আজ 'ঈশ্বর'-এর জন্মদিন , আপামর বাঙালির প্রকৃত শিক্ষক দিবস.. ♥️🌸
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আজ ভারতবর্ষের গর্ব পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এর জন্মদিন, জন্মদিনে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ শতকের একজন বিশিষ্ট সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ, এবং মানবতাবাদী। তাঁর জন্ম হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে। বিদ্যাসাগর নামটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায় অসামান্য পারদর্শিতার জন্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন ও কর্ম আমাদের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি ছিলেন রেনেসাঁ যুগের অন্যতম পথিকৃৎ, যাঁর প্রচেষ্টা ও আদর্শ পরবর্তীকালে বহু সমাজসংস্কারককে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর আরও কিছু অবদান ও দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক:
১. শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার:
বিদ্যাসাগর বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষাই সমাজের অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের গুরুত্বকে উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- হিন্দু কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া: তিনি হিন্দু কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সেখানে আধুনিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করেন।
- বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা: শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ও বোধগম্য পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্যোগ নেন। তাঁর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিল।
২. নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন:
বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার জন্য আজীবন কাজ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষাই নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও স্বাধীন করতে পারে। তাঁর উদ্যোগে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তিনি শুধুমাত্র নারীশিক্ষা প্রচলনই নয়, তাদের সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করেছিলেন।
৩. বিধবা বিবাহ আইন:
বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও আইনগত স্বীকৃতি আদায়ের জন্য একাধারে সংগ্রাম করেছিলেন। ১৮৫৫ সালে বিধবা বিবাহের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য তিনি প্রচার শুরু করেন এবং তারই ফলশ্রুতিতে ১৮৫৬ সালে "বিধবা বিবাহ আইন" পাশ হয়। তাঁর এই উদ্যোগ বহু বিধবার জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল।
৪. বাংলা গদ্য ভাষার বিকাশ:
বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্য ভাষার অগ্রদূত ছিলেন। তাঁর লেখা সহজ, সরল, এবং প্রাঞ্জল ছিল, যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য ছিল। বাংলা গদ্য ভাষার প্রকৃত রূপ ও শৈলী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
৫. দানশীলতা ও মানবসেবা:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। তাঁর জীবনের বেশিরভাগ উপার্জিত অর্থ তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে ব্যয় করতেন। দুঃস্থ ছাত্রদের জন্য তিনি স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, এমনকি তাদের জন্য শিক্ষার সমস্ত খরচ নিজেই বহন করতেন।
৬. বাংলা ভাষার ছন্দ ও কাব্যিক শৈলী:
বাংলা ভাষায় ছন্দ ও কাব্যিক শৈলীর নতুন রূপদানেও বিদ্যাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি সংস্কৃত কাব্য ও গদ্যশৈলীর সংমিশ্রণে বাংলা ভাষার গদ্যকে এক নতুন রূপ দেন। তাঁর ‘সীতার বনবাস’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’ প্রভৃতি অনুবাদকর্ম ও সাহিত্যকর্ম এই শৈলীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
৭. মুদ্রণ ও প্রকাশনা ক্ষেত্রে অবদান:
বিদ্যাসাগর মুদ্রণ ও প্রকাশনা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা ও অন্যান্য স্থানে বহু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন, যেখানে আধুনিক ছাপাখানার প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। এর ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, যিনি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর জীবন ও আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে, এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সামাজিক পরিবর্তন আনার জন্য সাহস, শিক্ষা, এবং মানবতাবোধের প্রয়োজন।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আজকের দিনে সব থেকে প্রিয় পোস্ট খানি দেখলাম এতক্ষণে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আপামর বাঙালির কাছে প্রাতঃস্মরণীয়। তাঁর প্রতিটি কাজের সুদূরপ্রসারী ফল আজও বাঙালি সমাজ পেয়ে আসছে হাতেনাতে। কাল আমাদের টিনটিনের সাথে সাথে এই প্রাতঃস্মরণীয় বাঙালির জন্মদিন ছিল। আজও বিনম্র চিত্তে প্রণাম করি তাঁকে। বিধবা বিবাহ থেকে নারী শিক্ষার প্রসার, তাঁর জীবন সম্পূর্ণ মানুষের জন্য নিবেদিত। আপনার পোস্ট দারুণ লাগলো। ভীষণ মূল্যবান একটি দলিল আপনি রচনা করলেন আপনার পোষ্টের মধ্যে দিয়ে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদানের কথা বলে শেষ করার মতো নয়। দিদি আপনি এত সুন্দর করে তথ্যবহুল এই পোস্ট সাজিয়েছেন আর সবার মাঝে উপস্থাপন করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক ভালো লাগলো দিদি।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে আপনি উনাকে নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অত্যন্ত জ্ঞানী একজন মানুষ ছিলেন। উনার মতো এমন জ্ঞানী মানুষ পৃথিবীতে খুবই কম রয়েছে। তাছাড়া নিঃসন্দেহে তিনি অনেক দয়ালু ছিলেন। বেশ ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে। যাইহোক এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
দারুণ সব চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে দিদিভাই। এক কথায় পুরো লেখাটি বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে।
২৬ তারিখ ছিল এই মহান মানুষের জন্মদিন। সত্যি বাংলা সমাজের জন্য উনার ত্যাগ অনেক। উনার জায়গা কেউ নিতে পারবে না। একটা ঘুনে ধরা সমাজকে নতুন একটা পথ দেখিয়েছিলেন উনি। ধন্যবাদ ভাই আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য আপনাকে।