অনু গল্প || অন্ধকারের পিছনে আলো আছে
হ্যালো বন্ধুরা,আসসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আজ আবারও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে চলে এসেছি। আজকে একটি অনু গল্প শেয়ার করবো। গল্পটি একটি ছেলেকে কেন্দ্র করে লিখেছি। যার নাম রাফি। সে ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিল। তার পড়ালেখার প্রতি ছিল প্রবল আগ্ৰহ। কিন্তু তার পরিবার এতটাই গরিব ছিল যে,তাকে পড়ালেখা করানোর মতো সামর্থ ছিল না। কিন্তু রাফির পড়ালেখার প্রতি আগ্ৰহ দেখে তার বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর সে প্রতিটা ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করতে থাকে। এরজন্য তাকে স্কুল থেকে উপবৃত্তি দেওয়া হতো। সেই টাকা দিয়েই তার পড়ালেখার খরচ চালাতো।
তবে যেহেতু সে গরিব ছিল তাই কেউ তার সাথে বেশি মেলামেশা করতে চাইতো না। যারা মিশতো তারাও পড়ালেখায় ভালো বলে মিশতো, কিন্তু মন থেকে কেউ মিশতে চাইতো না। স্কুলে সহপাঠীদের এমন আচরণে রাফি খুব কষ্ট পেতো। তারজন্য সবসময় সে একটি বেঞ্চে একা একা বসে থাকতো আর ভাবতো মানুষের মন মানসিকতা এত নিচু কেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ধনী-গরিব বেঁধা-বেধ রয়েছে। তবে রাফি চিন্তা করে যাই হোক না কেন তাকে পড়ালেখায় অটল থাকতে হবে। এভাবেই সে ক্লাস নাইনে উঠে আর সেই সময় একটি নতুন মেয়ে ক্লাস নাইনে এসে ভর্তি হয়।
মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর ছিল আর নাম তার রিয়া। রিয়া দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি বড়লোক আর মেধাবী। এতো দিন রাফির সাথে প্রতিযোগিতা করার কেউ ছিল না, এখন নতুন মেয়ে এসে যুক্ত হলো। প্রতি পরীক্ষায় মেয়েটি রাফির থেকে হাফ নম্বর কম পায় আর এতে মেয়েটির খুব রাগ হয়। এরপর রিয়া চিন্তা করে যেভাবেই হোক রাফিকে পরীক্ষায় হারাতে হবে। তখন সে রাফির সাথে প্রেম করার সিদ্ধান্ত নেয় আর সেই প্রেমের জ্বালে ফাঁসিয়ে রাফিকে পরীক্ষায় একদম ফেল করিয়ে দেয়। এরপর একদিন রিয়া রাফিকে তার প্রতারণার কথা বলে দেয়। তখন থেকে রিয়ার সাথে রাফির সব ধরনের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু রিয়া বুঝতেই পারেনি অভিনয় করতে গিয়ে সে রাফিকে সত্যিকারের ভালোবাসে ফেলে। কিন্তু এই কথা রিয়া কখনও রাফিকে বুঝাতে পারেনি। এদিকে সেদিনের পর থেকে রাফি আবারও পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে পড়ে আর সামনে তাদের এস.এস.সি পরীক্ষা চলে আসে। রিয়া ও রাফি ভালো ভাবেই সবগুলো পরীক্ষা দেওয়া শেষ করে। যেদিন শেষ পরীক্ষা ছিল সেদিন পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে রিয়া স্কুল ভর্তি পরীক্ষার্থীর সামনে রাফিকে প্রপোজ করে। কিন্তু রাফি তা ফিরিয়ে দেয় আর রিয়া তা সহ্য করতে না পেরে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যায়।
রাফিও বাসায় চলে যায় কিন্তু এদিকে একটি ঘটনা ঘটে যায়। রিয়া সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে আর একটি চিঠি লিখে যায়। সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল আমার মৃত্যুর জন্য রাফি দায়ী। এরপর হঠাৎ করে রাফির বাড়িতে পুলিশ এসেছে দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। তারপর রাফিকে ধরে নিয়ে যায় আর রাফির ক্যারিয়ার একদম নষ্ট হয়ে যায়। রাফি ভেবেছিলো আর কখনও হয়তো সে আর তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু কথায় বলে না,যার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। সেখানে একটি পুলিশ ভালো ছিল আর সেই লোকটির জন্য রাফি আবারও বের হতে পেরেছে।
এরপর রাফি আবারও পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে পড়ে আর একটা সময় পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরি পায়। কিন্তু এতকিছুর পর কেন জানি রাফি শান্তি পাচ্ছিলো না। রিয়ার কথা তাকে বারবার ভাবাচ্ছিলো। সে প্রায় রাতে রিয়াকে স্বপ্ন দেখে। রিয়ার কবর সে কখনও দেখেনি। যখন সবসময় রাফি এমন অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে তাই সে চিন্তা করে রিয়ার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এরপর সে একদিন সেখানে যায় আর যেহেতু বাস্তবে ক্ষমা চাওয়া হয়নি তাই কবরের পাশে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়। রাফি তখন চিন্তা করে হয়তো সেদিন রিয়াকে ফিরিয়ে না দিলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। তখন রাফি নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে।
কিন্তু পরিবারের সবার কথায় আবার সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। যে চলে যাওয়ার সে চলে গিয়েছে। তার কথা চিন্তা করে নিজেকে এবং পরিবারকে কষ্ট দেওয়ার মানেই হয়না। এরপর থেকে রাফি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। এভাবেই তার জীবনে অন্ধকার কেটে গিয়ে আলো ফিরে আসে। আমার গল্প এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
অনুগল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু।রাফির কষ্ট পড়ে সত্যি ই খুব খারাপ লাগলো।ভালো আর মেধাবী মানুষ গুলো কখনও হেরে যায় না।একদিন ঠিক উঠে দাঁড়াতে পারে।তবে রিয়ার এমন কাজ করাটা ঠিক হয়নি।হিংসা করা ভালো কথা নয়।ধন্যবাদ আপু চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু যাদের মেধা রয়েছে তারা আজ না হয় কাল উঠে দাড়াতেই। আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।