অনুগল্প || ভালোবাসার জন্য সুন্দর ক্যারিয়ার নষ্ট
আসসলামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী সদস্যগনকে জানাই অগ্ৰীম ঈদের শুভেচ্ছা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় এখন সুস্থ আছি। সবাইকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ।
আজ একদম ভিন্ন ধরনের পোস্ট নিয়ে চলে এসেছি। আমার কাছে গল্প লিখতে ও পড়তে খুব ভালো লাগে। যখনই সময় পাই গল্প লেখার চেষ্টা করি। বাস্তবের ঘটনা কে কেন্দ্র করে গল্প লিখতে বেশি ভালো লাগে। তারজন্য আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কে কেন্দ্র করে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যাই হোক চলুন শুরু করি--- এই গল্পের নায়ক নায়িকা তৃণা ও তন্ময়। তন্ময় মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুবই ভালো। সবসময় ক্লাসে ফার্স্ট হতো। এরজন্য তার বাবার গর্বের শেষ ছিল না। তারা তিন ভাইবোন। তন্ময় গ্ৰামে বড় হয়েছে। সে ছোটবেলা থেকেই তার এক নানার কাছে প্রাইভেট পড়ে।
স্কুলের সব শিক্ষক তন্ময় কে খুব পছন্দ করে। এভাবেই তার স্কুল জীবন শেষ হয়। তাকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করা হয়। কয়েক মাস যাওয়ার পর পাশের বাড়ির এক দাদা তন্ময়ের বাবা কে বলে ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দাও ভালো হবে। এরপর থেকে তন্ময় মাদ্রাসায় পড়া শুরু করে। সেখান থেকেই সে এস.এস.সি ও এইচএসসি পাশ করে। এরপর তন্ময় ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ইসলামিক ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়। তখন তারা ঢাকায় চলে আসে। তার বাবা মা এই নিয়ে খুব খুশি ছিল। এভাবে তারা খুব সুন্দর জীবন কাটাতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে তন্ময়ের বাবা মারা যায়। তখন তার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
তন্ময়ের উপরে সংসারের দায়িত্ব চলে আসে। কারণ সে বড় ছেলে ছিল। এখনও সে অনার্স কমপ্লিট করতে পারেনি। তার বাবা থাকা অবস্থায় সে কোনো ধরনের টিউশনি কিংবা চাকরি করেনি। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সে দিশেহারা হয়ে যায়। এরপর একটা কোচিং সেন্টারে চাকরি নেয়। এদিকে তন্ময়ের বোন ও সংসারের একটু হাল ধরার জন্য টিউশনি শুরু করে। এভাবেই তন্ময় অনার্স কমপ্লিট করে। এরপর মাস্টার্সে ভর্তি হয় আর তাও শেষ করে। কিন্তু এরপরই সে ভুল করে বসে। মাস্টার্সে পড়া অবস্থায় তার বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। মেয়েটির নাম তৃণা। এরপর সারাক্ষণ সেই মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা হয়।
যখন তন্ময়ের মাস্টার্স শেষ হয় বিসিএস এর জন্য প্রিপারেশন নেওয়ার সময় তখন মেয়ের বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হয় বিয়ে করার জন্য। তন্ময় যদি না করে তাহলে তৃণাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। তখন তন্ময়ের মা ভাই বোন সবাই বিয়ে করতে নিষেধ করেছিল কিন্তু সে শুনেনি। এরপর বললো কাবিন করে রাখবে আর চাকরি পেয়ে উঠিয়ে আনবে। এরপর তন্ময়ের মা বাধ্য হয়ে রাজি হয় আর তাদের কাবিন হয়। এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তার সারা জীবন নষ্ট হয়ে যায়। একবার বিয়ে হয়ে গেলে আরও দায়িত্ব বেড়ে যায়। তখন আর আগের মতো পড়ালেখা হয় না।
তন্ময়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে,সে এত ভালো একজন ছাত্র হয়েও বিসিএস ক্যাডার হতে পারলো না। অথচ তার সাথের বন্ধুরা বিসিএস পাশ করে সরকারি চাকরি করে। এভাবে সময় যেতে যেতে তন্ময়ের সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এখন আর তার পক্ষে সরকারি চাকরি করা সম্ভব নয়। এরমধ্যে সে তৃণা কে অনুষ্ঠান করে নিয়ে আসে। তন্ময় এখন ছোটখাটো একটা জব করে। তার একটি মেয়েও হয়েছে। তার একটি ভুল সিদ্ধান্ত যেন সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। সে এখন বুঝে কত বড় ভুল করেছে। কিন্তু কথায় বলে না,যেই সময় চলে যায় তা আর কখনো ফিরে আসে না।
তন্ময় তার ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য তার এত সুন্দর ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেয়। সেজন্যই বলে সময় থাকতে সময়ের সঠিক ব্যবহার করো আর কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নাও। তাহলে তোমার জন্যই মঙ্গল। তা না হলে এমন একদিন আসবে যখন দেয়ালে তোমার পিঠ ঠেকে যাবে কিন্তু তোমার কিছুই করার থাকবে না। যাই হোক আজকের মতো এখানেই শেষ করলাম। আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
আসলে এই বয়সে যদি বাবা মারা যায় তাহলে সে এই পৃথিবীটা কতটা কঠিন খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে। তন্ময় ভাইয়ের জন্য অনেক খারাপ লাগছে জানিনা হয়তোবা তার নসিবে এটাই লেখা ছিল । আর স্টুডেন্ট
বয়সে যদি ভালোবাসা যায় তাহলে হয়তো অনেক সময় এই ভালোবাসাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। 😑
হ্যাঁ ভাইয়া যখন কারো বাবা মারা যায় তখন তার এই পৃথিবীটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া পড়ালেখার সময় ভালোবাসার ফাঁদে পা না দেওয়াই ভালো। ধন্যবাদ।
আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন আপু যে সময় চলে যায় সেই সময় কিন্তু আর ফিরে পাওয়া যায় না। আর লেখাপড়া জীবনে প্রেমের মধ্যে মানুষ জড়িত হয়ে জীবন ধ্বংস করে ফেলে। ঠিক এমন ঘটনা আমাদের আশেপাশে অনেক অনেক দেখা যাচ্ছে। যাইহোক আপনার গল্পটা হয়তো অনেকের জন্য বেশ সচেতন মনে হবে।
আপু সেই সময় যারা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে তারাই সফল হয়। ধন্যবাদ।
আপু আপনার আজকের গল্প টা অনেক শিক্ষনীয় একটি গল্প। আসলে জীবনে যা কিছু করতে হয় ভেবে চিন্তে করতে হয়।আজকে ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজের একটি সুন্দর ক্যারিয়া গড়তে পারেনি।সাথের বন্ধুদের মতো বিসিএস ক্যাডার সে নিজেও হতো। যাইহোক গল্প টা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
হ্যাঁ আপু সময় মতো ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াই উত্তম। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।
ভালোবাসার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট দের ক্যারিয়ার নষ্ট হতে দেখা যায়।বিশেষ করে আবেগপ্রবণ যারা তাদের এই সমস্যা দেখা যায়।তবে ভালোবাসা করে আবার অনেকে ভালো করে ক্যারিয়ারে এটা খুব কম।ভালো লাগলো পোস্টটি।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপু।
হ্যাঁ আপু ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে ক্যারিয়ার ভালো হওয়ার গ্যারান্টি খুবই কম। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।