নাটক রিভিউ || "ডিভোর্সি মেয়ে"
আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে জানাই আমার সালাম। আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভালো আছি। সবাইকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার আজকের ব্লগ শুরু করছি। প্রতিদিনের মত আজকেও আপনাদের সামনে এসে হাজির হলাম। ইদানিং বেশ সুন্দর সুন্দর নাটক বের হচ্ছে আর নাটকগুলো দেখতেও খুব ভালো লাগে। তাই যখনই সময় পাই তখনই নাটক দেখা শুরু করি। গতকাল রাতে এই নাটক দেখেছিলাম আর খুব ভালোও লেগেছে তাই রিভিউ দিতে চলে আসলাম।
এই নাটকের গল্প একটু ভিন্ন লেগেছে। কারণ একজন ডিভোর্সি মেয়েকে এই সমাজ ও পরিবার কতটা অবহেলা আর অসম্মান করে তা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সবসময় মেয়েদের কেন এত কিছু সহ্য করতে হবে আর অসম্মান হতে হবে। সন্তান ভালো হলে বাবার সুনাম আর খারাপ হলে মায়ের দোষ কিন্তু কেন? একজন মেয়ে কখনো চায় না তার সংসার ভেঙ্গে যাক কিংবা তার ডিভোর্স হয়ে যাক। যখন সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় আর সহ্য করা সম্ভব হয় না তখন সে চলে আসে। কিন্তু সেই সময়ে তার পরিবারের লোকজন তার পাশে না দাঁড়িয়ে তার থেকে দূরে সরে যায়। যাই হোক সব মিলিয়ে এর কাহিনী খুব সুন্দর। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
নাটক সম্পর্কে কিছু তথ্য :-
নাটকের নাম | ডির্ভোসি মেয়ে |
---|---|
পরিচালনা | আকাশ রঞ্জন |
চিত্রগ্ৰহন | সিরাজ খান |
সম্পাদনা | শুভম দাশ |
অভিনয়ে | স্বাগতা, আকাশ রঞ্জন,শিখা মৌ,প্রাণেশ চৌধুরী,রাফি,ইসরাত জাহান। |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা ভাষা |
প্লাটফর্ম | ইউটিউব |
কাহিনী সারসংক্ষেপ
নাটকের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে স্বাগতা তার স্বামীকে মাথা টিপে দেওয়ার কথা বলছে কিন্তু তার স্বামী সেই দিকে না তাকিয়ে মোবাইলে ব্যস্ত ছিল। এরপর স্বামীর সাথে এক কথা দু'কথায় তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যেতে বলে। এভাবেই তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর বাবার বাড়িতে আসলে সেখানে তাকে কেউ মেনে নিতে পারেনি। যেই বাড়িতে ছোট থেকে বড় হলো আজ তাই যেন অচেনা হয়ে গেলো। সবাই একসাথে বসে দুপুরের খাবার খেলো কিন্তু তাকে কেউ একবারও ডাক দিলো না। মাকে বললে সে অনেক কথা শুনিয়ে দেয় আর বাবার কাছে গেলে বাবাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমনকি বাবার কাছ থেকেও অনেক কথা শুনতে হয়।
স্বাগতার ভাই একটি মেয়েকে পছন্দ করতো সেই মেয়েটাও বোনের ডিভোর্স হয়েছে বলে চলে যায়। ভাই বাড়িতে আসলে জিজ্ঞেস করে তোর কি মন খারাপ তখন ভাইয়ের কাছ থেকেও কথা শুনতে হয়। এরপর ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক ঠিক করার জন্য সেই মেয়ের কাছে যায় আর সেখান থেকেও তাকে অপমানিত হয়ে আসতে হয়। এদিকে ভাই এসে তার মা কে আবার বোনের বিষয় নিয়ে কথা শুনাতে লাগলো। স্বাগতা দূর থেকে সব শুনছিল আর কল্পনা করছে বিয়ের আগে ভাই তার সাথে কেমন ব্যবহার করতো। বোনের বিয়ে হয়ে যাবে বলে কতইনা কান্না করেছিলো কিন্তু আজ বোনের ডিভোর্স হয়েছে বলে সহ্য করতে পারছে না।
এরপর স্বাগতা সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে আর সে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। বাড়ি ছেড়ে যাবার সময় কেউ একবার আটকানোর চেষ্টাও করলো না। স্বাগতা তার এক বন্ধুর অফিসে যায় চাকরির জন্য কিন্তু সেখানে তাকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর সেই ছেলের সাথে ঝগড়া করে সেখান থেকে চলে আসে। এরপর এক বান্ধবীর বাসায় উঠে আর তার সাথেই ব্যবসা শুরু করে। সেই প্রোডাক্ট সেল করতে রাতের বেলা এক কাস্টমারের বাসায় যায় আর আসার পথে পরিচিত এক আঙ্কেলের সাথে দেখা হয়। সেই আঙ্কেলও তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। এরপর তার বাবার কাছে গিয়ে সেই লোকটি স্বাগতার নামে বিভিন্ন কথা বলে আসে।
স্বাগতার বাবা সেই লোকটির কথা শুনে বাসায় গিয়ে স্বাগতার মায়ের সাথে রাগারাগি করতে থাকে। এরপর বলে তোমার মেয়েকে ফোন দিয়ে বলো সে যেন বাড়ি চলে আসে তাকে আবার বিয়ে দেবো। তারপর স্বাগতার মা ফোন দিয়ে আবারও নানা কথা বলতে থাকে। এরপর যেই মেয়ের কাছে থাকে সেই মেয়ে এসে অনেক কিছু বুঝায় স্বাগতার মাকে। তারপর একদিন স্বাগতার প্রথম স্বামী যেই অফিসে চাকরি করতো সেখান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। কারণ লোকটির চরিত্র ভালো ছিল না। এরপর লোকটি বসের কাছে এসে মাফ চায় আর একপর্যায়ে বস রেগে যায় তখন উনার বউ বের হয়ে আসে। তখন স্বাগতা তার স্বামীকে দেখে অবাক হয়। তখন স্বাগতা বলে তুমি জিজ্ঞেস করছিলে না আমার মতো এমন ভালো মেয়েকে কে ডিভোর্স দিয়েছে এই সেই লোক। এরপর লোকটি বসকে বলে আপনি খুবই ভাগ্যবান স্বাগতার মতো মেয়ে আপনার বউ হয়েছে। আমি তাকে কখনো সম্মান দিতে পারিনি তাই আজ নিজেই এভাবে অসম্মানিত হলাম। এই হলো তার নিয়তি।
ব্যক্তিগত মতামত
এই নাটকের কাহিনী খুবই সুন্দর। এই সমাজে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ মেনে নিতে পারেনা। সমাজের দোহাই দিয়ে লাভ কি যেখানে পরিবারের লোকজন ডিভোর্সি মেয়েকে মেনে নিতে পারে না সেখানে সমাজ তো মানবেই না। যখন কোনো মেয়ে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসে তখন সবাই সেই মেয়েটির দিকেই আঙ্গুল তোলে কিন্তু কেন? সেখানে দোষ কি শুধু মেয়েদেরই থাকে, ছেলেদের থাকে না। তাহলে কেন একটি মেয়েকে সেই বুঝা বয়ে বেড়াতে হবে। সমান ভাবে ছেলেদের কেন দায়ী করা হবে না? কিছু হলেই মানিয়ে নাও,কথা বলো না আর সব কিছু সহ্য করে নাও, প্রতিবাদ করা যাবে না। আপনাদের কাছে প্রশ্ন মেয়েদের ক্ষেত্রেই কেন এমন হবে? তবে কাউকে বিনা কারণে কষ্ট দিলে আর অসম্মান করলে তা আবার নিজের কাছেই ফিরে আসে। যাই হোক সবমিলিয়ে এই নাটকের কাহিনী আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে। আপনারা সময় পেলে অবশ্যই দেখবেন।
ব্যক্তিগত রেটিং
৯.৫/১০
নাটকের লিংক
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
এটা বলতে গেলে শিক্ষামূলক একটি নাটক। এমন নাটকগুলো দেখা হয় না। তবে আপনার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে দেখতে। সময় করে নাটকটি দেখবো আপু। আপনাকে ধন্যবাদ 😍
হ্যাঁ ভাইয়া খুবই শিক্ষনীয় একটি নাটক যদি সময় পান অবশ্যই দেখবেন আশা করি ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।
বেশ সুন্দর নাটক রিভিউ করেছেন আপনি । আপনার নাটক রিভিউ বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। আমাদের মাঝে বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। ডিভোর্সি মেয়ে নাটক টি আমি দেখি নি। তবে আপনার পোস্টের মাধ্যমে দেখে খুব ভালো লাগলো। আসলে সত্যি আমাদের সমাজে ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ মেনে নিতে চায় না। আসলে ডিভোর্স একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এতে কোন ভাবে মেয়েকে সম্পূর্ণ ভাবে দোষারোপ করা উচিত নয়। এত সুন্দর নাটক আপনাদের মাঝে রিভিউ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
কিন্তু এই সমাজ শুধু মেয়েদেরকেই দোষারোপ করা হয়। সবসময় মেয়েদেরি দোষ দেওয়া হয়। যাই হোক আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
ডিভোর্সি মেয়ে এই নাটকটা এখনো পর্যন্ত আমার না দেখা হলেও, নাটকটার রিভিউ আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে, আপনার রিভিউ পোস্টের মাধ্যমে এটা পড়তে পেরে আমার কাছে ভালো লাগলো। এরকম সুন্দর নাটক গুলো আমার কাছে প্রতিনিয়তই ভালো লাগে। এই নাটকটার সম্পূর্ণ কাহিনী আপনার রিভিউর মাধ্যমেই জেনে নিলাম। আমি সময় পেলে চেষ্টা করব এই নাটকটা দেখে নেওয়ার।
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সুন্দর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো।
আমি সময় পেলে নাটক মুভি এগুলো দেখে থাকি, এই নাটকটি এখনো আমার দেখা হয়নি তবে রিভিউ করে বুঝতে পারলাম বাস্তব চিত্র এবং শিক্ষনীয় একটা মেসেজ ছিল এখানে যাইহোক সময় পেলে অবশ্যই এই নাটকটি দেখার চেষ্টা করব।
হ্যাঁ ভাইয়া এর গল্প খুবই শিক্ষনীয় আশা করি দেখে খুব ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।
চমৎকার একটি নাটকের রিভিউ পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু।নাটকটি খুব সুন্দর হবে জানি।কারন নাটকটির মধ্যে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। যদিও নাটকটি আমার দেখা হয়নি।তবে আপনার নাটকের রিভিউ পড়ে দেখতে হবে আশাকরি। ধন্যবাদ আপু চমৎকার এই নাটকের রিভিউ পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু একদম বাস্তব গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে।সময় পেলে অবশ্যই দেখবেন। ধন্যবাদ।
আপনি আজকে খুব চমৎকার একটি নাটক রিভিউ করেছেন। যদিও এই নাটকটি আমার এর আগে দেখা হয়নি। তবে আপনি এত সুন্দর করে রিভিউ করেছেন আপনার রিভিউ করে দেখার আর প্রয়োজন হবে না। আপনি ঠিক বলেছেন আপু ডিভোর্স মেয়েদেরকে পরিবার সমাজ কেউ মেনে নিতে পারে না। এরা পরিবার এবং সমাজের কাছে বোঝা হয়ে যায়।
হ্যাঁ ভাইয়া ডিভোর্সি মেয়েদের এই সমাজ ও পরিবার কখনো মেনে নিতে পারেনি। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।
খুব সুন্দর একটি নাটকের রিভিউ করেছেন এবং এই নাটকের মধ্যে সবগুলো বিষয় আপনি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই নাটকটি আমি এখনো দেখে নিতে পারিনি। তবে অবশ্যই সময় করে এই নাটকটি দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব৷ আপনার রিভিউ থেকে এই নাটকটি দেখার প্রতি আমার অনেকটাই আগ্রহ জন্ম নিল৷
হ্যাঁ ভাইয়া সময় পেলে অবশ্যই দেখবেন আশা করি ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।
যদিও ব্যস্ততার কারণে নাটক খুব একটা দেখা হয় না, তবে যখন সময় পাই তখন একটু একটু করে হলেও নাটক দেখার চেষ্টা করি। অনেক সময় দেখা যায় এক সপ্তাহ মিলিয়ে একটা নাটক দেখা হয়েছে। তবে আপনাদের নাটকের রিভিউ পোস্ট গুলো পড়লে আর নাটক দেখাই লাগেনা। সম্পূর্ণ কাহিনী তো রিভিউর মাধ্যমেই ভালোভাবে জানা যায়। আমার কাছে এ নাটকটার রিভিউ ভালো লেগেছে।
আপনার কাছে এই নাটকের রিভিউ ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।