"আমার বাংলা ব্লগ"প্রতিযোগিতা -০৯/শীতের পিঠা/চিতই পিঠা এবং দুধ চিতই পিঠা রেসিপি//১০% লাজুক খ্যাঁক-কে
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন। সুস্থ আছেন।আমি সবার প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার বাংলা ব্লগের সন্মানিত এডমিন ও মডারেটরদেরকে এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আজ আমি বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে -০৯ ( "আমার প্রিয় শীতের পিঠা" ) প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।
শীতকাল এলেই বাংলার ঘরে ঘরে এখন পিঠা তৈরীর উৎসব শুরু হয়ে যায়। নতুন চালের গুঁড়ো, নলেন গুড়ের পাকে জিভে জল আনা পিঠা খেতে কার না ভাল লাগে।কিন্তু বাংলার পিঠে তৈরীর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতি ও নান্দনিকতা। পিঠা এমন একটা খাদ্য যা প্রত্যেক পিঠা প্রেমীদের কাছে ভীষণ প্রিয়। পৌষের হিমেল হাওয়া ছাড়া যেমন শীতকে কল্পনা করা যায় না,তেমন পিঠা ছাড়াও বাঙালির ঐতিহ্যকে ভাবা যায় না।
আমাদের বাড়িতে পৌষ মাস ছাড়া পিঠা হয় না।শুধু এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করবো বলে মাকে একটু জোর করে রাজি করিয়ে পিঠে বানিয়ে ফেললাম।তার একটাই কারণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আমার খুবই ভালো লাগে। তার মধ্যে এত সুন্দর একটা প্রতিযোগিতা।আর আরেকদিকে আমারও ভালো হলো তাড়াতাড়ি পিঠেও খেয়ে নিতে পারলাম🤭।
কথায় বলে ' শীতের পিঠা ভারি মিঠা '। শীতকাল মানেই পিঠা-পুলির উৎসব।চিতই পিঠা একটি বাঙালি পিঠা যা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খুবই জনপ্রিয়।বাংলা সংস্কৃতিতে পিঠা-পায়েসের বিশেষ স্থান রয়েছে।এছাড়াও শীতকালে শুধু পিঠা না, খেজুরের রসের চাহিদাও অনেক খানি।এই সময়ে খেজুর গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়।আর এই রসে ভেজানো হয় পিঠা। এই জিনিসটা বেশিরভাগ গ্রামের দিকে লক্ষ্য করা যায়।পিঠা ছাড়া বাঙালির ঐতিহ্য ভাবাই যায় না।এছাড়া পৌষ মাসের একটা দিন 'পিঠা উৎসব 'নামেও পরিচিত,যেটাকে আমরা 'পৌষ সংক্রান্তি' বলে জানি। এই দিন এমন কোনো বাড়ী নেই যেখানে হয়তো পিঠা হয় না বলে। দেশজুড়েই এই সময় পিঠা তৈরীর ব্যস্ততা চোখে পড়ে । বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটা বাড়িতে ধুম পড়ে যায় পিঠা তৈরিতে ।
আমার মনে পড়ে যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আমার ঠাকুমা, বম্মা সবাই পিঠা বানাতেন।সেই পিঠার স্বাদ এখনও মনে আছে। এখন আমাদের বাড়িতে মা, কাকিমারা সকলে মিলে পিঠা তৈরি করে। এজন্য পিঠা তৈরি হলে একটা আলাদাই আনন্দ হয় আমার মধ্যে। আমরা যদি একটু কষ্ট করে ঘরে পিঠা তৈরি করি তবে তার আনন্দটা অনেকটাই বেশি হয়।আর সকলের সাথে পিঠা তৈরির আনন্দটা তো একদমই আলাদা হয়।
আমি প্রায় সব রকমের পিঠাই খুব ভালবাসি।যেমন -পাটিসাপটা,চিতই পিঠা,ভাপা পিঠা, ক্ষীরপুলি, ভাজাপুলি,রসের পিঠা। আরো কিছু পিঠা আছে যেগুলো নামটা এখনও ঠিক জানি না।কিন্তু আমার খুব ভালো লাগে। শীতে সব জায়গাতে ভাপা ও চিতই পিঠার আধিক্য থাকলেও রসের পিঠা গ্রামে বেশি দেখা যায়।খেজুরের রসের সঙ্গে দুধ আর নারকেল দিয়ে রসের পিঠায় যে স্বাদ। তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।পিঠে ছাড়া শীত সত্যিই জমে না।
তাই আজ আমি আপনাদের সঙ্গে চিতই পিঠার রেসিপি ভাগ করে নিলাম।
চিতই পিঠা এমন একটি পিঠা যার মূল উপাদান হলো চালের গুড়ি। চিতই পিঠা অনেকভাবেই খাওয়া যায়। তাই আমি আজ আপনাদের সাথে দুভাবেই খাওয়ার ধরন তুলে ধরলাম।
১) খেজুরের গুড় দিয়ে চিতই পিঠা
২) দুধে ভিজিয়ে অর্থাৎ দুধ চিতই পিঠা
উপকরণের নাম | পরিমাণ |
---|---|
১.গোবিন্দভোগ চাল | ২৫০ গ্রাম |
২.খেজুরের গুড় | পরিমান মতো |
৩.সরষের তেল | সামান্য |
৪.জল | পরিমাণ মতো |
৫.দুধ | ২ প্যাকেট |
৬.নুন | সামান্য |
৭.লোহার খাঁচ | ১ টা |
রন্ধন প্রণালী :
প্রথম ধাপ
• প্রথমে ২৫০ গ্রাম চাল নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখলাম। আমি আগের দিন রাতেই ভিজিয়ে রেখে ছিলাম।
দ্বিতীয় ধাপ
• এরপর জলে ভেজানো চাল গুলোকে মিক্সিতে দিলাম।
তৃতীয় ধাপ
• ভালো করে অল্প অল্প জল দিয়ে মিক্সড করলাম ৫ মিনিট ধরে।
চতুর্থ ধাপ
• এরপর পুরোটা মিহি হয়ে এলে নামিয়ে দিলাম।দেখতে ঠিক এরকম হবে।
পঞ্চম ধাপ
•তারপর একটি পাত্রে ঢেলে রাখলাম।
ষষ্ঠ ধাপ
• এরপর এতে পরিমাণমতো নুন। হ্যাঁ একদমই সামান্য।তারপর ভালো করে মিক্সড করে নিলাম।
সপ্তম ধাপ
• এরপর লোহার খাঁচাটিকে গ্যাসের উপর বসালাম।
অষ্টম ধাপ
• এরপর একটা ছোট কাপড় নিয়ে,কাপড়ের সামান্য অংশে একটু সর্ষের তেল দিয়ে খাঁচের মধ্যে একটু একটু করে মাখিয়ে দিলাম। যাতে চালের গোলাটা লেগে না যায়।
নবম ধাপ
• হালকা গরম হয়ে আসলো।গরম হয়ে এলে এরমধ্যে চালের গোলা দিয়ে দিলাম।
দশম ধাপ
• একে একে এরমধ্যে সমস্ত চালের গোলা গুলো দিয়ে দিলাম।
একাদশ ধাপ
• এরপর অল্প আঁচে রেখে দিলাম। এবং একটি পাত্র দিয়ে তার ওপর ঢেকে দিলাম।
দ্বাদশ ধাপ
• হালকার সেদ্ধ সেদ্ধ হয়ে এলে পাত্রটি তুলে দিলাম। দেখতে ঠিক এরকম হবে।
ত্রয়োদশ ধাপ
• এরপর আস্তে আস্তে পিঠেগুলো কে তুলে একটা পাত্রে রেখে দিলাম।
চতুর্দশ ধাপ
• এরপর আমি আলাদা আর একটি পাত্রে খেজুর গুড় নিয়ে নিলাম।
পঞ্চদশ ধাপ
• ব্যস চিতই পিঠা তৈরি😍।আর এইভাবে আমি পিঠেটাকে খেজুরে ডুবিয়ে পরিবেশন করলাম।
পিঠের সাথে নিজস্বী
❤️এবার আসি দুধ চিতই পিঠা তৈরি করার রেসিপি নিয়ে ❤️:
প্রথম ধাপ
• একটা ছোট কড়াই নিয়ে নিলাম এবং গ্যাসের উপর বসিয়ে দিলাম।
দ্বিতীয় ধাপ
• এতে পরিমাণমতো দুধ ঢেলে দিলাম।
তৃতীয় ধাপ
• এবার হালকা করে গরম করে নিলাম।
চতুর্থ ধাপ
• এরপর দুধের মধ্যে অল্প খেজুরের গুড় দিয়ে দিলাম। আপনারা চাইলে এর মধ্যে অল্প মিঠাই মেড ও দিয়ে দিতে পারেন।
পঞ্চম ধাপ
• এবার দুধ টা ভালো করে ফুটিয়ে অর্থাৎ অল্প ঘন হয়ে এলে চিতই পিঠা গুলোকে একে একে ছেড়ে দিলাম।
ষষ্ঠ ধাপ
• কিছুক্ষণ এইভাবে রেখে দিলাম। দুধ যতটা চিতই পিঠার ভিতরে ঢুকবে খেতে ততোই ভালো লাগবে।
সপ্তম ধাপ
• ব্যস তৈরি হয়ে গেল 'দুধ চিতই পিঠা'।
এখন কর্মব্যস্ততার সময়ে শহরাঞ্চলে পিঠা তৈরি প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে। তাছাড়াও সময়ের স্বল্পতার কারণে ও অনেক বাড়িতে পিঠা তৈরি করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শীতকাল এলেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় মেলা প্রাঙ্গণ গুলিতে শুরু হয়ে যায় পিঠা উৎসব এবং পিঠার মেলা হয়ে থাকে। যেখানে মা-বোনেরা পিঠা তৈরি করে এই মেলা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে।এবং পিঠার স্বাদ উপভোগ করে।এই আয়োজনগুলোয় মানুষজনও ছুটে যায় ঐতিহ্যের টানে।
পিঠা অনেক ধরনের হয় আর পিঠা আমার কাছে বরাবরই খুবই প্রিয়।তার মধ্যে চিতই পিঠা আমার খুবই ভালো লাগেএই কারণে,এই পিঠা যেকোনো কিছুর সাথে খাওয়া যায়।যেমন -খেজুরের গুড়,পায়েস, দুধ ইত্যাদি। এমনি আমি খুব মিষ্টি খেতে ভালবাসি। রোজ একটা মিষ্টি না হলে চলে না।এককথায় আমাকে মিষ্টি প্রেমী বলা চলে। আর চিতই পিঠা এত সহজ ভাবে করা যায় তার জন্য আমার খুব ভালো লাগে। এর সাথে অল্প পায়েস বা খেজুরের গুড় যদি হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই।এছাড়া নিজের ঘরে বানানো পিঠার মধ্যে আলাদা একটা স্বাদ অনুভব করা যায়।
পিঠের সাথে নিজস্বী
আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনি আপনার রেসিপিটা আমাদের সাথে সুস্বাস্থ্য পরিবেশে উপস্থাপনা করেছেন। আর এইরকম ভাবে কখনো চিতাই পিঠা খাওয়া হয়নি। তাই দেখে নতুন একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। আর যাই হোক সব মিলিয়ে আপনার পোস্টে অনেক সুন্দর ছিল। তাই আমার পক্ষ থেকে আপনাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। একদিন এইভাবে চিতই পিঠা করে খেয়ে দেখবেন। খেতে খুবই সুন্দর লাগবে।
আপু আপনার পিঠাটি দেখে জিভে পানি এসে গেছে, এই পিঠা আমার খুবই পছন্দের, অনেক দিন খাওয়া হয়না।এই পিঠাকে আমরা ভিজানো পিঠা বলি।অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর এই রেসিপিটি জন্য।
আমারও ভীষণ পছন্দেরএই পিঠা। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
আপনার পিঠা বানানো দেখে আমার খুব খেতে ইচ্ছা করছে। আমি দুধ চিতই খুব পছন্দ করি। অনেক দিন খাই না। আপনার দুধ চিতই বানানো খুবই সুন্দর হয়েছে। এবং আপনার উপস্থাপনা ও অনেক সুন্দর ছিল। সব মিলিয়ে আপনার পোস্ট অনেক সুন্দর ছিল। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো দিদি।
যদি কখন ও সুযোগ হয় আপনাকে আমি এই পিঠা অবশ্যই করে খাওয়াব। আমারও এই পিঠা খেতে খুবই ভালো লাগে। অনেক ধন্যবাদ দিদি আপনাকে এত সুন্দর একটা গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
আপনার তৈরি রেসিপি টি অনেক লোভনীয় o সুন্দর হয়েছে।একন শীত এর আমেজ চলে এসেছে একন শুধু পিঠা। ধন্যবাদ এত ভালো একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
দুধ চিতই পিঠা অনেক জনপ্রিয় ও সুস্বাদু পিঠা। আমার ও খেতে খুব ভালো লাগে। আপনি অনেক ধাপে ধাপে অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। অনেক খেতে স্বাদ হয়েছিলো পিঠা দেখে আমার স্পষ্ট ধারণা। অসংখ্য শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।
হ্যাঁ সত্যি অনেক স্বাদ হয়েছিল।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শীতের পিঠার মধ্য চিতই পিঠা সবারই খুব পরিচিত। শীত আসলেই সবখানে রেসিপিটি তৈরি হয়। আপনি সুন্দর ভাবে পিঠা তৈরীর মাধ্যমগুলো তুলে ধরেছেন। সবশেষে পিঠাগুলো দুধে ভেজানো পড়ে খুব লোভনীয় লাগছে। মজার রেসিপি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
চিতই পিঠা আমার খুবই প্রিয় একটি পিঠা। চিতই পিঠা তৈরীর বর্ণনাগুলো বলে আমার খুবই ভালো লেগেছে। পাশাপাশি ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ হয়েছে। আপু আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আপনি খুব সুন্দর চিতই পিঠা বানিয়েছেন। দেখে তো জিভে জল চলে আসলো। দুধ চিতই আমার খুবই পছন্দের একটি পিঠা। আপনার রেসিপি টা দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই অসাধারণ খেতে হয়েছে। আপনার উপস্থাপনা টা খুব সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দিদি আপনার চিতই পিঠা রান্না টা আসলে অসাধারণ হয়েছে আর আমার চিতই পিঠা টা অনেক সুন্দর লাগে খেতে চিতই পিঠা আর মাংস আপনার জন্য শুভকামনা রইল সুন্দর একটা রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
আসলে আমি চিতই পিঠা দিয়ে মাংস কখনো খাইনি।কিন্তু শুনেছি অনেকেই খায়।আমিও ভাবছি একদিন টেস্ট করে দেখব।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক সুন্দর একটি পিঠা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। চিতই পিঠা আমাকেও খেতে অনেক ভালো লাগে আরো ঝাল থাকলে তো কোন কথাই নেই। আপনার পিঠে দেখে জিভে জল এসে গেল।
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পিঠার রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আসলে ঝাল পিঠা কোনোদিন আমার টেস্ট করা হয়ে ওঠেনি।কিন্তু এই প্রতিযোগিতাতে সবার পিঠা বানানো দেখে আমারও খুব ইচ্ছা আছে ঝাল পিঠা বানিয়ে দেখার।কেমন লাগে দেখবো।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।