বাস্তবিক গল্প: ভালোবাসা বয়স কিংবা সম্পর্ক বুঝে না(২য় পর্ব)
আসসালামু আলাইকুম
গত সপ্তাহে বাস্তবিক গল্পের প্রথম পর্ব শেয়ার করেছিলাম আর এখন ২য় পর্ব শেয়ার করতে চলে এসেছি। গত পর্বে বলেছিলাম আকাশ আর বৃষ্টির সম্পর্ক খুব ভালোভাবে চলছিল। তাদের সম্পর্কের কথা বৃষ্টির পাশের বাড়ির তার আপন চাচাতো দুই ভাই জানতো। কারণ তাদের দুজনের মধ্যে বৃষ্টি আর আকাশের চিঠি আদান প্রদান হতো। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন বৃষ্টির জীবনে অন্ধকার চলে আসে। বৃষ্টি কখনও ভাবেনি তার জীবনে এমন দিন আসবে। বৃষ্টির মায়ের সাথে বৃষ্টির চিঠি আদান প্রদানকারী চাচাতো ভাইয়ের সাথে একটু কথাকাটাকাটি হয়। তখন সেই ছেলে বৃষ্টির সব গোপন কথা বলে দেয়।
এই কথা শুনে বৃষ্টির মা অবাক হয়ে যায় আর অনেক রেগে যায়। এরপর বৃষ্টির মা তাকে অনেক মারধর করে। বৃষ্টির বাবা শহরে চাকরি করতো আর বৃষ্টির মা তার বাবাকেও সব জানায়। এদিকে আকাশও সব কথা জেনে গিয়েছে আর এইসব সবাই জেনে গিয়েছে শুনে কি করবে বুঝতে পারছিল না। এদিকে বৃষ্টির স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে আর অন্য দিকে আকাশকে তার পরিবার অনেক কথা শুনায়। এরপর আকাশ রাগ করে বাড়ি ছেড়ে শহরে চলে আসে। যেদিন এসব কথা জানাজানি হয়েছে তারপরের দিন বৃষ্টির বাবা শহর থেকে বাড়িতে আসে।
বৃষ্টির বাবা তাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু মেয়ের নামে এসব কথা শুনে সহ্য করতে পারেনি। তাই বাড়িতে এসেই বৃষ্টিকে অনেক মারধর করে। এরপর বৃষ্টিকে কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে ওয়াদা করায় যাতে আকাশের সাথে আর কোনো সম্পর্ক না রাখে। সেদিন বৃষ্টি অনেক কেঁদেছিল আর তার বাবার কথা রাখতে ওয়াদা করে। হয়তো বৃষ্টির পরিবার যা করেছে ঠিক করেছে। প্রতিটা বাবা- মা চায় তার মেয়ের জীবন সুন্দর হোক। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমনটা করেছে। কিন্তু ভালোবাসা কি এত সহজে হার মেনে যায়?
এরপর বেশ কিছু দিন কেটে যায়। আকাশ শহরে থাকে আর বৃষ্টি গ্ৰামে। কারো সাথে কারো দেখা নেই কথা নেই। বৃষ্টি যেমন আকাশকে মিস করে তেমনি আকাশও বৃষ্টিকে মিস করে। একদিন বৃষ্টি একা একা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল আর তখন একটি ছেলে এসে বলে বৃষ্টি একটা কথা বলবো। সেই ছেলেও বৃষ্টির পাশের বাড়ির ভাই লাগে। ছেলেটি বললো আকাশ আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে তোমাকে পেলে যাতে ওর সাথে কথা বলতে বলি। বৃষ্টি এই কথা শুনে খুশিও হয়েছিল আবার তার বাবার ওয়াদার কথা মনে করে কষ্ট পাচ্ছিল।
বৃষ্টি ঐ ছেলেকে বলে না ভাইয়া আমি কথা বলতে পারবো না। এই কথা বলে বৃষ্টি চলে আসে। এভাবে কেটে যায় তিন থেকে চার মাস। এরপর হঠাৎ একদিন বৃষ্টির চাচাতো বোনের কাছে জানতে পারে আকাশ বাড়িতে এসেছে। বৃষ্টি আকাশকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকে কিন্তু কোনোভাবেই তাদের দেখা হচ্ছিল না। এখন আকাশও আগের মতো বৃষ্টির স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে না। এরমধ্যে একদিন ভোরবেলা বৃষ্টি প্রাইভেট পড়ার জন্য যাচ্ছিল আর তখন রাস্তায় আকাশের সাথে দেখা হয়।
দু'জন দু'জনকে দেখে কেউ কারো সাথে কথা বলার সাহস পায়নি। দুজনের মনের ভিতর একই চিন্তা যদি কেউ দেখে ফেলে। এরপর বৃষ্টি পড়তে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকে আর যখন সবাই সব কিছু ভুলে যায় তখন তারা দুজন আবারও কথা বলতে শুরু করে। একমাস যাওয়ার পর বৃষ্টি আর আকাশের মধ্যে একটু মান অভিমান হয়। তার কারণ তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি ডুকে পড়ে। বৃষ্টি জানতো না তার ক্লাসমেট তাকে পছন্দ করে। স্কুল জীবনে বৃষ্টির কোনো ছেলে বন্ধু ছিল না। সেই ছেলের নাম ছিল রাতুল।
একদিন ক্লাসে কেউ ছিল না শুধু রাতুল আর তার বন্ধু ছাড়া। বৃষ্টি তার বান্ধবীদের সাথে মাঠে বসে ছিল আর হঠাৎ পানি খেতে ইচ্ছে করাতে সে ক্লাসে যায়। বৃষ্টি ক্লাসে যাওয়ার সাথে সাথে রাতুলের বন্ধু বলে উঠলো এই বৃষ্টি মিষ্টি খাওয়াবা কবে। তখন বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো কিসের মিষ্টি খাওয়াবো। রাতুলের বন্ধু বললো তোমার বইয়ের ভিতরে একটা ফুল আর সাথে একটা কাগজ আছে দেখো। এরপর বৃষ্টি বই খুলে দেখে কলমে আঁকা একটি গোলাপ আর সাথে একটা চিঠি রয়েছে।
সেই চিঠিতে লেখা ছিল আমি তোমাকে ভালোবাসি আর নিচে লেখা রাতুল। এরপর বৃষ্টি এই লেখা দেখে চুপ হয়ে গেল। রাতুল তখন বললো হ্যাঁ বা না কিছু একটা বলো। বৃষ্টি কিছু না বলে হাসি দিয়ে চলে গেল আর তার বান্ধবীদের এই কথা বললো। বৃষ্টি নিজেও বুঝতে পারছেনা তার জীবনে কি হচ্ছে। সেই রাতুল আবার চিঠি আদান প্রদানকারী বৃষ্টির চাচাতো ভাইয়ার বন্ধু আর সেখান থেকে আকাশ সব কিছু জেনে যায়। এই নিয়ে বৃষ্টি আর আকাশের মাঝে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়।
বন্ধুরা আজ এখানেই আমার ২য় পর্ব শেষ করলাম। এরপর বৃষ্টি আর আকাশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে কিনা আর তাদের সম্পর্ক কোন দিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা জানতে হলে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকতে হবে। আজ এ পর্যন্তই আবার দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
এ জাতীয় প্রেম কাহিনী গুলো আমার অনেক ভালো লাগে। মোটামুটি আমি অনেক গল্প পড়তে পছন্দ করি তো তাই আপনার গল্পটা পড়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়েছি। যেহেতু রাতুলের ভালোবাসার প্রেমের চিঠি এবং ফুলের ছবি বৃষ্টির বইয়ের মধ্যে এখানে কিন্তু দারুণ একটা রোমান্টিক কথা খুঁজে পেয়েছি।
আমার কাছেও এই ধরনের গল্প পড়তে অনেক ভালো লাগে। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
অনেক ভালো লাগলো আপু আপনার গল্পের দ্বিতীয় পর্বটি পড়ে। বর্তমান আমাদের সমাজে প্রায় এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে। গল্পের তৃতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম আপু বৃষ্টি আর আকাশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে কিনা জানার অধীর আগ্রহে।
আপু খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব শেয়ার করবো। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আপু দারুন একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প শেয়ার করেছেন । পড়ে বেশ ভালো লাগল।যদিও প্রথম পর্বটি আমার পড়া হয়নি । দ্বিতীয় পর্বটি পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। তবে বৃষ্টি রাতুলের চিঠি পেয়ে হেসে দিল কেন ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না । তবে কি সেও রাতুলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে রাজি আছে। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে বৃষ্টি ও আকাশের মান অভিমান ভেঙে আবার মিল হয় কিনা । অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আপনি দ্বিতীয় পর্ব পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। হ্যাঁ আপু পরের পর্ব পরে সবটাই বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ।
আপু, আপনার এই গল্পের প্রথম পর্বটি আমি পড়েছিলাম, আর আজ দ্বিতীয় পর্বটি পড়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম। প্রথম পর্বটি পড়তে যতটা ভালো লেগেছিল ঠিক ততটাই দ্বিতীয় পর্বটিও পড়তে খুবই ভালো লাগলো। বৃষ্টির জীবনে নতুন করে রাতুলের আবির্ভাব ঘটল। এখন বৃষ্টি আকাশ ও রাতুলের ভালোবাসা কোন দিকে মোর নেয় তা জানার অপেক্ষায় রইলাম।
ভাইয়া আপনি আমার গল্পের দুটো পর্বই পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। খুব তাড়াতাড়ি পরের পর্ব শেয়ার করবো। ধন্যবাদ।