আমরা পরিশ্রমী || দুই বন্ধু মিলে পুকুরপাড়ে সবজি চাষ - চতুর্থ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230317_141527_749.jpg



হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি আমার সবজি চাষের চতুর্থ পর্ব নিয়ে। যেখানে আপনারা খুঁজে পাবেন সবজি চাষের আনন্দঘন মুহূর্ত এরপর অতি কষ্ট লাগা বিষয়। আশা করি মনোযোগ সহকারে পড়লে হয়তো এই থেকে আপনারা অনেক কিছু ধারণা পাবেন এবং নিজেদের লাইফে যে কোন প্রকার কষ্ট লাগার মুহূর্তটা দূর করে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার উৎসাহ পাবেন। তাই চলুন আর দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনার পর্যায়ে চলে যাওয়া যাক।


ফটোগ্রাফি সমূহ:


সবজির বীজ লাগানোর পর প্রায় ১০ দিন অপেক্ষা করলাম, কবে বিভিন্ন প্রকার সবজির গাছ বের হবে তখন খুবই ভালো লাগবে, মনে আনন্দ জাগবে। যেহেতু যথেষ্ট পরিশ্রম করা হয়েছে। প্রচন্ড রোদ গরমে পুকুর পাড়ে এসে সবজি গাছ লাগানোর জন্য থানা করা হয়েছিল, এরপর দুই বন্ধু মিলে একদিকে জৈব সার উত্তোলন করে খুবই কষ্ট করে মাঠের পুকুরে নিয়ে যাওয়া, এরপর প্রত্যেক থানায় জামা অথবা কাগজ বিছিয়ে দিয়ে তারপর জৈব সার পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢেলে দিয়ে রোদে শুকানো এরপর সাবমারসিবল পাম্প দিয়ে ভিজিয়ে পানি শুকিয়ে তারপর সেখানে পানিতে ভিজিয়ে রাখা বিভিন্ন সবজির বীজ লাগানো হয়েছে আর এভাবেই একাধিক ধাপ পার হয়ে এসে গেছি অপেক্ষার মুহূর্তে সবজির গাছ বের হওয়া। এই মুহূর্তটা সৃষ্টিকর্তার কাছে সবচেয়ে বড় চাওয়া যেন সঠিকভাবে সবজি গাছের বীজ জন্মায় এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে এই মুহূর্তে আমার পুকুরপাড়ে আশাও যেন বন্ধ হয়ে যেতে থাকলো। একদিকে পরীক্ষা অন্যদিকে স্কুল এছাড়াও অনলাইনের কাজ বিভিন্ন কারণে পুকুরে আসা দু চার দিন করে বন্ধ হতে থাকলো। যেহেতু এই মুহূর্তে মাছের খাবার দিতেও তেমন একটা হতো না। যতটুক দিতে হতো বড় ভাই দিয়ে ফেলতো। যাই হোক একদিন বৃষ্টির পর সুযোগ করে মাঠে গেলাম সবজির গাছ বের হয়েছে কি সেটা দেখার জন্য। পথের বিভিন্ন কাদা অতিক্রম করে পুকুর পাড়ে চলে গেলাম। পুকুর পাড়ে উপস্থিত হয়ে লক্ষ্য করলাম এই দৃশ্যগুলো।

IMG_20230317_141623_904.jpg

IMG_20230317_141604_264.jpg

IMG_20230317_141541_390.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স

প্রত্যেকটা সবজির থানায় লক্ষ্য করে দেখলাম খুব সুন্দর ভাবে কয়েকটি করে সবজির গাছ বের হওয়া শুরু হয়ে গেছে। আর এই সুন্দর সবজির গাছ বের হওয়া দেখে মনটা এতটাই খুশিতে ভরে উঠল তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যেহেতু নতুন পদ্ধতিতে সবজি গাছ লাগানো শুরু করেছি ইনশাআল্লাহ নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেই পরিবারের হাতে বিভিন্ন প্রকার সবজি তুলে দেবো দুই বন্ধুর এটাই আশা ছিল। হয়তো অনেকে বলতে পারেন কেন নিচে এই কাগজ অথবা জমা দিয়েছি এটা দেয়ার। প্রধান কারণ ছিল পুকুরপাড়ে প্রচন্ড পরিমান খেড় বা উলু জন্মায়। আর এই আগাছার জন্য কোন প্রকার সবজি গাছটিকে থাকতে পারে না অন্যদিকে পুকুরের উপরের অংশ তাই সবজি গাছ সঠিকভাবে পানি পায় না প্রচন্ড রোদ গরমে শুকিয়ে যায় দ্রুত এবং গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই নতুন এই বুদ্ধিগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছিল যেহেতু আপনারা জানেন দীর্ঘদিন প্রচন্ড রোদ গরম পড়েছিল বৃষ্টি না হয়ে। আর তাই এই সমস্ত কৌশল গুলো অবলম্বন করতে হয়েছিল আমাদের। যাই হোক নতুন এই কৌশলে অনেক সবজি গাছ জন্মিয়ে গেছে যেমন ঝিঙ্গে মিষ্টি কুমড়া শসা ধাড়স সহ আরো অনেক কিছু। তবে আমার বন্ধু মারুফ হালকা পন্ডিতি করে এর মধ্যে কাটোয়া শাক বুনে দিয়েছিল। তাই সবজি গাছের পাশাপাশি এই শাঁকের গাছ জন্মেছিল।

IMG_20230317_141552_711.jpg

IMG_20230317_141531_894.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স

আমি প্রত্যেকটা সবজির থানায় লক্ষ্য করে দেখলাম সবজি গাছগুলো খুব সতেজ এবং সুস্থ সবুজ যেহেতু কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করা হয়েছে তাই গাছগুলো খুব সুন্দরভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে এমনটাই মনে হচ্ছিল। এবার শুধু নিজের দায়িত্ব সবজি গাছ যতদিন বড় না হবে ততদিন আশেপাশের আগাছা দমন করে দিতে হবে,যেন কম্পোস্ট সারের মধ্যে কোন প্রকার আগাছা সৃষ্টি না হতে পারে। আর প্রত্যেক দিন লক্ষ্য রাখতে হবে যখনই মাটির পানি শুকিয়ে যাবে সবজি গাছে হালকা করে সেচ দিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে, যেন গাছগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আরেকদিকে নজর রাখতে হবে যেন গাছগুলো পচে না যায়। পুকুরের পাড়ে আরেকটি সমস্যা, এখানে মাঠে চরা গরু-ছাগল এসে সবজি নষ্ট করে দিয়ে যায়। আমার অবশ্য চারিপাশ তার জাল দিয়ে ঘেরা রয়েছে শুধু বাঁশের খুঁটি গুলো জায়গায় জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে তাই সেগুলো নতুন তা দিয়ে ঠিক করে দিতে হবে। তাহলে বাইরে আক্রমণ থেকে গাছগুলো নষ্ট হবে না। তাই ফটোগ্রাফির মুহূর্তে ভাবছিলাম যেহেতু সবজির কাজ বের হয়েছে এবার দায়িত্ব সঠিক প্রোটেকশন দেওয়া এবং নিয়মমতো পানি দিয়ে আগাছা দমন করে বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া।

IMG_20230317_141517_139.jpg

IMG_20230317_141512_773.jpg

IMG_20230317_141640_501.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স

এতক্ষণ আপনারা বাস্তবতায় এবং সামনে দিনের স্বপ্ন নিয়ে কথা দেখছিলেন। কিন্তু এরপর কি হলো সেটা বলা কিন্তু বড়ই কঠিন ব্যাপার। আমার পরীক্ষা ঘনিয়ে আসলো, সাতক্ষীরায় যাওয়ার জন্য পুকুর পাড়ে যাওয়া তেমন একটা সুযোগ পেলাম না। আর আমি পুকুর পাড়ে না গেলে মারুফও আসে না সবজিতে পানি দেওয়ার জন্য।লাস্ট একদিন সবজি গাছগুলো দেখে এসেছিলাম এক হাত করে বড় হয়ে গেছিল। কিন্তু ওই মুহূর্তে ফটোগ্রাফি করার সুযোগ হয়নি। এদিকে প্রচন্ড রোদ গরম পুকুরের দিকে যাওয়া বড়ই কঠিন। এরমধ্যে আমার আব্বা উঠে পড়ে লাগতে থাকলো আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য। পাঁচ ছয়টা মেয়ে ম্যানেজ করেছে, তার মধ্যে দুইটা ধনে ফ্যামিলির মেয়ে,যে কোন একটা সাথে বিয়ে হয়ে যাবে আমার। এই নিয়ে মানষিক টেনশন। তারপরে পরীক্ষা অন্যদিকে স্কুলের দায়িত্ব আর সবচেয়ে বড় বিষয় প্রচন্ড গরম চলছিল তখন। যাইহোক এরপর পরীক্ষা দিয়ে সাতক্ষীরা থেকে বাসায় ফিরলাম, রোজা শুরু হলো,বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম, এরপর আমার বাঁ পায়ে একটা সমস্যা হল, যার জন্য পনের দিন বেডে ছিলাম। এমন বিভিন্ন কারণে প্রায় এক মাস থেকে ৩৫ বা ৪০ দিন পুকুর পাড়ে আমি যেতে পারিনি। এরপরে সবজি গাছগুলোই পানি না দেওয়ার ফলে সব মারা গেছিল। যখন আমি পুকুর পাড়ে উপস্থিত হলাম দেখলাম গাছগুলো মরে শুকিয়ে পড়ে রয়েছে। আমার এতটাই কষ্ট হয়েছিল গাছগুলোর এই অবস্থা দেখে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধুমাত্র চেয়ে দেখলাম মাঝখানে বাম পাশে একটি থানায় 'একটি ঝিঙে গাছ বেঁচে রয়েছে' তাও আবার আগাছায় পুরা জায়গাটা। আমার বড় ভাইকে বললাম মারুফকে বললাম কেন তারা একটুকু পানি দেওয়ার চেষ্টা করিনি সবজি গাছগুলোতে আমার তো সাবমারসিবল পাম্প রয়েছে নিয়ে যাবে আর পানি দেবে খাটতে তো হচ্ছে না। তারা বলল রোজার সময় নিজের কাজ করে এসে বিশ্রাম নেয়াটাই বড় ব্যাপার। পুকুরে সবজি গাছের দিকে এ প্রচন্ড গরমে কিভাবে তাকায়, যেখানে জান বাঁচানো ফরজ। অবশ্য ঠিক বলেছে যেমন গরম, সেটাই বড় কথা। যাইহোক আমি আর হাল ছেড়ে দিলাম না পুনরায় সবজি গাছ লাগাবো বীজ কিনে আনব সেই আশা করলাম। আশা করি পরবর্তী পর্বে আপনারা তার বাস্তব রূপ পাবেন।

IMG_20230317_141716_808.jpg

IMG_20230317_141721_470.jpg

IMG_20230317_141635_062.jpg

IMG_20230317_141640_501.jpg

IMG_20230317_142741_8.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স

R6TbvATub8MquGoqJZ4SE2UCpaUQzmNnWQxvJGwvYApXWE4KsVzC8vNNXWgtz7hrfoYPSrjupZgj7VtKhrH935ua1PLs4Vr7KiYnVAy3oD...tCNiac63XNuwJJZPbTjHfGPYJH4BJoHgX8HdohSPrSasKvArV8wiiFV7ntYqz66tLZiqG67BKrPAveZFRs3vaqucpJgsaE3qA6Rwasb2fYDx3U5dXGLwwRdyH8.png


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

Sort:  
 last year (edited)

কথায় আছেনা পরিশ্রম সৌভাগের প্রসূতি। আপনারা পরিশ্রমী দুই বন্ধু মিলে পুকুর পাড়ে সবজি চাষ করছেন শুনে খুব ভালো লাগলো। তবে গাছ গুলো মরে যাওয়াতে ফলন আর হলো না। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন সর্বদায় এই কামনা করি।

 last year 

না ভাই এ পর্যায়ে ফলন ছিল না গাছগুলো সব মারা গেছিল তবে একটা গাছ বেঁচে গেছে

 last year 

ভাইয়া আপনারা দুই বন্ধু মিলে পুকুরপাড়ে সবজি চাষের চতুর্থ পর্ব পড়লাম। বর্তমান সময়টা আপনাদের খুশির সময়। এখন চারা গুলো ধীরে ধীরে বড় হবে আর আপনাদের মুখে হাঁসি ফুটবে। মাছ চাষ আর সবজি চাষ একের ভিতর দুই। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65546.28
ETH 2666.01
USDT 1.00
SBD 2.90