"শান্তির নীড় হলো শান্তি নিকেতন"শান্তি নিকেতনে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত ৩ য় পর্ব ( কোপাই নদী )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বন্ধুরা
আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো শান্তি নিকেতনের কোপাই নদী। আমি অনেক বার এই কোপাই নদীর কথা পড়েছি এবং লোক মুখে অনেক শুনেছিলাম। সেই থেকে আমার যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল এই কোপাই নদীকে নিজের চোখে দেখার ও হাত দিয়ে জলকে স্পর্শ করার। সেই ইচ্ছা যখন পূরণ হয়েছিলো তখন আমি আবেগে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি। আমার ভালোবাসার একটি জায়গা এই শান্তি নিকেতন। এই যখন এই শান্তি নিকেতনে পা রেখেছিলাম তখন থেকেই আমার মন শান্তিতে ভরে গিয়েছিলো।

IMG_20220415_170355.jpg

IMG_20220415_170255.jpg

এরপর আমরা নববর্ষের দিন বিকালে গেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গা কোপাই নদীতে।সেখানে যেতে গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়লো এক দল আদিবাসীরা নাচ ছিলো। আমার ও ইচ্ছা করছিলো তাদের সাথে মিশে যেতে। কিন্তু অনেক কিছু ইচ্ছা থাকা সত্বেও হয় না। সেই নাচ দেখতে দেখতে এগিয়ে গেলাম কোপাই নদীর কাছে। নদীর কাছে যেতেই মনটা শীতল হয়ে গেল।

IMG_20220415_170109.jpg

IMG_20220415_170113.jpg

IMG_20220415_170423.jpg

আদি অনন্তকাল ধরে মানব সভ্যতার বিকাশে সাক্ষী হয়ে রয়েছে নদী। সভ্যতার জন্ম হয়েছে নদীর হাত ধরে। নদীর সাথে মানুষের সম্পর্ক তাই নিবিড় ও আত্মিক। লাল মাটির দেশ বীরভূমের অন্যতম নদী হলো কোপাই নদী। ময়ূরাক্ষী নদীর উপনদী থেকে কোপাইয়ের এর উৎপত্তি। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত চামতারা জেলার হাজুরি গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার উত্তরে বক্রেশ্বর দক্ষিণে অজয় নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বয়ে চলেছে এই কোপাই নদী। ২৩০ টি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এই কোপাই নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় একশো বারো কিলোমিটার। দৈর্ঘ্য ছোট হলেও এর ঐতিহ্য ইতিহাস গৌরবময়। প্রায় চারশ ছত্রিশ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কোপাই নদীর অববাহিকা। বীরভূমের একাংশের মানুষের জীবনযাত্রা বড় অংশের প্রভাব বিস্তার করে আছে এই কোপাই নদী। তাদের সুখ দুঃখের সঙ্গী উৎস অঞ্চলের এই নদীর নাম হচ্ছে শাল নদী। পরে বোলপুরের বিনুরিয়া গ্রামের কাছে নদীর নাম বদলে হয় কোপাই নদী। আর এই কোপায় নাম দিয়েছিলেন আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

IMG_20220415_171212.jpg

IMG_20220415_170320.jpg

নাগপুর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিনে পাথরঘাটা গ্রামের নিকট বক্রেশ্বর নদের সাথে মিলিত হয়েছে কোপাই। যা পরবর্তীতে ময়ূরাক্ষী তে মিশেছে। এই কোপাই নদী বর্ষার সময় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে আবার গ্রীষ্মকালে জল প্রায় শুকিয়ে যায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পায়ের রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে যে কবিতা লিখেছিলেন। সেটি আমরা ছোটবেলায় সহজ পাটে পড়েছি। আর সেই কবিতাটি হল -
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে,
পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি
দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি।......

এই কবিতাটি ছোটবেলায় যখন পড়তাম আর তখন বারবার ভাবতাম এটি কোন নদী নিয়ে লেখা। কখনো কখনো মনে হতো আমাদের পাশের নদীটা নয় তো। যাই হোক সেই নদীকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। কোপাই নদীর বাক গুলি অনেকটা হাঁসুলী আকৃতিবিশিষ্ট।আর এই কোপাই নদীকে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেন একটি উপন্যাস" হাঁসুলী বাঁকের উপকথা"। আর এই হাঁসুলী বাঁকের উপকথা গল্প অনুসারে তপন সিনহা একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবেশিনী কোপাই আজ আর ভালো নেই। আগের সেই কোপাই নদী এখন আর নেই। আমি ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে কোপাই নদী। শুধুমাত্র বীরভূম জেলাতেই কোপাই নদীর উপর তৈরি হয়েছে ২৮ টি ইটভাটা। এই ইটভাটা গুলির ময়লা আবর্জনার অংশবিশেষ এই নদীকে দূষিত করে ফেলছে।

কিন্তু এসবের পড়ে ও কোপাই নদীর পাশে বসে বাউল গান শুনার আনন্দ আলাদা। কোপাই নদীর শো শো জলের শব্দ আর বাউল গানের মধুর সুর মনকে ভরিয়ে তোলে। আমরা বেশ কিছুক্ষন সময় ধরে এই বাউল গান শুনেছিলাম। কোপাই নদীর পাড়ে বসে হাট। বিশেষ করে শনি বার ও রবিবার এই হাটের দিন। কিন্তু এখানে প্রতিদিনই কম বেশি হাট বসে।

এরপর কোপাই নদী থেকে আমরা গেলাম শাল বনের উদ্দেশ্যে। আমরা শান্তি নিকেতন যাওয়ার পথে অনেক শাল বন দেখেছিলাম। সেই থেকে শালবনের ভিতরে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। আমার প্রিয় মানুষটিকে বললে সে বললো তুমি চাইলে তোমার সাথে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য উপভোগ করবো। আর তুমি যেখানে যেতে চাও সেখানে নিয়ে যাবো। আমরা আদিবাসী গ্রামের ভিতর দিয়ে শালবনের ভিতরে যাচ্ছিলাম। গাড়িতে যেতে যেতে আশেপাশের বাড়িগুলো আমার মন কেড়ে ছিল। এইবার এগুলো দেখলে মনে হচ্ছিল না যে এগুলো মাটি দিয়ে তৈরি। আদিবাসীরা অনেক দক্ষতার সাথে এই বাড়িগুলো তৈরি করেছে।

IMG_20220415_173955.jpg

IMG_20220415_173932.jpg

এরপর আমরা শাল বনের ভিতরে গিয়ে পৌঁছলাম। ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পরল অনেকদিন আগে স্টার জলসায় প্রচলিত "ইষ্টিকুটুম" সিরিয়ালের বাহা মনির বিয়ের ঘর। এই শালবনের ভেতরে এবং এই আদিবাসীদের গ্রামে "ইষ্টি কুটুম"সিরিয়ালের শুটিং হয়েছিলো। আর অনেক বড় বড় শাল গাছ। এই শালবনের ভিতর ঢুকতেই মনটা শীতল হয়ে যায়। আমারতো মনে হচ্ছিল না যে আমি গ্রীষ্মকালের আসছি। পরিবেশ এত শীতল ছিল।

IMG_20220415_174629.jpg

IMG_20220415_175702.jpg

IMG_20220415_175540.jpg

IMG_20220415_175858.jpg

এই কোপাই নদী ও শাল বনে এসে আমি আরো এই জায়গার প্রেমে পড়ে গেলাম। দ্বিতীয় বার আবার ও যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সবথেকে বেশি ভালো লাগতো আমি যদি সারাজীবন এখানে থাকতে পারলে। আজ এই পর্যন্তই আগামী দিন নতুন কোন জায়গা নিয়ে আবার আসবো।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। আশা করি আমার মতো আপনাদের ও ভালো লাগবে।

Sort:  
 2 years ago 

ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পরল অনেকদিন আগে স্টার জলসায় প্রচলিত "ইষ্টিকুটুম" সিরিয়ালের বাহা মনির বিয়ের ঘর। এই শালবনের ভেতরে এবং এই আদিবাসীদের গ্রামে "ইষ্টি কুটুম"সিরিয়ালের শুটিং হয়েছিলো।

বৌদি আমার কাছে বিষয়টি খুবই অবাক লেগেছে। কারণ এই নাটকটি আমি অনেক আগ্রহ দিয়ে দেখতাম। আর প্রতিটা ফটোগ্রাফি জাস্ট অসাধারণ।
আদিবাসীদের প্রতিটা জিনিস দেখে সত্যিই মন মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বৌদি অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

কিন্তু এসবের পড়ে ও কোপাই নদীর পাশে বসে বাউল গান শুনার আনন্দ আলাদা। কোপাই নদীর শো শো জলের শব্দ আর বাউল গানের মধুর সুর মনকে ভরিয়ে তোলে।

শান্তিনিকেতনের এই সৌন্দর্যময় ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। আপনি খুবই সুন্দরভাবে শান্তিনিকেতনের ফটোগ্রাফি এবং বর্ণনা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। তবে এরকম পরিবেশের মধ্যে বাউলদের গান আমার খুবই ভালো লাগে। খুবই সুন্দর সময় উপভোগ করেছেন।

 2 years ago 

নিশ্চয়ই আদিবাসীদের নাচ গুলো খুব উপভোগ করেছিলেন আপনি আপু। টিনটিন মনে হয় এটি দেখে খুব খুশি হয়েছিল। স্টার জলসার সেই জনপ্রিয় সিরিয়াল
ইষ্টিকুটুম এর বাহার বিয়ের ঘরটি দেখে অনেক ভালো লাগলো। সেই ধারাবাহিক নাটকটির কাহিনি মনে পড়ে গেলো।
আপনার পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম । 🙂

 2 years ago 

বৌদি শান্তির নীড় শান্তিনিকেতনের তৃতীয় পর্ব দেখে ভালো লাগছে।

ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পরল অনেকদিন আগে স্টার জলসায় প্রচলিত "ইষ্টিকুটুম" সিরিয়ালের বাহা মনির বিয়ের ঘর।

এই শালবনের ভেতরে এবং এই আদিবাসীদের গ্রামে "ইষ্টি কুটুম"সিরিয়ালের শুটিং হয়েছিলো।আদিবাসীদের গ্রামের ভেতর দিয়ে গিয়ে শালবনে পৌছে দারুণ উপভোগ করেছেন। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

ইস্টিকুটুমের বাহার বিয়ের ঘর অর্থাৎ শুটিংয়ের মুহূর্ত যে ঘরটি সেখানে ও আপনি গিয়েছেন।

 2 years ago 

কোপাই নদীটি দেখে মনে হলো খুব একটা বড়ো নয়,তবে শালবাগান দেখে মন ভরে গেল বৌদি।কোপাই নদী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।তাছাড়া এই প্রকৃতির মাঝে সোনাঝুড়ির মেলা বসে।যেখানে খুবই সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়, আমার যাওয়ার ইচ্ছে আছে একবার হলেও।ধন্যবাদ বৌদি।

 2 years ago 

একটা জিনিস জেনে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে বৌদি , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কোপাই নদীকে কেন্দ্র করেই সেই কবিতাটি লিখেছিল মানে

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে

এটা জেনে বেশ ভালো লেলেছে । তাছাড়াও ইষ্টিকুটুম সিরিয়ালের শুটিং যে শালবনে হয়েছে এটা জেনেও বেশ ভালো লাগলো । ব্যপারগুলো অনেকটাই অজানা ছিল ।ধন্যবাদ শান্তিনিকেতন ভ্রমণের অনুভূতি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য । শুভেচ্ছা রইল বৌদি ।

 2 years ago 

শান্তি নিকতনের কথা শোনে নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর আমার মনে হয় সব বাঙালিই যেতে চায় একবার হলেও। আপনার ছবি গুলো দেখে কিছুটা আইডিয়া নিয়ে নিলাম বৌদি। আর সত্যি কোপাই ভালো নেই গো। ভেতরে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে হয়তো। নদী তার চিরো যৌবনা রূপেই সবার কাছে প্রিয়। খুব ভালো লাগলো সব কিছু । আর শালবনের ছবি দেখে রবীন্দ্রনাথের রেল গাড়ির কামড়ায় হঠাৎ দেখা কবিতার কিছু লাইন খুব মনে পরছিল বৌদি।

অনেক ভালো থাকবেন। আশীর্বাদ রাখবেন 🙏❤️

 2 years ago 

কোপাই নদী পরিদর্শনের তৃতীয় পর্ব ছিল অনেক সুন্দর বিশেষ করে আপনি গাড়ি থেকে নেমেই আদিবাসীদের জে নাচ দেখেছেন সেটি অসাধারণ ছিল। আপনি কোপাই নদী পরিদর্শনের জন্য নববর্ষের বিকেলে গিয়েছিলেন। যেটা একটি মোক্ষম সময় ছিল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

আপনার তোলা শান্তি নিকেতনের সমস্ত ফটোগ্রাফি গুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বালকদের পুকুরে গোসল করার দৃশ্য। এর মধ্যে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নিহিত। তবে প্রত্যেকটি ফটোগ্রাফির মধ্যে রয়েছে বাংলার পরিচয়। এর সাথে সুন্দর হবে আপনি বর্ণনা করেছেন যা মিলিয়ে মনমুগ্ধকর একটি পোস্ট হয়েছে।

 2 years ago 

এই কবিতাটি ছোটবেলায় যখন পড়তাম আর তখন বারবার ভাবতাম এটি কোন নদী নিয়ে লেখা। কখনো কখনো মনে হতো আমাদের পাশের নদীটা নয় তো। যাই হোক সেই নদীকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

সত্যি বৌদি এই প্রশ্নটা আমার মনেও উঠতো, কিন্তু সেটা জানতাম না কোন নদীকে উদ্দেশ্য করে এটা লেখা হয়েছিলো। সত্যি কবে যে হৃদয় শান্ত হবে? শান্তি নিকেতন দেখতে পাবো? আগ্রহটা আরো বাড়িয়ে দিলেন। ফটোগ্রাফিগুলো দারুণ ছিলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74