তখন কলেজে পড়ি বাংলা বিভাগের ছাত্রী। আগেই বলেছি আমি গ্রামের মেয়ে কিন্তু পড়াশুনার জন্য শহরে আসা। আমরা চার ও পাঁচ জন মিলে একটা বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম। স্কুল পড়ার সময় আমার একজন প্রিয় বান্ধবী ছিল। তার বাড়ি ছিল আমি যে গ্রামে থাকতাম তার ঠিক অন্য গ্রামে। আমাদের দুজন কে দেখে সবাই হিংসা করে বলতো "মানিক রতন"। সময়ের বিবর্তনে আমাকে পড়াশুনা করতে শহরে চলে আসতে হয় আর ওর উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায়। ওর নামটাই তো বলা হলো না। ওর নাম হলো সাথী। ওর অনেক স্বপ্ন ছিলো পড়া শুনা করার। কিন্তু স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেলো। ওর সাথে আমার ফোনে কথা হতো। সাথীর স্বামী ছিল একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। ওর স্বামীর কাজের সূত্রে ওকে স্বামীর সাথে চলে আসতে হয়। এক বাড়ীতে দুজনে থাকতো ওর শশুর শাশুড়ি গ্রামে থাকতো। সাথীর সঙ্গে আমার দিনের ভিতর ২ - ৩ বার ফোনে কথা হতো। আর ওর যখন মন খারাপ হতো তখনই আমাকে ফোন দিত। ওর বিয়ের তিন বছর পার হয়ে গেল। আর আমি তো পড়া শুনা করি পাশাপাশি টিউশনি করি।
হটাৎ করে একদিন সন্ধ্যায় সাথীর ফোন এলো। আমি তাড়াতাড়ি ওর ফোনটা রিসিভ করি। ও ছিল আমার স্কুল জীবনের প্রথম বন্ধু। তখন আমি বললাম কি রে এই বুঝি আমার কথা মনে পড়লো, স্বামীকে পেয়ে এখন তো আমাকে মনে পরে না। সাথী একটু করুন স্বরে বললো না রে তুই তোর পড়াশুনা নিয়ে থাকিস তাই বেশি ফোন দেই না। আমি বললাম তোর স্বামী কোথায় ? আর সে কেমন আছে? সাথী বললো ও ঘরে বসে ফেসবুক চালাচ্ছে, ভালো আছে। শোন যায় জন্য ফোন দিয়েছি আমি আগামীকাল বাবার ওখানে যাবো। তুই পারলে গ্রামে আসবি। ওকে আমি তিন দিন পর এসে তোকে ফোন দিবো। সাথী বললো তাহলে আমি এখন রাখছি। বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি আর ফোন দিলাম না। কেনো দিলাম না তার ও একটা কারণ আছে। সাথী এখন বিবাহিত ওর সংসার আছে এখন ওর কত দায়িত্ব। তবে আজ সাথীর কথা শুনে মনে হলো ও খুব কষ্টে আছে। তখন ওর জন্য খুব টেনশন হচ্ছিলো। আর মনের ভিতরে শুধু আজেবাজে চিন্তা আসছিলো। আর এখন সাথী ও খুব একটা ফোন দেয় না। আবার কত দিন ওকে দেখি না। ওর বিয়ের পর থেকে আর আমাদের দেখা হয় না। আমাদের মেয়েদের জীবন কি অদ্ভুত। কখন যে কোথায় চলে যেতে হয় বুঝতে পারি না। চেনা মানুষ গুলো কে ছেড়ে চলে যেতে হবে একদিন। পুরানো বন্ধু বান্ধব আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে চলে যেতে হয়। এই রকম নানা ধরনের চিন্তা আসছে। আবার মনের ভিতরে একটা আনন্দ ও হচ্ছে। আমার সেই পুরনো বন্ধুকে কাছে পাবো দেখতে পারবো। সেই কতো পুরনো স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো। তখন এই তিন দিন যেনো আমার কাছে তিন বছরের মতো মনে হচ্ছে। দিন যেনো কাটতে চায় না।
এরপর আমি গ্রামে গিয়ে সাথীকে ফোন দিলাম। সাথী ফোন রিসিভ করে বললো , হ্যালো, সাথী বলছি। তখন আমি বললাম আমি আজ বাড়ীতে আসছি সাথী। তুই আয় আমাদের বাড়ি। তার আগে বল তুই কেমন আছিস ? সাথী বললো আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস ? আমি খুব ভালো আছি। শোন সাথী তুই বিকালে আমাদের বাড়ি চলে আয়। তোর স্বামী আসছে তোর সাথে। সাথী বললো না আর ওর কাজের অনেক চাপ তাই আসতে পারিনি। তবে আমি বিকালে তোদের বাড়ি আসছি। ঠিক আছে সাথী তুই আয় তারপর কথা হবে। এটা বলে আমি ফোন কেটে দিলাম। তখন আমি মাকে ডেকে বললাম মা আজ সাথী আসছে বিকালে আসছে তুমি কিছু নারকেলের নাড়ু করে রেখো। মা শুনে খুব খুশি হলো। আমার মা - বাবা ভাই সবাই ওকে খুব ভালো বাসে। আমরা স্কুল জীবনে থাকতে সাথী প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসতো, তবে আমি ওদের বাড়ি বেশি যেতাম না। আর সাথী নারকেলের নাড়ু খেতে খুব পছন্দ করতো। আর সাথী আগে যখন আমাদের বাড়ি আসতো তখন আমার মা ওর পছন্দ মতো খাবার রান্না করতো। সাথী বিয়ের পর এই প্রথম আসছে আমাদের বাড়ি। সাথী বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমাদের বাড়ি আসলো। আমি তো ওকে দেখে খুব খুশি। সাথী অনেক দিন পর আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম চল ঘরে যাই মা ও বাবা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। তারপর আমরা ঘরে চলে আসলাম। মা সাথীকে দেখে খুব খুশি হলো। সাথী মাকে প্রণাম করে কথা বলছিল। মা বললো তুমি এখন একটু রেস্ট নেও আমি তোমার জন্য নারু তৈরি করেছি। তুমি বসো আমি আসছি। সাথী বললো তুই আমাকে একটু হেল্প করবি। আমি বললাম কি হয়েছে সাথী আমাকে বল। আমি পারলে তোকে সাহায্য করবো। আর তুই আমার প্রিয় বন্ধু। সাথী বললো দেখ এসব কথা তোকে ছাড়া কাউকে বলতে পারছি না। কি হয়েছে সাথী? তোর সংসার বিষয়ে, কি হয়েছে? হ্যা রে আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম কি হয়েছে ওর আবার? আর আমি সংসার বিষয়ে কি সাহায্য করবো। এই সব চিন্তা আমার মাথায় কাজ করতে লাগলো। আমার একটা দোষ হলো আমি কার ও কষ্টের কথা শুনলে খুব খারাপ লাগে। তাই আমি আমার যা কিছু আছে তাই দিয়ে তার পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি। এটি আমার ছোটো বেলা থেকে।
আমি চাই আমার জন্য কেউ যেনো কোনো কষ্ট না পায়। আর আমার সবাই কে কিছু না কিছু দিতে ভালো লাগে। আর আমার জন্য যদি কার ও কোনো উপকার হয় এতেই আমি খুশি। আমার সবাইকে উপকার করতে ভালো লাগে। আমি কার ও উপকার করতে না পারলে ও অপকার করি না। যাই হোক তারপর যা বলছিলাম। সাথী তুই বল আমাকে কি করতে হবে। সাথী বললো দেখ আমি খুব একটা ভালো নেই। সে তো আমি আগেই তোর কথা শুনে বুঝতে পেরেছি সাথী। আমি একটু মজা করে বললাম তুই আর কাউকে ভালবাসিস। তোর স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে তাকে বিয়ে করবি!
একটু রেগে গিয়ে বললো তুই সব সময় বাজে কথা বলিস আর মজা করিস। আমি হেসে বললাম রাগ করিস না একটু মজা করলাম তুই বল। সাথী বললো তুই তো জানিস ও চাকরী করে। সারাদিন বাইরে থাকে আর বাড়ীতে এসে ফোন নিয়ে বসে তার ফেসবুকের বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে বসে পড়ে। এইভাবে সারারাত জেগে সে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করে। আমাকে সময় দেওয়ার কথা তার মনে থাকে না। আমি সারাদিন বাড়ীতে একা থাকি। কথা বলার মতো কেউ নেই। আর ও বাড়ীতে ফিরেও আমার সাথে দুই দণ্ড কথা বলে না। আমরা নিজেরা নিজেদের মতো খেয়ে ঘুমায় যাই। ছুটির দিনেও সে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায় না। আর গেলেও সেখানে ফেসবুক। এভাবে আমি তো আর চলতে পারছি না। তুই আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দে বন্ধু। আমি শুনে তো অবাক কি বলবো বুঝতে পারছি না। কারণ আমার ও ফেসবুক আছে। কিন্তু তার মানে তো এই না যে সব কিছু ছেড়ে নিজের আপন মানুষদের ছেড়ে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে থাকতে হবে। দূরের মানুষ দের সময় দিতে গিয়ে কাছের মানুষ কে দূরে সরিয়ে দিতে হবে এটা নয়।
আজ এই পর্যন্ত।এ খানেই শেষ করছি। আগামী দিন গল্পের বাকি অংশটুকু লিখার। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে আমার এই গল্পটি।
দোষ গুন মানুষের স্বভাব জাতেরই অংশ। দুটোই বিশেষন। জীবনধর্মী গল্প হলেও বাস্তব এখানে দৃশ্যমান। যা আমাকে কিছু উপহার দেয়।
প্রতিটি মানুষের শৈশব ও কৈশোর এবং যৌবন বয়সে অনেক স্মৃতি থাকে। যেগুলো কখনো ভুলবার নয়। দিদি আপনার প্রিয় বন্ধু ও স্কুল জীবন এর গল্প অসাধারণ। আমিও মাঝে মাঝে একটি বিষয় চিন্তা করি সেটা হলো মেয়েদের নিয়ে। তাদের একটি পরিপূর্ণ বয়সে স্বামীর ঘরে যেতে হয় নিজের মা-বাবা ভাই -বোন অর্থাৎ নিজের জন্ম ভূমিকে ফেলে। এটা আমার কাছে অনেক কষ্টের মনে হয়।আপনার বন্ধুর স্বামীর ব্যাপারটা মোটেও ভালো ছিল নাহ।প্রতিটি মানুষের জীবন কিছু আশা আকাঙ্খা থাকে সেই বিষয় চিন্তা ভাবনা করে চলা উচিৎ। বিষয়টি আমার কাছেও কষ্টদায়ক মনে হয়েছে। পরর্বতী টুকু শোনার অপেক্ষায় থাকলাম দিদি।♥️♥️
বৌদি পুরো গল্পটা পড়লাম, আসলে এটা সত্যি কথা এখনকার যুগে সোসিয়াল মিডিয়া এসে বন্ধুত্ব আত্মীয়-স্বজনের গুলো কেমন যেন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
আমাদের কথাই বলি আমরা যখন বন্ধুবান্ধব একসাথে বসে থাকি তখন সবাই তাদের নিজেদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি,হয়তো ফেসবুক নাইলে হোয়াটসঅ্যাপ নাহলে ইনস্টাগ্রাম চালাতে থাকে।
খুব খারাপ লাগতেছে সাথী দিদির জন্য, জানিনা পরের পর্বে কী লিখবেন আপনি, দোয়া করি সাথী দিদি যেন সুখে থাকে , এইরকম একটা কথা লিখবেন পরের অংশে ইনশাল্লাহ।
দিদি অসাধারণ একটি গল্প আমাদের উপহার দিয়েছেন। আপনার বন্ধু এবং স্কুল জীবনের গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনাদের বন্ধুত্ব টা খুবই কঠিন ছিল। কেমন বন্ধুকে সুখে দুখে সব সময় কাছে পেতে মন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। দিদি আপনার পরবর্তী পোষ্টের জন্য অধীর অপেক্ষায় রইলাম। দিদি আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
বৌদি আগামী দিনের জন্য অপেক্ষা করছি কারণ বাস্তব জীবনের গল্প পড়তে খুব ভালো লাগে বইয়ের গল্পের চেয়ে।কারণ বাস্তব জীবনের প্রতিটি গল্পের পিছনেই একটা শিক্ষা থাকে।
তবে আপনার বান্ধুবীর জন্য খারাপ ই লাগছে সবটা পড়ে, দেখা যাক শেষটা কি হয়।
প্রচুর গুছিয়ে লিখেছেন বৌদি।
আসলে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে অনেকেই একেবারে ওতপ্রোতভাবে ভাবে জড়িয়ে পরে।
কাছের মানুষকে সময়মতো মুল্য না দিতে পারলে একটা সময় তাদের কাছেও আমরা মূল্যহীন হয়ে যাই । আর প্রকৃত আনন্দ তো প্রিয় মানুষটিকে সাথে করে, পাশে নিয়ে দূরে সরিয়ে নয়। আপনার লেখাটা পড়তে খুবই ভালো লাগছিল আপু , অধির আগ্রহ নিয়ে বসে রইলাম পরবর্তী খন্ডের জন্য।
বৌদি,, খুব আগ্রহী হয়ে থাকলাম পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য। আপনাদের বন্ধুত্ব টা অনেক কঠিন ছিল। এমন কাছের বন্ধু কে সুখে দুখে সব সময় কাছে পেতে মন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আপনাদের বন্ধুত্ব আজীবন বেঁচে থাকুক। বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো কখনোই ভোলা যায় না। আবার তার সাথে পার করা সময় গুলির স্মৃতি তার সাথেই শেয়ার করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বহুদিন পর দেখা হলে পুরনো সব মায়া, পুরনো সব স্মৃতি, আবেগ হয় ভেসে ওঠে।
যাইহোক পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। সম্ভবত সমস্যা গুলোর সমাধান হয়েছিল পরে।
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে নিজের আপন জনদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে নিজের কাছের মানুষদের খোঁজ নেওয়ার মতো সময় থাকেনা। গভীরভাবে ভেবে দেখলে এই বিষয়গুলো খুবই অনুভব করা যায়। বর্তমানে ফেসবুকের কারণে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে। হয়তো সেই ব্যস্ততার কারণে নিজেদের সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়ে যায় সেটা কখনো ভেবে দেখেনা। বৌদি আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। একদম বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন আপনি। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
বউদি আপনার প্রতিটা লিখনি অসাধারন হয় ।এই গল্পোটিও একটি বাস্তোবতার সাথে মিল আছে ।এই ফেসবুক কারো জন্য ভালো আবার কারো জন্য জীবনে সর্বনাসা কাল হয়ে দাড়ায় ।যা আপনার গল্প নয় সুধু বাস্তোবে এটাই হচ্ছে বউদি ।আপনার বন্ধুর গল্পটি পরে একটু খারাপ লাগলো তবে পরবর্তী ধাপে কি হবে তার সাথে জানার আগ্রহে থাকলাম বউদি ।ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো বউদি ।
সত্যি মেয়েদের কখন কোথায় চলে যেতে হয় তারাই জানে না। কি অদ্ভুত নিয়ম পৃথিবীর । মেয়েদের মনের ইচ্ছা গুলো যেন পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই কারাগারে বন্দি। যাই হোক আপনার গল্পটি পড়ে ভালই লাগলো পুরোন বন্ধু , বহুদিন পড়ে দেখা । ধন্যবাদ