অনেক আগের সত্য কাহিনী | ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাঁককে
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
কেমন আছেন বন্ধুরা। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আলহামদুল্লিলাহ ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ এমন একটি কমিউনিটি যেখানে আমাদের মনের কথা গুলো খুব সুন্দর ভাবে মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়ে শেয়ার করা যায়। এখানে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় সবকিছু শেয়ার করা যায় বলেই হয়তো আমরা এতগুলো মানুষ একই পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছি। এখানে একদিন পোস্ট না করলে বা জেনারেলে চ্যাট না করলে মনে হয় যেন হাজার বছরের কোনো কাজ বাকি পরে রয়েছে। আমি আগে ফেসবুকে অনেক সময় ব্যয় করেছি কিন্তু আজ অনেক দিন হয়ে গিয়েছে ফেসবুক চালানো হয়না। এখানে জয়েন হওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে ফেসবুক চালানো ভুলে গিয়েছি। আমার মতো যারা আমার বাংলা ব্লগের মজা পেয়েছে আমি মনে করি তাদের অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়না। যাই হোক অনেক কথা বলেছি এবার কাজের কথায় আসি।
আমার টাইটেল দেখেই বুঝতে পেরেছেন আজ কি পোস্ট শেয়ার করতে এসেছি। হ্যাঁ আজ আমি আপনাদের সাথে অনেক আগের সত্য কাহিনি শেয়ার করতে চলে এসেছি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে এমন এমন ঘটনা ঘটেছে যা এত দিন কোথাও লেখার মতো সুযোগ হয়নি। আমার বাংলা ব্লগে জয়েন হওয়ার পর সেই সুযোগ পেয়েছি বলে কিছু দিন পর পর একেকটা কাহিনি শেয়ার করতে চলে আসি। তাহলে চলুন শুরু করি। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। ঐ সময়ের মোটামুটি সব স্মৃতিই মনে আছে। আমাদের বাড়ির পাশেই একটি মসজিদ আছে। একদিন রাতের বেলা কয়েক জন মিলে সেই মসজিদ থেকে মাইক চুরি করে নিয়ে যায়। মাইক চুরি করার সময় আমাদের বাড়ির পাশের এক চাচা দেখে ফেলে।
এই চাচার দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে ছিল আর চাচির মাথায় একটু সমস্যা ছিল। কিন্তু বেশি পাগল ছিল না সব কিছুই বুঝতো। মাঝে মাঝে একটু পাগলামি করতো। যাই হোক চাচা সকাল বেলা এলাকার মুরব্বিদের কাছে এই কথা বলে। তারা চেয়ারম্যান মেম্বার এনে সেই চোরদের বিচার করে। তাদের অনেক মারধর করে ঐ সময় চোরেরা পানি খেতে চায় কিন্তু সেই চাচা তাদেরও পানি খেতে দেয়না। পানি খেতে না দেওয়ার কারণ আছে কাউকে অতিরিক্ত মারার পর পানি খাওয়ালে তার কলিজা ফেটে যায়। যদিও পানি দেওয়া তাহলে নাকি লবণ পানি খাওয়াতে হয়। চোরদের পানি খেতে দিল না বলে ঐ চাচার ওপর চোরদের একটা রাগ রয়ে যায়।
আমার এই চাচা একজন সৎ এবং খুবই ভালো মানুষ ছিল। তিনি মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। চাচির মাথায় সমস্যা ছিল বলে তিনিই সংসারের সব কাজ করে চাকরিতে যেতেন। ঐ চোরগুলো তাকে মারার জন্য সুযোগ খুঁজছিল। একদিন দুপুর বেলা মাদ্রাসা থেকে এসে ভাত খেয়ে গরুতে জন্য ঘাস কাটতে চরে গিয়েছে। আমাদের এদিকে নদীর পাড়ে যে জঙ্গল তাকে চর বলে। গ্রামে বাতা খেত বলে আর শহরের ভাষায় কাশফুলের খেত। সেই খেতে বসে গরুর জন্য ঘাস কাটছে। হঠাৎ করে ঐ চোর গুলো এসে তাকে মেরে ফেলে। আমার চাচা একলা ছিল আর তারা ছয় জন ছিল। যেই কাঁচি দিয়ে ঘাস কাটছিল সেই কাঁচি দিয়ে মাথা আলাদা করে ফেলে।
এদিকে বাড়িতে কেউ কোনো কিছু টের পায়নি। যখন রাত ১০টা বাজে তখন চাচি সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে বলে ওনি ঘাস কাটতে গিয়ে এখনো আসেনি। তারপর রাতের বেলা কয়েকজন মিলে চরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এক পর্যায়ে কাশফুলের খেতের ভিতর গিয়ে দেখে তার লাশ পরে আছে। এরপর সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। যখন চাচাকে খুন করা হয় তখন এক মামা এই ঘটনা দেখেছিল কিন্তু তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। তারজন্য ভয়ে সে কাউকে কিছু বলেনি। এই দৃশ্য দেখে চাচি একদমই পাগল হয়ে যায়। আমি সকাল বেলা গিয়ে লাশ দেখেছিলাম। লাশ দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম কারণ শরীর থেকে মাথা একদম আলাদা করে দিয়েছিল
তারপর পুলিশ এলাকার সবাইকে জিজ্ঞেসাবাদ করা শুরু করলো। সবাই বুঝতে পেরেছিল কারা এই খুন করেছে। আবার যে কয়জন মিলে খুন করেছিল সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। এরপর যেই মামা দেখেছিল সেও পুলিশের কাছে সব বলে দেয়। তাদের কয়েক জনকে ধরেছিল এবং কয়েক মাস জেল খেটে বের হয়ে আসে। তাদের তেমন কোনো শাস্তি হয়নি। আমার সেই চাচার পরিবার একদম লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। একটি পরিবারে বাবা না থাকলে অনেক সময় মায়েরা সন্তানদের আগলে রাখে।কিন্তু যখন মায়েরও সমস্যা থাকে তখন সেই পরিবার একদম শেষ হয়ে যায়।
এক ছেলে আর এক মেয়ে বড় ছিল এবং বাকি দু'জন ছোট ছিল। মেয়েকে চাচারা বিয়ে দিয়ে দেয় আর দুই ছেলেকে এতিম খানায় দিয়ে দেয় এবং আরেক মেয়েকে পালার জন্য এক মহিলা নিয়ে যায়। আমার ঐ চাচি এখনো বেচেন আছে এবং পাগল অবস্থাই রয়েগিয়েছে। আমার এই সত্য কাহিনি এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। যদি আমার পোস্টে কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন এই দোয়া কামনা করি।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
চাচার জন্য খুব খারাপ লাগছে মানুষটা বেঁচে থেকেও অনেক সংগ্রাম করেছে এবং শেষে এরকম একটা পরিস্থিতি আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক।
আমিন। এই দুনিয়াতে মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর।তাদের মধ্যে মায়াদয়া বলতে কিছু নেই। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।