মাধবীলতা ফুল গাছ লাগানোর গল্প
আজ - বুধবার
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
হ্যালো বন্ধুরা,
আমি যখন অতি ছোট ছিলাম তখন পাড়াগাঁয়ে খেলতে যেতাম, লক্ষ্য করতাম আমার বন্ধু মারুফদের দোকানের পাশে মাধবীলতা গাছে মাধবীলতা ফুল ঝুলছে। সারা গাছ জুড়ে অসংখ্য ফুল ঝুলে থাকত যা দেখতে খুব ভালো লাগতো। ঠিক তখন থেকে মাধবীলতা ফুল আমি চিনে আসছি এবং একদম প্রাথমিক কালে এই ফুলের নাম জানতাম না, তবে যখন আমি জানছিলাম এ ফুলের নাম মাধবীলতা আর এই গাছগুলো খুব সহজেই লাগিয়ে ফুল গাছ তৈরি করা যায় তখন থেকে আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল মাধবীলতা ফুল গাছ আমার বাড়িতে লাগাবো। আমি লক্ষ্য করতাম মারুফদের দোকানের পাশে বড় মাধবীলতা ফুল গাছের চারিপাশে অসংখ্য ছোট ছোট মাধবীলতা ফুলগাছ হয়ে রয়েছে। তখন শুনেছিলাম মাধবীলতা ফুল গাছের শিখর থেকে দূর দূরান্তে এমন চারা তৈরি হয় আর গাছ সৃষ্টি হয়। আমি একদিন মনে করলাম যে এখান থেকে একটি মাধবীলতা ফুলের চারা তুলে নিয়ে যাব এবং আমাদের বাড়িতে লাগাবো। তবে তখন আমার জানা ছিল না কোন সময় ফুলের গাছ রোপন করতে হয়। যাইহোক সেই স্থানটা ছিল বোন জঙ্গলে ভরা। পাশে কয়েকটি তালগাছ আর কয়টি বাসঝাড় ছিল। যাইহোক একদিন আমি ওখান থেকে একটি মাধবীলতা ফুল গাছের চারা হাত দিয়ে টান দিয়ে তুললাম তবে গাছের শিকড় ছিল না বলে চলে। তবুও সে গাছটি আমি নিয়ে এসে আমার বাড়ির একটি স্থানে লাগিয়ে দিলাম। যাইহোক আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে সেই গাছটি হয়ে গেছিল। হয়তো সে সময়কালটা আজ থেকে ২০ বছরের বেশি আগে। তবে আমি বাড়িতে যেই স্থানে মাধবীলতা চারা টি লাগিয়েছিলাম, সেখানে মাধবীলতা গাছটি অনেক ঝাকড়া ও ফুল ধরা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা গেল বাড়ির একটি প্রাচীরের জন্য সেই স্থান থেকে গাছ কেটে ফেলা হতো আশেপাশে অনেক চারা গাছ হতে থাকলো আমি সেই চারা গাছের মধ্য থেকে একটি চারা গাছ আমার বাড়ির অন্য স্থানে তুলে লাগালাম। এখন সেখানে মাধবীলতা ফুল গাছ রয়ে গেছে। আমি বাড়ি থেকে মাধবীলতা ফুলের চারা বেশ কয়েকটি তুলে নিয়ে স্কুলে গেলাম।। আমাদের বাড়িতে আমার বড় ভাই বিদ্যুৎ তার বিদ্যালয় অনেক ছেলে মেয়েকে ইংরেজি পড়ায়। সে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা সেখান থেকে মাধবীলতা খুলে চারাগুলো তুলে নিয়ে যায় তাই সচরাচর তেমন বেশি একটা চোখে বাধে না মাধবীলতা চারা। তার মধ্য থেকেও যে আমি আর দশটি মাধবীলতার চারা খুঁজে পেলাম এটাই বড় সৌভাগ্য। যদি তুলে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম তখন অনেক ছাত্রছাত্রীরা আমাকে প্রশ্ন করেছিল স্যার এটি কি গাছের চারা হয়তো তারা জানতো না এটা মাধবীলতা ফুলের চারা। আমি আরো উৎসাহ প্রদান করলাম তাদের আমি আমার বাড়ি থেকে ফুলের চারা এনেছি তোমরা পারলে তোমাদের বাড়ি থেকেও ফুলের চারা এনে লাগাবে এখানে। যাইহোক হঠাৎ করে মাথায় জ্ঞান এলো মাধবীলতা তো ঝকড়া হয় অর্থাৎ লতা জাতীয় গাছ তাই এটার জন্য তো বান অর্থাৎ মাচাল লাগবে। তাই ভাবলাম স্কুলের বড় শিশু গাছটির চারিপাশে লাগিয়ে দিলে কেমন হয়। আমি আর মুস্তাফিজুর আলোচনা করে মোটা শিশু গাছটির চারিপাশে চারাগুলো লাগিয়ে দিলাম। মাধবীলতা গাছের চারাগুলো লাগানোর পর লক্ষ্য করলাম কয়েকটা গাছ নষ্ট হলেও মোট ছয় টি গাছ নষ্ট হয়নি। মুস্তাফিজুর আমাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করত ভাই এই ফুল কাছে ফুল কোন কালে আসবে। আমি বলতাম ছয় মাসের মধ্যেই মাধবীলতা গাছে ফুল ধরে যাবে। এই গাছের নিচ থেকে খুব বড় বড় মোটা কুশি উপর পানে উঠে আসে আর গাছ বৃদ্ধি পায়। ঠিক আমার কথায় সত্য হল যখনই বৃষ্টি পড়া শুরু হলো গাছগুলো আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকলো। ছয় মাসের মধ্যে গাছগুলো অনেক বড় হয়ে গেল। আমি মুস্তাফিজুর কে বলেছিলাম শীত চলে গেলেই দেখবে এই গাছগুলো আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফুল ধরা শুরু হয়ে যাচ্ছে। তারা একদম একথা বিশ্বাস করতে পারছিল না আর মনে করেছিল হয়তো গাছ অনেক ঝাকড়া না হওয়া পর্যন্ত গাছের ফুল আসবে না। তবে এখন দেখা যাচ্ছে ইনশাল্লাহ প্রত্যেকটি গাছে কমবেশি মাধবীলতা ফুলের কলি আসছে। আর এ দেখে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক শিক্ষক সবাই খুশি। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আশা করেছিলাম শিশু গাছে এই মাধবীলতা ফুল গাছ ছড়িয়ে দেব কিন্তু এবার বর্ষায় একটি বাজ পড়ে শিশুর গাছ মারা যাচ্ছে। তবে যাই হোক আজকে যে সেই ছোটকালে তুলে আনা মাধবীলতা গাছের চারা থেকে এই পর্যন্ত মাধবীলতা গাছের সেই বংশবিস্তার করাতে পেরেছি এতে নিজের কাছে অনেক ভালোলাগা কাজ করে। আপনারা ভিডিওটি ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে দেখলে বুঝতে পারবেন কতটা মনোমুগ্ধকর মাধবীলতা গাছ হয়ে গেছে এখানে। আশা করি এই স্কুলের ফুলবাগান থেকে দীর্ঘদিন এই মাধবীলতা গাছ বংশবিস্তার করে চলবে, স্কুলের বিভিন্ন প্রান্তে এবং সেখান থেকে হয়তো অনেক চারা অনেকেই সংরক্ষণ করে তাদের বাসায় লাগাবে এবং আমার সেই ছোটবেলার মাধবীলতা ফুল গাছ তোলার থেকে এর বংশবিস্তার লাভ করবে। তবে একটা বিষয় মনের মধ্যে বেশি ঘোরপাক করছে, তখন কি জানতাম যখন মাধবীলতা ফুলের চারা তুলেছিলাম সেই থেকে এই পর্যন্ত এসে দাঁড়াবে? তার বংশবিস্তার সত্যি বড়ই অবাক করা অনুভূতি। আশা করব এই মাধবীলতা ফুল গাছগুলো দীর্ঘদিন টিকে থাকবে আমাদের স্কুলের আঙিনায়।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক । ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।
ভাইয়া আপনি মাধবীলতার অনেক বড় বংশবিস্তার ঘটিয়েছেন। বন্ধুর বাড়ি থেকে আপনার বাড়ি আবার আপনার বাড়ি থেকে স্কুলের ফুল বাগানে ভালোই বংশবিস্তার করেছে। তবে যাই বলেন আমারও খুব প্রিয় একটি ফুল। আমাদের বাড়িতেও বিশাল বড় একটি মাধবীলতার গাছ ছিল কিন্তু নতুন করে ঘর করতে কেটে ফেলা হয়েছে। তবে মাকে বলেছি আবার সেই গাছ গেটের সামনে লাগাতে তাহলে দেখতে খুবই সুন্দর লাগবে। যখন সম্পূর্ণ গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায় তখন সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ধন্যবাদ মাধবীলতা গাছ লাগানোর সুন্দর গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।