হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। ছোটবেলার স্মৃতির পাতা থেকে সুন্দর একটি মাছ ধরার গল্প আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে এসেছি। আশা করি আমার এই গল্পটা আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম, সম্ভবত বয়স হতে পারে ছয় থেকে সাত বছর। তবে ওই মুহূর্তে আমি আর আমার বড় ভাই আপনাদের প্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান একসাথে আব্বার সাথে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যেতাম আমাদের ধানের জমি পার হয়ে কিছুটা বিলের দিকে। যেহেতু আব্বা ধানের জমিতে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেত পড়ে থাকা জায়গাগুলোতে ঘাস বেঁধে থাকতো সেখান থেকে ঘাস কাটার জন্য আর বড় ভাই আমার চেয়ে দুই বছরের বড় তাই আব্বার কাজে সহায়তা করার জন্য যেত। পাশাপাশি আমিও পেছ লেগে কয়েক দিন চলে যেতাম। ঠিক এমন একটা দিন মাঠে প্রায় ধান কাটা হয়ে গেছে। আমাদের এখানে মাঠগুলো এখন পুকুরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে আর ধানের জমি তেমন বেশি একটা নেই কিন্তু তখন সম্পন্ন ছিল ধানের জমি, অন্যান্য ফসল হতো না বললেই চলে। যাইহোক বেশিভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে এমন একটি অবস্থায় আমাদের ধানে জমি পার হয়ে চলে গেল আব্বা আর ভাই যেখানে সুন্দর ঘাস রয়েছে সেই জায়গায়। আমিও তাদের সাথে সাথে। আব্বা আমাকে বলেছিল বাবু তুমি উপরে দাঁড়িয়ে থাকো আর আমি ওখান থেকে ঘাস কাটি তোমার ভাই বস্তা কাছে রাখবে তুমি ছোট মানুষ কাদায় হাটতে পারবা না। আমি নিরবে বসে থাকলাম আর তাদের কার্যক্রম দেখতে থাকলাম। এই মুহূর্তে হঠাৎ আমার আব্বা একটা জমিতে ধান গাছের গোড়া ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে যে গোড়া কাঁচা অবস্থায় পড়ে থাকে ওইগুলা আবার গরুতে বেশি ভাল খায় তাই সেটা কাটার জন্য হালকা একটু কাদা পানি মত রয়েছে তার মধ্যে নেমে কাটা শুরু করছিল। আমি একবার ভাইয়ের দিকে চাই আবার আব্বার দিকে তাকাই। আব্বা ভাইকে বলে বসলো এখানে দেখছি মাছ রয়েছে!
অর্থাৎ ধান কাটা হয়ে গেছে আশেপাশের জমির পানি গুলো শুকিয়ে আসছে। যে জায়গায় আব্বা ঘাস কাটছিল ওই জায়গায় হালকা পানি থাকায় ধান গাছের গোড়া হালকা বিলের গাছ-গাছড়া তার মধ্যে চ্যাং মাছ শৈল মাছ এসে জায়গা নিয়েছে। হঠাৎ আব্বার সামনে একটি মাছ উপস্থিত হওয়ায় আব্বা মাছটা ধরে ফেলল। বুঝতে পারল এখানে হালকা পানি রয়েছে তাই মাছগুলো এসে এখানে অবস্থান করেছে। যেহেতু আব্বা ওখানে ধানের গোড়া কাটছিল তাই পানি নড়ে ওঠায় একটা মাছ লাফ দিয়ে ফাঁকায় বেঁরিয়ে এসেছে। এরপর দেখলাম আব্বা খুব মনোযোগ সহকারে ওই জায়গায় কিছু আবর্জনা বা জঙ্গল যা আছে হাইসু দিয়ে সাফ করার চেষ্টা করছে আর অনেকগুলো চ্যাং মাছ লাফাতে লাফাতে বের হয়ে পড়ল। আব্বা তখনই বুঝে ফেলল হালকা এই পানির মধ্যে অনেকগুলো মাছ রয়েছে যদি চেষ্টা করা যায় ঘাস কাটা বাদ দিয়ে মাছগুলো ধরা সম্ভব। সময় তখন প্রায় বিকেল মুহূর্ত। যেহেতু আমাদের পুকুর রয়েছে তাই বাড়িতে সবসময় মাছ ধরার নাইটু জাল এটা-সেটা থাকতো। আব্বা আমাকে বলে দিল তুমি বাড়ি যাও আর একটা টিনের বালতি ছোট গামলা আর নাইটুটা নিয়ে আনো। দেখলাম আব্বা আর ভাই নেমে পড়ল ওই পানির মধ্যে। যেহেতু হালকা কাদাপানি তাই তাদের কোন সমস্যা হলো না কারণ এমন অবস্থায় আমারও মাছ ধরার অভ্যাস ছিল হতে পারি ছোট কিন্তু ছোট থেকে মাছ ধরার কাজে অংশ নিয়েছি।
আমি আব্বার কথামতো বাড়িতে চলে আসলাম। আসার সময় বেশ জানের মধ্যে হাই শায় হচ্ছিল কখন দ্রুত বাড়ি পৌঁছাব আর ওই জিনিসগুলো নিয়ে যাব। বাড়িতে এসে মায়ের কাছে বললাম মাগো আব্বা মাছ ধরবে একটা ফাঁকা জায়গায় ঘাস কাটছিল সেখানে হালকা পানি তার মধ্যে মাছ রয়েছে। অবশ্য এটা বিলের অংশ তো মা তখনই বুঝে ফেলল আর বললাম এই জিনিসগুলো আব্বা দিতে বলেছে। মা একটু রাগ করে বসলো বলল তোর ভাইকে না পাঠিয়ে তোকে পাঠিয়েছে তুই ছোট মানুষ এগুলো নিয়ে যাবে কি করে মাঠে অতদূর। আমি বললাম দ্রুত দাও নাই দেরি হয়ে যাবে এরপরে আমার আম্মা ওইগুলো আমার হাতে দিয়ে বাড়ির সামনে রাস্তায় তাকিয়ে থাকলো যতদূর চোখ যায় আমাকে দেখতে পায়। আমি তিনটা জিনিস খুব কষ্ট করে নিয়ে আসছিলাম তবে মাঠ তখন ফাঁকা থাকায় কষ্টটা একটু কম হচ্ছিল। এরপর যখন আব্বা আর ভাইয়ের কাছে এসে পৌঁছালাম তখন দেখলাম তাদের মাছ ধরা হয়ে গেছে। আমি যে বালতিটা নিয়ে আসলাম এটাই শুধু কাজে লাগলো। তারা বুদ্ধি জ্ঞান করে ধানের জমির একটা অংশ ছোট্ট করে গর্ত করে নিয়েছে যেহেতু কাদা তাই গর্ত করতে সমস্যা হয়নি আর মাছগুলো ধরেছে ওই গর্তের মধ্যে রেখেছে ভাই বসে বসে মাছগুলো পাহারা দিয়েছে। আমি মাছের দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেলাম এত কাট জাতীয় মাছ এতোটুকু পানির মধ্যে ছিল। আব্বা বললো চারিদিকে পানি ফুরিয়ে গেছে তাই এখানে হালকা পানি আর ঘাসের চাপড়া কাদামাটি থাকাই এর ভেতরে মাথা দিয়েছিল। বেশ ভালই হল এরপর মাছগুলো সে বালতির মধ্যে তুলল খেয়াল করে দেখলাম টিনের বালতি তিন ভাগের দুই ভাগ পরিপূর্ণ হয়ে গেল মাসে। এরপর ঘাসের বস্তা টা ভাই মাথায় নিল। যেহেতু ঘাস কাটতে গিয়ে মাছ পেয়েছে তাই বেশি আর ঘাস কাটা হয়নি সামান্য ঘাস ভাইয়ের নিতে সমস্যা হলো না। মাছের বালতিটা আব্বা হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। পাশাপাশি আমি শুধু হাতে নাইটোজালটা নিয়ে আসলাম যেটার কোন প্রয়োজন হলো না। আমি তো অতগুলো মাছ দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছিলাম আর এতটা আনন্দ বোধ করছিলাম যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এরপর আধা ঘন্টার মধ্যেই আবার আমি বাড়িতে পৌঁছে গেছি, মা আমাদের দেখে বলল এত তাড়াতাড়ি মাছ ধরা হয়ে গেছে। মাছগুলো দেখে মা এতটাই খুশি হল দেখলাম দ্রুত মাছ কোটা শুরু করে দিল। আব্বা মাছগুলো তিন ভাগ করে দিল। এক ভাগ মা রান্না করবে আর এক ভাগ নানীদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে দিয়ে আসবে আর যে মাছগুলো বেঁচে থাকবে এমন চ্যাং;শৈল,ওকোল মাছগুলো একটি নান্দার মধ্যে আব্বা রেখে দিল। পরবর্তী দিন কোটা হবে সেই আশায়, যেহেতু আমাদের ওই সময় ফ্রি ছিল না। আর এভাবেই সেই সুন্দর আনন্দঘন মুহূর্তটা অতিবাহিত হল আমাদের।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন গল্পে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
এটা তো মনে হচ্ছে আমাদের সকলের প্রিয় বিদ্যুৎ ভাই মাছ ধরে আছে। আপনি আর বিদ্যুৎ ভাই যে আপন ভাই। আজকে আমি পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। জি ভাইয়া হালকা পানির মধ্যে অনেক মাছ থাকে। বিশেষ করে ধানের জমির ভিতর। যাক আপনি বাড়িতে মাছ ধরার জন্য জিনিসপত্র নিতে এসেছেন। ছোটবেলায় তা অনেক কষ্ট করে। আসলে মাছ ধরে একটা শখ বলতে গেলে। যাইহোক মাছগুলি নিয়ে আপনি এবং আপনার আব্বু ও বড় ভাই বাড়িতে নিয়ে এসেছেন এবং সেই মাছ দেখে আপনার আম্মু অনেক খুশি হয়েছে এবং মাছগুলি নানার বাসায় পাঠিয়েছেন। বেশ সুন্দর একটি সময় কাটিয়েছেন। অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।
হ্যাঁ হয়তো আজকের পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম
একটা সময় এরকম ধানের জমির থেকে ধান কেটে ফেলার পরেও যদি অল্পস্বল্প পানি জমা থাকে সেখানে অনেক মাছ জড়ো হয়ে থাকত কিন্তু সেই সময় এখন আর নেই এখন জমিতে মাছ দেখাও খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে।যাইহোক আপনার ভাইয়া আপনি ও আপনার বাবা মিলে ভালোই মাছ ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো পুরো গল্পটা পড়ে।
হ্যাঁ ভাই ঠিক ওভাবেই ধরেছিলাম
তাহলে বুঝাই যাচেছ যে আপনি সেই ছেলেবেলা হতেই মাছ ধরার প্রশিক্ষন পেয়ে আসছেন। আর এ জন্যই তো এক্ষন দেখি মাঝে মাঝে মাছ ধরার পোস্ট শেয়ার করেন। ছেলেবেলায় বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা কখনও ভুলার নয়। আর আমার কিন্তু বেশ ভালোই লাগলো আপনার ছেলেবেলার মাছ ধরার গল্প পড়ে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ ছোট থেকে মাছ ধরার অভ্যাস
অনেকদিন পর সেই ছোটবেলার পুরনো স্মৃতিগুলো আবার মনে পড়ে গেল তোমার এই পোস্টটি পড়ে। আসলে সেদিন অনেকগুলো মাছ ধরেছিলাম। বিশেষ করে বড় সাইজের বেশ কয়েকটি শৈল মাছ পেয়েছিলাম। নিঃসন্দেহে সেই ছোটবেলার মাছ ধরার সময়টুকু অত্যন্ত আনন্দের এবং উপভোগ্য ছিল।
হ্যাঁ অনেকগুলো মাছ পাওয়া গেছিল বড় সাইজ
একেই বলে মায়ের মন। আপনি রাস্তা দিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আপনার মা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেছে যাতে কোন সমস্যা না হয়। এত কষ্ট করে জিনিসগুলো নিয়ে গেলেন তার মধ্যে শুধু একটা জিনিস কাজে লাগলো। আপনার বাবা হয়তো মাছগুলো দেখে আর দেরি করতে পারেনি সেজন্য বুদ্ধি করে আপনি যাওয়ার আগেই মাছ ধরে ফেলেছে। ভালো লাগলো আপনার ছোটবেলার কাহিনী পড়ে।
জি আপু মায়ের মন তো ভয়তে থাকবে ছেলে আমার ঠিকভাবে যাচ্ছে কিনা
মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ছোটবেলায় একদিন বিলে মাছ ধরার গল্প। আপনার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে সত্যি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আসলে মামা বিলেতে অল্প পানি জমে থাকে সেখানে মাছ ধরতে সত্যি বেশ ভালো লাগে। আপনি আপনার ভাই এবং বাবা মিলে মাছ ধরেছেন জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ মামা এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ মামা আগেকার দিনগুলোই এমন মাছ পাওয়া যেত
ধানের একপাশে গর্ত খুঁড়ে আপনারা মাছগুলো রেখেছিলেন বেশ সুন্দর একটা আইডিয়া। আপনার ছোটবেলা একদিন বিলে মাছ ধরার গল্পটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। মাছ ধরে এনে আপনি নানার বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলেন শুনে আরো বেশি ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
চ্যাং মাছ ঠেকানোর কৌশল
ধান ক্ষেতে অল্প জল জমে থাকলেই পুঁটি,টাকি মাছ থাকে।আপনি ছোটবেলায় আপনার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে মাঠে গিয়ে মাছ ধরেছিলেন জেনে ভালো লাগলো।মাছ ধরা অনেক মজার বিষয়।তাছাড়া এখন জমিগুলো আপনারা পুকুরে পরিণত করেছেন এটা আসলেই বেশ লাভজনক হবে বলে আশা করছি।ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ আপু অল্প পানি ছিল আর টাকি মাছ বেশি ছিল।