নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভাল আছেন।সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের সঙ্গে "আমার প্রিন্সেপ ঘাটে কাটানো সুন্দর মুহূর্তের ছবি" তুলে ধরলাম।
করোনা আবহের জেরে সেইভাবে আমার বাড়ি থেকে কোথাও বেরোনো হয় না বললেই চলে। তাই ভাবলাম কোথাও দিয়ে ঘুরে আসি। সত্যি কথা বলতে কোথাও যদি ঘোরার প্ল্যানিং আগে থেকে না করি তাহলে সবার প্রথমে মনে হয় গঙ্গার ঘাট থেকে ঘুরে আসি।মিষ্টি হালকা হাওয়ায় ঘরবন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধারে একটু অক্সিজেন নেওয়ার জন্য যেখানে আমায় অমোঘ হাতছানি দেয়। জানিনা কেন গঙ্গার ঘাটে বসে থাকতে আমার অদ্ভুতভাবে মন টানে।কারণে-অকারণে কোন ঘোরার জায়গা না পেলে গঙ্গার ঘাটে ঘুরতে চলে যাই। তাই জন্য গতকাল আমি বেরিয়ে পড়লাম প্রিন্সেপ ঘাটে যাওয়ার জন্য। এই জায়গায় যেন এক অদ্ভূত ভালোলাগা জড়িয়ে আছে আমার,এছাড়া ইতিহাস ও জড়িয়ে আছে। জেমস প্রিন্সেপ এর স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছে এই প্রিন্সেপ ঘাট। হুগলি নদীর তীরে ব্রিটিশ শাসনকালে এই প্রিন্সেপ ঘাট নির্মিত।
১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় হুগলি নদীর তীরে এই ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল।পরবর্তীতে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পন্ডিত জেমস প্রিন্সেপ এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ডব্লিউ ফিজগেরাল্ড তাঁর নিজস্ব নকশাকৃত প্যালাডিয়াম বারান্দা বিশিষ্ট একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন এই জায়গায়। এটি কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি গঙ্গার ঘাট।
আমার বাড়ি থেকে প্রিন্সেপ ঘাট যাওয়ার দূরত্ব ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট এর। বেরিয়ে পড়লাম এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে।আমার বাড়ির সামনে থেকে কিছুটা অটো করে গেলে বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশন।ওখান থেকে মেট্রো করে এসপ্ল্যানেড পৌঁছাইলাম।তারপর সেখান থেকে বাসে করে বাবুঘাট স্টপেজে নেমে গেলাম।সেখান থেকে একটু হেঁটে প্রিন্সেপ ঘাটে পৌঁছালাম।
এখন যেহেতু শীতকাল সূর্য তাড়াতাড়ি ডুবে যায়। ঠিক ৪টার সময় গিয়ে পৌছালাম।একদম ভালো টাইম। সাথে সাথে কিছু ছবি তুলে গঙ্গার ঘাটের সামনে এসে বসলাম।বলতে গেলে অনেক লোক ই ছিল।গঙ্গার ধারে বসে কেমন যেন মনটা একদম শান্ত হয়ে গেল।এখানে আসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। গঙ্গার ধারে এসে বসার কিছু মুহূর্ত পরেই সূর্য অস্ত যেতে লাগল। তখন বিকেল সাড়ে চারটে মিনিট হয়ে গেছিল। সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য জলের মধ্যে যে প্রতিচ্ছবি পরে তাতে মনে হয় যেন জলের মধ্যে সূর্যটা আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে।পড়ন্ত বেলায় সূর্যের আলো গোধূলিলগ্নে যখন জলের উপর লালচে রঙের আঁকিবুকি কাটে,ঠিক সেইসময় নদীর ঘাটে বসে উপভোগ করার আনন্দ একদম অন্যরকম। এই দৃশ্যটা যে আমার কতটা দেখতে ভালো লাগে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝাতে পারবো না। এত সুন্দর মুহূর্তটা আমিও আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম।
ঘাটের সামনে সারে সারে নৌকা দাঁড় করানো থাকে। অনেকে নৌকাগুলো করে ৩০ মিনিটের জন্য গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ করে আসে। আবার অনেকে তাদের জন্মদিন পালন করে। তার জন্য নৌকা আগে দিয়ে বুক করে রাখতে হয়। আর গঙ্গাবক্ষে ৩০ মিনিট ঘোরার জন্য মাথাপিছু ৩০০টাকা করে নেয়।
যেহেতু এই জায়গাটা অনেক পুরানো। সেহেতু নানা ধরনের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। নানা ধরনের পাতাবাহারি পাতা, বটগাছ। বটগাছ দেখতে খুব ভালো লাগে।আমাদের শহরাঞ্চলে তো খুবই কম দেখা যায়।এত সুন্দর এখানে বট গাছের ঝুরি নেমে এসেছে তা দেখার মত।আরো কিছু কিছু গাছ আছে যেগুলো সম্পর্কে আমার খুব একটা স্পষ্ট ধারণা নেই। তাও আমি আপনাদের সামনে সেই ছবিগুলো তুলে ধরলাম। এছাড়া এই জায়গাটা প্রেমিক-প্রেমিকাদের একান্তে কিছুটা সময় কাটানোর আদর্শ জায়গা ও বলা যেতে পারে।
একটু হাঁটাহাঁটির পরেই খাবার জায়গা দেখতে পেলাম। গঙ্গার তীরে আসা মানুষদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে খুচরো নানা পণ্যের বিক্রির পসরা, যেমন- ছোলা,ঝাল মুড়ি, এগরোল বিক্রি হচ্ছে বেশ।এছাড়াও পাওভাজি, ভেলপুরি ফুচকা তো একদম অন্যতম এর মধ্যে।
এত সুন্দর একটা মনোরম পরিবেশে কিছু খাব না সেটা তো হয় না তাই একটা পাওভাজি নিয়ে নিলাম। খাবারটা নিয়ে বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। তার সাথে গঙ্গাবক্ষে কিছু ছবিও তুলে নিলাম।অন্যদিকে হাওড়া ব্রিজের বাতির আলো যখন গঙ্গার জলে খেলা তৈরি করে তখন সেটা এক মোহনীয় রূপ নেয়। গঙ্গা ঘাটকে তখন অপরুপ দেখতে লাগে। খোলা আকাশের নিচে নদীর ধারে বসে থাকার যে আলাদা শান্তি তা মুখে বলে বোঝানো সম্ভব না।
এইবার বাড়ি আসার পালা বেরোনোর পথে সন্ধ্যের প্রিন্সেপ ঘাট এর কিছু ছবি তুলে নিলাম।
বেরোনোর সময় দেখলাম একজন আইসক্রিম বিক্রি করছে। আইসক্রিম আমার বরাবরই খুবই প্রিয়।তাই কিনে নিলাম।তার কিছুক্ষণ পরে দেখলাম এক জায়গায় মাশালা কোলড্রিংস বিক্রি হচ্ছে। দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। একটা মাশালা কোল্ড ড্রিংকস ও খেয়ে ফেললাম।
যেহেতু কিছুদিন আগেই কালীপূজায় গিয়েছিল। তাই জন্য অনেকেই ঠাকুর ভাসান দেওয়ার জন্য বাবুঘাটে এসেছিল।সেখান থেকেও কালি ঠাকুর দর্শন করে নিলাম।
আবার এসো মা
খুব ভালোভাবে গতকাল টা কাটালাম। একদম নিজের মতন করে। কেমন লাগলো তোমাদের অবশ্যই জানিও।
ডিভাইস | Vivo V21 |
লোকেশন | প্রিন্সেপ ঘাট,কোলকাতা |
ফটোগ্রাফার | @swagata21 |
ধন্যবাদ
অসাধারন হয়েছে আপনার পোস্ট টা।
খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনার সুন্দর ছবি এবং লেখার মাধ্যমে।ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নদীর ধারে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন।ছবিগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, মূহুর্তটা বেশ ভালোই কেটেছে আপনার। আপনার সুন্দর মূহুর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিদি।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
অসাধারণ একটা পোস্ট করেছেন দিদি। পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি অনেক সুন্দর করে দিনটি কাটিয়েছেন।গঙ্গা ধারে বিকালের ছবি গুলো অনেক চমৎকার হয়েছে।তার সাথে আপনার গঙ্গার পাড়ের সন্ধ্যা বেলার নদীর মধ্যে নৌকায় ভিতরে ছবি গুলো বেশ দারুন লাগছে। এতে সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দিদি।
বিকেলবেলা গঙ্গার ধার দেখতে অসাধারণ লাগে।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আসলে ইন্ডিয়া অনেক ঘোরার জাইগা আছে। জীবনেও একবার হলেও কোলকাতা ঘোরার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ
দিদি সুন্দর উপাস্থপনা ছিলো।
গংগা নদীর নাম শুনেছি অনেক কিন্তু জাওয়া হইনি
শুভকামনা দিদি
হ্যাঁ অবশ্যই একবার কলকাতায় আসবেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।