শবে বরাতের বিকাল মুহূর্তে প্রিয় ছাগল দুইটার সাথে আনন্দ

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু আলাইকুম



আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আপনাকে স্বাগতম

IMG_20230307_175229_208.jpg




হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি আমাদের প্রিয় দুইটা ছাগল 'রোমান্টিক' আর তারই ছোট ভাই 'বলদ'এর সাথে কাটানো শবে বরাতের বিকাল মুহূর্তের কিছুটা সময় নিয়ে। দারুন এই মুহূর্তটা পুরোটাই তুলে ধরব আপনাদের মাঝে, আশা করি বিস্তারিত পড়ে খুব ভালো লাগবে।


'আমার বাংলা ব্লগ'
কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট


ফটোগ্রাফি সমূহ:


১ নং ফটোগ্রাফি

আমি ছোট থেকে কেমন জানি ছাগল বেশি পুষতে বা আদর স্নেহ দিয়ে পাশে রাখতে পছন্দ করে থাকি। যেহেতু গ্রামে বড় হয়েছি, গ্রামে মানুষ,পরিবারে ছোট থেকে ছাগল পালন করে আসছি। তা ছাগল পালনের দিক থেকে আমাদের পরিবার গ্রামের অন্যান্য মানুষের পরিবারের মত। যাই হোক বাড়িতে একটি ধাড়ি ছাগল থাকে, আর সেই থেকে বছরে দুইবার বাচ্চা হয়। সে বাচ্চাগুলোর মধ্যে যদি খাসি ছাগল হয়ে থাকে চেষ্টা করা হয় নিজেদের বাড়ির পোষা প্রাণী নিজেদের কোরবানি দেওয়া। তবে এই ফটোগ্রাফির দৃশ্য গত শবেবরাতের দিনের বিকাল মুহূর্তে। বিভিন্ন কারণে নিজের পোষা ছাগল গুলোর পানে তেমন একটা তাকানো হত না। যেহেতু স্কুলে যেতাম, স্কুল থেকে আসতে বাড়ি ফিরতে সাড়ে তিনটা চারটা বেজে যেত। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ক্লান্ত হয়ে হয়তো ঘুমিয়ে পড়তাম, মাছের খাবার দেওয়ার জন্য মাঠের পুকুরে চলে আসতাম। তাই ছাগলগুলো পানের সেভাবে তাকানো হতো না আমার। আর এই দুইটা ছাগল এত সুন্দর হয়েছিল আর মানুষ প্রিয় তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যখন যেখানেই থাকতাম ঠিক তখন পাশে এসে উপস্থিত হয়ে যেত। তবে সেভাবে তাদের স্নেহ দিয়ে গায়ে হাত দেওয়া হতো না। শবে বরাতের দিনে বাড়িতেই ছিলাম হঠাৎ কেন জানি ছাগল দুটার প্রতি বেশি স্নেহ অনুভূতি জেগে উঠলো মনের মধ্যে। নতুন ঘর তোলার সামনে একটু বসে ছিলাম হঠাৎ দেখি ছাগল দুইটা এসে আমার কাছে কি জানি আবদার করছে।

IMG_20230307_175225_329.jpg

IMG_20230307_175230_542.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


২ নং ফটোগ্রাফি

আমি চুপ মেরে বসে থাকলাম কোন সাড়া দিলাম না দেখি ছাগল দুইটা কতক্ষণ আমার পাশে থাকে এবং কি করে। চেয়ে দেখলাম কেউ এসে হাতের মধ্য দিয়ে মাথা রেখে বুকের কাছে মুখ দিয়ে নক করে দাঁড়িয়ে থাকছে। কেউ আবার মুখের কাছে মুখ আগিয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকছে। আবার কনো মুহূর্তে তাদের শিং দিয়ে হাতের কনুইতে ঠেলছে। আমি চুপ মেরে শুধু তাদের পাগলামিটাই দেখতে থাকলাম, দেখি অনেকদিন পর আজকে ওদের পাগলামিটা দেখে ছাড়বো। এক মুহূর্তে হঠাৎ করে আমি তাদেরকে একটু তাড়িয়ে দেওয়ার ভান করলাম। এমন মুহূর্তে আমার আম্মাজান রুম থেকে টিউবয়েল পাড়ের দিকে যাচ্ছিল থাল হাতে। আমি আমার কাছ থেকে তাদের একটু তাড়িয়ে দেয়ার মুহূর্তে তারা আম্মার কাছে যেন আবদার শুরু করে দিল। থালায় কি আছে যেন তাদের খেতে দেওয়া হয়। ঠিক এমনটাই শুরু করে দিল দুই ভাই, দেখে যেন মনে হচ্ছে দুই ডাকাত। তবুও অবুলা প্রাণী তাদের পাগলামি দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই একটু শেষে দেখছিলাম আর এদিক থেকে একটু মার শাসিয়ে ছিলাম দেখি কি করে। দেখলাম তারা বাকা দুই নয়নে চেয়ে চেয়ে শুধু তাকিয়ে রয়েছে।

IMG_20230307_175249_318.jpg

IMG_20230307_175254_776.jpg

IMG_20230307_175305_777.jpg

IMG_20230307_175324_327.jpg

IMG_20230307_175327_606.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


৩ নং ফটোগ্রাফি

আমি আমার কাছ থেকে ওদেরকে তাড়িয়ে দিলাম, এদিকে আম্মার হাতে থালা দেখে খাবার খাওয়ার আশায় একটু জোরজবস্তি করার চেষ্টা করছিল সেটা দিক থেকেও আমি মার শাশিয়েছি তাই যেন ভোতা মুখ করে তাকিয়ে রয়েছে আমার পানে। পাশে ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছিল। সেগুলো আমি একটু দূরে রেখে আদর স্নেহের দৃষ্টিতে হাতছানি দিয়ে ডাকার চেষ্টা করলাম। ওদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন ভোতা মুখে রাগ করে তাকিয়ে রয়েছে আমার পানে। আমি যখন এক হাতে খাবার দেখাচ্ছিলাম আর ওদেরকে ইশারা করে ডাকছিলাম দু একটা করে সামনের দিকে এগিয়ে আসছিল আবার এপাশ ওপাশ তাকিয়ে ছিল। অবশ্য ঐই মুহূর্তে ওদের সাথে খেলতে আমার বেশ ভালই লাগছিল। মানুষের মধ্যেও যেমন রাগ আসে পশু প্রাণীর মধ্যেও ঠিক তেমনি রাগ আসে। আমার কাছে এসেছিল স্নেহ ভালোবাসা নেওয়ার জন্য কিন্তু আমি তাড়িয়ে দিয়েছি। মায়ের কাছে থালা দেখে খাবার খাওয়ার আশা করেছিল তাতেও আমি মার শাশীয়ে ছিলাম। এসব কারণে তাদের তো রাগ হতেই পারে। যাইহোক দূরে বসে অনেকক্ষণ তাদের ডাকতে থাকায় এক পর্যায়ে লক্ষ্য করলাম তারা আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলো যেহেতু খাবার দেখিয়ে ডাকছি তাই তাদের খাবারের প্রতি আকর্ষণ হতে থাকলো। ঠিক এভাবেই তারা এগিয়ে আসলো আমার দিকে।

IMG_20230307_175313_126.jpg

IMG_20230307_175317_369.jpg

IMG_20230307_175311_086.jpg

IMG_20230307_175308_387.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


৪ নং ফটোগ্রাফি

ওরা যখন আমার পাশে আসলো তখন আমি তাদের ঘাসের বস্তাটায় লাগিয়ে দিলাম। ওরা দুই ভাই আনন্দ করে খেতে থাকলো আমি ঘাসের বস্তাটা গোলার উপর রেখে দিলাম। ওরা এতটাই গভীর মনোযোগ দিয়ে খাওয়া শুরু করে দিল তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এমন একটি মুহূর্তে আমি তাদের লেজ ধরে টান দিলাম। মাথার শিং ধরে টান দিলাম। তারা বুঝতে পারল আমি তাদের আদর স্নেহ দেয়ার মধ্যে রয়েছি, মারধর করছি না। সত্যি কথা বলতে কি সামান্য কিছুর ভেতর থেকে আনন্দ তৈরি করে নেওয়া যায় আবার এমন কিছু বিষয়ের মধ্যে থেকেই মন ভালো রাখা যায়। ঠিক তেমনি মুহূর্তটা অতিবাহিত হচ্ছিল আমার। নিজেকে ভালো রাখতে পথে ঘাটে আড্ডা দিতে হবে এটা কিন্তু প্রয়োজন হয় না। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি পথেঘাটে আড্ডা দেওয়ার মধ্যে নিজের মন-মানসিকতা নষ্ট হয়, রুচি নষ্ট হয়, দৃষ্টিভঙ্গি নষ্ট হয়,অশ্লীলতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু পোষা প্রাণীর মধ্যে আনন্দটা ঠিক অন্যরকম, যেখানে মন মানসিকতা একদম ফ্রেশ থাকে, নিজের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে, যেন খুঁজে পাওয়া যায় পবিত্র সুখ অনুভূতি।

IMG_20230307_175648_613.jpg

IMG_20230307_180320_350.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


৫ নং ফটোগ্রাফি

এবার আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাদের মার শাশাতে লাগলাম, ভয় দেখাতে লাগলাম। তারা কি ভয় পাচ্ছে নাকি কিছু মনে করছে না। সে দেখলাম আমি যতই তাদের ভয় দেখায় না কেন তারা খাবার থুয়ে হিটলো না। তারা বড়ই ক্ষুধার্ত ছিল। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে তারা জানে আমি কখনো তাদের গায়ে হাত দেব না কারণ আমি তাদের গেরস্থ, ছোট থেকে আমার হাতে কোলে বড় হচ্ছে। যতই কাছে এগিয়ে যেয়ে মার দেয়ার ইশারা করলাম। ততই জেন ওরা দুই ভাই বাঁকা নয়নে তাকিয়ে দেখছে এবং বাস্তার মধ্যে মুখ দিয়ে খাবার বের করে খাচ্ছে। যাইহোক এরপরে আর তাদের সাথে ইয়ার্কি করলাম না কাছে গিয়ে মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে দিলাম। এদিকে আমারও সময় হয়ে যাচ্ছিল মাঠের পুকুরে মাছের খাবার দিতে যাবার। তাই ওদের নিয়ে ওই সময়ের আনন্দটা বেশ ভালো লাগছিল যেহেতু বাড়ির পোশা প্রাণী তাদের সাথে মজা করার আনন্দটাই আলাদা। আর এভাবে আনন্দঘন একটি বিকালের মুহূর্ত অতিবাহিত হয়েছিল আমার শবে বরাতের দিন।

IMG_20230307_175921_280.jpg

IMG_20230307_180029_474.jpg

IMG_20230307_180128_103.jpg

IMG_20230307_175927_495.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp

R6TbvATub8MquGoqJZ4SE2UCpaUQzmNnWQxvJGwvYApXWE4KsVzC8vNNXWgtz7hrfoYPSrjupZgj7VtKhrH935ua1PLs4Vr7KiYnVAy3oD...tCNiac63XNuwJJZPbTjHfGPYJH4BJoHgX8HdohSPrSasKvArV8wiiFV7ntYqz66tLZiqG67BKrPAveZFRs3vaqucpJgsaE3qA6Rwasb2fYDx3U5dXGLwwRdyH8.png


আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে বুঝতে ও শিখতে পেরেছেন, সেই সাথে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। পোস্টটি উপস্থাপনা কেমন ছিল এবং এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন, অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো।

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 last year 

রোমান্টিক নামটি শুনে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি ভাইয়া এই ধরনের নাম কখনো শোনা হয়নি। তবে যারা এসব পশুকে অনেক ভালোবাসে তারা আদর করে অনেক নাম দেয়। আপনি এই ছাগলগুলোর সাথে বেশ সুন্দর সময় কাটিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 last year 

দুজনার ভাবভঙ্গি থেকেই নাম দেওয়া হয়েছিল

 last year 

ভাই আপনি তো দেখছি খুব দরদী মানুষ। যার কারনে ছাগল দুটোর যেভাবে বর্ণনা করলেন তা শুধুমাত্র একজন দরদী মানুষই করতে পারে। আর এজন্যই তো ছাগল দুটো আপনার কাছে এসে আদরের আশায় কাছাকাছি ঘেঁষে থেকেছে। পোষা প্রাণীগুলো বোধ হয় এরকমই হয়, তাদের আদর যত্ন করলে, তাদের খাবার খাওয়ালে খুব সহজেই পোষ মেনে যায়। যাইহোক ভাই, শবে বরাতের বিকাল মুহূর্তে প্রিয় ছাগল দুইটার সাথে আনন্দঘন মুহূর্তটুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

ছোট থেকে ছাগল পউষইতও,তাই একটু ছাগলের প্রতি বেশী স্নেহ ভালোবাসা।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66914.48
ETH 3341.32
USDT 1.00
SBD 2.72