ছোটবেলায় শীতের দিনের গল্প || ১০% প্রিয় লাজুক-খ্যাকের🦊 জন্য
আসসালামুয়ালাইকুম
হ্যালো "আমার বাংলা ব্লগের" সকল সদস্যরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আমার কাছে শীতকাল খুবই ভালো লাগে। কারণ এক তো অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে ভালো লাগে। আবার চারদিকে পিঠা পুলির ঘ্রাণে মৌ মৌ করে। এই সময়টা গ্ৰামে থাকলে সবচেয়ে বেশি মজা হয়। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন শীতের সময় বেশ মজার ছিল। আমাদের বাড়ির সামনেই ধান ক্ষেত। হেমন্ত কাল আসলে ধান কাটার ধুম পড়ে যেত। ধান কাটা শেষ হয়ে গেলে আমরা সেই ক্ষেতে খলা বানাতাম। খলা মানে হলো একটু জায়গা ভালো ভাবে পরিষ্কার করে এতে মাটি আর গোবর দিয়ে লেপে মাঠের মতো বানানো হতো।
এটা বানানোর উদ্দেশ্য হলো শীতের দিন বাড়ির উঠানে রৌদ থাকে না। গাছপালার জন্য রৌদ লাগে না। তারজন্য বাড়ির কাছে মত ধান ক্ষেত আছে সবগুলোর মধ্যে সবাই খলা বানাতো। একজনের এটার মধ্যে আরেকজন ধান দিতে পারতো না। তারজন্য যার যার এটা সে সে বানিয়ে নিতো। সবাই রাতের বেলা ধান সিদ্ধ করে রাখতো আর ভোর বেলা সেই খলার মধ্যে দিয়ে আসতো। আমরা সকাল বেলা সেই খলার মধ্যে রৌদে বসে থাকতাম।
আমাদের উঠানে সকাল বেলা একটু রৌদ আসতো আর সেজন্য সকালের নাস্তা নিয়ে সবাই আমাদের উঠানে চলে আসতো। শীতের সময় সবাই একসাথে বসে নাস্তা খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল। আমার মা প্রায় সময় জাও আর ভর্তা বানাতো। এই খাবার শীতের দিন গরম গরম খেতে
খুবই ভালো লাগতো। আবার যখন নাস্তা হতে একটু দেরি হতো তখন আমরা খেজুরের গুড়, নারিকেল আর মুড়ি বাটিতে নিয়ে চট বিছিয়ে উঠানে বসে খেতাম। এই খাবার খেতে দারুন মজা হতো।
এই শীতের সময় আমাদের গ্ৰামে সবাই এক ধরনের পিঠা খায় মা আজও আমার খুব পছন্দ।আমি কিছু দিন আগেও খেয়েছি। আমরা এই পিঠাকে এই পিঠা বলি। এই পিঠা একমাত্র শীতের সময় খেতে অনেক ভালো লাগে। এই পিঠা বানাতে তিল, নারিকেল,খাজুরের গুড় আর চাউলের গুঁড়া লাগে। ছোটবেলায় আমরা ঘুমিয়ে থাকলে মা চাচিরা বড় বড় ধান সিদ্ধ করার পাতিলার মতো বড় পাতিলায় এই পিঠা বানিয়ে রেখে দিত। সকাল হতে হতে ঠান্ডা হয়ে পিঠার উপরে সর পরে থাকতো। আমরা এই পিঠা প্লেট ভরে মুড়ি দিয়ে খেতাম।
আজ কোথায় যেন সেই দিনগুলো হারিয়ে গিয়েছে। আমাদের গ্ৰামে যাওয়া হয়না অনেক বছর হয়ে গিয়েছে। আমাদের গ্ৰামের পরিবেশ এখন আর আগের মতো নেই। আমি যখন ছোটবেলার কোনো কিছু লিখতে বসি তখন "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসের কথা কেন জানি খুব মনে পড়ে। আমার মনে হয় আমাদের ছোটবেলার সাথে হাজার বছর ধরে উপন্যাসের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে।
সেই সময়ের কথা মনে পড়লে কখন যেন চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করে বোঝাতে পারিনা। এত মধুর দিন গুলো কেন এভাবে হারিয়ে গিয়েছে।আজ কিছু মানুষ বেঁচে আছে আর কিছু মানুষ হারিয়ে গিয়েছে দূর অজানায়। আবার যদি ফিরে পেতাম সেই স্মৃতিময় সময় তাহলে হয়তো কখনো ফিরে আসতাম না সেই সময় থেকে। যাই হোক অনেক গল্প করলাম আর ভালো লাগছেনা। কারণ পুরোনো কথা মনে করলে শুধু কষ্টই বাড়বে। তাই আমার লেখা এখানেই শেষ করলাম। আবার দেখা হবে নতুন কোন গল্পের মাধ্যমে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
আপু আপনার শীত নিয়ে ছোটবেলার গল্প অনেক ভাল লাগলো। শীতকালে ধান কাটা। সবাই মিলে পিঠা বানানো পিঠা খাওয়া সত্যি ই অনেক আনন্দের।সুন্দর একটি ব্লগ শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ছোটবেলার শীতের সকাল অনেক আনন্দে কেটেছে। শীতের সকালে উঠানে বসে গরম গরম পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। মা চাচিরা পিঠা বানাতো আর আমরা সবাই প্লেট নিয়ে বসে থাকতাম গরম গরম পিঠা খাওয়ার জন্য। ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে এখন। ছোটবেলায় অনেক মজায় কেটেছে প্রতিটি দিন। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।
আপনার লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপু আসলেই ছোটবেলার শীতের সময় অনেক আনন্দ হতো। কারণ শীতকালে অনেক মজার মজার পিঠা খাওয়া যেত। তবে আপু আপনার এই পিঠাটা আমি চিনলাম না এই পিঠার নামও কখনো শুনিনি। আমাদেরকে একদিন তৈরি করে দেখাবেন। তবে আমি খলা চিনতে পেরেছি। আমিও ছোটবেলায় শীতকালে বেশিরভাগই নানুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম তখন নানুর বাড়িতে এই খলা দেখতাম সেখানে ধান শুকানো হতো। আপনার ছোটবেলার শীতের গল্প পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো সাথে আমারও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোষ্টের মাধ্যমে আমার ছোটবেলাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
সত্যি আপু আপনার নানু বাড়ির গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শৈশবের শীতের দিনের অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আপনার গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। আমাদের জীবনে এমন ঘটনা শৈশবে ঘটেছে । এত চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
শৈশবে আমরা কখনো যেতে পারবো না তবে স্মৃতিগুলো এখনো রয়ে গেছে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ গ্রামের মধ্যে শীতের সকাল টা অনেক মজার কাটতো সেই সময়।এভাবে ধান কাটা হলে আমরা ও লিপে খলা বানাইতাম।সেই খলাতে ধান শুকানো সহ অনেক কাজ করা হতো।এছাড়াও তৈরি করা হতো হরেক রকমের পিঠা।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু গ্রামে এরকম পিঠা খেতে আসলেই মজা লাগে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আসলে ছোটবেলার শীতের সময় গুলা অনেক দারুন কাটতো আপনার পড়ে বুঝতে পারলাম। এখন আর ওইভাবে খোলা বানানো হয় না। এখন তো সব জায়গায় দেখি সান করা থাকে। তবে আপনাদের ওই খোলা বানানোর ব্যাপারটা বেশি ইন্টারেস্টিং ছিল। সবাই মিলে একসাথে কাজ করার মজাটাই আলাদা। আর গ্রামাঞ্চলে তো শীতকালে পিঠা বানানো হয়ে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে আপনার ছোটবেলার শীতকালের ঘটনাগুলো শেয়ার করার জন্য।
অনেক সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথাগুলো বলেছেন তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে গ্রামের পিঠা খেতে সত্যিই খুব মজা।