বাবাকে নিয়ে কিছু কথা || ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাক🦊এর জন্য।
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের বন্ধুরা
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আল্লাহর রহমতে এবং আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো আছি।
আজ আমি আবারও নতুন আরেকটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। একটু ইউনিক পোস্ট না হলে মনে হয় একদমই ভালো লাগেনা। আমি সবসময় চেষ্টা করি ভালো ও ইউনিক পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করতে।
আমি আজ আপনাদের সাথে আমার বাবাকে নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো। আজ আমার একদমই ভালো লাগছেনা। এমন কিছু কিছু সময় জীবনে আসে যখন নিজের কষ্টগুলো বুকে চেপে হাসিমুখে ঘুরেবেড়াতে হয়। আমি অনেক চাপা স্বভাবের একটি মেয়ে। সহজেই কারো সাথে আমার কষ্টগুলো শেয়ার করতে পারিনা। অনেক সময় কিছু মানুষের কথায় আঘাত পেয়েও প্রতিবাদ জানাতে পারিনা। হয়তো সবাই দেখে আমি অনেক ভালো আছি। আমার কোনো কষ্ট নেই কিন্তু যার কষ্ট সেই একমাত্র বুঝে। কেন জানিনা আমি কাউকে কিছু বলতে পারিনা।
আজ হঠাৎ করেই কেন জানি আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। বাবার মারা যাওয়ার সময়ের সেই মায়া ভরা মুখখানি বারবার চোখে ভেসে উঠছে। আমার বাবার সব স্বপ্ন ছিল আমাদের তিন ভাইবোনকে নিয়ে। আজ হয়তো একটু হলেও আমরা বাবার সেই আশা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু সেই সুখের স্বপ্ন বাবা দেখে যেতে পারেনি। আমার বাবা জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে কিন্তু যখন সুখের সময় হাতছানি দিচ্ছে তখনই এই পৃথিবী ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে।
আমার বাবা আমাকে এত পরিমাণ ভালোবাসতো যা কখনো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কারণ আমি তার একমাত্র মেয়ে ছিলাম। বাবার এত আদরের মেয়ে ছিলাম বলেই হয়তো মৃত্যুর আগে দৃশেষ পানিটুকু আমার হাতেই খেয়েছিল এবং আমার কোলেই মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আজ সেই দৃশ্যগুলো কেন জানি এত বছর পর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমার বাবার তেমন বেশি বয়স হয়নি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস যেন আমাদের জীবনকে একদম এলোমেলো করে দিয়ে গেছে।
হঠাৎ করে দেখি বাবার সম্পূর্ণ শরীরে পানি চলে আসে। এর কিছুদিন আগে থেকে বাবা শুধু বলেছে কোনো খাবার খেতেই তার ভালো লাগেনা। তখন অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি এমনকি বিভিন্ন টেস্টও করানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো রোগ ধরা পড়েনি। যখন সম্পূর্ণ শরীরে পানি আসে তখন আমার দুই ভাই বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল যায়। কিন্তু বাবার অবস্থা খারাপ ছিল বলে ঢাকা মেডিকেলে রাখেনি। তরপর আরও কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কোনো হাসপাতালেই রাখতে চায়নি। অবশেষে রাত ১২টার দিকে ইসলামি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তারা টেস্ট করে দেখে বাবার দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।
তারপর রাত ৩টার দিকে ডায়ালাইসিস করা হয়।আমি আর আমার মা সকাল বেলা যখন বাবাকে দেখতে গিয়েছি তখন বাবাকে দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। তখন ডাক্তার বলেছে সপ্তাহে একবার করে ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দুইবার করার পরই বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তারপর তৃতীয়বার করার সময় নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। এরপর আইসিওতে নেওয়া হয় এবং সেখানে দুইদিন রাখার পর ডাক্তার বলেছে আর বাঁচানো সম্ভব নয়। তখন বাবা ইশারায় বলে গ্রামে নিয়ে যেতে এবং আমরা রাত ২টার দিকে গ্রামে চলে যাই।
তারপর কেটে যায় কিছু দিন। দিন ছিল অক্টোবরের ৩ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫.৩০ মিনিটে আমার বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই দিন মনে হয়েছিল আমার এই পৃথিবী যেন ভেঙে চূড়ে একাকার হয়ে গেছে। যার বাবা-মা না থাকে সেই বুঝে বাবা-মার কষ্ট। আজ সেই দিনের কথা মনে হতেই কেমন জানি চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমি কখনো আমার বাবাকে কতটা ভালোবাসি সেই কথা বলতে পারিনি। এতটুকু শান্তি আজ আমি খুঁজে পাচ্ছি কারণ শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি আমার বাবার সেবা করতে পেরেছি। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
Twitter Share
https://twitter.com/tanjima_akter16/status/1551563652230131712?s=20&t=Ru_6zUqauuJYaG9SnRwveA
আসলে আপু প্রত্যেকটি বাবামার সকল স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তানদেরকে ঘিরে ।যেমনটি আপনার বাবা আপনাদের তিন ভাই বোনকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিল ।ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ ভাইয়া প্রতিটি বাবা-মার একই ইচ্ছে থাকে হয়তো কেউ পূরণ করতে পারে আবার কেউ বা পারেনা।সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।