হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি এই গল্পের মাধ্যমে এলাকায় প্রথম পাঙ্গাস মাছ চাষ সম্পর্কে ধারণা পাবেন আর আমার প্রথম পাঙ্গাস মাছ সম্পর্কে অনুভূতি জানতে পারবেন।
২০০৭ সাল আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সবেমাত্র সাইকেল চালানো শিখেছি। ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের পাশের গ্রাম 'ষোল টাকা'পাঙ্গাস মাছ চাষে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর ওই দেখেই ২০০৬ সালের দিকে প্রথম আমাদের পুকুরে ৬০০ পাঙ্গাস দিয়েছিল আব্বা। এরপর মাছের খাবার তৈরি আর বিভিন্ন কারণে ১৬ টাকা গ্রামে উপস্থিত হতে হয় আমাদের। তাই ঠিক সেই কারণেই ১৬ টাকা গ্রামে উপস্থিত হয়েছিলাম আমি। গ্রামটা অতিশয় গোল আর গ্রামের মধ্যে বাইরে চারিপাশে অসংখ্য পুকুর। ঠিক এমনই বিশেষ কারণে উপস্থিত হয়ে হঠাৎ দেখতে পারলাম একটি পুকুরে বড় বড় পাঙ্গাস মাছের খাবার দিচ্ছে দুইজন মিলে আর পুকুরের চারিপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে দেখছে অনেক ছেলে মেয়ে মানুষেরা। আমি তখন সাইকেল রানিং রত অবস্থায়। বেশ ভালো লাগছিল এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে পূর্বে কখনো মাছের এভাবে খাবার দিতে আর খাবার খেতে দেখিনি। কিছুটা সময়ের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
প্রথমত পাঙ্গাস মাছ সম্পর্কে আমাদের ভ্রান্ত ধারণা ছিল। অনেকে বলাবলি করেছিল সেই মুহূর্তে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেছে মানুষে। এই মাছের আকাচোর জাতীয় খাবার খাওয়ায়। আসলে নতুন কোন কিছু এলাকার মধ্যে দেখা গেলে সে বিষয়ে বেশ সমালোচনা সৃষ্টি হয় ভালো মন্দ নিয়ে। আমারও ধারণা ছিল ছোটখাটো তবে বিশ্বাস করতাম না নিজেদের যেহেতু পাঙ্গাস মাছ দেওয়া হয়েছিল ২০০৬ সালে আমরা চাউলের গোড়া সাথে খৈল ভিজিয়ে খাওয়াতাম। এরপর সাত সালে যখন এমন সুন্দর দৃশ্য দেখলাম আমি তো অবাক। তখন অনেক মানুষের কাছে জানতে চাইলাম পাঙ্গাস মাছের কি খাবার দিচ্ছে যেহেতু আমরা কোনদিন এভাবে তৈরি কৃত খাবার খাওয়া হয়নি তখন। তখন কোন একজন বলল প্যাকেটজাত খাবার এগুলা কিনতে পাওয়া যায়। তবে এই খাবারের মধ্যে অনেক উন্নত মানের উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা আমাদের প্রতিনিয়ত খাবারের তালিকায় এত উন্নতমানের খাবার থাকে না। ভুট্টা ভাঙ্গা, গম ভাঙ্গা, ডালের গোড়া, সরিষার খৈল, লবণ, ময়দা,পালিশ গোড়া সহ আরো অনেক কিছুর সংমিশ্রণে এই খাবার তৈরি হয়। আর সেই থেকেই পাঙ্গাসের খাবার সম্পর্কে ধারণা পেলাম। আমরাও পাঙ্গাস মাছ চাষ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হয়ে গেলাম।
পুকুর পাড়ে ঠিক এমন সুন্দর করে মাচা তৈরি করা রয়েছে, তার উপর দুজন বসে। চারি পাশে খাবার ছিটাচ্ছে ভাসমান খাবার। মাছগুলো ভেসে ভেসে এমন লাফিয়ে খাচ্ছে যেন রাস্তা কাঁপিয়ে ফেলছে এমনটা মনে হচ্ছিল। আর কি জোরে পানির শব্দ। যেহেতু প্রথম দুই তিন বছর চাষ শুরু হয়েছে এই গ্রামে, তাই মানুষজন তখন থেকে এভাবেই জড়ো হয়ে দেখত। যেমন গ্রামে একটি হাতি আসলে কিছু কিছু মানুষ দেখার জন্য অনেক মানুষ জড়ো হয়। এরপর বেশ তথ্য জানতে পারলাম প্রথমত যশোর থেকে পাঙ্গাস মাছের চাষ শিখে এসেছিল গ্রামের একজন জেলে, যার নাম হবি-জেলে। ২০১০-১১ সালের দিকে উনার সাথে আমার বেশ সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যাইহোক এরপর মাছের খাবার বিষয়ে সমস্ত সঠিক ধারণা পদ্ধতির বিষয় উনি আমাদের এলাকায় এনেছিলেন। আর উনার মাধ্যমে আমাদের এলাকায় পাঙ্গাস মাছের বিস্তার ঘটে। তবে প্রথম পাঙ্গাস মাছের খাবার দিতে দেখায় আমি এতটাই অবাক হয়েছিলাম যেন, সেই দিনের পর থেকে যত কিছু দেখেছি না কেন স্মরণে নেই কিন্তু ওই দিনটা আজ পর্যন্ত আমার স্মরণে রয়ে গেছে। একদম মনে হয় সেই দিনের কথা। মাছ গুলোর সাইজ ছিল দেড় কেজি ২ কেজি। তবে আশ্চর্যের বিষয় সে সময় যে মাছের পিছনে ১ লাখ টাকা খরচ হতো সেই জায়গায় এখন তিন লাখ টাকা খরচ হয়। এরপর 2012 সালের দিকে হবি জেলে মোটরসাইকেল রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। তবে নতুন উদ্যোক্তা, এলাকার উন্নয়নে বেশ সুন্দর ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। উনার হাত ধরে এই এলাকায় পাঙ্গাস মাছ চাষের বিস্তার ঘটে। পাশাপাশি অনেক মানুষ ফিশারম্যানের রূপান্তর হয়। এরপর থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমরাও মাছ চাষে অনুপ্রাণিত হয়।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ। |
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
বর্তমান সময়ে জিনিসপত্রে যে দাম বেড়েছে তাতে মাছ চাষের দামতো বাড়বেই। তাছাড়া মাছের যখন এরকম খাবার ছিটানো হয় তখন মাছগুলোর খাওয়া দেখতে খুব ভালো লাগে। ঐ লোকটি মারা গেলেও ওনার মাধ্যমে অনেকেই হয়তো এই চাষ পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়েছে। বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন উনি। যাই হোক ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে।
উনার মাধ্যমেই তো আমাদের এলাকায় মাছ চাষ শুরু হয়েছে আপু। আর আমাদের মত মানুষেরা পাঙ্গাস চাসে অবগত হয়েছে
মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন প্রথম পাঙ্গাস মাছ চাষ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা। আসলে প্রত্যেক চাষের সম্পর্কে প্রত্যেক মানুষ পিছনে কিছু অভিজ্ঞতা থাকে। আপনি একদম ঠিক বলেছেন মামা আমারও যখন পাঙ্গাস মাছ চাষ করতাম প্রথমে তখন বিভিন্ন ধরনের খাবারের মিশ্রণে নিজে নিজেই খাবার তৈরি করতাম এটা কিন্তু বেশ দারুন। আপনার শেয়ার করা পোস্টি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ মামা।
তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম মামা।
খুবই ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে। সেইবার আমাদের গ্রামের মধ্যেই প্রথম আমরা পাঙ্গাস মাছ চাষ করেছিলাম। ৬০০ পিস পাঙ্গাস মাছ দিয়েছিলাম আমাদের বাড়ির পুকুরে। তবে প্রথমবার যেসব পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেছিলাম সেরকম পদ্ধতি এখন আর নেই। এখন পাঙ্গাস মাছ চাষের পদ্ধতি যেমন উন্নত হয়েছে ঠিক তার চেয়েও বেশি উন্নত হয়েছে খরচের দিকটা।
খরচের দাম বেড়েছে মাছের দাম বাড়ে নাই।
কোন গ্রামের নাম "ষোল টাকা" হতে পারে এটা আপনার পোস্ট না পড়লে জানতে পারতাম না ভাই। তবে এটা সত্যি কথা যে পাঙ্গাস মাছ চাষ সম্পর্কে আমাদের সকলের একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, যে পচা খাবার খায় এই মাছ। তবে এই মাছও যে পুষ্টিকর খাবার খায় এবং সেগুলোর মাধ্যমে অনেক ভালো লাভজনক একটা এমাউন্ট হাতে আসে , এটা অনেকেই জানে না। হয়তো আপনার এই পোস্ট পড়লে অনেকেরই সেই ধারণাটা কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে। তবে সবশেষে একজন বিশেষ উদ্যোক্তা, হবি জেলের মোটরসাইকেল রোড এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার যে ব্যাপারটা, এটা শুনে সত্যিই অনেক খারাপ লাগলো।
হ্যাঁ ভাই গ্রামটার নাম ১৬ টাকা
গ্রামের নাম এমন হওয়ার পিছনে কি রহস্য আছে, সেটা জানার খুব আগ্রহ হলো ভাই!🤔
সেটা তো আমার জানা নেই ভাই।
ঠিক আছে ভাই, সব বিষয় সবার নাও জানা থাকতে পারে।