ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ অবহেলিত মেয়ের জীবন কাহিনী।

in আমার বাংলা ব্লগ12 days ago
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু/আদাব।

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001

আজ ০৮ জুন ২০২৪ ইং: রোজ শনিবার।

বাংলায় ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দ।

girl-3421489_1280.jpg

Source

আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবৃন্দ কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। আমি আজ আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার বাংলা ব্লগের অনেক সদস্যরাই ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট করে থাকেন। তাদের পোস্ট গুলা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। এই ধরনের পোস্ট গুলা পড়তে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। সবাইকে দেখে দেখে আমার ও ইচ্ছা হয়েছে এই ধরনের পোস্ট শেয়ার করার। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটা ক্রিয়েটিভ রাইটিং শেয়ার করবো। আশা করি আমার ক্রিয়েটিভ রাইটিং আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে।


অবহেলিত মেয়ের জীবন কাহিনি।

সুমি, একটি ছোট্ট গ্রামের মেয়ে। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা তার ছিল এক দরিদ্র পরিবারে। গ্রামটি ছিল দেশের প্রান্তিক এলাকায়, যেখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল প্রকট। সুমির বাবা একজন ক্ষুদ্র কৃষক এবং মা গৃহিনী। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে সুমি ছিল তৃতীয়। সুমির শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যেই। বাড়িতে শিক্ষার পরিবেশ তেমন ছিল না। সুমি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী ছিল। তবে সংসারের কাজকর্ম ও ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনার দায়িত্ব তার ওপর ছিল। স্কুলে যাওয়ার সময় পেলেও, বাড়ি ফিরে অনেক কাজ করতে হতো। তবুও সুমি কখনও পড়াশোনা বন্ধ করেনি।

কৈশোরে পা রাখতেই সুমির জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হলো। গ্রামের কুসংস্কার ও সামাজিক রীতিনীতি তাকে আরও অবহেলার শিকার বানালো। মা-বাবা তাকে মেয়েদের উপযুক্ত কাজ ও আচরণের প্রতি নজর দিতে বলতেন। একসময়, তার লেখাপড়ায় আগ্রহকে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হলো। সুমির বন্ধুরা একে একে স্কুল ছেড়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করল। কিন্তু সুমি স্বপ্ন দেখত বড় হয়ে শিক্ষিত হওয়ার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় যখন এলো, তখন তার বাবা তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে সুমি এতে রাজি হলো না। সে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে বাবার কাছে অনুরোধ করল যাতে তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়। বাবার মানা সত্ত্বেও সুমি পড়াশোনা চালিয়ে গেল। গ্রামের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের সাহায্যে সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করল।মাধ্যমিকের পরে সুমির জীবনে একটি বড় পরিবর্তন এলো। গ্রামের প্রধান শিক্ষক তাকে একটি বৃত্তি পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করলেন, যাতে সে শহরে গিয়ে কলেজে পড়াশোনা করতে পারে। সুমির মা-বাবা প্রথমে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত মেয়ের ইচ্ছা ও অধ্যবসায় দেখে সম্মতি দিলেন। সুমি কলেজে ভর্তি হয়ে শহরে চলে এলো।

শহরে এসে সুমির জীবনের সংগ্রাম আরও কঠিন হলো। তাকে খরচের জন্য টিউশনি করতে হলো, কিন্তু সে দমল না। শহরের পরিবেশ তার জন্য নতুন ছিল, তবে সুমি তার লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে সে সফলভাবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করল।স্নাতক শেষ করার পরে সুমি একটি ভালো চাকরি পেলো। সে এখন স্বাবলম্বী এবং নিজের পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সুমির সংগ্রাম শুধু তার নিজের জন্য নয়, তার মতো অনেক অবহেলিত মেয়ের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে এখন গ্রামের মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছে এবং তাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। সুমির জীবন কাহিনি এক সংগ্রামী মেয়ের গল্প, যে অবহেলা আর দারিদ্র্যকে জয় করে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছে। তার অধ্যবসায় ও দৃঢ় সংকল্পই তাকে সফলতার পথে নিয়ে এসেছে। সুমি এখন একটি জীবন্ত উদাহরণ, যে প্রমাণ করেছে যে সংগ্রাম ও আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব।

এই কাহিনি থেকে বোঝা যায় যে, সামাজিক অবহেলা ও কুসংস্কারের জালে বন্দী থাকা সত্ত্বেও একজন মেয়ে যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখে ও কঠোর পরিশ্রম করে, তাহলে সে সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে পারে।


পোস্টের ধরনক্রিয়েটিভ রাইটিং
লেখাতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ৮
লোকেশনপাবনা
আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। বিবাহিত সূত্রে এখন আমার বাসা জুগির গোফা গ্রামে। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।



Logo.png

Banner_New.png

20230619_1852241.gif

Sort:  

আসলে কোন মেয়ে বা ছেলে যদি অবহেলিত হয় তাহলে তার জীবনটা সত্যি নরকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কারণ সমাজে সবাই একটু শান্তির খোঁজে দিনরাত পরিশ্রম করে তারপরও যেন অশান্তি লেগেই থাকে আর অবহেলিত মানেই অনেক যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। আসলে আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক বিষয়ে আমি জানতে পারলাম। অনেক শিক্ষা নিয়ে ও বিষয় ছিল এখানে ধন্যবাদ।

 11 days ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত সুন্দর করে আমার পোস্টে গঠনমূলক মতামত শেয়ার করার জন্য।

 11 days ago 

অবহেলিত মেয়ে সুমির জীবন কাহিনীটি বেশ ভালো লাগলো।পোস্ট টি পড়ে যা বুঝতে পেলাম সুমি জীবন যুদ্ধে হেরে না যাওয়া একটি মেয়ে।দারিদ্র্যতা,অবহেলা তাকে ও তার মেধাশক্তি কে দমিয়ে রাখতে পারেনি।সুমির সফলতা ও চাকুরী পেয়ে সাবলম্বি হওয়ার কথা জানতে পেরে ভীষণ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 11 days ago 

আমার করা পোস্টটি আপনার কাছে অনেক ভালো লেগেছে জেনে খুবই খুশি হলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।

 8 days ago 

অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আপনি মাঝে মাঝে শেয়ার করেছেন অবহেলিত মেয়ের জীবন কাহিনী পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে অবহেলা জিনিসটা খুবই খারাপ কাছের মানুষ যদি অবহেলা করে তাহলে খুবই কষ্ট লাগে। সুমির জীবনের গল্পটা এমনই সে কষ্ট করবছে কিন্তু সবাই তাকে অবহেলা করেছে।

 8 days ago 

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ে গঠন মূলক মতামত প্রকাশ করার জন্য।

 8 days ago 

সু স্বাগতম জানাচ্ছি

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 65100.88
ETH 3526.71
USDT 1.00
SBD 2.36