হঠাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার অনুভূতি
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সবাইকে জানাই আমার সালাম। আসসালামু-আলাইকুম। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ এখন আপনাদের দোয়ায় সুস্থ আছি এবং ভালো আছি।
এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই টাইটেল দেখে বুঝে গিয়েছেন আজ কি নিয়ে কথা বলতে এসেছি। হ্যাঁ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার অনুভূতি শেয়ার করতে এসেছি। আমরা যখন অসুস্থ হই তখন বুঝতে পারি সুস্থতা আমাদের জন্য কত বড় নেয়ামত। ঠিক তেমনি আমার অবস্থা হয়েছে। অনেক সময় মাথা ব্যাথা হলে আমরা বলি জ্বর হলেও মনে হয় এত কষ্ট হতো না। কিন্তু যখন জ্বর আসে তখন বুঝি কতটা কষ্ট হয়। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ আমি নতুন বাসায় উঠবো। তারজন্য আমরা এই মাসের ১ তারিখ থেকে বাসা খুঁজতে শুরু করি। পাঁচ তারিখের দিকে একটা বাসাও পেয়ে যাই আর আমরা বাড়িওয়ালা সাথে সব কথা ফাইনাল করে বাসায় চলে আসি।
সেদিন দুপুর থেকেই আমার আর হাসবেন্ডের একসাথে শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। দুপুরে ভাত খেয়ে আমি নাপা খেয়ে নিলাম। এরপর রাতের বেলা আমার মা, ভাইয়া আর ভাবিসহ সবাই রেস্টুরেন্টে খেতেও গেলাম। সেখানে বসে থাকা অবস্থায় আমার শরীরে কাঁপুনি ওঠে। এরপর তাড়াতাড়ি আমরা বাসায় চলে আসি। রাতের বেলা দুজনের একসাথে শরীর ব্যথা আর জ্বর শুরু হয়। এমন ব্যথা আর জ্বর কখনো হয়নি আর সেই রাত ভুলার মতো নয়। দু'জন একসাথে অসুস্থ কে কার সেবা যত্ন করবে। আমার মায়ের বাসাও অনেক দূরে তারা চাইলেও এত রাতে আসতে পারবে না। এদিকে শ্বশুর শ্বাশুড়িও গ্ৰামে থাকে।
এই ব্যথার সাথে আমার আবার কোমড়ের ব্যথা যুক্ত হয়েছে। সারারাত দু'জনে জেগে ছিলাম আর ছটফট করেছি। এরপর সকালে ওঠে অল্প ভাত রান্না করলাম আর কিছু রান্না করার মতো ক্ষমতা হয়নি। মা কে ফোন দিয়ে বললাম তরকারি রান্না করে নিয়ে আসতে। মা আসার আগে আমরা ডাক্তার দেখাতে চলে গেলাম। আমাদের অবস্থা দেখে ব্লাড দিতে বললো আর কিছু নাপা দিয়ে দিলো আর সন্ধ্যায় রিপোর্ট নিয়ে আসতে বললো। এরপর বাসায় চলে আসি। এভাবে সারাদিন চলে আর সন্ধ্যায় রিপোর্ট আনতে গেলে ডাক্তার বলে তোমাদের দু'জনের ডেঙ্গু পজেটিভ। এই রোগের কি চিকিৎসা জিজ্ঞেস করাতে বললো মনের শক্তি, বিশ্রাম আর প্রচুর খাওয়া দাওয়া করা।
খাবারের মধ্যে সব ধরনের তরল খাবার আর ফলসহ ডাবের পানি খেতে হবে আর যদি বেশি দুর্বল লাগে তাহলে তিন দিন সেলাইন দিতে হবে। এই কথা শুনে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলাম। তবে এত কিছুর মাঝেও ছেলেটা সুস্থ ছিল এটাই হাজার শুকরিয়া। সেদিন রাতে সবাই ফোন দিয়ে খুঁজ খবর নিতে চায় কিন্তু কেউ কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না। পরের দিন সকাল বেলা মায়ের বাসায় চলে যাই। আমার প্লাটিনাম ছিল দুই লাখ সতেরো হাজার আর হাসবেন্ডের ছিল দুই লাখ দুই হাজার। আমার থেকে তার কম ছিল কিন্তু তার থেকে আমিই বেশি অসুস্থ ছিলাম। আমি টানা তিন দিন সেলাইন দিয়েছি কিন্তু সে একদিন দিয়ে আর দেয়নি।
তিন দিন পর সিভিসি টেস্ট করার পর দেখতে পেলাম আমার প্লাটিনাম দুই লাখ চুয়াল্লিশ হাজার আর হাসবেন্ডের শুধু পঞ্চান্ন হাজার। এই কথা শুনে সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরপর সে আরও দুটি সেলাইন নেয় আর একদম রেস্টে থাকে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে। আবারো তিন দিন পর টেস্ট করে জানতে পারলাম তার দেড় লাখ হয়েছে আর আমার দুই লাখ পনেরোতে চলে এসেছে। তবে ডাক্তার বলেছে সমস্যা নেই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ঐ সময়টাতে অনেক ভয় পেতাম কারণ আশেপাশে শুধু শুনতাম মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।
আমরা যেখানে আছি সেখানে অনেক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে আর বাচ্চাসহ বেশ কিছু মানুষ মারাও গিয়েছে। আপনাদের দোয়া আর আল্লাহর রহমতে আমরা দু'জনে এমন একটা পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসতে পেরেছি এটাই আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমার ডেঙ্গুর জন্য শরীরে প্রচুর ক্যালসিয়ামের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে হাঁটুর নিচে মাংস পেশীতে ব্যথা করে। তারজন্য অবশ্য ঔষধ চলছে।
আমার এই অসুস্থতার অনুভূতি কখনো ভুলার মতো নয়। অসুস্থতার জন্য এতদিন আপনাদের থেকে দূরে ছিলাম তাই খুবই খারাপ লেগেছে। এখন থেকে চেষ্টা করবো আগের মতো এক্টিভ থাকার জন্য। যাই হোক আজ অনেক কথা বলেছি। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
উপর ওয়ালার কাছে শুকরিয়া আপনারা সুস্থ রয়েছেন, অনেক মানুষ তো এই ছোট্ট মশার কামড়ে আজ হয়তো বেঁচে নেই। যখন আপনার পোস্টটি পড়ছিলাম সত্যিই ভয় লাগছিলো ভীষণ। আর আপনাদের সন্তান সুস্থ ছিল এটাও উপর ওয়ালার রহমত। যাক সাবধানে এবং সুস্থ থাকবেন এই কামনা করছি।
ভাইয়া ঐ সময় পরিচিত একজন মারা গিয়েছিল আর আমরা দু'জনে এই কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে যাই। হয়তো আমাদের হায়াত ছিল বলে বেঁচে আছি। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।
ডেঙ্গু জ্বর এখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আপু। আসলে সুস্থতা কত বড় নেয়ামত তা অসুস্থ হলে বুঝা যায়। আপনি অসুস্থ জেনে খুব খারাপ লাগছে। ঠিক মতোন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
ভাইয়া আপনাদের দোয়ায় এখন আমি আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি। তারজন্য আবার আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছি। ধন্যবাদ।
আপু আপনার আর আপনার হাসবেন্ডের ডেঙ্গু পজিটিভ হয়েছিল জেনে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো । তারপরেও যে আপনারা সুস্থ হয়েছেন এই জন্য আলহামদুলিল্লাহ ।আসলে ডেঙ্গু এমন একটা অসুখ কখন কার হবে সেটি বলা যায় না ।তবে ডেঙ্গু পজেটিভ হলে একদিন পরপর সি বি সি টেস্ট করলে বেশি ভালো হয়।আমাদের এখানে তাই করে।তিন দিন পর পর তো অনেক বেশি দেরি হয়ে যায় । এরই মধ্যে প্লাটিলেট কমে গেলে বেশ মুশকিল। আর আপনার ছেলে সুস্থ ছিল এটি সবথেকে বড় বিষয়। এখন থেকে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করবেন ধন্যবাদ।
আপু আপনাদের সবার দোয়ায় সুস্থ হয়ে আবার আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছি। আমরা তিন দিন পর পর সিবিসি টেস্টে করেছি কারণ একটু সুস্থ লেগেছে বলে সময় নিয়ে করেছি। ধন্যবাদ আপু সবসময় সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আপনাদের অসুস্থতার কথা শুনে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লেগেছে আপু। আসলে এখন ডেঙ্গুর জন্য চারিদিকে অনেক কিছুই ঘটে চলেছে। অনেক মানুষ মারাও যাচ্ছে। আপনারা দুজন ডেঙ্গুর মত এরকম একটা অসুস্থতা থেকে এখন ফিরে আসতে পেরেছেন এরা জেনে সত্যি ভালো লাগলো। আপনার ছেলে সুস্থ ছিল এটা জেনে তো আরো ভালো লেগেছে। সুস্থতা হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। ভালো থাকবেন আশা করছি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।
হ্যাঁ ভাইয়া এমন অসুস্থতার মধ্যে থেকে ফিরে আসতে পেরেছি এটাই আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার অনুভূতি। আপু আপনার আর আপনার হাসবেন্ড এর ডেঙ্গু পজিটিভ হয়েছিল জেনে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো আমার। আশা করি কিছুদিন ডাক্তারের পরামর্শ মত ঔষধ খেলে নিশ্চয় সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইল।
ভাইয়া এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ সবসময় সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
আসলে সুস্থতা যে কত বড় নেয়ামত তা অসুস্থ হলে বোঝা যায়। যাই হোক দুজনে এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। আসলে এখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এই ডেঙ্গুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। আপনার ছেলে সুস্থ ছিল জেনে ভালো লাগলো। দুজনে যাতে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন এই কামনা করি।
হ্যাঁ আপু আমরা অসুস্থ হলেই বুঝি সুস্থ থাকার মর্ম। আমার ছোট ছেলেটা সুস্থ ছিল এটাই শুকরিয়া। আপনাদের দোয়ায় এখন সুস্থ আছি আপু। ধন্যবাদ।
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। আপু আপনি অসুস্থ জেনে সত্যিই খারাপ লাগলো। আপনি যেন তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে ওঠেন এই দোয়া করি। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে আপু। আশা করছি তাড়াতাড়ি শরীর ভালো হয়ে যাবে।
আপু এখন আল্লাহর রহমতে দুজনেই সুস্থ আছি। হ্যাঁ আপু বর্তমানে সব জায়গায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আসলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে সব জায়গায়। অসুস্থতা এমন একটা জিনিস যা সবাইকে একেবারে অন্যরকম করে তুলে। আপনারা দুজন একসাথে অসুস্থ হয়েছেন, আসলে দুইজন যদি একসাথে অসুস্থ হয় কে কার সেবা করবে যার জন্য অনেক সমস্যা। তবে এখন আপনারা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। আর আপনার বাচ্চার কোন রকম কিছু হয়নি এটাই আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক শুকরিয়া।
হ্যাঁ আপু দু'জন একসাথে অসুস্থ হওয়াতে অনেক সমস্যা হয়ে পড়েছিল। তবে দুজনের মাঝখানে ছেলেটা পড়েনি এটাই শুকরিয়া। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
বর্ষার সময় সারাদেশে মানুষের কমবেশি এমন ডেঙ্গু জোরে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাই এই সময়টাতে নিজের সাবধানতার সাথে চলতে হবে এবং পরিবারের অন্যান্য মানুষদের খুব সজাগ ও সচেতন রাখতে হবে এই বিষয়ে। আশা করি আপনি সুস্থ থাকবেন এবং পরিবারের অন্যান্যদের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গের মধ্য দিয়ে সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন।
এখন খুব সচেতন হয়ে গিয়েছি। বর্ষাকালে এই সমস্যা বেশি হয়। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
আপু আপনি আর আপনার হাসবেন্ড এখন সুস্থ হয়েছেন শুনে ভালো লাগলো। ডেঙ্গু এমন এক অবস্থা নাম শুনলে ভয় লাগে। অনেকে বলে ডেঙ্গু হলে মারাও যায়। আপনি এবং আপনার হাসবেন্ড দুইজন ডেঙ্গু আক্রান্ত। তবে আপনার সন্তান আল্লাহর রহমতে ভালো রয়েছে এটি আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। যখন ফ্যামিলির একজন অসুস্থ হলে অন্যজন দেখাশোনা করে। আর দুইজনের অসুস্থ হলে তাহলে তো কার সেবা কে করবে। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুক এই কামনা করি।
হ্যাঁ আপু আমার পরিচিতর মধ্যেও অনেকে মারা গিয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। এই খবর শুনে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে আপনাদের দোয়ায় এখন আমি সুস্থ আছি।