গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে আসার গল্প।১০% লাজুক খ্যাঁককে
আসসালামু আলাইকুম
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি আপনারা সবাই বেশ ভালই আছেন। উপরওয়ালার অশেষ রহমতে আমিও বেশ ভালো এবং সুস্থ আছি। আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে আমার করা পোস্টগুলোতে প্রতিনিয়ত ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করি। ভেরিয়েশন আনতে গিয়ে কখনো ক্রাফট পোস্ট, কখনো বা ড্রয়িং পোস্ট, আবার কখনো বা ফটোগ্রাফি পোস্ট, রেসিপি পোষ্ট কিংবা গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমি গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে আসার গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
আমি ২০০৯ সালে প্রথম ঢাকা শহরে আসি। যেদিন জানতে পারি আমরা ঢাকায় চলে আসবো সেই দিন থেকে মনের ভিতরে এক অজানা কষ্ট বাসা বেঁধে ছিল। সেই কষ্ট কখনো কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। আমার স্কুল থেকে যখন সার্টিফিকেট আনতে গেলাম সেই দিন আমি অনেক কান্না করেছি। আমার বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে খুব কষ্ট হয়েছিল। এতটা কষ্ট মনে হয়েছিল আর কোনোদিনও পাইনি।
এরপর যেদিন চলে আসবো তার আগের রাতে আমরা সবকিছু রেডি করে রেখেছিলাম। পরের দিন সকাল বেলা আমরা বাড়ি থেকে রিকশায় করে যখন বাস স্টেশন আসছি তখন মনে হচ্ছিল কলিজা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। সেই চিরচেনা রাস্তা কেমন জানি অচেনা হয়ে যাচ্ছিলো। আমি আর মা অনেক কান্না করেছিলাম। আমার চাচিরা ভাবিরা ভাইবোনেরা সবাই অনেক কান্না করেছিল। কিন্তু সেই দিন আমার আব্বুর কিছু করার ছিল না। আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
আমরা যখন প্রথম ঢাকা আসি তখন সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে আমাদের সবার সমস্যা হয়েছিল। ছোট থেকে বড় হওয়া সেই গ্রামকে ফেলে কিছু সমস্যার জন্য চলে আসতে হয় এই ইট পাথরের দেয়ালে ঘেরা ঢাকা শহরে। সেই মায়াবী গ্রামকে ফেলে এত মানুষে ঘেরা শহরকে মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর ছিল। কিন্তু আব্বুর কথা ভেবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমার আব্বু আগে থেকে ঢাকা ছিল তারজন্য তার কোনো সমস্যা হয়নি। আমার দুই ভাই আর আমি একা ছিলাম। সেই হিসেবে আমাদের পরিবারে সদস্য ছিল পাঁচজন।
এক তো গ্রাম ছেড়ে এসেছি তার উপর আমার দুই ভাই গ্রামে রয়ে গিয়েছে। কারণ তারা দুজনে আগে থেকেই আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে এক মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে পড়া লেখা করতো। তারজন্য তারা দুজন আমাদের সাথে আসতে পারেনি। আমি আর মা একদম একা হয়ে গেলাম। আমাদের যাতে খারাপ না লাগে তারজন্য আব্বু প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘুরতে নিয়ে যেত।
তারপর বিকেল হলে ছাদে চলে যেতাম। এরপর আমাদের সামনের ফ্লাটের আন্টির সাথে পরিচয় হয়। তারা আমাদের ঘরে আসতো আর আমরাও যেতাম। কিন্তু তারপরও মনে হতো কি যেন নেই। এত দিনের স্মৃতি কি আর সহজে ভুলা যায়। আমি প্রায় সময় অনেক কান্না করতাম। অনেক সময় ময়লার প্রচুর গন্ধ আসতো। সেই গন্ধ সহ্য করা খুবই কষ্টকর ছিল।
এভাবেই আমরা একসময় ঢাকা শহরের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে গিয়েছি।এখন আর আগের মতো কষ্ট হয়না। আমরা প্রায় ছয়মাস পর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন আর আগের মতো এতটা কষ্ট হয়নি। এখন বুঝি আব্বু সেই দিন যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা ঠিক ছিল।
আশা করি আমার মতো আপনাদের কাছেও এই গল্প খুব ভালো লাগবে। যদি আমার পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে ভুলবেন না। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন এই দোয়া কামনা করি।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
জন্মস্থান থেকে দূরে গিয়ে থাকতে সত্যি খারাপ লাগে। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের ছুটতে হয়। তবে একটা সময় আমরা ঠিক মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারি। জীবন টাই এমন। আমি প্রথম যখন বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম ঢাকাতে, তিন দিন ও থাকতে পারি নি। বাড়ি ছুটে গিয়েছিলাম। আর বাহানা খুঁজতাম কি করে বাড়ি যাওয়া যায়। কি ছিল সেই দিনগুলো !!! যাই হোক ভালো লাগলো আপু, আপনার অতীত স্মৃতির এই কথা গুলো পড়ে।
আমার মনে হয় অধিকাংশ লোকের আপনার মত একই গল্প, গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার গল্প। এটা সত্যি কথা যে জন্মভূমি ছেড়ে আসতে সবারই খুব কষ্ট হয় কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদে এবং জীবন যুদ্ধে শামিল হওয়ার জন্য এই জিনিসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেও যখন গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলাম বাবার হাত ধরে, তখনও আমার ঠিক আপনার মতই অনুভূতি হয়েছিল।