ছোটবেলার একটি ঘটনা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।


আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।


আজকে আবার হাজির হয়ে গেলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। সবাইকে দেখি ছোটবেলার বিভিন্ন গল্প লিখতে। তাই আমিও ভাবলাম যে আমার ছোটবেলার একটি গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। এখনকার বাচ্চাদের শৈশব কাটে শুধু মোবাইল আর টিভি দেখে। আমাদের ছোট বেলায় মোবাইল তো ছিলই না। টিভিও এত দেখতাম না।সবাই মিলে বিভিন্ন ধরণের খেলা খেলতাম বিকাল হলেই। অপেক্ষায় থাকতাম কখন আসরের আজান দিবে আর কখন বাইরে খেলতে যাবো। যতই খেলতাম না কেন ঠিক মাগরিবের আজান দিলে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে পড়তে বসতাম। যেহেতু আমার বেড়ে ওঠা মফস্বল শহরে সেহেতু বিকাল হলেই খোলা মাঠে খেলতে পারতাম। তাছাড়া আশেপাশের বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে ফল পেড়েও খেতাম। আজকের ঘটনাটি সেরকম ফল পাড়ার একটি ঘটনা।


kids-894787_640.jpg
Link


বিভিন্ন ফলের সিজনে আশেপাশের বিভিন্ন গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। সেরকমই আমাদের বাসার পাশে একটি জাম গাছ ছিল। জাম গাছটা একটু জঙ্গল টাইপের জায়গায় ছিল। যেখানে কেউ যেত না। তাছাড়া সবাই ময়লা আবর্জনা ফেলতো সেখানে। আর গাছের উপরের অংশ আমাদের রান্না ঘরের চালের উপর দিয়ে উঠে গিয়েছিল। আমরা প্রায়ই রান্না ঘরের চালে উঠে সেখান থেকে পাকা জাম পেরে খেতাম। গাছে এরকম টসটসে পাকা জাম দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম না।


একদিন আমি আর আমার সেজ বোন এরকম গাছের চালে উঠেছি জাম পাড়ার জন্য। চাল একটু নড়বড়ে ছিল এজন্য আমরা পাশের যে পাকা রেলিং ছিল তার উপরে দাঁড়িয়ে জাম পারছিলাম। হঠাৎ মনে হল যে চালের উপরে গিয়ে দাঁড়ালে আরো ভালোভাবে জাম হাতে পাওয়া যাবে। সেজন্য আমরা দুজনে একসঙ্গে চালের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছি আর অমনি চাল ভেঙে রান্না ঘরের ভিতরে পরে গিয়েছি। যদিও এই রান্নাঘরটি পরিত্যক্ত ছিল আর এখানে বেশ সাপের আনাগোনা দেখা যেত। সব থেকে বড় বিষয় যা ছিল তা হলো রান্নাঘরটি বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। ভিতরে পরার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সাপের ভয় পাচ্ছিলাম। তাছাড়া এখান দিয়ে কিভাবে বেরোবো সেই চিন্তাও করছিলাম। কারণ বিকালের দিকে রান্না ঘরের এদিকটায় কেউ আসবে না। আমরা ভিতরে পরে থাকলেও কেউ টের পাবে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার বোনকে দেখলাম যে যেই জায়গা দিয়ে আমরা ভেঙে পরেছি সে জায়গা দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এবং কিছু একটার উপর দাঁড়িয়ে সে উঠে গেল। তারপর ওর দেখা দেখি আমিও সেখান দিয়ে উঠে গেলাম। প্রথমে ভাবছিলাম যে এরকম ভাবে ভেঙ্গে পরলাম কোথাও ব্যাথা পাইনি। কিন্তু উপরে আসার পর দেখলাম যে পায়ে এবং হাতে অসংখ্য ছোট ছোট কাটার দাগ। কারণ আমরা ভিতরে পরার পর এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে কোথাও ব্যথা পেয়েছি সে অনুভবটা হচ্ছিল না। উপরে ওঠার পর যখন স্বস্তি পেলাম তখন বুঝতে পারলাম যে বেশ কয়েক জায়গায় আমাদের কেটে গিয়েছে। তারপর ওখান থেকে নেমে ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকলাম যে আম্মা না জানি কত বকা দেয়। কিন্তু খুব একটা বকা দিয়েছিল না আমাদের হাত পা কেটে যাওয়া দেখে।
সে যাত্রায় অল্পের মধ্যে দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দুরন্তপনা তাতেও কিছুটা কম হয়েছিল না। এরকম ছোট ছোট মজার আরো অনেক স্মৃতি আছে। অন্য কোন দিন অন্য কোন স্মৃতি শেয়ার করব। আজ এ পর্যন্তই। আশা করি আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। সময় নিয়ে আমার পোস্টটি দেখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। পরবর্তীতে দেখা হবে আবার নতুন কিছু নিয়ে।


ধন্যবাদ

@tania

আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি।

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

IMG_20220106_113311.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png


VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

আপু ঠিক বলেছেন এখন বাচ্চারা সময় পেলে মোবাইল আর টিভি নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু আমরা আপনার মতো ছুটি পেলে মাঠে খেলার জন্য চলে যেতাম। আমাদের সময়টা খুব মজার ছিল আর আমরা যা দেখেছি এখনকার ছেলেমেয়েরা কিছুই দেখেনি। আপনারা চাল ভেঙ্গে পড়ে গিয়েছেন তবে আপনাদের ভাগ্য ভালো বড় কোনো বিপদ হয়নি। ধন্যবাদ আপু ছোটবেলার গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

বাচ্চাদের আর দোষ দিয়ে লাভ কি? এদের খেলার জায়গাই তো পাওয়া যায় না। এদের সময় পার করা দরকার । যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

রান্না ঘরেড় চালের উপর জাম পারতে গিয়ে রান্না ঘড়ের চাল ভেঙ্গে পড়ে যাওয়া আসলেই অনেক অবাক কান্ড ।ছোটবেলায় আমরা অনেক জাম পেরে খেয়েছি। আপনার গল্পটা পড়ে আমার ছোটবেলার জীবনের কথা মনে পড়ে গেল।

 2 years ago 

আমার গল্পটি পরে আপনার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল জেনে খুশি হলাম আপু। ধন্যবাদ আপনাকে পাশে থাকার জন্য।

 2 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে যেন আবারও সেই ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। সত্যি সেদিনটা কতই না ভয় পেয়েছিলাম। প্রথমে মনে করেছিলাম মনে হয় উপরে উঠতে পারবো না ।কিন্তু শেষমেষ আমরা উপরে উঠে ছিলাম। সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে কিন্তু সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

আপনি উঠলেন জন্যই তো আমিও উঠতে পেরেছিলাম। তা না হলে যে কি হত। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন আপু এখনকার দিনের বাচ্চাদের মতো আগেকার দিনের বাচ্চাদের হাতে ফোন ছিলনা দেখে বাইরে খেলাধুলা করার একটা সুযোগ আমরা পেয়েছি। আপনার ঘটনাটি পড়ে একেবারে চোখের সামনে ঘটনাটি ভেসে উঠল। আসলেই ওই গাছের জামগুলো অনেক মজার ছিল এই জন্যই তো চুরি করে খাওয়ার অভ্যাস ছিল। সেই জাম গাছটা কি এখনো আছে ওখানে? ভালো লাগলো পুরনো একটি স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন।

 2 years ago 

আপু চুরি করে খেতাম না তো। ওনারা দেখলেও কিছু বলত না। শুধু পরে যেতে পারি জন্যই রাগ করত। গাছটি আছে কিনা বলতে পারবো না। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

কোথাও কাউকে বন্দী হয়ে থাকার গল্প শুনলেই আমি খুবই বিচলিত হয়ে যাই। কারণ বন্দী হয়ে থাকার মত কষ্টকর আর কিছুই নেই। আপনারা দুই বোন সেদিন বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছেন, আর তাইতো চাল ভেঙ্গে পড়ার কারণে আপনারা তেমন বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনায় পরেননি, আবার তালা দেওয়া রান্নাঘর থেকে বের হয়েও আসতে পেরেছেন। ভাগ্য আপনাদের সহায়ক ছিল। আপনাদের এই দুঃসাহসিকতার কথা আপনাদের মা জানতে পেরে ও তেমন কিছু বলেননি। কেননা আপনাদের হাতে পায়ে ছোটখাটো কেটে যাওয়ার কারণে মায়ের মন আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল। তাই সব দিক থেকে সেদিন আপনারা খুবই ভাগ্যবতী ছিলেন। আপু, ছোটবেলার চমৎকার একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া ভাগ্য ভালো ছিলো যে কোন সাপ ছিল না। আর ওই ভাঙা দিয়েই উঠতে পেরেছিলাম। ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।

 2 years ago 

আসলে আপু ছেলেবেলা হলো দুরন্ত পানার এক সোনালী সময়। তখন যে এত দুরন্ত পানা কোথা হতে আসে? যাক আপু গল্পটি পড়ে আমিও বেশ ভয় পাচ্ছিলাম। কারন আপনারা যদি সেই রান্না ঘর টি হতে বুদ্ধি করে বের না হতেন তাহলে কি যে হতো আপনাদের । সেটাই ভাবছি।

 2 years ago 

এখন আমার বাচ্চাদের দুরন্তপনা দেখি। ওদের অবশ্য আমাদের মত ছোটাছুটি করার সুযোগ নেই। যাই হোক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।

 2 years ago 

আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল।এভাবে আম পাড়তে গিয়ে ডাল ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গেছিলাম।আসলেই আমাদের শৈশব ছিল অনেক মজার।ফোনের ডিসপ্লে তে বন্দী ছিলাম না আমরা। ধন্যবাদ আপনার শৈশবের স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আমরা তো তাও অল্পের মধ্যে দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম। বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। এখনকার বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই জন্যই তো মোবাইলে নিয়ে পরে থাকে। যাই হোক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

এখনকার বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই সেজন্য তারা সময় পেলে মোবাইল এবং টিভি নিয়ে বসে। আর আমরা আগে সুযোগ পেলে এই বাড়ী ওই বাড়ি, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতাম খেলার জন্য। আপনার জাম খাওয়ার কাহিনী পড়ে বেশ মজা পেলাম। আসলে যখন আমরা খুব বেশি ভয় পেয়ে থাকি তখন আর ব্যথা যন্ত্রণার কথা মনে থাকে না। যেমন আপনি আর আপনার বোন ব্যথার কথা তখন ভুলেই গিয়েছিলেন প্রায় সাপের ভয়।

 2 years ago 

বাচ্চাদের আর দোষ দিয়ে কি লাভ। এদের ও তো সময় কাটানোর দরকার। যাই হোক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।

 2 years ago 

কি বলেন আপু জাম পাড়তে গিয়ে, একেবারে রান্না ঘরের চাল ভেঙে পড়ে গেলেন। তবে রান্নাঘরটি পরিত্যক্ত ছিল এবং সেখানে সাপ গোফ থাকতে পারে এটা শুনে খুবই ভয় লাগলো। তার উপর আবার দরজাটাও বন্ধ ছিল। আমার তো ভীষণই ভালো লাগলো আপনাদের কথাটা শুনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওপর দিয়ে উঠে আসতে পেরেছেন এটাই অনেক। আসলে ভয়ের কারণে আপনাদের ব্যথা পাওয়া অনুভব হয়নি। যেহেতু কেটে গিয়েছে এই জন্য আপনার আম্মু আর কিছু না বলে ভালই করেছে।

 2 years ago 

আমরাও সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। ভাগ্য ভালো জন্যই ভাঙা জায়গা দিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। ধন্যবাদ আপু আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 67441.24
ETH 3492.03
USDT 1.00
SBD 2.81