জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক নারীর গল্প(শেষ পর্ব)
হ্যালো বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।
আজ গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। গল্প পড়তে যেমন ভালো লাগে তেমনি লিখতেও ভালো। তারজন্য মাঝে মাঝেই গল্প নিয়ে হাজির হই। এমন কিছু গল্প রয়েছে যেগুলো অনেক সময় বাস্তব থেকে নেওয়া হয়। মানুষের জীবন কতইনা কঠিন। এই এক জীবনে যেমন সুখ থাকে তেমনি দুঃখও থাকে। সুখ আর দুঃখ মিলেই মানুষের জীবন। আপনারা কখনো কি শুনেছেন কারো জীবনে শুধু সুখ রয়েছে দুঃখ নেই কিংবা দুঃখ রয়েছে কিন্তু সুখ নেই। সৃষ্টিকর্তা কখনো একটি জিনিস দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেনি। যাই হোক আজ আমি এরপর তমার জীবনে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা শেয়ার করতে চলে এসেছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
তমার পঙ্গু স্বামীর সাথে সংসার জীবন প্রায় আট মাস হয়ে যায় আর তমার সংসার খুব ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন তমার শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি তাদের পরিচিত একজনের কাছ থেকে জানতে পারে ওকে বিদেশে পাঠালে ভালো চিকিৎসা করালে সে সুস্থ হতে পারে। এই কথা শুনে তমার মনে আশার আলো জেগে ওঠে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় তমা আর তার স্বামীকে বিদেশে পাঠাবে। সেখানে তমার স্বামীর উন্নত চিকিৎসা হবে আর এতে তার পা ভালো হয়ে যাবে।
এরপর তমা তার স্বামীকে নিয়ে বিদেশে চলে যায় আর সেখানে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা হয়। সেখানে তারা দু'জন প্রায় চার মাস সময় পার করে আর তমার স্বামী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। শুধু যে অপারেশন করলেই সুস্থ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়। সেই সাথে রোগীর সঠিক সেবা যত্নেরও প্রয়োজন হয়। তমা রাত দিন এক করে তার স্বামীর সেবা করেছে। এমন কি আট মাস পঙ্গু স্বামীর সাথে সংসার করতে গিয়েও সে তার দায়িত্বের একটুও অবহেলা করেনি।
যখন তমা ও তার স্বামী চার মাস পর দেশে ফিরে আসলো তখন তাদের দেখার জন্য অনেক আত্নীয় স্বজন আসতে লাগলো। তমা তার স্বামীকে সুস্থ করতে পেরেছে এর থেকে বেশি আর তার কাছে আনন্দের কি হতে পারে। কিন্তু কথায় বলে না "অতিরিক্ত সুখ কপালে সয় না"। তমার জীবনেও তাই হয়েছে। বিদেশ থেকে দেশে আসার পর বেশ কয়েকদিন তমার স্বামীর আচরণ ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তমা বুঝতে পারে তার স্বামী কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
তমা তার স্বামীর এই আচরণ দেখে খুব কষ্ট পায়। তার স্বামী অনেক রাতে নেশা করে বাড়ি আসে। এমন কি কোনো কিছুতেই তমাকে পাত্তা দেয়না আর গরীব বলে অনেক আঘাত দিতে থাকে। একদিন রাতের বেলা একটি অপরিচিত মেয়ে এসে তমার নেশাগ্ৰস্ত স্বামীকে বাড়ি দিয়ে যায়। যখন তমা জিজ্ঞেস করে এই মেয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক কি? এরপর এক কথা দু'কথায় তমার স্বামী তার গায়ে হাত তুলে। সে দিন থেকে তমা একদম চুপ হয়ে যায়।
তমার জীবনে সেদিনের পর থেকে সব হাসি আনন্দ শেষ হয়ে যায়। এভাবে বেশ কয়েকমাস কেটে যায় আর একদিন হঠাৎ করে তমা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপর তমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পরীক্ষা করে জানতে পারে তমার আয়ু শেষ হয়ে গিয়েছে অর্থাৎ তমার ভিতরে অনেক আগে থেকে মরণ ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বাঁধে। এই কথা শুনে তমার স্বামী খুব ভেঙ্গে পড়ে আর সে তার ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু সে যে তমার কাছে ক্ষমা চাইবে সেই সময়টুকুও পায়নি। তার আগেই জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে তমা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
এই পৃথিবীতে তমার মতো হাজারো মেয়ে রয়েছে যারা এভাবে নিরবে সব সহ্য করে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। তারা কাউকে কিছু বলতেও পারে না আর সহ্যও করতে পারে না। যাই হোক আমার গল্প এখানেই শেষ করলাম। আবার দেখা হবে নতুন কোনো গল্পের মাধ্যমে আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
আপু আপনার গল্পটা প্রথম পর্ব আমি পড়েছিলাম। সত্যি তমার জন্য অনেক খারাপ লাগলো। আসলে এমন হাজারো নারী রয়েছে এই অত্যাচারের স্বীকার। সত্যি তমার স্বামী যখন নিজের ভুল বুঝতে পারল তখন আর তমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সময় পেল না।ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আমার গল্প পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
পৃথিবীতে এমন অকৃতজ্ঞ অনেক লোক রয়েছে। তমার স্বামী ও সেই সব লোকের মধ্যেই পড়ে। এত কষ্ট করে তমা দিন রাত পরিশ্রম করে স্বামীকে সুস্থ করে তুলল কিন্তু তার প্রতিদান হিসেবে কিছুই পেল না। মৃত্যুর কাছে তাকে হেরে যেতে হল। যদিও তার অসুস্থ অবস্থায় তমার স্বামী ভুল বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু তখন ভুল বোঝায় আর কিছুই যায় আসে না। ভালো লাগলো আপু আপনার গল্পটি পড়ে।
হ্যাঁ আপু এই পৃথিবীতে এমন অনেক অকৃতজ্ঞ মানুষ রয়েছে তাদের উপকার করেও কোনো লাভ নেই। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
গল্পটার শেষ পর্ব পড়ে সত্যি আমার চোখে জল চলে এসেছে। তোমার রাতদিন সেবা-যত্ন করে বিদেশে নিয়ে গিয়ে তার হাজবেন্ডকে ভালো করেছে। উন্নত চিকিৎসা এবং তার সেবা যত্নের কারণেই তার স্বামী সুস্থ হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তার স্বামী তার সাথে এরকম আচরণ করেছে এটা ভাবতেই খারাপ লাগতেছে। আর তমা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর, তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন জানতে পারে তার ক্যান্সার হয়েছে। মরণ তার অনেক কাছে চলে এসেছিল। তাই তো সে জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। তার স্বামী তার ভুল বুঝতে পারলেও, ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ পায়নি।
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
এই গল্পের প্রথম পর্বটি পড়েই জেনেছিলাম যে তমা খুব ভালো একটি মেয়ে। তমা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে, এটা জেনে সত্যিই খুব খারাপ লাগলো। তবে তমার স্বামী একেবারে অকৃতজ্ঞ। এতো সেবা যত্ন করে তমা তার স্বামীকে সুস্থ করে তুললো,আর সেই স্বামী সুস্থ হওয়ার পর তমাকে মারধর করে। আসলে খারাপ মানুষের কপালেই এমন ভালো বউ জুটে। যাইহোক গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লেগেছে আপু। আশা করি নতুন কোনো গল্প নিয়ে আমাদের মাঝে খুব শীঘ্রই হাজির হবেন।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া খারাপ মানুষের কপালে ভালো বউ পড়ে তারজন্য তারা সঠিক মূল্য বুঝে না। ধন্যবাদ।