প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক (10% beneficiary to @shy-fox)
আসসালামুআলাইকুম,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালই আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি ।আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে তা হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক। মানুষ সামাজিক জীব, কোন মানুষই একা বাস করতে পারে না, অবশ্যই আমাদের বিপদে-আপদে একে অপরের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। আর এজন্য প্রয়োজন আমাদের তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আজ আমি আপনাদের সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
আমার বাসার সামনের প্রতিবেশীর বাসা
আমরা যেখানে বসবাস করি সেখানে আমাদের খুব ক্লোজ কয়েকজন প্রতিবেশী নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। সাধারণত ভালো-মন্দ মিলিয়ে তো মানুষ, সব মানুষ এক রকম হয় না। আমার বাসাযর চারপাশে যে সকল প্রতিবেশীরা রয়েছেন তারা আসলে খুবই ভালো, খুবই মিশুক এবং অমায়িক। কারো সাথে দেখা হলেই খুব সুন্দর মিষ্টি করে একটি হাসি দেয় আর জিজ্ঞেস করে কেমন আছি। এই ছোট্ট একটা হাসি কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা শুধু আমার প্রতিবেশীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা নয়, পুরো ইংল্যান্ডের লোকেরাই কেউ কারো সাথে দেখা হলে রাস্তাঘাটে এরুপ সুন্দর একটি হাসি দেয় এতে আপনার পরিচিত হতে হবে না। আপনাদের একটি ঘটনা বলি, যখন আমি প্রথম এদেশে আসি তখন আমার হাজবেন্ডের সাথে কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন একটি মহিলা আমার হাজবেন্ডের দিকে তাকিয়ে অনেক সুন্দর করে একটি হাসি দিল আমি ভেবেছিলাম তার সাথে পরিচিত এবং জিজ্ঞেস করলাম সে কি তোমাকে চিনে? তিনি বললেন না।তখন আমি বললাম কেন তোমাকে দেখে হাসলেন ? তখন আমার হাজব্যান্ড বললেন এটি এই দেশের মানুষের স্বভাব যা আমাকে খুবই হতবাক করেছিল কারন আমরা বাংলাদেশীরা সাধারণত এ ধরনের কোন অভ্যাসে অভ্যস্ত নই। তখন ভেবে দেখলাম আসলেই এই অভ্যাসটির একটি ভাল দিক রয়েছে। এখন আমিও এই অভ্যাসটি গড়ে তুলেছি। তবে সকল মানুষ তো আর একরকম হয় না কিছু কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।
উপরের এই ফলের গাছটি আমার প্রতিবেশীর, কিছুদিন আগে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম । আজ আমি আমার এই প্রতিবেশী সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। তিনি আমাদের বাসার নিচের তলায় থাকেন। প্রথম প্রথম যখন আমরা এখানে আসি তখন প্রায়ই এই প্রতিবেশীর অভিযোগ ছিল আমাদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে আমার বাচ্চাদের। তার অভিযোগ ছিল বাচ্চারা শুধু লাফালাফি করে। বাচ্চারা তো লাফালাফি করবেই এটি তাদের স্বভাব তারপরও অনেক চেষ্টা করেছি তাদেরকে বুঝিয়ে রাখার জন্য কিন্তু তাতে কোন কাজ হতো না তারা তাদের মত লাফিয়ে যেত এমনকি এখনো তাই । তারপর থেকে আমার এই প্রতিবেশী আমাদের দেখেই মুখ কালো করে থাকতো কখনো কথা ও বলত না, এটি দেখে আসলে খুবই খারাপ লাগতো। তিনি আমাদের দেখে মুখ কালো করে রাখতেন তাতে আমাদের কি, আমরা আমাদের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে গিয়েছি ।যখন আমাদের ঈদের উৎসব আসত তখন আমরা ঘরে যা যা রান্না করতাম তার সবই আমাদের চারিপাশে প্রতিবেশীর সাথে শেয়ার করতাম। আমাদের চারপাশে যারা রয়েছেন তারা সকলেই ইংলিশ। যখন তাদের বাসায় খাবারগুলো দিতাম তখন তারা খুব হতবাক হয়ে যেত আর বলত এত আয়োজন আমরা করি।
সাধারণত তাদের কোন উৎসবে তারা এভাবে কারো বাসায় খাবার দেয়না, আমাদের দেওয়া দেখে তারা খুব হতবাক হয়। যাইহোক এভাবে ধীরে ধীরে আমার এই প্রতিবেশী এখন চেঞ্জ হয়ে গেছে, আগের মতো এখন আর করে না আর কোনো কমপ্লেন করে না দেখলে একটা হাসি দেয়।
এবার একটি ঘটনা বলব আমার প্রথম ফটোগ্রাফির যে বাসাটি দেখছেন সেই বাসার প্রতিবেশীর সম্পর্কে। ওই বাসায় একজন বৃদ্ধা মহিলা থাকেন আনুমানিক তার বয়স হবে ৬৫ বছর, তার মা-ও আছে তার সাথে, দেখে মনে হয় তারা দুই বোন। তার বাসার রান্না ঘরের জানালা দিয়ে আমার বাসার রান্নাঘর দেখা যায়। একদিন আমার বাসার রান্না ঘরের লাইট নষ্ট হয়ে যায় তখন ওই মহিলা জানালা দিয়ে দেখেছেন যে আমার রান্না ঘরের লাইটটা আর কাজ করছে না, তাই তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর বাসার একটি বাল্ব নিয়ে এসেছেন আমার বাসায় দেওয়ার জন্য। দেখুন কত ভালো মনের মানুষ তিনি। আরেকবার আমাদের বাসার বাগানে আমার হাজব্যান্ড একটি বড় গাছের ডাল কাট ছিল তখন তিনি আর তার মা আমার হাজব্যান্ড কে জিজ্ঞেস করছেন , তোমার কী কোনো সাহায্য লাগবে ?আমরা বলছি না তারপরও তারা দুজন এসে আমাদেরকে সাহায্য করেছেন। চিন্তা করুন এই বয়সে তারা কিভাবে আমাদেরকে সাহায্য করলেন, একেই বলে মানবতা।এছাড়াও আশপাশে অন্যান্য যে সকল প্রতিবেশীরা রয়েছেন তারাও খুব অমায়িক, খুব ভালো ব্যবহার তাদের থেকে পাই।
আমাদের সকলেরই উচিত প্রতিবেশীর সাথে খুব ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা। সব সময় এমন ভাবে চলা উচিত যাতে আমাদের কোনো কারণে তাদের কোনো কষ্ট না হয়। কোন সমস্যা হলে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে সমস্যাটা সমাধান করা উচিত । মাঝে মাঝে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া উচিত, গরীব হলে অবশ্যই টাকা পয়সা দিয়ে একটু সাহায্য করা উচিত।
ডিভাইস | আইফোন টেন এক্স ম্যাক্স |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @tangera |
বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন, আশা করি আমার এই ব্লগ টি আপনাদের ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ,
@tangera
আপনার প্রতিবেশীদের সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো আপু।আপনার পরিবারের সবাই এখন কেমন আছেন?আপনার পরিবারের জন্য শুভকামনা রইলো।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা সকলেই ভালো আছি, অনেক ধন্যবাদ আপু তোমার মন্তব্যের জন্য।
ধন্যবাদ আপু প্রতিবেশীর সাথে আমাদের সম্পর্কটি শেয়ার করার জন্য।আমরা হঠাৎ কোন সমস্যায় পড়লে প্রতিবেশিরাই প্রথম ছুটে আসে সাহায্যের জন্য।তাই আমাদের সকল হিংসা-বিদ্বেস ভুলে প্রতিবেশিদের সাথে সু-সম্পর্ক গুড়ে তোলা অতীব জরুরি।আপনাকে আবারো ধন্যবাদ দিচ্ছি আপু সুন্দর একটি কন্টেন্ট উপস্থাপন করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সত্যি মনের দিক হতে যারা বড় তাদেরকে উন্নত বলতেই হবে, হয়তো আমাদের দেশে হলে এমনটা হতো না। আর এটা সত্যি আমরা যদি ইচ্ছে করি, তাদের চেষ্টায় সবকিছু জয় করতে সক্ষম হবো। যেমনটা আপনি করেছেন এবং আপনার প্রতিবেশীরা করছে। খুব ভালো পুরো লেখাটি পড়ে। এই রকম আরো শিক্ষনীয় গল্প শুনতে চাই আপু। ধন্যবাদ
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য।আপনার মন্তব্যে অনেক অনুপ্রেরণা পাই।
প্রতিবেশীদের ভালোবাসা আমার কাছে দায়িত্ব স্বরূপ।
কারণ তারাই আমাদের সুখে দুখে এগিয়ে আসে। তারাই আমাদের ভালোবাসায় আগলে রাখে। আর কেও যদি খারাপ ও হয় তাহলেও তাকে ভালোবাসা দিয়ে ভালো করা যায়।
তারা শুধু জাতি হিসেবেই উন্নত না,মনের দিক থেকেও ভালো তা প্রমাণিত।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।