এক বৃদ্ধ দোকানদারের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago
আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। প্রথমেই বলল গল্পটা একটু বড় হলে মাফ করবেন। একজনার গল্প থেকে দশ জন অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা পায়। ঠিক তেমনি এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলেছি। সমাজে এমন অবহেলিত মানুষ রয়েছে অনেক, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চলুন গল্পটা শুরু করি।


এক বৃদ্ধ দোকানদারের গল্প:


আমাদের গ্রামের নাম জুগীর-গোফা, গ্রামের প্রবেশের পূর্বে হাইরোড। প্রবেশস্থলের নামটা করিম-মোড়। গ্রামের এক রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা ফকিরের নাম অনুসারে নামটা হয়ে আসছে। মানুষটা বেশ ভালো ছিলেন। যাইহোক তার প্রসঙ্গে কিছু বলবো না। ঠিক সেই জায়গায় রয়েছে একটি কাঠের দোকান। ফটোতে দেখতে পারছেন দোকানদার তার বেচাকেনা করছেন। উনিও ভালো একজন মানুষ। দেশের দশজন ভালো মানুষের মধ্যে একজন। দিন যত যাচ্ছে অসুস্থতা ঘনিয়ে আসছে, অলরেডি দুইটা চোখের সমস্যা হওয়ায় কোন রকম অপারেশন করে দেখতে পাচ্ছেন। উনার বৃদ্ধ স্ত্রী সময় মত এসে তার চোখের ড্রপ দিয়ে যান। দীর্ঘদিন এ জায়গায় উনি দোকান চালিয়ে আসছেন।

IMG_20240304_113224_365.jpg

চলতি পথে অনেক বার দোকানটায় থেমেছি বসেছি খেয়েছি। হঠাৎ তার সাথে অনেক গল্প হল কিছুদিন আগে। উনি হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন "বাবা আমি যে সরকারের খাস এই জায়গায় দোকান দিয়ে রয়েছি আপনার মত মানুষ কি আমাকে এখান থেকে তুলে দিতে পারবে?"কথাটা শোনা মাত্র আমার খুব কষ্ট লেগে উঠলো, আর হাসিমুখে বললাম কেন আমি আপনাকে তুলে দিতে যাব এখান থেকে, আপনার সাথে আমার কিসের শত্রুতা। উনি বলল আপনার মত কেউ কি পারবে আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে দিতে। আমি বললাম যতটা জানি একমাত্র সরকার ছাড়া আপনাকে কেউ এখান থেকে উঠাতে পারবে না। তার আগে আপনার মত হাজার জনকে উঠাতে হবে। কারণ এটা সরকারি খাসের জায়গা তো। আর পিছনের একটা খাল রয়েছে। তারপর এই জায়গা যদি কারো জমির সামনে হতো তাহলে একটা বিষয় ছিল। তখন উনি আমাকে বললেন বাবা যখন রাস্তা হয় তখন এই জমিটা আমার রেজিস্ট্রিবিতে জায়গা রাস্তার মধ্যে চলে গেছে তাতে আমার আফসোস নেই। আমাদের মত মানুষের জমির উপর দিয়েই তো রাস্তা হয়ে আজকে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তখন আমি বললাম আপনাদের মানুষের কাছে সরকার সহ আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ আপনাদের মত মানুষগুলো ছিল বলে রাস্তার খাতায় ফ্রি জমে দিয়েছেন। আর আজকে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা, আমরা চলতে পারছি শান্তিতে, হাজার হাজার মানুষ এই পথে চলে ইনকাম করছে প্রতিনিয়ত।

IMG_20240304_113106_122.jpg

উনি মনে কষ্ট নিয়ে বললেন আপনার মত কয়জন বোঝে। রাস্তার এপাশেও আমার জমি ওপাশেও আমার জমি রাস্তাও আমার জমির উপর। আজ রাস্তার খাস নামে পরিচিত তাতে আমার আফসোস নেই। দশজনার সেবা হয়ে থাকে আমার এই দোকানের জন্য। আর এদিকেও আমার নড়বড়ে একটা গরীব সংসার কোনরকম আর্থিক সহায়তা পায় দোকানের মাধ্যমে। কিন্তু পিছনে খাল তার পরে যে জমিটা রয়েছে, সেই জমি আলা পাশের গ্রামের, বেশ কিছুদিন আমার সাথে খারাপ আচরণ করছে। এখান থেকে দোকান তুলে ফেলতে বলছে। আপনার দৃষ্টিতে কি মনে করেন? আমি তখন হতভাগ হয়ে বললাম 'কেন মানুষ গায়ে পড়ে অন্যের সাথে হিংসা করে?' আমি তাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বললাম "আপনি কখনো এখান থেকে দোকান উঠাবেন না"। ওই জমিওয়ালা আপনাকে উঠাতে পারবে না। কারন সেটা তার ফসলের জমি, খালের ওই পারে। সে যদি ওই জায়গা ঘরবাড়ি তৈরি করে, তারপর রাস্তা প্রয়োজন মনে করে,তাহলে খালের উপর দিয়ে যদি নিজের যাতায়াত ব্যবস্থা করে,তখনই হয়তো একটা কথাও আসবে; তার আগে কখনো কেউ আপনাকে তুলতে পারবে না। একমাত্র সরকার ছাড়া। তখন আমার কথা শুনে উনি অনেক খুশি হলেন।

IMG_20240304_113110_916.jpg

IMG_20240304_113121_159.jpg

বলল আমাদের গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি, পাশের গ্রামের আর বিভিন্ন মানুষ আসা যাওয়া করে তারা ঠিক আপনার মতই বলেছে। কিন্তু ভয় লাগে তাই আপনার থেকে জানতে চাইলাম। বলল আমি একদম নিশ্চিত হয়ে গেলাম আপনার কথা শুনে,কারণ আপনি এখনকার যুগের ছেলে এই সময়ের আইন-কানুন ভালো বুঝেন। আরো বললেন বাবা আমার দ্বারা কি কারো ক্ষতি হচ্ছে মনে হয় আপনার? আমি বললাম রোধ গরমে এসে যখন আপনার দোকানে বসে দুইটা বিস্কুট এক গ্লাস পানি খাই, মনের অজান্তে আপনার প্রতি একটা শ্রদ্ধা ও দোয়া চলে আসে। বৃষ্টির সময়ও মাথা গুজার ঠায় পায় আপনার দোকানের সামনে। উনি আমার কথায় আরও খুশি হলেন। বললেন দেখা যাক বাকি জীবনটা আল্লাহ কিভাবে রাখে। আমি বললাম আপনি এই নিয়ে টেনশন করবেন না। যখনই সে আপনার সাথে খারাপ আচরণ করবে তখনই প্রতিবাদ করুন। অথবা গ্রামের মেম্বার এলাকার চেয়ারম্যান গণমান্য ব্যক্তিদের জানান। অবশ্যই আপনাকে সবাই সহায়তা করবে, কারণ আপনার এখানে বিন্দু পরিমাণ অপরাধ নেই। রাস্তার কাজে সরকার উঠাতে পারবে, কোন ব্যক্তি বিশেষ নয়। আমি আপনার খোঁজ রাখবো। আপনার কোন সমস্যা হলে আমি নিজে সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করব। কারণ এলাকার গণ্যমান্য নেতাদের সাথে আমার কম বেশি সম্পর্ক আছে। উনি আমার কথা শুনে সুন্দর হাসি দিলেন, হাসিতে যেন আমার জানটা ভরে গেল।

IMG_20240304_113134_579.jpg

IMG_20240304_113141_060.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 4 months ago 

রাজাকার এর নামে জায়গার নাম কিভাবে হয় ভাই? খুব আগ্রহ জাগল বিষয়টার প্রতি। যাই হো খুবই খারাপ লাগল দোকানদার এর গল্পটি শুনে। মানুষ কেন যে নিরীহ ব্যক্তিদের উপর কেন যে অত্যাচার চালায়,আশা করি উনার কোন সমস্যা হবে না ভবিষ্যতে। সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন উনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

ওখানে রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা দুইটাই উল্লেখ করেছি ভাইয়া। উনি মূলত রাজাকারদের দলে যুক্ত হয়ে তার সুকৌশলে আমার গ্রামের মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং তাতে সাকসেস হয়েছেন। তাই তাকে সবাই দুইটা নামে জানে।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া কৌতুহল মেটানোর জন্য।আমি ভেবেছিলাম দুইজন আলাদা মানুষের নাম।তাই গোলামাল হইছে।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 58269.58
ETH 3138.31
USDT 1.00
SBD 2.43