ভয়ংকর এক ঝড়ে রাতের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230621_120757_781.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি গল্প পোস্ট। যেখানে ভয়ংকর এক সন্ধ্যা রাতের ঘটনা শেয়ার করতে চলেছি। আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে এই ঘটনা পড়বেন এবং যথেষ্ট সজাগ ও সচেতন হবেন।


ফটোগ্রাফি সমূহ:



এটা জুন মাসের ঘটনা। বিবাহের পর শ্বশুরবাড়িতে মোটামুটি আমার চলাচল। এদিকে আমার শশুরের একটি দোকান রয়েছে মুদি খোচরা বা পাইকারি দোকান। যেহেতু আমি মেহেরপুরের গাংনী থানার বাসিন্দা। বিবাহ করেছি গাংনীর অন্তর্গত একটি গ্রামে। গ্রামের নাম বাচামারী। তবে সবাই চাঁদপুর বাচামারী নামে চিনে। তবে হাস্যকর বিষয় হলেও সত্য পাশাপাশি গ্রাম মাঝখানে শুধু একটা কালভার্ট। আমার শ্বশুরের গ্রামটা আমাদের পশ্চিম পাড়ার মতো ছোট্ট একটি গ্রাম। তবে গ্রামটা চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্তর্গত। আলমডাঙ্গা থানার অনুকূলে। আর শ্বশুরের দোকানটা আমাদের গাংনী থানার অন্তর্গত হেমায়েতপুর বাজারে। যাইহোক বিয়ের পর থেকে বেশ কিছুদিন আমি এই দোকানে যাওয়া আসা করি বিশেষ করে হাট-বাজারের দিন। প্রতি বৃহস্পতিবার এবং রবিবার হেমাতপুর বাজারে হাট বসে। ঐ দিনগুলোতে বেশ সুন্দর বেচা কেনা হয়ে থাকে। দোকানে এক্সটা লোক নেই, তাই আমার শশুর আব্বা আর বেশ পরিশ্রম হয়ে যায় হাটের দিনগুলোতে। আমি সময় সাপেক্ষে সুযোগ পেলে সেখানে যাওয়া আসা করি। একটা দিন সারাটা দিন ধরে বাজারে অবস্থান করছিলাম। বলতে গেলে আমি আমার শ্বশুর আব্বার আগেই দোকান খুলেছি। উনি অনেক পরে এসেছিলেন দোকানে। প্রতিদিনের ন্যায় সারাদিনের ব্যস্ততা বেচাকেনার। বিকেল টাইমে বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। আর তাই দুপুরের খাবার আমার শাশুড়ি আম্মা দোকানে পৌঁছে দিয়েছিল। জামাইকে খাওয়ানো বলে কথা। ঠিক সেভাবেই রান্না করে পাঠিয়েছিলেন। তাই দীর্ঘক্ষণ আমার পরিবারের মুখটা দেখা নেই মনটা বেশ আনচান করছিল কিন্তু শশুরকে তো আর এ কথা বলা যায় না। ওদিকে আমার পরিবার শ্বশুরের বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে মোবাইলে নক করছে। তাকে বলেছিলাম সন্ধ্যার পরেই চলে যাব বাসায়। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে যখন সন্ধ্যা হল। আকাশে হালকা হালকা মেঘ। তবে হাটের দিন সন্ধ্যাবেলায় বেশি তেল আর সিগারেট বেচা হয়। এজন্য দোকান বন্ধ করতে প্রায় সাড়ে আটটা নয়টা বেজে যায়। তবে আকাশের অবস্থা ভালো নয় এদিকে ভালোবাসার মানুষের টানে ফিরতে হবে বাসায়। হঠাৎ আকাশে মেঘ দেখলাম তখন শ্বশুর আব্বাকে বললাম দোকানটা দ্রুত বন্ধ করে ফেলাই উত্তম আমাদের। উনিও বললে না হ্যাঁ দোকান বন্ধ করতে হবে তবে লোকজন আসা যাওয়া করছে তো বৃষ্টি হবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না তুমি অনলাইনে দেখো তো। আমি অনলাইনে দেখলাম বললাম রাত নয়টার পরে বৃষ্টি হতে পারে। তখন উনি বললেন তাহলে সাড়ে আটটার দিকে দোকান বন্ধ করে চলে যাব।

IMG_20230619_173751_119.jpg

IMG_20230619_173739_323.jpg



রাত সাড়ে আটটা বাজার মুহূর্তে হালকা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেল এদিকে আমরা দোকান বন্ধ করে দ্রুত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। দোকান বন্ধ করার শেষ হয়েছে যখনই আমরা মোটরসাইকেলে উঠলাম কিছুটা পথ এগিয়ে আসতেই প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল প্রথমে। ঠিক তখন আমরা এই রাস্তায় অবস্থান করছি। দ্রুত বৃষ্টি নামা দেখে শ্বশুর আব্বাকে বললাম গাড়ি না চালানোই ভালো এমন অবস্থায় বিপদ ঘটে। দোকানে ফিরে এসে দোকানে বসে থাকাটাই উত্তম হবে। কথা বলতে না বলতেই প্রচন্ড বেগে ঝড় শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি আস্তে আস্তে পড়তে থাকলো।

IMG_20230619_173737_539.jpg

IMG_20230619_173723_056.jpg



ঘন কালো রাত মোটরসাইকেলের আলো বন্ধ করলে যেন চোখে আর কিছু দেখা যায় না। হঠাৎ করে সন্ধ্যা রাত এমন ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে তা কল্পনার বাইরে। প্রচন্ড বেগে আওয়াজ হচ্ছে বাতাসে গাছপালা আর বৃষ্টি পড়ার কারণে। সামনেই ছিল বেশ কিছু কড়ুই গাছ রাস্তার দুই পাশে। হঠাৎ একটা ঘটনা মনে এসে পড়েই আমি শশুর কে বললাম মোটরসাইকেল বন্ধ করে ফেলুন। বলার সাথে সাথে সামনে একটা মোটা মরা কুড়ে গাছের ডাল ভেঙে এসে পড়ল। হয়তো আমার কথা শুনে মোটরসাইকেল বলে বন্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিছিলেন না কিন্তু ডালটা ভেঙে আসার সাথে সাথে উনি মোটরসাইকেল স্লো করে ফেললেন। এরপর আমি বললাম আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই এই দোকানটার সামনে দুইজন দাঁড়িয়ে পরি যতটুকু বৃষ্টি থেকে সেভ পাওয়া যায় ততটাই ভালো। এখন আর নিজের দোকানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, বাসায় ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না। যে কোন মুহূর্তে এই প্রচন্ড ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে এসে গায়ে পড়তে পারে। কারণ কড়ুই গাছের ডাল পছন্দ নরম হয়ে থাকে। ফটোগ্রাফিতে দেখছেন ওই দোকানদার সামনে আমরা দুইজন দাঁড়িয়ে গেলাম টাকার ব্যাগ মোবাইল শ্বশুর আব্বা আমার হাতে দিলেন। এত জোরে জোরে মেঘ ঝিলকানো আর ডাক/বাজ পড়া শুরু হলো আমার শ্বশুর আব্বা জোরে জোরে লা ইলাহা পাঠ করতে থাকলেন।

IMG_20230619_195337_019.jpg

IMG_20230619_195339_308.jpg

IMG_20230621_120820_138.jpg



শশুর আব্বা আমাকে প্রশ্ন করছেন কম্পিত সুরে 'আব্বা ভয় পাচ্ছো নাকি?' ইতোমধ্যে আমার সারা শরীর শশুর আব্বা সারা শরীর ভিজে গেছে এলোপাথাড়ি বাতাসের কারণে। বৃষ্টি মাঝে মাঝে এত জোরে আসছে আবার কমে যাচ্ছে আবার জোরে আসছে পাশাপাশি প্রচন্ড বেগে ঝড় আর বিদ্যুৎ চমকানো ও ডাকপাড়া। এমন অবস্থায় রাস্তার পাশে দোকানের সামনে দুইজন অবস্থান করছি কোন লোকজন নেই। মোটরসাইকেল বন্ধ করার কারণে আলোটা বন্ধ করা রয়েছে। মোবাইলটা হাতে নেব এর সাধ্য নেই প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে, নেই মোবাইল ঢাকার কোন ব্যবস্থা। হঠাৎ এমন হবে কে জানত। আমি শ্বশুর আব্বাকে বললাম আব্বা আমি এসবে একদম ভয় পায় না হতে পারে কঠিন মুহূর্ত। তবে সম্পূর্ণ আল্লাহ ভরসা মরণ থাকলে এখানেই মরবো বাঁচিয়ে রাখলে বেঁচে যাব তবে ভয় পাওয়ার কোন কিছু মনে করছি না হয়তো একলা থাকলে ভয় লাগতো কিন্তু আপনি তো পাশে আছেন এজন্য সাহসের মাত্রা আমার দ্বিগুণ। এমনিতে আমার শশুর আব্বা জানে আমি একা রাত্রে পুকুর পাহারা করে বেড়ায় রাত একটা,দুইটা বা তিন টা দেখা দেখি নেই, এমন বৃষ্টির রাত একা একা কত পার করেছি। তবে এভাবে প্রচন্ড ঝড় বিদ্যুৎ চমকানো একা কখনো উপভোগ করিনি। ঠিক এমন মুহূর্তে নিকটে বিকট একটা শব্দ শুনতে পারলাম, তবে এটা ডাক পড়ার শব্দ নয় কোন কিছু ভাঙ্গার শব্দ। তবে আমার শশুর আব্বা প্রচন্ড গতিতে লা ইলাহা পাঠ করতে থাকলো। আমি অনুভব করলাম হয়তো রাস্তার উপর গাছ ভেঙে পড়ল।

IMG_20230621_120746_869.jpg

IMG_20230621_120754_347.jpg



অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি থামলেও ঝড় মেঘ কম হল। আমার শশুরের জান শুকিয়ে রয়েছে দোকানের পান, যেহেতু দোকানের উপর টিন দিয়ে ছাওয়া। উনি আমাকে একলা দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেলেন দোকানের দিকে দোকান ঠিক আছে কি। আমি বলেছিলাম দোকানের কোন সমস্যা হবে না যেহেতু পাশাপাশি ইটের গাঁথুনি। যায়হোক উনি দ্রুত চলে গেলেন, পাশের দোকানদার দোকানে ছিলেন ঝড় বৃষ্টি শেষে নিরবে চলে আসছেন। আমাকে দেখে বলছেন তোমার শ্বশুর আজুড়ি দোকানের দিকে যাচ্ছে,বাড়িতে যাবে তো। দোকান ঠিক আছে আমি তো দোকান থেকে আসছি। এই বলে উনি আমাকে অতিক্রম করে সামনের দিকে চলে গেলেন। পাশের বাড়ির মধ্য থেকে কয়েকজন মহিলা বের হয়ে এসেছে রাস্তার উপর গাছের শুকনো ডাল পড়ার সম্ভাবনা আছে সেগুলো পড়ানোর জন্য। আমাকে দেখে বলছে ওমা এই লোকটা কে! কে আপনি? এখানে দাঁড়িয়ে ভিজছেন কেন? এমন প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টিতে আপনার ভয় করেনি একলা! বাড়ির মধ্যে যান। আমি বললাম না না কোন সমস্যা নেই আমার সাথে লোক আছে। এরপর শশুর আব্বা ফিরে এসে বলল আব্বা দোকান ঠিক আছে চলো বাড়ির দিকে যাই। গাড়িতে উঠে বসলাম সামান্য কুড়ি পঁচিশ হাত পরে দেখতে পারলাম একটি কড়ুই গাছের মোটা অংশ ভেঙে পড়ে আছে রাস্তার উপর। আমাদের আগে চলে আসা দোকানদার মোটরসাইকেল আলা আঙ্কেল ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি যাবে গাছের এই বিশাল অংশ রাস্তার উপর দিয়ে এপাশ থেকে ওপাশে পড়ে রয়েছে একদম দুই পাশের আবাদকৃত ফসলের জমির মধ্যে। কিভাবে মোটরসাইকেল গাছটা ক্রস করতে হবে কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারলাম না কেউ। যেহেতু গাছের ডাল অনেক মোটা আবার আঁকাবাঁকা। তিনজন মানুষ হলাম দুইটা বড় মোটরসাইকেল। হয়তো ১০ জন মানুষের সম্ভাবনা গাছের একটু নড়ানো। এরপর আমরা একটু বুদ্ধি করলাম বাম পাশের রাস্তার একদম ধার দিয়ে ডালের নিচ দিয়ে মোটরসাইকেলটা দুইজন পিছনে টেনে ধরে আরো বাইসাইকেল চালানো লোকজন এসে উপস্থিত হয়ে গেল, তাদের সহায়তায় কোন রকম ভাবে মোটরসাইকেল দুটো দীর্ঘ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বের করে আনতে সক্ষম হলাম তবে গায়ে বেশ আঘাত ও কাদামাটি লাগিয়ে। আমার গায়ে কয়েক জায়গায় হাসুরিয়ে গেছিল মোটরসাইকেল বের করতে যাওয়ার সময় গাছের ডালে লেগে। আপনি এভাবে তিনজনই আঘাতপ্রাপ্ত হলাম গাছের নিচ আর রাস্তার ধার দিয়ে মোটরসাইকেল দুটো বের করতে যে অন্ধকারে। এদিকে আমাদের মোবাইল তো ভিজে গেছে না জানি কি সমস্যা হয়। ফটোগ্রাফিতে দেখতে পারছেন সেই গাছটির দৃশ্য। যাইহোক এভাবেই চলে আসলাম বাসায়। এমন ঘটনা কিছুক্ষণ পর সম্পূর্ণ খুলে বলা হলো পরিবারের কাছে। আর এভাবেই বড় কষ্টকর একটা মুহূর্ত অতিক্রম করলাম ওই রাতে। তবে তার কিছুক্ষণ পর আকাশের মেঘ কেটে গিয়ে তারাও চাঁদের দেখা মিলল। তবে বন্ধুরা আপনাদের জন্য পরামর্শ থাকবে আপনারা এমন ঝড় বৃষ্টির সময় কখনো রাস্তায় বাইক চালাবেন না যে কোন মুহূর্তে গাছের ডাল ভেঙে এসে গায়ে পড়তে পারে এতে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।

IMG_20230621_120755_989.jpg

IMG_20230621_120800_126.jpg

IMG_20230621_120802_643.jpg


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 10 months ago 

পোস্ট টি পড়ে এতটুকু বুঝতে পেলাম যে ভাগ্য ভালো যে বড়ো কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি।এমন ঝড় বৃষ্টিতে গাছের ডাল,ভেংগে কিংবা গাছ উপরে পরে দূর্ঘটনার শিকার হয় মানুষ। ধন্যবাদ আপনার ভয়াল ঝড়বৃষ্টির রাতের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59887.64
ETH 2670.13
USDT 1.00
SBD 2.47