অনুগল্প || কোনো একদিন বসন্তের বিকেল বেলা
আসসলামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী সদস্যগনকে জানাই অগ্ৰীম ঈদের শুভেচ্ছা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় এখন সুস্থ আছি। সবাইকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ।
আজ একদম ভিন্ন ধরনের পোস্ট নিয়ে চলে এসেছি। আমার কাছে গল্প লিখতে ও পড়তে খুব ভালো লাগে। যখনই সময় পাই গল্প লেখার চেষ্টা করি। বাস্তবের ঘটনা কে কেন্দ্র করে গল্প লিখতে বেশি ভালো লাগে। তারজন্য আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কে কেন্দ্র করে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যাই হোক চলুন শুরু করি--- এই গল্পের নায়ক নায়িকা নীলা ও আকাশ। তারা দু'জন দু'জনকে খুব ভালোবাসে। তারা দু'জন একই ভার্সিটিতে একই ক্লাসে পড়ালেখা করে। ভার্সিটির সবাই জানে তাদের এই ভালোবাসার কাহিনী। তাদের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। তবে পরিবারে সমস্যা ছিল।
নীলার পরিবার মধ্যবিত্ত আর আকাশের পরিবারের অবস্থা খুবই ভালো। তার বাবা সরকারি চাকরি করে আর আকাশ তাদের একমাত্র সন্তান। প্রতিটা বাবা মায়ের সন্তানদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। তেমনি আকাশের বাবা মায়ের ও ছিল। অন্যদিকে নীলার তিন বোন আর নীলা সবচেয়ে বড়। তার ছোট আরও দুই বোন রয়েছে। নীলার বাবা মা ও তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। নীলা আর আকাশ দু'জনেই ডাক্তারি পড়ছে। তাদের লেখা পড়ার প্রায় শেষ হতে চলেছে।
নীলার বাবা খুব কষ্ট করে নীলাকে পড়ালেখা শেখাচ্ছে। নীলার উপর তার সম্পূর্ণ পরিবার তাকিয়ে রয়েছে। এভাবে তাদের সময় চলে যাচ্ছে। তারা ফাইনাল পরীক্ষা দিলো আর রেজাল্ট চলে আসলো। নীলা ও আকাশ দু'জনেই খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এরপর আকাশের বাবা মা চিন্তা করলো ছেলেকে পিএইচডি করার জন্য বিদেশে পাঠাবে। আকাশ প্রথমে রাজি ছিল না কিন্তু পরে তার বাবা মায়ের কথায় রাজি হয়ে যায়। এই খবর দিতে এক বসন্তের বিকেল বেলা নীলার সাথে দেখা করে আকাশ।
সেদিন আবহাওয়া খুব সুন্দর ছিল আর তারা দেখা করার জন্য খুব সুন্দর একটি জায়গায় যায়। এরপর কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আকাশ নীলাকে তার বিদেশে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু নীলা আকাশের মুখ থেকে এই খবর শুনে খুব মন খারাপ করে। এরপর আকাশ নীলা কে তার ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু ঠিক করে নেয়। তারপরও নীলার মন কেন জানি আকাশ কে ছাড়তে রাজি নয়। জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাতে যেতে তো দিতেই হবে এই বলে নীলা নিজকে স্বান্তনা দেয়।
এরপর আকাশ চলে যায় বিদেশে আর কিছুদিনের মধ্যেই খবর আসে আকাশ রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। এই খবর পেয়ে যেনো নীলা একদম ভেঙ্গে পড়ে। নীলার জীবন থেকে যেনো সব বসন্ত হারিয়ে যায়। কিন্তু বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে নীলা নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে। তবে সে মনে মনে ভেবে নেয় তার জীবনে অন্য কোনো মানুষকে কখনও নিয়ে আসবে না। তার জীবনে দ্বিতীয় বার আর বসন্ত আসতে দিবে না। এভাবেই কেটে গেলো এক যুগ। হঠাৎ করে সেই একই বসন্তের বিকাল বেলা নীলা তার পরিচিত জায়গা যেখানে আকাশের সাথে শেষ বার দেখা হয়েছিল সেখানে হাঁটতে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ থেকে চলে আসার সময় দেখে তার সামনে একটি ছেলে এসে রাস্তা আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা চোখ তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। কারণ সেই ছেলে আর কেউ নয় আকাশ। তখন নীলার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে আর আকাশ কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এরপর আকাশ সেদিনের এক্সিডেন্ট এর সব খুলে নীলাকে খুলে বলে। আকাশ সেদিন তার সব কিছু হারিয়ে ফেলে আর সেজন্য দেশে আসতে পারেনি। এমন কি তার বাবা মায়ের সাথেও কোনো যোগাযোগ করার সুযোগ ছিল না। এরপর অনেক সময় নিয়ে তার লেখাপড়া শেষ করে সব কাগজপত্র ঠিক করে চলে আসে। নীলা আকাশ কে আবার ফিরে পেয়ে খুব খুশি হয়। এভাবেই তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পায়।
আজকের মতো এখানেই শেষ করলাম। আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
নীল আকাশের সুন্দর এক ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। বেশ ভালো লাগলো বিস্তারিত জানতে পেরে। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে অবশেষে যে তাদের দুইজনার একত্র হওয়ার সুযোগ হয়েছে দেখে। প্রিয়জনকে অনেকদিন পর পাশে পেলে এমনিতেই চোখ দিয়ে জল চলে আসবেই। যাই হোক অনেক ভালো লেগেছে ঘটনাটা পড়ে।
ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আপু গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আকাশের মৃত্যুর খবরটা শুনে সত্যিই আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছিল। কিন্তু সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে অবশেষে আকাশ ফিরে আসে তার নীলার কাছে আর তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। সব মিলে আপনার গল্পটা অসাধারণ ছিল আপু।
আপু আপনার কাছে আমার গল্প ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।