বাস্তবিক গল্প: শাহানার জীবনে কষ্টের শেষ নেই।(১ম পর্ব)
হ্যালো বন্ধুরা,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি চলে এসেছে কিন্তু এখনও তেমন বেশি শীতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন যেহেতু হেমন্ত কাল চলে আর এই সময়টাতে গ্ৰামের বাড়িতে সবচেয়ে বেশি আনন্দ লাগে। এখন সবার ঘরে ঘরে নতুন ধান তুলা হচ্ছে। এই সময়টাতে গ্ৰামের প্রতিটা ঘরে ঘরে পিঠা পুলির আয়োজন চলে। এই সময় গ্ৰামে একটা মেলা বসে আর সেই মেলায় বিভিন্ন ধরনের পিঠার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে কোনো ঋতু ঠিক ভাবে উপভোগ করা যায় না।
আপনাদের কাছেও এমন মনে হয়েছে কিনা জানিনা তবে আমার মনে হলো এই বছর অন্যসব বছরের তুলনায় প্রতিটা ঋতু একদম উল্টৌ দেখলাম। তারজন্য আমরা এখনো শীত অনুভব করতে পারিনি। যখন ছোট ছিলাম তখন এই গ্ৰামে এই সময় থেকেই ঠান্ডা পড়া শুরু হতো। রাতে ঘুমিয়ে থাকলে মা রাত জেগে পিঠা বানিয়ে রাখতো আর সকালে উঠে সেই ঠান্ডা পিঠা খেতে খুবই সুস্বাদু লাগতো। সেই দিন হারিয়ে গিয়েছে আর ফিরে আসবে না।
যাই হোক কাজের কথায় আসি আজ আবারও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ চিন্তা করলাম একটি গল্প শেয়ার করবো। তবে এটা শুধু গল্প নয় একদম বাস্তব ঘটনা। আমি সবসময় আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা গল্প আকারে শেয়ার করতে পছন্দ করি।
গ্ৰামের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শাহানা। তার চার ভাই ও সে একা। তবে সে সবার বড় আর ভাই সবগুলো ছোট। কিন্তু তার ভাইয়েরা আপন নয় সৎ। তবে তার ভাইদের দেখলে কেউ বলবে না সৎ। তারা তাদের বোনকে খুব ভালোবাসে।
শাহানা যখন ছোট ছিল তখন তার মা অন্য কারো হাত ধরে চলে যায়। এরপর শাহানার বাবা আরও একটি বিয়ে করে। সৎ মা তাকে খুব আদর যত্ন করে কিন্তু যত যাই বলেন সৎ কখনো আপন হতে পারে না। আপন মা আর সৎ মায়ের সাথে একটা দূরত্ব সারাজীবন থেকে যায়। এভাবে অবহেলা কিংবা আদর যত্নে শাহানার জীবন চলতে থাকে। সে খুবই গোছানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি মেয়ে। তার কোনো কিছু নোংরা থাকতে পারবে না। এমন কি সে যে জুতা পড়ে তাও সাবান দিয়ে প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে।
সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের জন্য আসে। শাহানা দেখতে খুব সুন্দর এবং খুব ভালো একটি মেয়ে। কিন্তু তার বাবা মধ্যবিত্ত ছিল বলে বেশি দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে পারেনি। এরপর তাদের পাশের গ্ৰামের একটি ছেলের সাথে শাহানার বিয়ে হয়। বাড়ির আশেপাশের সবাই বলেছে ছেলেটি খুব ভালো। সেই ছেলে শহরে থাকতো আর একটা চাকরি করতো। বিয়ের কয়েক মাস পর শাহানা কে নিয়ে ছেলে শহরে চলে আসে। কয়েক মাস তাদের খুব ভালো যায়। হঠাৎ করে দেখতে পায় তার হাসবেন্ড নেশা করে বাসায় আসে।
শাহানা পর পর তিন দিন যখন একই অবস্থা দেখে তখন তার বাপের বাড়ির লোকদের সব জানায়। কিন্তু তার বাবা মধ্যবিত্ত থাকায় বলে মা রে তুই যদি চলে আসিস তাহলে গ্ৰামের মানুষ খারাপ বলবে। মেয়েদের জীবনে একবারই বিয়ে হয়। কষ্ট করে থাক দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। যখন একটা সন্তান হবে তখন আর এত সমস্যা হবে। শাহানা পরিবারের কথা আর সমাজের কথা ভেবে থেকে যায়। কিন্তু তার হাসবেন্ড ভালো হওয়ার কোনো নাম নেই। এরপর বাড়ির কিছু মানুষ শাহানার হাসবেন্ড কে নিয়ে বসে আর বলে তুমি যদি এমনি করতে থাকো তাহলে শাহানা সারাজীবনের জন্য চলে যাবে।
তখন ছেলেটি সবার হাতে পায়ে ধরে বলে আমি আর নেশা করবো না। আমি শাহানাকে চাই আর তাকে নিয়ে সুখের সংসার করতে চাই। এরপর তাদের সংসার ভালোই চলতে থাকে। যখন বিয়ের একবছর পার হলো আবারও দেখতে পেল তার হাসবেন্ড নেশা করে। এরপর তাদের দু'জনের মধ্যে এই নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে শাহানাকে অনেক মারধর করে। এরপর শাহানা কোনো পালিয়ে বাড়ি চলে আসে আর শাহানার চাচা এই অবস্থা দেখে বলে আর তোকে যেতে হবে না।
এরপর শাহানার হাসবেন্ড আসে তাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু শাহানার বাড়ির লোকজন তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। তারপর শাহানার পক্ষ থেকে ডিভোর্স লেটার পাঠানো হয়। এরপর ছেলেটি তার ভুল বুঝতে পারে আর অনেক বার ক্ষমা চায় আর শাহানাকে নিতে চায়। কিন্তু শাহানার পরিবার আর সেই বাড়িতে পাঠাতে চায়না। যেই স্বামী একবার গায়ে হাত তুলেছে সে এখন থেকে বারবার তুলবে। এছাড়া শাহানার যেহেতু সন্তান নেই তাই পিছু টান নেই। তিন মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
এরপর শাহানার জীবন কোন দিকে মোড় নিয়েছে আর তার জীবনে কি ঘটেছে এবং সে এখন কেমন আছে জানতে হলে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকতে হবে। যাই হোক আজ অনেক গল্প করেছি আর নয়। আবার দেখা হবে পরবর্তী পর্বের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।
শাহানার মতো আমাদের সমাজে এমন অনেক মেয়েই আছে যাদের কপালে এমন দূর্ভোগ নেমে আসে।মা চলে গেলো ফেলে সৎ মায়ের সংসারে জীবন কেটে যাচ্ছিল।কিন্তু বিয়ে হতে না হতে এ কি অবস্থা শুরু হলো। যার জন্য ডির্ভোস ও হয়ে গেলো।এখন শাহানার জীবনে কি ঘটবে? পরবর্তী পর্বে জানতে অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আপু বাস্তবিক এই ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য।
আপু পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবো। অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ।
সমাজের চারপাশে খোঁজ কররে দেখা যাবে যে শাহানার মত হাজারও অসহায় মেয়েদের বসবাস। আসলে ভালে করে খোঁজ না নিয়ে বিয়ে দিলে যা হয়। কিন্তু শাহানা তো অনেক চেষ্টা করেছে সংসার টি টিকিয়ে রাখতে। যাক ভালোই করেছে ডিভোর্স করে। এখন কথা হলো দেখা যাক আগামী তে কি আছে শাহানার জীবনে।
আপু প্রতিটা মেয়েই চায় শেষ পর্যন্ত সংসার টিকিয়ে রাখতে কিন্তু যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন সব ছেড়ে চলে যেতে হয়। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
শাহানা অনেক ভালো একটা মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তার জীবনে এরকম কিছু ঘটেছে এটা সত্যি খারাপ লেগেছে দেখে। শাহানার হাজব্যান্ড সবশেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল কিন্তু তার ফ্যামিলি আর শাহানাকে যেতে দেয়নি ওখানে দেখছি। এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা ক্ষমা চাওয়ার পরেও আবার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে। শেষ পর্যন্ত তার জীবনে কি হয় এটা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
হ্যাঁ আপু এমন অনেক রয়েছে ক্ষমা চাওয়ার পরেও আবার অন্যায় করে। সেজন্যই মূলত শাহানাকে আর যেতে দেওয়া হয়নি। ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।
শৈশবের মজার দিনগুলো কখনো ভুলে থাকা যায় না।আসলেই পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।যাইহোক আপনার বাস্তব গল্পটি সুন্দর।শাহানার ফ্যামিলি যেহেতু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এইজন্য সে সহজেই ছেলেটিকে ডিভোর্স দিতে পেরেছে।নাহলে হয়তো সারাজীবন এভাবেই পস্তাতে হতো শাহানাকে।ধন্যবাদ আপু।
হ্যাঁ দিদি পরিবারকে পাশে পেয়েছে বলেই ডিভোর্স দিতে পেরেছে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
আসলে শাহানার কপাল খুব খারাপ। তাইতো ছোটবেলা তার মা অন্য কারো সাথে পালিয়ে যায়। যাইহোক বিয়ের পরও শাহানা সুখ পেল না। শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স হয়ে গেল। আসলে যারা নেশা করে তাদের সাথে সংসার করা যায় না। তারা কারণ অকারণে মারধর করে স্ত্রীকে। দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয় শাহানার জীবনে। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
হ্যাঁ ভাইয়া নেশাখোর মানুষের সাথে সংসার করা অসম্ভব। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।