বাচ্চাদের বুদ্ধি
আসসালামুআলাইকুম,
সকলে কেমন আছেন? আশা করি ভালোই আছেন,আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমার বাসায় ঘটে যাওয়া ছোট্ট একটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।আপনাদের মনে আছে কিছুদিন আগে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলাম আমার বড় মেয়ের এক ফ্রেন্ডের আংগুলের কিছু অংশ কেটে গিয়েছিল স্কুলে থাকাকালীন অবস্থায়। এরপর আংগুলের সেই অংশ ফেলে দেওয়া হয়। সেই মেয়েটি কিছুদিন আগে আমাদের বাসায় এসেছিল ওর বোনের সাথে। ওর ছোটবোন আমার ছোট মেয়ের সাথে একই স্কুলে পড়ে। ওরা আসলে অনেকক্ষণ বাসায় থাকে, সকালে আসলে বিকেলবেলায় বাড়ি ফিরে যায়। তারা ছোট্ট একটি ঘটনা ঘটিয়েছে যা আমাকে অবাক করেছে, সেই ঘটনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
আমার বড় মেয়ে স্কুল থেকে তার ফ্রেন্ডকে বাসায় আসতে বলেছিল।এরপর হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে ওঠে। আমাকে কিছুই বলেনি, গিয়ে দেখি ওর ফ্রেন্ড ও তার ছোটবোন এসেছে। আর কাউকে দেখছিলাম না, কে ওদের দিয়ে গিয়েছে তাও জানিনা। পরে শুনলাম ওদেরকে দেখাশোনা করে যে সে দিয়ে গিয়েছে। ওর আম্মু ওদের সাথে থাকেনা, শুধু বাবা থাকে।আর কেউ একজন ওদের দেখাশোনা করে, আমি জানিনা সে তাদের কি হয়। কিন্তু যেই হোক বাসায় বাচ্চা দুটিকে দিয়ে গেল, কিন্তু কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। বুঝলাম না কেমন দায়িত্ব তাদের? আমার ছেলে মেয়ে হলে আমি কখনোই কারো বাসায় এভাবে না বলে দিয়ে যেতাম না। শুধু আমি না,আমার মনে হয় কেউই এই কাজ করত না। সব সময় তারা যখন আসে তখন এভাবে দিয়ে যায়, আবার নেওয়ার সময় নিয়ে যায় আমার সাথে দেখা না করে, কথা না বলে। অথচ তাদের সাথে আমার কখনো দেখা বা কথা হয়নি।
তারা বাসায় এসেছিল দুপুরে খাওয়ার একটু আগে। প্রবলেম হচ্ছে ওরা আমাদের খাবার এভাবে খেতে পারে না। বাসায় মাংস রান্না করা ছিল, মাছ রান্না করা ছিল কিন্তু কোনটাই তারা খেতে চায় না। একটু টেস্ট করালাম মাংস খেতে পারে কিনা? কিন্তু খেতে চাইলো না, জানি না তারা কিভাবে খায়? এর আগে যখন এসেছিল তখন প্লেইন পোলাও রান্না করে দিয়েছিলাম তখন খেতে পেরেছিল, সাথে চিকেন কোরমা ছিল। কিন্তু এখন ডিফারেন্ট মাংস ছিল, ওরা ইন্টারেস্টেড ছিলনা, বলছিল স্পাইসি। বেশিরভাগ ইংলিশ পিপুল স্পাইস খেতে পছন্দ করে না।তাই ডিম পোচ করে দিলাম তখন শুধু ডিম দিয়ে ভাত খেয়ে উঠলো। আগে থেকে জানলে হয়তো অন্য ব্যবস্থা করতে পারতাম, কিন্তু হঠাৎ করেই তারা এসেছিল। যাইহোক মোটামুটি তারা খেতে পেরেছিল দুপুরে। এরপর ঘরের অন্যান্য সুইট জাতীয় খাবার গুলো খেয়েছিল।
এরপর প্রায় ছয় ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে ওরা বাসায় সকলে মিলে খেলছিল। হঠাৎ করে তাদের আর ভালো লাগছিলো না, বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিল কিন্তু যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম ছিল না।ওদের কোন ফোন নাম্বার জানা ছিল না। এরপর মেয়ে দুটি রেডি হয়ে রাস্তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদেরকে কখন নিতে আসবে সেই অপেক্ষায়। আমাকে না বলেই তারা একা একা চলে গিয়েছে রাস্তায়। এরপর আমার ছোট মেয়ে আমাকে এসে বলছে ওরা বাইরে অপেক্ষা করছে, আর কান্না করছে যাওয়ার জন্য।আমি তখন বললাম ওদেরকে বল আমি তাদেরকে ডাকছি। ওদের খুব ভয় হচ্ছিল যদি ওদেরকে না নিয়ে যায়। তখন আমি তাদেরকে সান্ত্বনা দিলাম অবশ্যই তোমাদেরকে নিতে আসবে, আর না নিতে আসলে সমস্যা কি? আমার বাসায় থেকে যাবে। কিন্তু তখনও তাদের মন খারাপ ছিল। আমি তখন তাদেরকে বললাম তোমরা সকলে মিলে খেলতে থাকো, খেলতে খেলতে দেখবে চলে আসবে এই বলে আমি অন্য রুমে চলে যাই।
এরপর আমাদের তখন ছয়টা বাজে, সন্ধ্যা লেগে গিয়েছে অলরেডি। তখন তাদের গার্জিয়ান এসেছে তাদেরকে নিতে। আবার নেয়ার সময় আমাকে না বলেই নিয়ে চলে গেল। কি অদ্ভুত তাইনা? আমি দেখলামও না কে দিয়ে গেল আর কে নিয়ে গেল। নেয়ার সময় আমি ওয়াশরুমে ছিলাম। ওরা আমাকে প্রথমে বলেছিল আটটার সময় ওরা বাসায় ফিরবে কিন্তু হঠাৎ করে ছয়টার সময় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়। আমি তখন আমার বড় মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলাম ওদের আটটার সময় যাওয়ার কথা কিন্তু ছয়টার সময় কেন নিয়ে গেল? তখন আমার বড় মেয়ে বললো “ও কান্নাকাটি করছিল তাই তোমার ফেসবুকে গিয়ে ওর গার্জিয়ান কে সার্চ করে বের করেছি। এরপর টেক্সট করে বলেছি আমি ওর ফ্রেন্ড ও বাসায় যাওয়ার জন্য কান্না করছে”। যাকে টেক্সট করেছে সে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে নেই, আমি তাকে চিনিও না।পরে আমার মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখি ওর টেক্সট। আমি তো অবাক! এই বুদ্ধি আমার মাথায়ও আসেনি। বাচ্চাদের কি বুদ্ধি চিন্তা করুন যোগাযোগের কোন মাধ্যম না পেয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে।অথচ ও কোনদিনও আমার ফেসবুকে যায়না। যাই হোক তাদের বুদ্ধি কাজে লেগেছিল। যোগাযোগ করার সাথে সাথেই পনের বিশ মিনিটের মধ্যেই চলে এসেছিল তাদেরকে নিয়ে যেতে।
Photographer | @tangera |
---|---|
Device | I phone 13 Pro Max |
বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন।আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে।
পরবর্তীতে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।
ধন্যবাদ,
👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :
VOTE @bangla.witness as witness
OR
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমার পোস্টটি কষ্ট করে পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
হ্যাঁ আপু,আপনার পোষ্টে পড়েছিলাম বাচ্চাটির আঙ্গুল কেটে যাওয়ার ঘটনা।তবে যে নামিয়ে দিয়ে গেল বাচ্চাদের আপনার বাসার সামনে সে একবার ও বলে গেল না এটা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয় ।আবার তাদের মা ও থাকে না।যাক তাও ভালো শেষমেশ কিছুটা খেতে পেরেছিল।সত্যিই আপু আপনার বড়ো মেয়ের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পর ও বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছিল না, কেমন গার্জিয়ান!ধন্যবাদ আপু।
আমারও তো একই প্রশ্ন আপু এ কেমন গার্জিয়ান? অনেক ধন্যবাদ তোমাকে কষ্ট করে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।
আসলে আপু, এখন বাচ্চারা অনেক বেশি স্মার্ট। বিশেষ করে নেট দুনিয়া য় এখন ওরা অনেক বেশি নিত্য নতুন কিছু শিখতে পারে। এটা ভালই হয়েছে আপু ওর বুদ্ধিতে কাজে লাগিয়ে বন্ধুরা বাড়িতে ফিরে গেল। কিন্তু আপু বিষয়টা আমার কাছে একদমই ভালো লাগেনি। কারণ আপনিও তাদেরকে চেনেন না আপনাকেও তারা চেনে না। অথচ তারা তাদের মেয়েদেরকে দিয়ে যায় আবার নিয়েও যায়। সত্যিই তো এইভাবে আমরা কখনোই আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে দিয়ে আসতে পারতাম না। তারপর আবার মেয়েদের মা নেই। সত্যি ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ আপু কষ্ট করে আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।
ওই বাচ্চাটির আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছে জেনে খুবই খারাপ লাগলো। অল্প বয়সে হাতের একটি আঙ্গুল হারিয়ে ফেলল । আর এখনকার বাচ্চাকাচ্চারা এরকমই ট্যালেন্টেড হয় । এরা ইন্টারনেট দেখতে দেখতে এতই বুদ্ধিমান হয়ে যায় যে সব পরিস্থিতিতে ম্যানেজ করে নিতে পারে। তাছাড়া বিদেশী বাচ্চারা তো আরেকটু বেশি বুদ্ধিমান হয়। আর এই বাচ্চার মা বাবা মনে হয় দিতে আসে না। কেয়ারটেকার টাইপের কেউ থাকে তার অত গুরুত্ব নেই। না হলে মা বাবা হলে অবশ্যই বাচ্চাকে দিয়ে বলে যেত অথবা নিয়ে যাওয়ার সময় বলে যেত।
আমারও তাই মনে হয়, কেয়ারটেকারই হবে। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
বাচ্চারা আসলেই মাঝেমধ্যে বড়দের মতো ম্যাচিউর আচরণ করে ফেলে। ওরা সরল হয় তবে বোকা না।