হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
একটি পাতি হাঁসের বাচ্চার গল্প: |
প্রথমে ভেবেছিলাম গল্পটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব কিনা। পরবর্তীতে একবার সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে অনেক ঘটনা থেকে থাকে তবে সবকিছু শেয়ার করা ঠিক নয়। যেগুলা অনেকের মাঝে গ্রহণযোগ্য না, আবার মনে হলো এখানে তো তেমন কোন বিষয় আসে না। তাই শেয়ার করাটাও কোন যায় আসছে না আমার। তাই উপস্থিত হলাম। আপনারা জানেন আমাদের বাসস্থানে ডানে বামে সব দিকে শুধু পুকুর আর পুকুর। আমাদের আশেপাশের প্রায় বাড়িতে পাতিহাঁস পোষতো মা চাচিরা। কিন্তু আমাদের বাড়িতে শুধু আমার আম্মা মুরগি পোষতো। পাতি হাঁস পুষতে চাইতো না একটি কারণে, এই হাঁসগুলো পুকুর থেকে সন্ধ্যাবেলায় মাঝেমধ্যে উঠে আসতো না,তাই তাদেরকে তুলে আনতে হতো। এটা একটা অন্যরকম হয়রানির শিকার হওয়া। কারণ সন্ধ্যা বেলায় প্রায় বাড়িতেই দেখা যায় মা চাচিরা পুকুর থেকে ঢেলা মেরে মেরে পাতিহাঁস গুলো তুলছে। যাইহোক এরপর অনেক বলাবলির পর আমাদের পাতিহাঁস পোষা শুরু করল। তখন আমরা খুবই ছোট প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। ঠিক এই মুহূর্তে লক্ষ্য করতাম আমাদের পাড়ার সঙ্গীরা যাদের বাড়িতে পাতিহাঁস রয়েছে, তারা অনেকেই পুকুর থেকে শামুক ঝিনুক তুলে আনতো। যেহেতু পূর্বে এগুলা দেখে আমাদের অভ্যাস তাই যখন আমাদের পাতি হাঁসের বাচ্চা কিনে আনলো তখন আমাদের মনটা আনচান করে উঠলো যখন পাতিহাঁস আমাদের পোষা শুরু হচ্ছে তাহলে আমরাও পাড়ার সঙ্গীদের সাথে এইগুলা তুলে আনব। আর এই ধারণাটা তো আগে থেকেই পাতি হাঁস কিনলেই তুলতে যাব ঝিনুক শামুক। অনেক মানুষকে দেখতাম বাড়ি থেকে বদলা নিয়ে চলে যেতে, পুকুরে গোসল করতে গিয়ে অনেকে গোসল করে বাড়ি ফিরতে বদনায় পুরে শামুক আর ঝিনুক নিয়ে আসতো।
যাই হোক একদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে এই মুহূর্তে বৃষ্টিতে ভিজতে বের হলাম রাস্তার দিকে। হঠাৎ কি মাথায় আসলো আমি একটি পুকুরে ঝিনুক তোলার জন্য নেমে পড়লাম। যেহেতু বাড়িতে পাতি হাঁসের বাচ্চা রয়েছে। তাই যদি কিছু ঝিনুক তুলে নিয়ে যায় তাহলে আমরা সুযোগ করে হাঁসগুলোকে খাওয়াতে পারবে। যাইহোক বৃষ্টি পরছে এদিকে একটা পুকুরের মধ্যে থেকে অনেকগুলো ঝিনুক উঠিয়ে ফেললাম। এরপর বদনায় করে সেগুলো বাড়ির দিকে নিয়ে আসবো, হঠাৎ দেখতে পারলাম একটি সাপের গর্তে ভেতরে পাতি হাঁসের বাচ্চার ডাকাডাকি শব্দ। আমি পুকুর থেকে ধীরে সুস্থে সেই গর্তের দিকে এগিয়ে গেলাম। তখন প্রচন্ড বেগে বৃষ্টি পড়ছে তাই আশেপাশে কোন মানুষজন নেই, পুকুরটা আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে। হঠাৎ আমি খুব ভীতু হয়ে পড়লাম এই ভেবে যে প্রায় এর ওর মুখে ভূতের গল্প শুনতাম। তাই হঠাৎ মনে আসলো গর্তের মধ্যে থেকে পাতি হাঁসের বাচ্চার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, এখানে কোন ভুত নেই তো! পুকুরের চারিপাশে বন জঙ্গলে ঘেরা। যেহেতু বর্ষার সময় আসলে পুকুরের চারপাশে অনেক জঙ্গল বেঁধে থাকে এটাই স্বাভাবিক। তখন আমি ভীতু হয়ে পুকুর থেকে উঠে চলে আসছি, কিছুটা রাস্তায় উঠে পড়েছি পুকুর থেকে হঠাৎ আবার গর্তে পান তাকালাম। এবার দেখলাম গর্তের মধ্যে থেকে একটি পাতি হাঁসের বাচ্চা বের হয়ে আসলো আর জোরে জোরে ডাকছে। অনুমান করা যায় গর্তটা ইঁদুরের গর্ত যা একটু দেখতে বড় মোটা গর্ত। তখন আমার মাথার মধ্যে আবার চিন্তা আসলো শুনেছি অনেক সময় ভূত এক এক রূপ ধরে আসে, মানুষকে একা পেলে ভয় দেখায় এমনটা নয়তো। তারপর আবার হঠাৎ মাথায় আসলো হয়তো দল শূন্য হয়ে এই পাতি হাঁসটা একা পড়ে গেছে না জানি প্রচন্ড এ বৃষ্টিতে ঠান্ডায় পুকুর থেকে উঠতে না পেরে মারা যায়। বেশি মায়া লাগলো পাতি হাঁসটার উপর। এমন অবস্থায় কি করব ভেবে পেলাম না, এদিকে বৃষ্টির পানিতে গায়ে ঠান্ডা লাগছে। মনের মধ্যে বেশ সাহস যোগালাম এরপর আবার পুকুরে নেমে পড়লাম এপাড় থেকে ওইপাড়ে চলে গেলাম। অবশ্য পুকুরটা বেশ বড় ছিল না তবে আমি তো ছোট ছিলাম আমার কাছে বড়। আর আমি যে, কবে কখন সাঁতার কাটা শিখেছি সেটা ঠিক মনে নেই। একদম ছোট থেকে ছাতার দিতে জানতাম। যাই হোক আমি হাঁসটাকে যেয়ে ধরলাম। তারপর দেখলাম সত্যিই এটা একটা ছোট পাতি হাঁসের বাচ্চা, এরপর সেটা আমি সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলাম। পুকুর পানে লক্ষ্য করে বুঝলাম পুকুরে নেমেছে ঠিক কিন্তু সে উঠে যেতে পারেনি দলের সাথে। পুকুরটা চারপাশে বেশ উঁচা ছিল। আর বৃষ্টির কারণে পিছলায় হয়তো তার সাধ্য হয়নি উঠে যাওয়ার। এরপর ফিরতে পথে আমাদের পাড়ার একজন চাচার হাতে তুলে দিলাম। উনি দেখে বললেন এটা আমাদের পাতি হাঁসের বাচ্চা খুঁজে পাচ্ছিলাম না কাল থেকে। আর এভাবেই বাড়ির পাতি হাঁসের বাচ্চার জন্য প্রথম ঝিনুক উঠাতে গিয়ে একটি পাতি হাঁসের প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ। |
আসলে ছোটবেলায় কতো কি মনে হয়।কারো মুখের গল্প কিংবা ভুতের মুভি, ভুতের ছবিতে যা দেখতাম তাই সত্যি বলে মনে হতো।সেরকম আপনারও পাতিহাঁসের বাচ্চা টি দেখে নানান রকমের কথা মনে হয়েছে এবং ভয় পাচ্ছিলেন।অবশেষে আপনার ভয়কে জয় করে বাচ্চা হাঁস টি কে ধরেছেন এবং ভুত নয় সত্যিকারের হাস বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
আমাদের জীবনটা ঘটনায় ভরা যদি অতীতের এমন স্মৃতি স্মরণ করি বেশ ভালো লাগে।