DIY: মাটি খনন করে অক্ষত অবস্থায় মেটে আলু উত্তোলন
আজ - রবিবার
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদেরকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের পোস্ট। পোস্টটি বরাবরের মতো নতুন ও ইউনিক । হয়তো এমন পোস্ট আগে কখনো আমার বাংলা ব্লগে আপনারা লক্ষ্য করেন নাই,তবে বিষয়টি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে আপনাদের অনেক অনেক কাজে আসবে।
আমরা জানি মাটি খনন করে যুগ যুগ ধরে অনেক শ্রমিক খনি থেকে অনেক প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন করে আসছে। মাটির ভূগর্ভে লুকিয়ে থাকে অনেক প্রকার সম্পদ। কৃষক-শ্রমিক তার নিজ হাতে ফলানো অনেক সবজি মাটি থেকে উত্তোলন করে থাকে। ঠিক তেমনই একটি বিষয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলেছি, তা হচ্ছে মাটি খুঁড়ে মেটে আলু উত্তোলন করা। তবে এটি সোনার খনি বা কয়লার খনির মত কেটে কেটে উত্তোলন নয়, এটা জ্যান্ত একটি সম্পূর্ণ আলুকে অক্ষত অবস্থায় রেখে উত্তোলন করার অভিজ্ঞতা। আর এই অভিজ্ঞতা আমার দীর্ঘ দশ বছরের।
মেটে আলু উত্তোলন এর প্রয়োজনীয় যন্ত্র
১ | শাবল |
---|---|
২ | কোদাল |
৩ | হাইসু |
সময় শীতের কাল হলেও দিনটি ছিল প্রচণ্ড রোদ। আর আপনারা জানেন কোদাল দিয়ে মাটি খনন করলে বডি অনেক ঘেমে যায়। তারপরেও কৃষক শ্রমিকরা এভাবেই কাজ করে দিনকে দিন, তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য। ঠিক তেমনভাবে আমি কাজও শুরু করে দিলাম, মনে এলো কৃষকরা তাদের কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করার সময় মনের সুরে গান ধরে। আমিও আস্তে আস্তে একটি গান শুরু করলাম, যেহেতু আমি গান বলতে খুবই পছন্দ করি। আমার প্রিয় শিল্পী খালিদ হাসান মিলুর কন্ঠে গাওয়া
মাটির মানুষ মাটি হয়ে যায় ও মনরে, নিঃশ্বাসের নেই কোন বিশ্বাস।
হয়তো গানটি আমার বেশি লাইন জানা নেই, তারপরেও দু-চার লাইন বারবার ঘুরেফিরে বলতে বলতে কার্যক্রম শুরু করলাম এবং সমাপ্ত করেছিলাম। আর এদিকে ক্লিয়ার ফটো তোলার জন্য আমাকে রোদেই কাজ করতে হলো। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে কার্যক্রম শুরু করা যাক।
ধাপ :-১
• যে স্থানে মেটে আলুটি ছিল, সেই স্থানের জঙ্গল গুলো পরিষ্কার করে নিলাম।
ধাপ :-২
• কোদাল দিয়ে আলুটির চারি পাশে খনন কাজ শুরু করলাম।
ধাপ :-৩
• যখন আলুর উপর অংশ দেখা গেল, আলুর গায়ে লেগে থাকা উপরে মাটি গুলো পরিষ্কার করে অনুমান করে নিলাম যে, কি সাইজের আলু হতে পারে এবং কত দূর থেকে খনন করতে হবে। যেন আলুটি কেটে না যায়।
ধাপ :-৪
• আলুর উপরের অংশে লম্বা লম্বা দাড়ি বা শিকোড় গজায়, আলুটি তুলার সুবিধার্থে সকল দাড়িগুলো হাইসু দিয়ে কেটে ছোট করে দিলাম।
ধাপ :-৫
• দ্বিতীয়বারের মতো আলুটির চারিপাশে কোদাল দিয়ে এক স্তর বা এক জোত মাটি খনন করে নিলাম। আলুর গায়ে লেগে থাকা মাটিগুলো পরিষ্কার করে ফেলে দিলাম।
ধাপ :-৬
• আলুটি যেন কেটে না যায়, তাই চারিপাশের মাটি খনন পরিসর বড় করে নিলাম শাবল দিয়ে। আর খননকৃত মাটিগুলো সাইডে ফেলে দিলাম।
ধাপ :-৭
• এতক্ষণে মনে হলো যেন আমার আলু তোলার কাজ প্রায় শেষের দিকে। একটু রেস্ট করে নিলাম এবং চারিপাশের মাটিগুলো উপর থেকে হাত বাড়িয়ে ফেলে দিলাম। আর ভালোভাবে দেখে নিলাম আলুর সাইজ কেমন। দূর থেকে আরও খনন করা লাগবে কি ভেবে নিলাম। ততক্ষনে আমি অনেক ঘেমে গিয়েছি।
ধাপ :-৮
• আমার ধারণা পুরাই ভুল ছিল। আলুটি মাঝখান থেকে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই নিচে আবার চারিপাশ থেকে আরেক জোত কোদাল মারা লাগলো এবং মাটি গুলো তুলে ফেলে দিলাম।
ধাপ :-৯
• মাটিগুলো তুলে ফেলে দেয়ার পর পুনরায় শাবল দিয়ে চারিপাশ খুড়তে থাকলাম। মাটি পুরাপুরি এঁটেল মাটি হাওয়াই খুবই শক্তি দিয়ে মাটি খনন করতে হয়েছিল। যার জন্য অনেক সময় অতিবাহিত করতে হলো।
ধাপ :-১০
• আলু তোলা প্রায় শেষের দিকে, অনেকক্ষণ মাটি খনন এর পর আলুটির শেষে স্থানে এসে পৌঁছাতে পেরেছি। তবে কপাল গুনে আলুটির কোন স্থানে একটু ক্ষত হয়নি।
শেষ ধাপ :
• মেটে আলু তোলা হলে নিজের হাতে নিয়ে অতি আনন্দের সাথে কয়-একটা ফটো উঠালাম। অবশ্য মেটে-আলু অনেক ভারী ছিল।
বাড়িতে নিয়ে এসে ডিজিটাল মিটারে মেপে দেখি এর ওজন সাত কেজি ছয়শত গ্রাম। মেটে আলুটি দেখে বাড়ির সকল মানুষ অনেক আনন্দিত এবং খুশি হলো। আরো খুশি হলো আমার এই কার্যক্রম শুনে। আর এরই মধ্য দিয়ে আমার আলু তোলার অভিজ্ঞতা বন্ধুদের মাঝথেকে শেয়ার করা সমাপ্ত হল।
চাইনা আমি করুণা তোমার,চাইনা কোন ভালোবাসা। চাইনা আমি করুণা তোমার, চাইনা কোন ভালোবাসা। মিথ্যে তোমার ~ জীবন নাটক, মিথ্যে তোমার ~ জীবন নাটক। মিথ্যে তোমার দেওয়া আশা । চাইনা কোন ভালোবাসা।
💖আমার পরিচয়💖
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)@sumon09
বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করে,চাকরি প্রত্যাশায় বেকার-স্টাডিতে! নিয়োজিত। ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। বাংলার স্টুডেন্ট হওয়াই,রূপ রস ছন্দ অলংকার সম্মিলিত কবিতা লেখা যথেষ্ট পারদর্শী কিন্তু লেখার প্রয়োজন বোধ করি না পূর্বে চর্চা করতাম এখন ছেড়ে দিয়েছি। লেখাপড়া ও পারিবারিক কাজ করার মধ্যে বিরহের গান শুনে থাকি। বিশেষ করে আসিফ, মনির খান,এস ডি রুবেল ও সনু নিগমের গান খুবই পছন্দ আমার।
আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে বুঝতে ও শিখতে পেরেছেন। পোস্টটি উপস্থাপনা কেমন ছিল এবং এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো।
পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
💖💞💞💖
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | itel vision 1 |
ক্যামেরা | Infinix hot 11s-50mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৫ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোষ্টে,ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।
বেশ বড়সড়ই একটি মেটে আলু আপনি মাটির নিচ থেকে তুলেছেন। এদিকে আমাদের এলাকায় স্থানীয় ভাষায় পূড়ালু বলে ডাকে। খেতে বেশ সুস্বাদু বিশেষ করে মানুষের সাথে খেতে বেশ দারুন লাগে।
হ্যাঁ এসব আলু র বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম হয়ে থাকে । আমাদের এখানে মেটে আলু বলেই জানি।
মাটি খনন করে অক্ষত অবস্থায় মেটে আলু উত্তোলন সম্পর্কে খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে এবং শিখতে পারলাম।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।শুভকামনা রইল আপনার জন্য
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপনি।
এই মাটির নিচের আলু খেতে যে কি সুস্বাধু যারা খেয়েছে তারাই বুঝতে পারবে। আপনি অক্ষত মাটির নিচের আলু সাফল ও কোদাল দিয়ে উঠাইলেন অনেক বড় হয়েছে দেখছি। অনেক দিন যাবত এত বড় আলো দেখা হয় না সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। এই আলু খুবই সাধের হয়ে থাকে। বিশেষ করে মুরগির মাংসের সাথে রান্না করলে যা টেস্ট হয়, তা বলে পারা যাবে না।
এই ধরনের দৃশ্য আসলে গ্রামে দেখা যায় ভাই। মেটে আলু গ্রামে বসে অনেক খেয়েছি, আমার মা রোপন করত। কিন্তু এখন খাওয়া হয়না কারন শহরে এসে এসব পাওয়া খুবই কষ্টের ব্যাপার হয়। আপনি খুবই প্রতিভার সাথে কিন্তু এই কাজটা করছেন। মাটি থেকে একেবারে অক্ষত অবস্থায় মেটে আলু উঠেছেন। কিন্তু আপনার পরিশ্রম হয়েছে সেটা কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে এই মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমিও ছোটবেলাতে দেখেছি আমার দাদী এই আলু লাগাতেন বাড়ির চারপাশে। তবে বর্তমানে এগুলো আর তেমন একটা দেখা যায় না। শুধুমাত্র পুকুরে ভেরিতে কয়েকজন লাগিয়ে থাকে।
এই ধরনের মেটে আলু আমাদের গ্রামে অনেক পাওয়া যায়। ছোটবেলায় দেখতাম অনেকেই এই মাটি খুঁড়ে মেটে আলু বের করত। একবারে নতুন ধরনের একটি পোস্ট দেখলাম ভাই। খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। নতুন ধরনের একটি অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে আপনি শেয়ার করেছেন। সবকিছুর বর্ণনা খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
জি ভাইয়া এই আলু তৈরি করা কঠিন নয় শুধু তোলাটাই বড় কঠিন। তবে গ্রামের মানুষ আজও পুকুরের ভেড়িতে এ আলু রোপণ করে থাকে।
ভাই দারুন একটা জিনিস শেয়ার করলেন। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম এটা হয়তো কলাগাছের নিচের অবশিষ্টাংশ কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম আলু। আমাদের এলাকায় মনে হয় পাওয়া যায় না পাওয়া গেলে অবশ্যই একবার খেয়ে দেখতাম। আরেকটি বিষয় জানার ছিল এটা কি চাষ করতে হয় নাকি এমনিতেই হয়?
ভাই এটা কৃষকরা জমিতে রোপণ করে থাকে বিভিন্ন পরিচর্যার মাধ্যমে কিন্তু আমাদের এগুলো রোপণ করা লাগে না তেমন একটা। পরিচর্যা করা লাগেনা ।শুধুমাত্র পুকুরে ভেড়িতে লাগিয়ে রাখলেই হয়ে যায়।
আসলে আপনি ঠিক বলেছেন। মাটির মানুষ মাটি হয়ে যায় ও মনরে নিঃশ্বাসের কোন বিশ্বাস নাই। আসলে এটা বাস্তবতা। এই আমাদের এইধারে দেখা যায় মাটি খনন করে মাটির তলের আলু উত্তোলন করে। বেশ ভালো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বেশ ভালো লাগলো এবং আলু খেতে সুস্বাদু দারুন লাগে। আপনার মুহূর্তটি ভাল ছিল।
ছোট থেকে দেখে আসছি মানুষ কাজ করতে গেলে কাজের সাথে মাঝেমধ্যে গান বলে। তবে বর্তমানে বাস্তবতার গান বেশি একটা মানুষের বলে না।
মাটির নিচের এই আলুক্ষেতে কি দিয়ে সুস্বাদু লাগে বলে বোঝাতে পারবো না।
আমার যদি সম্ভব হত তাহলে আমি আপনার কাছ থেকে সবটুকু আলু নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।