নাটক রিভিউ || "কবর"
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের মত আজকেও আপনাদের সামনে এসে হাজির হলাম। অনেক দিন হয়েছে নাটক রিভিউ দেওয়া হয়না। তাই এবার চিন্তা করলাম এই সপ্তাহে একটা নাটক রিভিউ দেবো। আপনাদের নাটক রিভিউ পড়ে খুব ভালো লাগে। আমি সবসময় চেষ্টা করি এমন একটি নাটক রিভিউ দেওয়ার জন্য যেখান থেকে কিছু শিখতে পারি।
বর্তমানে বাংলা নাটক দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনি নাটকের গল্পগুলো খুবই শিক্ষনীয় থাকে।আজকে আমি আপনাদের সামনে একটি নাটকের রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছি। নাটকের নাম হচ্ছে কবর। এই নাটকটি এই ঈদে রিলিজ হয়েছে। এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে জোভান এবং তাসনিয়া ফারিণ। জোভান এর নাটক প্রায়ই দেখা হয় আমার। তবে এই নায়িকার বেশ কয়েকটি নাটক ইতিমধ্যে দেখা হয়েছে আমার। এই দুজনের জুটি দারুণ লাগে আমার এবং দিনদিন এই জুটির জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মাঝে নিজের মনকে ভালো রাখার জন্য অল্প সময়ে বাংলা নাটক দেখা হয়। যাইহোক আপনাদের সাথে এই নাটকের রিভিউ শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের কাছে খুব ভালো লাগবে।
ইউটিউব থেকে নেওয়া স্ক্রীনশট
নাটক সম্পর্কে কিছু তথ্য :-
নাটক | কবর |
---|---|
রচনা | যোবায়েদ আহসান |
পরিচালনা | রাফাত মজুমদার রিংকু |
চিত্রগ্ৰহণ | কামরুল ইসলাম শুভ |
প্রযোজক | জামাল হোসেন |
অভিনয়ে | ফারহান আহমেদ জোভান, তাসনিয়া ফারিণ,সমাপ্তি মাশুক,মিলি বাসার, টুনটুনি সোবাহান,হিমি হাফিজসহ আরো অনেকে |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা ভাষা |
প্লাটফর্ম | ইউটিউব |
কাহিনী সারসংক্ষেপ
নাটকের শুরুতে আমরা দেখতে পাচ্ছি জোভান সমাপ্তি মাশুক এর ড্রাইভার। জোভান সমাপ্তি মাশুক কে অফিস থেকে নিয়ে আসে। এরপর জোভান চলে যায়। এদিকে সমাপ্তি মাশুক বাসায় এসে জানতে পারে তার বউ প্রেগন্যান্ট। এই খুশিতে তার মা কে ডেকে আনে আর তারা সবাই খুব খুশি। এই আনন্দে জোভান কে ফোন দিয়ে সমাপ্তি মাশুক মিষ্টি নিয়ে আসতে বলে।অন্যদিকে জোভান এর বউ সেও প্রেগন্যান্ট কিন্তু তা জোভান জানতো না। জোভান এর মা তাকে ফোন করে মিষ্টি আনতে বলে। জোভান জানায় আমি মিষ্টির দোকানেই আছি। এরপর মিষ্টি নিয়ে বসের বাসায় গেলে সেখান থেকে জোভান কে এক প্যাকেট মিষ্টি দিয়ে দেয়। এদিকে সে বাসায় এসে জানতে পারে সেও বাবা হতে চলেছে।
এই খবরে দুই পরিবার খুব আনন্দে আছে। একদিন জোভান তার বউকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু তার মায়ের বিভিন্ন কথার জন্য আর যাওয়া হয়নি। এদিকে সমাপ্তি মাশুক আর বউ কিছু কেনাকাটা করার জন্য বাহিরে গিয়েছিল। আসার সময় তারা দু'জন গাড়িতে বসে বাচ্চা নিয়ে অনেক কথা বলছিল আর বউকে ঠিক মতো ফলমূল খেতে বলছে। এসব কথা শুনে জোভান তার বউ এর কথা চিন্তা করলো। তারা দু'জন বাসায় এসে জোভান কে গাড়ি থেকে সব জিনিস বাসায় নিয়ে আসতে বলে ভিতরে চলে যায়। এরপর জোভান সেখানে খাবার ও খেলনা দেখে তা থেকে তার বউ এর জন্য কিছু আলাদা করে রাখে।
কিন্তু এসব বিষয় সমাপ্তি মাশুক কিছুই বুঝতে পারেনি। এরপর একদিন জোভান গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে চুরি করে কিছু তেল বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এই কাজ করার সময় একজন হয়তো দূর থেকে তার ভিডিও করে রেখেছিল আর তা জোভান জানতো না। এভাবে সময় চলে যায় জোভান আর সমাপ্তি মাশুক দুজনের বউ সাতমাসে পা রাখে। যেহেতু সমাপ্তি মাশুক বড়লোক ছিল তাই খুব বড় অনুষ্ঠান করে আর অনেক খাবারের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকেও জোভান কিছু খাবার চুরি করে তার বউকে নিয়ে খাওয়ায়।
একদিন সমাপ্তি মাশুক অফিসে বসে মোবাইল চালাচ্ছে। এমন সময় জোভানের চুরি করে তেল বিক্রি করার ভিডিও দেখতে পায়। এরপর জোভান কে ডেকে এই ভিডিও দেখায় এবং তাকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বলে। কিন্তু তখন জোভান তার ভুলের জন্য মালিকের কাছে অনেক ক্ষমা চায় এবং বলে আমি বাবা হতে চলেছি চাকরি না থাকলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু মালিক কোনো কথা শুনতে চায় না। তখন জোভান মালিক কে অভিশাপ দিয়ে যায় তার সন্তান মারা যাবে। এই কথা শুনে মালিক আরও বেশি রেগে যায়।
এরপর একদিন জোভানের মা জিজ্ঞেস করে তুই কাজে যাবিনা।তখন সে বলে তার চাকরি নাই এই কথা তার বউ শুনে অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা প্রতারনার শিকার হয়। মানুষ গরীব থাকলে সব জায়গায় সমস্যা। অনেক কষ্টে জোভান তার বউ কে হাসপাতালে ভর্তি করায়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলে আপনার ছেলে বাবু হয়েছে কিন্তু মারা গিয়েছে। এই কথা শুনে জোভান অনেক কান্না করে। অন্যদিকে তাদের মেয়ে বাবু হয়েছে কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেও মারা যায়। একদিকে সমাপ্তি মাশুক কান্না করে অন্যদিকে জোভান।
এরপর জোভান তার সন্তান কে কবর দিতে নিয়ে যায়। কবরস্থানে সব কাজ শেষ হয় আর তারা বাচ্চার লাশ কবরের ভিতরে রাখতেই বাচ্চা কান্না শুরু করে। এরপর জোভান তাড়াতাড়ি কাপড় খুলে দেখে তার বাচ্চা বেঁচে আছে। জোভান বাচ্চা নিয়ে চলে আসার সময় সমাপ্তি মাশুকও একই করবস্থানে যায় তার বাচ্চার কবর দিতে।
এরপর জোভান তার বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। এরপর ফারিন তার বাচ্চাকে দেখে খুব খুশি হয়। তারা দুজনেই বাচ্চাকে দেখে কান্না করে দেয়।
ব্যক্তিগত মতামত
আমার কাছে এই নাটক দেখতে অনেক ভালো লেগেছে। এই নাটকের কাহিনী খুবই শিক্ষনীয়। এই নাটকে ফারিণ ডাবল পার্ট করেছে। গরীব বাড়িতে একটা বউ প্রেগন্যান্ট হলে সে কেমন থাকে আর বড়লোক বাড়িতে হলে তার অবস্থা কি হয় তা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া জোভান হয়তো গরীব বলে তার মালিকের বিভিন্ন জিনিস বিভিন্ন সময়ে চুরি করে নিয়ে যেতো। হয়তো সে ভেবেছে যদি বলে নেই তাহলে হয়তো দিবে না। এই কাজটা জোভানের করা ঠিক হয়নি। কিন্তু যখন সে তার ভুল বুঝতে পারে তখন তার মালিকের উচিত ছিল তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। কিন্তু সে ক্ষমা না করে জোভানের দুঃসময়ে তার চাকরি থেকে বের করে দেয়। ফলে জোভান কষ্ট পেয়ে যে অভিশাপ দিয়ে যায় সেটাই বাস্তবে প্রমাণ হয়। মালিকের সুস্থ সন্তান হলেও অল্প সময়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। কিন্তু জোভানের মৃত্যু সন্তান হয়েও সে বেঁচে ফিরে আসে। এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার থেকে শুরু করে সব জায়গায় জোভান খুব কষ্ট পায় সে গরীব বলে। কিন্তু অন্যদিকে তার মালিকের টাকা আছে বলে তারা কত ভালো সেবা পায় হাসপাতাল থেকে। যাই হোক সবমিলিয়ে এই নাটকের কাহিনী আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে। আপনারা সময় পেলে অবশ্যই দেখবেন।
ব্যক্তিগত রেটিং
১০ /১০
নাটকের লিংক
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
আপু এই নাটকটা আমিও দেখেছি। নাটকটা অনেক দুঃখের ছিল। তবে নাটকের শেষটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অনেক সুন্দর একটি নাটক রিভিউ করেছেন আপু। এ নাটকটি আমি কিছুদিন আগেই দেখেছি। নাটকটির মধ্যে অনেকটাই বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। সত্যি বলতে গেলে বর্তমান সমাজে যাদের টাকা আছে তারাই সব রকম অধিকার সঠিকভাবে ভোগ করতে পারে। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি নাটক আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
খুব সুন্দর ভাবে আপনি এই নাটকের রিভিউ করেছেন। এই নাটক আমি দেখে নিয়েছি৷ তবে আজকে আপনার কাছ থেকে আবার এই নাটক দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগলো৷ খুব সুন্দর হয়েছিল এই নাটক। এর মধ্যে অনেকগুলো বাস্তব বিষয়বস্তুগুলো তুলে ধরা হয়েছিল৷