গল্প "বাস্তবতা"- শেষ পর্ব
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজকে আবার হাজির হয়ে গেলাম "বাস্তবতা" গল্পটি শেষ পর্ব নিয়ে। আগেই বলেছি এটি গল্প বললে ভুল হবে। আমার খুব কাছের একজন মানুষের জীবনের কাহিনী। সেই কাহিনীকেই গল্প আকারে লেখার চেষ্টা করেছি। রাজীব কি শশীকে আবার তার জীবনে ফিরে পেয়েছিলো কিনা তা আজকের পর্বে জানতে পারবেন
বাস্তবতা
রাজিব অনেক চেষ্টা করে না পেরে হাল ছেড়ে দেয়। এতে শশীও অনেকটা স্বস্তি পায়।
বেশ কয়েক বছর শশী এভাবেই চাকরি করতে থাকে। এই ফাঁকে তার ছোট দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাদের দুই বোনের দুটি মেয়ে হয়েছে। শশীর জন্য তার বাবা মা খুব আফসোস করতে থাকে।
অনেকদিন পর শশীর এক কলিগের সঙ্গে অনেক ভালো সম্পর্ক হয়। দুজন সমবয়সী থাকে। দুজন দুজনকে পছন্দ করে। সেই ছেলে শশীকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার পরিবারকে জানাতে চায় না যে শশী ডিভোর্সি। কারণ ডিভোর্সি জানলে তার পরিবার থেকে কখনোই রাজি হবে না। কিন্তু শশী এভাবে সত্য গোপন করে নতুন কোন সম্পর্কে যেতে চায় না।
শশী বলে যদি তুমি তোমার পরিবারকে রাজি করিয়ে আনতে পারো তাহলেই আমি রাজি। তা না হলে এভাবে আমি আবার নতুন করে কষ্ট পেতে চাই না। পরবর্তীতে তোমার পরিবার থেকে জানলে অনেক সমস্যা হবে। কিন্তু ছেলেটি খুব ভালো করেই জানে যে তার পরিবার থেকে কখনোই রাজি হবে না ডিভোর্সি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে। সেজন্য সে আর তার পরিবারকে বলার সাহস পায় না। কিন্তু শশীকে রাজি করানোর চেষ্টা করে।
শশী খুব সামনে থেকে দেখেছে বাস্তবতা কত কঠিন। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। এজন্য শশী রাজি না হয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়। তারপর নতুন একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। শুধুমাত্র জীবনে আর কষ্ট পেতে চায় না জন্য তার ব্যাংকের এত ভালো চাকরিটা ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে চলে যেতে হয়। ধীরে ধীরে শশী ছেলেটিকে অনেক বোঝায়। তারপর ছেলেটির সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
শশীর পরিবার থেকে শশীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছে। শশীর ছেলেদের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায়। সে আর চায় না নতুন করে কোন ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে। কিন্তু তার বাবা-মা তারপরও হাল ছাড়ে না। তাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কখনো জোর করে না। কারণ প্রথমবার তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়াতে শশীকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তারা কাছ থেকে সেগুলো দেখেছে। তারা প্রথম থেকেই যখন রাজীব অসুস্থ হয়েছিল তখন থেকেই শশীকে বলেছিলো রাজিবকে ছেড়ে চলে আসার জন্য। কিন্তু শশী রাজিবের দুঃসময় তাকে ছেড়ে আসতে পারেনি। কিন্তু রাজিব সুস্থ হয়ে শশীকে ঠিকই কষ্ট দিলো।
এদিকে শশীর বাবা মাও সেরকম ভাবে কোন ছেলে মিলাতে পারছে না। শত হলেও মেয়ে ডিভোর্সি। এক দিক মিলে তো অন্যদিকে মিলে না। হঠাৎ একদিন শশীর এক কলিগ শশীর জন্য একটি পাত্র আনে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করার পর তার কলিগ দেখেছে শশী কতটা ভালো মেয়ে। কত শান্তশিষ্ট আর মন মানসিকতা খুব ভালো। সেজন্য তার এক পরিচিত ছেলেকে পাত্র হিসেবে শশীর জন্য নিয়ে আসে।
ছেলেটি আনমেরিড। শশীকে দেখে ছেলেটির খুব পছন্দ হয়ে যায়। কিন্তু ছেলেটির পরিবার থেকে ডিভোর্সি মেয়েকে আনমেরিড ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলো না। ছেলেটি তার বোনদেরকে প্রথমে রাজি করায়। তার বোনরা তার বাবা-মাকে রাজি করে। তারপর শশীর সঙ্গে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হয়ে যায়। এখন শশী হাজবেন্ডের সঙ্গে অনেক ভালো আছে। দুজন মিলে চাকরি করছে। বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছে।
জীবনে একটা সময় শশী তার বাবা-মার ভুলের জন্য অনেক কষ্ট করেছে। সেজন্যই হয়তো পরবর্তীতে অনেক ভালো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা-মা ঘটকের কথা শুনেই খোঁজখবর না নিয়েই মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের ক্ষেত্রে কখনোই তাড়াহুড়া করা ঠিক না। বিয়ে-শাদির ব্যাপারে সময় নিয়ে খোঁজখবর নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যাই হোক শশী এখন ভালো আছে তাই অনেক। আশা করি এভাবে সারা জীবন কাটাতে পারবে।
সবাইকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে আমার গল্পটি পড়ার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ
@tania
আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি। |
---|
VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy
রাজীবের মতো এমন অকৃতজ্ঞ লোকের কাছে শশী ফেরত না গিয়ে খুব ভালো কাজ করেছে। বিয়ের ব্যপারে তাড়াহুড়া করা মোটেই ঠিক না। কিন্তু অনেক মা বাবারা এমন ভুল করে এবং পরবর্তীতে তার খেসারত দেয় সন্তানেরা। যাইহোক শশীর ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে এবং শশী অনেক ভালো আছে, এটা জেনে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। আশা করি শশীর জীবনের বাকি সময়টা খুব ভালো কাটবে।
আমারও মনে হয়েছে রাজিবের কাছে শশী ফিরে না গিয়ে খুব ভালো কাজ করেছে। রাজীবের মতো ছেলেরা কখনো ঠিক হবার নয়। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
একটা কথা গল্পটার সব পর্ব আমার পড়া হয়েছে। যার কারনে শেষের পর্বটা পড়তে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। রাজীব শত চেষ্টা করিও পারেনি শশীকে রাজি করাতে। শশী আবারও রাজিবের সংসারে না গিয়ে ভালোই করেছে। সবশেষে যে ছেলেটা বিয়ে করেছে সে তার ফ্যামিলিকে প্রথমে রাজি করিয়েছে। পরবর্তীতে বিয়ে করেছে এটা দেখে খুব ভালো লাগলো। এখন তারা সুখে রয়েছে এটা জেনে খুশি হলাম। দোয়া করি যেন তাদের পরবর্তী জীবন ভালো কাটে।
বর্তমানে শশী তার নতুন হাজবেন্ডের সঙ্গে অনেক সুখে শান্তিতে সংসার করছে। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য।
রাজীব শশীকে রাজি করাতে চেয়েছিল তবে শশী রাজি হয়নি। শশী যেখানে কাজ করতো সেখানে কলিগের সাথে তার সম্পর্ক হলেও, শেষ পর্যন্ত দেখছি সে নিজেই ওই ছেলেটার থেকে দূরে সরে গিয়েছে। আর কোন ছেলেকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। একেবারে শেষ পর্যায়ে দেখছি একটা ছেলে তার সবকিছু জেনে তাকে পছন্দ করেছে, এবং নিজের ফ্যামিলিকে রাজি করিয়েছে যেন সে তাকে বিয়ে করতে পারে। আর শশীও তাকে বিয়ে করেছে। যার কারণে দুজনে এখন অনেক সুখে রয়েছে। অনেক ভালো লেগেছে বাস্তবতা গল্পের শেষ পর্ব পড়ে। এটা ঠিক কোন বাবা মায়ের উচিত না খোঁজখবর না নিয়ে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া। এটা শুধু বিয়ে না একটা মানুষের জীবন নিয়ে প্রশ্ন।
ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি পড়ে সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।