"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা -১৪ || গৃষ্মকালীন ফল নিয়ে আমার জীবনের বিশেষ মুহূর্ত শেয়ার
আজ - বৃহস্পতিবার
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদেরকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি গৃষ্ম কালীন ফল নিয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বিশেষ একটি মুহূর্ত গল্প।
মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্রময়,ছোট্ট এই জীবনে নানান ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় মানুষের। প্রতিটি দিন যেন সংগ্রামের চলতে থাকে। আর এই সংগ্রামের মধ্যে কখনও কখনও বিশেষ ঘটনা সামনে এসে দাঁড়ায়। ঠিক তেমনি আমার বাংলা ব্লগে অনেক ভাই ও বোন বন্ধুরা তাদের বিশেষ বিশেষ মূহুর্তের কথা শেয়ার করেছেন গ্রীষ্মকাল নিয়ে। আমিও এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে এসেছি যে,আমার জীবনের বিশেষ একটি মুহূর্ত আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আর কথা না বাড়িয়ে আমার জীবনের বিশেষ একটি মুহূর্তের কথা আপনাদের মাঝে তুলে ধরি এবং তার সাথে বর্তমান কিছু ফলের ফটোগ্রাফি নিয়ে।
গৃষ্মকালীন ফল নিয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলেছি। এ ঘটনাটি অনেকদিন আগের। তখন আমি ছোট,বয়স আনুমানিক নয়দশ বছর হবে। আর এই ঘটনাটি মূলত আম কুড়ানোকে কেন্দ্র করে। কারণ আমরা গ্রামের ছেলে, সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলে আম গাছের নিচে চলে যেতাম একত্রিত হয়ে ঝরে পড়া আম কুড়ানোর জন্য। কিন্তু আম গুলো কুড়িয়ে আনার পর লাস্টে যে কি করা হতো তার কোন হদিস ছিল না। আম কুড়ানোর মধ্যে ছিলো সবচেয়ে আনন্দ ও ভালো লাগা। সকল বন্ধু মিলে কাড়াকাড়ি করে আম কুড়াতাম।
আম এর ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
বিশেষ করে আম পাকার কিছুদিন আগে ঝড় বৃষ্টি হয়ে গাছ থেকে অনেক আম পড়ে যায় এটা সকলেরই জানা কথা। তেমনি একটি দিনের ঘটনা। ওই দিনটি ছিল খুবই ঝড় বৃষ্টির দিন। সারা দিন হালকা হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তার সাথে জোরে জোরে ঝড় বয়ে চলছিল। সময়টা ছিল বিকেল তিন থেকে চার টার সময়।
লেবুর ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে, বৃষ্টি টিপটাপ। যেহেতু বিকেল সময়,বাইরে কোন লোকজন নাই।আমি জানছিলাম যে একটি আম গাছের নিচে খুব আম পড়ে, সামান্য ঝড় হলে অনেক আম পড়তো, সেটি ল্যাংড়া আম না হলেও ল্যাংড়া জাতীয় আম গাছ ছিল, খুবই ফাকা জায়গা। সামান্য ঝড় হলে বাতাস আগে লাগে। তাই আমি আমার নিকটে কোন আম গাছের নিচে না যেয়ে, ওই গাছের নিচে গিয়েছিলাম ঝড়ের মধ্যে।
তেতুলের ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
আমি আম গাছের নিচে যেয়েতো হতবাক! ছাতি মাথায় গিয়েছিলাম যেন বৃষ্টি না লাগে। ছাতি মাথায় দিয়ে আম কুড়তে এসেছিল কিন্তু গাছের গোড়ায় এত আম পড়েছে, কোন মানুষের চোখে আসে নাই। তাই আমি সাথে সাথে মাথার উপর থেকে ছাতি সরিয়ে নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করলাম এবং আম কুড়ানোর ইচ্ছে করলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমার হাতে কোন ব্যাগ ছিল না। আমি আমার বড় ভাইয়ের হাতে ব্যাগ দিয়েছিলাম। সে আমার থেকে দূরে ছিল। আমি ছিলাম আম গাছের উত্তরপ্রান্তে আর ভাই ছিল বাগানের দক্ষিণ প্রান্তে।
বেল এর ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
আমি কিছুটা আম-কুড়িয়ে একটি জায়গাতে রেখে ভাইকে ডাকার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তখন আমার মুখ দিয়ে কোন কন্ঠস্বর বের হচ্ছিল না। কেন জানি আমার মুখ আটকে যেতে লাগলো। আমি বারবার চেষ্টা করলাম জোরে জোরে চেঁচিয়ে ভাই ভাই বলে ডাকি। মনে হচ্ছে কেউ জানি শ্বাসরুদ্ধ করে দিচ্ছে। আমি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যেতে লাগলাম। আম রেখে দড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম বাড়ির দিকে।
ডালিম এর ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
আমি যখন দৌড়ানো শুরু করতে গেলাম তখন হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। আমগাছটা ছিল রাস্তা থেকে একটু নিচু স্থানে,আমগাছের পরে ছিল পুকুর। স্থানটি যথেষ্ঠ নিচ ও কচু গাছের বন। আমি রাস্তাতে উঠতে পারলাম না। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে পিছনে গড়িয়ে যেতে লাগলাম। তখন আমার মাথাতে আমের কোন চিন্তা ছিল না। কিভাবে নিজেকে এখান থেকে সেভ করবো সেই চেষ্টাতেই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলাম যেহেতু আমার মুখ থেকে কোন কন্ঠ বের হচ্ছে না তখন। আর বুঝতে পারছেন সবে বৃষ্টির সময় অন্ধকার হয়ে আসে। ঝড় চলছে তার নিজ গতিতে আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি কমছে বাড়ছে। এমন একটি মুহূর্ত আমার জীবনে দ্বিতীয় বার আসে নাই।
ডালিম এর ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
আমি খুব চেষ্টা করে হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তার দিকে আসতে থাকি। তবে আমি পড়ে গিয়েছিলাম রাস্তায় উঠতে। সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসি। আসতে পথে আমাদের খোলাতে পিছলে পড়ে যায় এবং আর এক আছাড় খায়। সেখান থেকে উঠে দৌড়াতে দৌড়াতে ভাইয়ের নিকট হলাম। ভাইকে বলব কিন্তু কোন বলার ভাষা মুখ আসছিল না। আকার-ইঙ্গিতে শুধু গাছ পানে আংগুল দিয়ে ইশারা করছিলাম। আমি ভাই কে বুঝাতে চেয়েছিলাম যে আমার ওখানে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে ।
আতা ফলের ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
ভাই ভাবছিল ওই গাছের নিচে অনেক আম পড়েছে তাই আমার মুখ থেকে কথা বের না হতে সে আমাকে সাথে নিয়ে দৌড়ে সেই গাছের নিচে আবার গেল। আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। যেহেতু ভাইয়ের সাথে আমাকেও যাওয়া লাগলো কিন্তু মনের মধ্যে যথেষ্ট ভয় কাজ করছিল আবার কিছুটা সাহস হচ্ছিল যে ভাই আমার সাথে। রীতিমতো আম গাছের নিচে ভাই জেয়ে সাথে সাথে হতবাক। এত আম পড়েছে সুমন! কেউ আসার আগে ব্যাগে পুরতে থাক। বাজার করা বড় ব্যাগ লোড হয়ে গেল কিন্তু আমি শেষ হলো না।
ফলের রাজা কাঁঠালের ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
ভাইয়া আর আমি সেই আমগুলো ব্যাগ ধরে বাড়িতে নিয়ে এলাম। বাকি আমগুলো আনতে যাওয়ার পালা। ভাই খুবই তাড়াহুড়ো করছে, আমি তো শরীরের দুর্বলতা কাটানোর জন্য বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আমার মুখে কণ্ঠ ভেসে আসলো। আমি সবাইকে বললাম যে আমার কি অবস্থা হয়েছিল। আমার ভাই তো ভয় পেয়ে গেল, আর সেই আম গুলো আনার কথা তো দূরে থাক ভয়েতে টিউবলের পাড়ে নিজের হাত পা ধুতে গেল না। তবে ঝড় বৃষ্টি যখন থেমে গিয়েছিল রাস্তায় মানুষ চলাচল শুরু হলো একদম দিন শেষ টাইম। অনেকেই আম কুড়ানোর উদ্দেশ্যে গাছের নিচে এসেছিল। আমরা সেখানে যেয়ে দেখলাম অন্যেরা বাকি আমগুলো কুড়িয়ে ফেলেছে। এরপর থেকে আর কোনদিন এমন ঝড়-বৃষ্টির মুহূর্তে আম কুড়ানোর উদ্দেশ্যে বাইরে একা যায় নাই।
লেবু এর ফটোগ্রাফি।
Photography device: itel vision 1
লোকেশন
আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে বুঝতে ও শিখতে পেরেছেন। পোস্টটি উপস্থাপনা কেমন ছিল এবং এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো।
💖আমার পরিচয়💖
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)@sumon09
বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করে,চাকরি প্রত্যাশায় বেকার-স্টাডিতে! নিয়োজিত। ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। বাংলার স্টুডেন্ট হওয়াই,রূপ রস ছন্দ অলংকার সম্মিলিত কবিতা লেখা যথেষ্ট পারদর্শী কিন্তু লেখার প্রয়োজন বোধ করি না পূর্বে চর্চা করতাম এখন ছেড়ে দিয়েছি।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
💖💞💞💖
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | itel vision 1 |
ক্যামেরা | Al dual camera-8mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৫ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোষ্টে,ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
---|