দাদার চ্যালেঞ্জ তেল, পানি ছাড়া মুরগির মাংসের রেসিপি
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আমিও চলে আসলাম দাদার চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করার জন্য। দাদার তেল এবং পানি ছাড়া মাংস রান্নার রেসিপি নিয়ে। যদিও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আমার কিছুটা দেরি হয়ে গেছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তারপরও ভাবলাম যে অংশগ্রহণ করেই ফেলি। শুরুতেই দাদাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। মুরগির মাংস তো কম বেশি আমরা সবাই খাই কিন্তু এভাবে তেল এবং পানি ছাড়া স্বাস্থ্যকর উপায়ে কজনই বা খাই। মুরগির মাংসে যত বেশি তেল দেয়া হয় আমাদের মনে হয় যে তত বেশি সুস্বাদু হয় মুরগির মাংস। তেল ছাড়াও যে এত মজাদার করে মুরগির মাংস রান্না করা যায় তার দাদার চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট না করলে বুঝতেই পারতাম না। কিছুটা ভয় ভয় নিয়ে রেসিপিটি তৈরি করেছিলাম। ভাবছিলাম যে খেতে না জানি কেমন হবে। তেল ছাড়া তো কখনো কোনো তরকারি খাওয়া হয়নি। তারপরও দাদা যখন দিয়েছে নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে দিয়েছে। রান্নার পর আসলে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। তেল পানি ছাড়াও যে মাংস এত সুস্বাদু হয় তা এই রেসিপি না খেলে কেউ বুঝতেই পারবে না।
এখন আসি এই মাংস রান্না করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি সে বিষয়ে। এই যুগে এসে দাদা একেবারে সনাতন পদ্ধতিতে মুরগির মাংসটি রান্না করতে বলেছেন। সবচেয়ে বেশি বিপদে পরেছিলাম আলু পিঁয়াজগুলো পোড়ানো নিয়ে। নেটের জালি বাসায় ছিল না। কি দিয়ে পোড়াবো তাই ভাবছিলাম। একবার ভেবেছিলাম যে সরাসরি চুলার উপর বসিয়ে দেই। পরে রান্না ঘরে খুঁজতে থাকলাম কিছু পাওয়া যায় কিনা যেটি দিয়ে পোড়ানো যাবে। ভাজাপোড়া ওঠানোর এই চালনিটি পেয়ে গেলাম। এটি দিয়ে বেশ ভালোভাবেই পোড়ানো গিয়েছে। যদিও আমি ভাজাভাজি করতে খুবই ভয় পাই তারপরও গরমের মধ্যে এগুলো পোড়াতে বেশ কষ্ট হয়েছে। সব থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে পাটায় সবকিছু বাটতে গিয়ে। কারণ কখনো পাটায় হাত দিয়েছি কিনা মনে পড়ে না। খুব বেশি দরকার হলে কাজের খালাই বেটে দেয়। চ্যালেঞ্জ আমি নিয়েছি তাই আর কাজের খালাকে বাটতে দেইনি। আমি নিজেই বাটতে বসেছি। মরিচ বাটার পর হাত ধুয়ে কখন যেন মনের ভুলে মুখে হাত দিয়েছি। তারপরেই বুঝতে পারলাম যে চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করার কি যন্ত্রনা। তাছাড়া বাজারে অনেক খুঁজে লেমন গ্রাস এবং কারিপাতা পেলাম না তাই এ দুটি ছাড়াই রান্না করতে হয়েছে। যাইহোক শত কষ্ট করেও শেষমেষ রান্নাটি সুস্বাদু হয়েছে তাই অনেক। আশা করি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে।
টক দই --৫০ গ্রাম
টমেটো--৪ টি
পিঁয়াজ--৪ টি
আলু--৪টি
রসুন-- ২ টি (সাইজ বড় জন্য একটা কমিয়ে দিয়েছি)
আদা-- ১ খন্ড
কাঁচা মরিচ-- ৪ টি
শুকনা মরিচ-- ৪ টি
তেজপাতা-- ৪ টি
জিরা --১ চামচ
জিরার গুঁড়া-- হাফ চা চামচ
হলুদ-- ২ চা চামচ
লবন--পরিমাণমতো
ধনেপাতা --৮/১০টি
দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, এলাচ--৫/৬ টা করে
প্রথমে টক দই গুলোকে ভালোমতো ফেটিয়ে নিয়েছি। মাংসের মধ্যে দিয়ে দিয়েছি। তারপর হলুদ এবং লবণ দিয়ে মাংসগুলোকে মেরিনেট করে রেখে দিয়েছি ৪০ মিনিটের জন্য।
মাংসগুলোকে মেরিনেট করে রেখে এই ফাঁকে আমি সবকিছু ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে কেটে নিয়েছি।
চুলায় চালনি বসিয়ে তার মধ্যে আলু দিয়ে পুড়িয়ে নিয়েছি। তারপর একে একে পিয়াঁজ, রসুন, কাঁচামরিচ, শুকনা মরিচ, আদা পুড়িয়ে নিয়েছি। তারপর একটি প্লেটে উঠে রেখেছি।
এখন পাটায় প্রথমে এলাচ, দারচিনি, গোলমরিচ, লং, জিরা বেটে নিয়েছি। তারপর যে মশলাগুলো পুড়িয়েছিলাম সেখান থেকে অর্ধেক পিঁয়াজ উঠিয়ে রেখে বাকি সবগুলো বেটে নিয়েছি।
চুলায় একটি ফ্রাইপ্যান বসিয়ে দিয়ে তার মধ্যে মেরিনেট করা মাংসগুলো দিয়েছি। তারপর লবন, হলুদ এবং আস্ত জিরা দিয়ে ঢেকে পাঁচ মিনিট রান্না করেছি।
পাঁচ মিনিট পর মাংস থেকে পানি ছেড়েছে। এখন পিঁয়াজ, টমেটো, আলু দিয়ে আবারো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে বেশ কিছুক্ষণ রান্না করবো।
কিছুক্ষণ পর পর ঢাকনা উঠিয়ে নেড়ে দিয়েছি যাতে নিচ থেকে পুড়ে না যায়।
রান্না প্রায় হয়ে গিয়েছে। এ পর্যায়ে আমি বাটা মসলা এবং জিরা গুড়া দিয়ে নেড়েচেড়ে পাঁচ মিনিট ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। তারপর ধনিয়া পাতা দিয়ে চুলা বন্ধ করে দিয়েছি।
এখন পরিবেশনের জন্য উঠিয়ে নিয়েছি। এভাবে আমার তৈরি হয়ে গেল তেল, পানি ছাড়া মুরগির মাংস আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। সময় নিয়ে আমার পোস্টটি দেখার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। পরবর্তীতে দেখা হবে আবার নতুন কিছু নিয়ে।
ধন্যবাদ
@tania
Photographer | @tania |
---|---|
Phone | oppo reno5 |
আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি। |
---|
VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy
আপু সবাই খুব সুন্দর ভাবে তেল ও জল ছাড়া রান্না করেছে।আপনিও চমৎকার ভাবে রেসিপিটি শেয়ার করলেন। খুব সুন্দর রেসিপি হয়েছে।খেতেও নিশ্চয়ই খুব মজার হয়েছে। ধন্যবাদ আপু শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু সবাই অনেক সুন্দর করে তেল ছাড়া রান্না করেছে তাই আমিও চেষ্টা করলাম। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
এরকম অসুস্থতার মধ্যে দিয়েও আপনি দাদার চ্যালেঞ্জ টি এক্সেপ্ট করে শেষ পর্যন্ত রেসিপি তৈরি করেছেন তাহলে। আসলে আপনার মত আমারও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই রেসিপিটা তৈরি করতে। আর তেমনি বেশ কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু আসলেই অনেক বেশি সুস্বাদু হয়েছিল, যা দেখে আমি নিজেও বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তবে খুব মজা করেই খাওয়া গিয়েছিল, আপনারাও খুব মজা করে খেয়েছিলেন তাহলে।
আপু সবার করা দেখে আমারও মনে হচ্ছিল যে একটু চেষ্টা করে। তাই চেষ্টা করলাম। কিন্তু খুব কষ্ট হয়েছিল। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
রেসিপিটা দেখেই আমার জিভে জল চলে এসেছে। এবং আপনি দাদার চ্যালেঞ্জ সহ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই আপনাকে,তেল, পানি ছাড়া মুরগির মাংসের রেসিপি, রেসিপির প্রতিটি ধাপ অসাধারণ ভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন নিখুঁতভাবে শুভকামনা রইল এত সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
দাদা যেভাবে বলেছে সেভাবে রান্না করার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্য করার জন্য।
আপু আপনি অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে দাদার এই চ্যালেঞ্জটা একসেপ্ট করে নিয়েছেন এবং খুবই মজাদার এবং লোভনীয় ভাবে বিনা তেলে জলে চিকেনের রেসিপি তৈরি করেছেন। আশা করছি আপনারা অনেক মজা করে খেয়েছিলেন। আপনার বাসায় নেটের জালি না থাকায় ভাজাপোড়া উঠানোর চালনিটি দিয়ে পেঁয়াজ রসুনগুলো পুড়িয়েছিলেন। অনেক বিশেষ সুবিধা হয় ছিল নিশ্চয়ই এটা দিয়ে পুড়ানোর জন্য। ডেকোরেশনটাও অনেক বেশি সুন্দর ছিল।
শরীর কিছুটা ভালো হয়েছিল তাই ভাবলাম যে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করে ফেলি। চালনি দিয়ে পুড়িয়ে সুবিধা হয়েছিল। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।।
দাদার দেওয়া রেসিপি দেখে তেল আর পানি ছাড়া খুবই সুন্দরভাবে আপনি চিকেন রেসিপি তৈরি করে ফেলেছেন দেখছি। আর রেসিপিটা দেখতে অনেক বেশি লোভনীয় লাগছে। খেতে ও আশা করি অনেক বেশি সুস্বাদু হয়েছে। রেসিপি তৈরি পর আপনার ডেকোরেশন টাও খুবই সুন্দর ছিল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
দাদা খুব সুন্দর ভাবে প্রতিটি ধাপের বর্ণনা করেছেন। এজন্য রান্না করতে খুবই সুবিধা হয়েছিল। ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে দাদা রেসিপির যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সেটি আসলে অনেক সুস্বাদু একটি রেসিপি ছিল।সেই রেসিপিটি একমাত্র দাদার কারণে খেতে পারলাম।কারণ এই চ্যালেঞ্জ না দিলে হয়তো বাসায় বানানো হতো না । অনেক চমৎকার ছিল আপনার রেসিপিটি ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া দাদা এই চ্যালেঞ্জ না দিলে এত কষ্ট করে রান্না কে করত। যাই হোক নতুন একটা রেসিপি খাওয়া গিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আপনি তো তেল এবং পানি ছাড়া খুব চমৎকার মুরগির মাংস রেসিপি করেছেন। তবে এবার প্রতিযোগিতার রেসিপিটি একদম ভিন্ন রকম হয়েছে। আমরা কখনো চিন্তাই করি নাই পানি এবং তেল ছাড়া রেসিপি করা যায়। যাইহোক আপনি মুরগির মাংসের সাথে আলু দিয়েছেন। তবে আপু আমাদের এদিকেও লেমন গ্রাস এবং কারিপাতা পাওয়া গেল না। ধন্যবাদ আপনাকে খুব সুন্দর করে রেসিপিটি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু এবারের প্রতিযোগিতা একেবারে ভিন্ন ছিল আমিও লেমন গ্রাস এবং কারি পাতা অনেক খুঁজে কোথাও না পেয়ে ওগুলো ছাড়াই রান্না করেছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। আজকে আপনি তেল এবং পানি ছাড়া খুব সুন্দর করে চিকেন রেসিপি করেছেন। তবে এই প্রথম দেখলাম তেল এবং পানি ছাড়া কোন রেসিপি তৈরি। তবে মনে হয় রেসিপিটি খেতে অনেক মজা হয়েছে। এবং আপনার রেসিপি ডেকোরেটর খুব দারুণ হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব সুন্দর করে রেসিপিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমিও এই প্রথম তেল এবং পানি ছাড়া চিকেন রান্না করেছি। খেতে আসলে অনেক মজাদার হয়েছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
সব মশলাগুলো পোড়ানো এবং পাটায় মসলা বাটা সত্যি অনেক কঠিন ছিল বুঝতেই পারছি। যদিও মাঝে মাঝেই পাটায় মসলা বাটা হয়। তাইতো খুব সহজেই সেটা করতে পেরেছি। কিন্তু মসলাগুলো পোড়াতে গিয়ে আমারও বেশ সমস্যা হয়েছিল। আপু আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর ভাবে রেসিপি তৈরি করেছেন এবং উপস্থাপন করেছেন। দারুন হয়েছে এই রেসিপি।
আপু আমারতো পাটা ভুলেও ধরা হয় না। খুব দরকার হলে কাজের খালাই করে দেয়। সেদিন নিজে করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি কতটা কঠিন। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।